চলতি বছরের গত ১০ মাসে রাজধানীতে ১৯৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পুলিশের তথ্যে, এ হিসাবে মাসে গড়ে ২০ ব্যক্তি পারিবারিক কলহ, পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মাসে রাজধানীতে গড়ে ২০টির মতো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। চলতি বছরেও গড়ে এই হারে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে বেশির ভাগ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। পারিবারিক কলহ, পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা করণে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে।
বিগত ১০ বছরের অপরাধ তথ্য পর্যালোচনা করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে বলেও দাবি করেন তালেবুর রহমান।
রাজধানীর পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় পুলিশ অনুসন্ধান করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যায় জড়িত বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের পর মূল তথ্য জানা যাবে।
২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ১৬৪৯ জন
পুলিশ গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র, গান পাউডার, ককটেল। মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, সাড়ে ৩০ কেজি গান পাউডার, গোলাবারুদ ও ককটেল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এক হাজার ৬৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জুলাই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার রায় ১৭ নভেম্বর ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে। আর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার ঘটনা ঘটে। প্রায় এক সপ্তাহে সারাদেশে অর্ধ শতাধিক যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
তিন পিস্তল জব্দ, গ্রেপ্তার ২৩
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় দিনব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে মোহাম্মদপুর থানা।
অন্যদিকে, রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা ডিবি তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তিনটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, ৬০ রাউন্ড গুলি, ৮০০ পিস ইয়াবা ও সাড়ে আট কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়।
ডিএমপির ডিসি ( মিডিয়া) তালেবুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। তিনি জানান, রাজধানীর কদমতলী থানাধীন নতুন শ্যামপুর রেললাইনের পশ্চিম পাশে ভাঙারি বাড়ির দক্ষিণের একটি টিনশেড বসতবাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে তিনজনকে গ্রেপ্তার, আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি, ইয়াবা ও গাঁজা জব্দ করা হয়।
তালেবুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তাররা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। তারা মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য উক্ত পিস্তল নিজ নিজ দখলে রেখেছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র আইনে ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
তালেবুর রহমানের সই করা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ডিবির পৃথক অভিযানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা হলেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম মোস্তফা, রাজধানীর মিরপুর থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এ ব্লক ইউনিট আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নজরুল ইসলাম লিটন, ছাত্রলীগের কর্মী মাহাবুল আকন্দ, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহাব উদ্দীন ও আওয়ামী লীগের কর্মী মীর হোসেন মিঠু।