দ্য গর্ডিয়ানের প্রতিবেদন
স্ট্রিম ডেস্ক
চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)।
এর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যে পরিবারটির সম্পত্তির বিশদ তথ্য উঠে এসেছিল। এর তিন সপ্তাহ পর শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭ কোটি পাউন্ডের বেশি সম্পদ জব্দ করে এনসিএ। মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময়ে সাইফুজ্জামান যুক্তরাজ্যে অ্যাপার্টমেন্ট, প্রাসাদসম টাউনহাউসসহ ৩০০টির বেশি সম্পত্তির মালিক হন।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) এক যৌথ অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি ঢাকায় এখন তদন্তের মুখোমুখি, গত এক বছরে তাদের অনেকেই যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর কিংবা পুনঃঅর্থায়ন করছেন।
এই লেনদেনগুলো প্রশ্ন তুলেছে, তদন্তাধীন ব্যক্তিরা কীভাবে এখনো লন্ডনে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন। আর তাদের লেনদেনে সহায়তাকারী যুক্তরাজ্যের আইন ও পরামর্শ সংস্থাগুলো যথাযথভাবে সতর্ক কি না।
গত জুনের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্যের ডরচেস্টারে ছিল। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আরও দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল।
লন্ডন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করে। যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশকে পাচারকৃত সম্পদ শনাক্তে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
চৌধুরী ও রহমান পরিবারের সম্পদ জব্দের মতো আরও পদক্ষেপ চান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর। পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনার উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
আহসান মনসুর বলেন, ‘আমরা জানি অনেকে এখন সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছে। আমরা চাই, ব্রিটিশ সরকার আরও সম্পত্তি ফ্রিজ (জব্দ) করুক।’
লেনদেন আটকে দেওয়া হলে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সম্পদ ফেরত আনার বিষয়েও আশাবাদী আহসান মনসুর।
এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, গত মাসে তিনি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কাছে অনুরোধ করেছেন আরও ব্যক্তিদের সম্পদ জব্দ করার জন্য। কারণ, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী গত কয়েক মাসে এই সম্পত্তি কেনাবেচার বাজারে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে।
যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে ঢাকায় তদন্তের মুখে পড়া ব্যক্তিদের সম্পত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্তত ২০টি অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং বা ‘লেনদেনের আবেদন’ জমা পড়েছে। সাধারণত বিক্রি, মালিকানা পরিবর্তন কিংবা বন্ধক পরিবর্তনের সময় এ আবেদন করা হয়।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন দুই কোটি ৪৫ লাখ পাউন্ডের তিনটি সম্পত্তিও ওই ২০টি আবেদনের মধ্যে রয়েছে।
নাইটসব্রিজের একটি চারতলা টাউন হাউস নিয়ে সম্প্রতি দুটি লেনদেন হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এটি বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি কোম্পানির মালিকানাধীন ছিল। গার্ডিয়ানের তথ্যানুসারে, সোবহান পরিবারের একাধিক সদস্য বর্তমানে অর্থপাচারের অভিযোগে এনসিএর তদন্তের আওতায় রয়েছেন।
এপ্রিল মাসে ওই সম্পত্তি বিনা মূল্যে ব্রিটিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্রুকভিউ হাইটস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্রুকভিউ হাইটস লিমিটেডের মালিক আগে ওরবিস লন্ডন নামে রিয়েল এস্টেট ফার্ম পরিচালনা করতেন। ওরবিস আগে সোবহানদের হয়ে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে সহায়তা করেছে।
এরপর সম্পত্তিটি ৭৩ লাখ পাউন্ডের বেশিতে বিক্রি হয় সম্পূর্ণ নতুন এক কোম্পানির কাছে। এই কোম্পানির পরিচালক একজন অ্যাকাউন্টেন্ট, যার কোনো অনলাইন উপস্থিতি নেই। একাধিক কোম্পানির মালিক ও পরিচালক হিসেবে নিবন্ধিত আছেন এই অ্যাকাউন্টেন্ট। এই কোম্পানিগুলো সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ল্যান্ড রেজিস্ট্রির নথি বলছে, সোবহান পরিবারের আরেক সদস্য শাফিয়াত সোবহানের মালিকানাধীন সারের ভার্জিনিয়া ওয়াটারে ৮০ লাখ পাউন্ড মূল্যের প্রাসাদতুল্য বাড়িসহ দুটি লেনদেনের আবেদন জমা হয়েছে।
সোবহান পরিবারের সঙ্গে গার্ডিয়ান যোগাযোগ করলেও কেউ সাড়া দেননি। তবে এর আগে পরিবারটি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিল ও অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে জানিয়েছিল।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন ব্যক্তিকে তদন্ত করছে দুদক। এই দুই ব্যক্তি গত এক বছরে একাধিক সম্পত্তি লেনদেনে যুক্ত ছিলেন।
একজন হচ্ছেন সাইফুজ্জামানের ভাই আনিসুজ্জামান ও অন্যজন যুক্তরাজ্যভিত্তিক একজন সফল ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, যার নাম গার্ডিয়ান প্রকাশ করেনি।
আনিসুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা চারটি সম্পত্তি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে তৎপরতার তথ্য পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে গত জুলাইয়ে সেন্ট্রাল লন্ডনের রিজেন্টস পার্কের পাশে ১ কোটি পাউন্ড মূল্যের একটি জর্জিয়ান টাউন হাউস বেচা হয়েছে। এছাড়া পুনঃঅর্থায়ন সম্পর্কিত আরও তিনটি আবেদন জমা পড়েছে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরীর আইনজীবীরা বলছেন, তাঁরা সম্পত্তি জব্দের কোনো বৈধ কারণ দেখেন না। আর রিজেন্টস পার্কের সম্পত্তি বিক্রির চুক্তি ২০২৩ সালে অভ্যুত্থানের আগে হয়েছিল।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনভিত্তিক এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীকে অনিয়মিতভাবে ঋণ পেতে সহায়তা করেছিলেন কি না এ ব্যাপারটি তদন্ত করার জন্য দুদকের কাছে অনুরোধ করেছিলেন দেশের বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইউসিবির চেয়ারম্যান।
এই বছর, বাংলাদেশের একটি আদালত ঐ ব্যবসায়ীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তিনি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে আরও তিনটি সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের মালিকানাধীন সম্পত্তির ক্ষেত্রে। বেক্সিমকো গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহী এই দুই ব্যক্তিও বর্তমানে দুদকের তদন্তের আওতায় রয়েছেন।
গত মাসে মেইফেয়ারের গ্রোসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত তিন কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্টসহ তাদের কিছু সম্পত্তি এনসিএ জব্দ করেছে।
রহমান পরিবারের আইনজীবীরা বলেছেন, তারা কোনো অনিয়ম করেননি। বাংলাদেশের ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার’ কারণে অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তারা। যুক্তরাজ্যে যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
যুক্তরাজ্যের কর ও দুর্নীতিবিরোধী সংসদীয় গ্রুপের চেয়ারম্যান জো পাওয়েল বলেন, তদন্ত চলাকালে সম্পদ জব্দ না করলে তা দ্রুত ‘অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে’। তিনি এনসিএর এখন পর্যন্ত পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও আরও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রশ্ন তুলছে, যেসব ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হয়ে কাজ করেছে বা সহযোগিতা করেছে তাদের ভূমিকা কতটা স্বচ্ছ?
রহমান পরিবারের মালিকানাধীন সম্পত্তির লেনদেন আবেদন জমা দিয়েছে আইনি সংস্থা জাসওয়াল জনস্টন। এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, সংস্থাটি কোনো বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তারা যাচাই-বাছাইয়ের বাধ্যবাধকতাকে ‘অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে’ বিবেচনা করে।
রহমান পরিবারের তিন কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি ও সোবহান পরিবারের একজন সদস্যের মালিকানাধীন ৮০ লাখ পাউন্ড মূল্যের বাড়ি লেনদেনের জন্য আবেদনকারী আইনি সংস্থা মেরালি বিডল এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের একজন মুখপাত্র বলেন, পেশাদার আইনি সংস্থাগুলোর তদন্তাধীন গ্রাহকদের বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সম্পদের উৎস পরীক্ষা করা ও সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো তাদের কর্তব্য।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, এই অর্থ আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে এবং তখন তা ফেরত আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।’
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের চলমান তদন্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)।
এর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যে পরিবারটির সম্পত্তির বিশদ তথ্য উঠে এসেছিল। এর তিন সপ্তাহ পর শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭ কোটি পাউন্ডের বেশি সম্পদ জব্দ করে এনসিএ। মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময়ে সাইফুজ্জামান যুক্তরাজ্যে অ্যাপার্টমেন্ট, প্রাসাদসম টাউনহাউসসহ ৩০০টির বেশি সম্পত্তির মালিক হন।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) এক যৌথ অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি ঢাকায় এখন তদন্তের মুখোমুখি, গত এক বছরে তাদের অনেকেই যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর কিংবা পুনঃঅর্থায়ন করছেন।
এই লেনদেনগুলো প্রশ্ন তুলেছে, তদন্তাধীন ব্যক্তিরা কীভাবে এখনো লন্ডনে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন। আর তাদের লেনদেনে সহায়তাকারী যুক্তরাজ্যের আইন ও পরামর্শ সংস্থাগুলো যথাযথভাবে সতর্ক কি না।
গত জুনের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্যের ডরচেস্টারে ছিল। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আরও দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল।
লন্ডন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করে। যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশকে পাচারকৃত সম্পদ শনাক্তে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
চৌধুরী ও রহমান পরিবারের সম্পদ জব্দের মতো আরও পদক্ষেপ চান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর। পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনার উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
আহসান মনসুর বলেন, ‘আমরা জানি অনেকে এখন সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছে। আমরা চাই, ব্রিটিশ সরকার আরও সম্পত্তি ফ্রিজ (জব্দ) করুক।’
লেনদেন আটকে দেওয়া হলে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সম্পদ ফেরত আনার বিষয়েও আশাবাদী আহসান মনসুর।
এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, গত মাসে তিনি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কাছে অনুরোধ করেছেন আরও ব্যক্তিদের সম্পদ জব্দ করার জন্য। কারণ, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী গত কয়েক মাসে এই সম্পত্তি কেনাবেচার বাজারে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে।
যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে ঢাকায় তদন্তের মুখে পড়া ব্যক্তিদের সম্পত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্তত ২০টি অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং বা ‘লেনদেনের আবেদন’ জমা পড়েছে। সাধারণত বিক্রি, মালিকানা পরিবর্তন কিংবা বন্ধক পরিবর্তনের সময় এ আবেদন করা হয়।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন দুই কোটি ৪৫ লাখ পাউন্ডের তিনটি সম্পত্তিও ওই ২০টি আবেদনের মধ্যে রয়েছে।
নাইটসব্রিজের একটি চারতলা টাউন হাউস নিয়ে সম্প্রতি দুটি লেনদেন হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এটি বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি কোম্পানির মালিকানাধীন ছিল। গার্ডিয়ানের তথ্যানুসারে, সোবহান পরিবারের একাধিক সদস্য বর্তমানে অর্থপাচারের অভিযোগে এনসিএর তদন্তের আওতায় রয়েছেন।
এপ্রিল মাসে ওই সম্পত্তি বিনা মূল্যে ব্রিটিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্রুকভিউ হাইটস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্রুকভিউ হাইটস লিমিটেডের মালিক আগে ওরবিস লন্ডন নামে রিয়েল এস্টেট ফার্ম পরিচালনা করতেন। ওরবিস আগে সোবহানদের হয়ে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে সহায়তা করেছে।
এরপর সম্পত্তিটি ৭৩ লাখ পাউন্ডের বেশিতে বিক্রি হয় সম্পূর্ণ নতুন এক কোম্পানির কাছে। এই কোম্পানির পরিচালক একজন অ্যাকাউন্টেন্ট, যার কোনো অনলাইন উপস্থিতি নেই। একাধিক কোম্পানির মালিক ও পরিচালক হিসেবে নিবন্ধিত আছেন এই অ্যাকাউন্টেন্ট। এই কোম্পানিগুলো সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ল্যান্ড রেজিস্ট্রির নথি বলছে, সোবহান পরিবারের আরেক সদস্য শাফিয়াত সোবহানের মালিকানাধীন সারের ভার্জিনিয়া ওয়াটারে ৮০ লাখ পাউন্ড মূল্যের প্রাসাদতুল্য বাড়িসহ দুটি লেনদেনের আবেদন জমা হয়েছে।
সোবহান পরিবারের সঙ্গে গার্ডিয়ান যোগাযোগ করলেও কেউ সাড়া দেননি। তবে এর আগে পরিবারটি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিল ও অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে জানিয়েছিল।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন ব্যক্তিকে তদন্ত করছে দুদক। এই দুই ব্যক্তি গত এক বছরে একাধিক সম্পত্তি লেনদেনে যুক্ত ছিলেন।
একজন হচ্ছেন সাইফুজ্জামানের ভাই আনিসুজ্জামান ও অন্যজন যুক্তরাজ্যভিত্তিক একজন সফল ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, যার নাম গার্ডিয়ান প্রকাশ করেনি।
আনিসুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা চারটি সম্পত্তি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে তৎপরতার তথ্য পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে গত জুলাইয়ে সেন্ট্রাল লন্ডনের রিজেন্টস পার্কের পাশে ১ কোটি পাউন্ড মূল্যের একটি জর্জিয়ান টাউন হাউস বেচা হয়েছে। এছাড়া পুনঃঅর্থায়ন সম্পর্কিত আরও তিনটি আবেদন জমা পড়েছে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরীর আইনজীবীরা বলছেন, তাঁরা সম্পত্তি জব্দের কোনো বৈধ কারণ দেখেন না। আর রিজেন্টস পার্কের সম্পত্তি বিক্রির চুক্তি ২০২৩ সালে অভ্যুত্থানের আগে হয়েছিল।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনভিত্তিক এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীকে অনিয়মিতভাবে ঋণ পেতে সহায়তা করেছিলেন কি না এ ব্যাপারটি তদন্ত করার জন্য দুদকের কাছে অনুরোধ করেছিলেন দেশের বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইউসিবির চেয়ারম্যান।
এই বছর, বাংলাদেশের একটি আদালত ঐ ব্যবসায়ীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তিনি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে আরও তিনটি সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের মালিকানাধীন সম্পত্তির ক্ষেত্রে। বেক্সিমকো গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহী এই দুই ব্যক্তিও বর্তমানে দুদকের তদন্তের আওতায় রয়েছেন।
গত মাসে মেইফেয়ারের গ্রোসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত তিন কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্টসহ তাদের কিছু সম্পত্তি এনসিএ জব্দ করেছে।
রহমান পরিবারের আইনজীবীরা বলেছেন, তারা কোনো অনিয়ম করেননি। বাংলাদেশের ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার’ কারণে অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তারা। যুক্তরাজ্যে যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
যুক্তরাজ্যের কর ও দুর্নীতিবিরোধী সংসদীয় গ্রুপের চেয়ারম্যান জো পাওয়েল বলেন, তদন্ত চলাকালে সম্পদ জব্দ না করলে তা দ্রুত ‘অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে’। তিনি এনসিএর এখন পর্যন্ত পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও আরও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রশ্ন তুলছে, যেসব ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হয়ে কাজ করেছে বা সহযোগিতা করেছে তাদের ভূমিকা কতটা স্বচ্ছ?
রহমান পরিবারের মালিকানাধীন সম্পত্তির লেনদেন আবেদন জমা দিয়েছে আইনি সংস্থা জাসওয়াল জনস্টন। এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, সংস্থাটি কোনো বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তারা যাচাই-বাছাইয়ের বাধ্যবাধকতাকে ‘অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে’ বিবেচনা করে।
রহমান পরিবারের তিন কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি ও সোবহান পরিবারের একজন সদস্যের মালিকানাধীন ৮০ লাখ পাউন্ড মূল্যের বাড়ি লেনদেনের জন্য আবেদনকারী আইনি সংস্থা মেরালি বিডল এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের একজন মুখপাত্র বলেন, পেশাদার আইনি সংস্থাগুলোর তদন্তাধীন গ্রাহকদের বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সম্পদের উৎস পরীক্ষা করা ও সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো তাদের কর্তব্য।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, এই অর্থ আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে এবং তখন তা ফেরত আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।’
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের চলমান তদন্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা দাবি করছেন, মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহগুলো হস্তান্তর করেছে। এ দাবি সত্য নয় বলে বিবৃতি দিয়েছে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
১ ঘণ্টা আগেগোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার করছে না। বরং যারা অপরাধী, তাঁদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
১ ঘণ্টা আগেবিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতার জন্য ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা কখনো ক্ষমা পাবেন না। তাকে ‘মানবতার এবং সব মায়েদের প্রতি লজ্জা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
৩ ঘণ্টা আগেদুর্ঘটনার পর বাসটি জব্দ করে থানার দেড়শ গজের মধ্যে মহাসড়কের পাশে রাখা ছিল। শনিবার রাতে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়।
৪ ঘণ্টা আগে