leadT1ad

ইউএনওর সুপারিশে দুর্ঘটনায় হতাহতদের অনুদান দেয় বিআরটিএ, জানেন না নিজেই

বিআরটিএর ট্রাস্টি বোর্ড থেকে ২০২৩ সাল থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এজন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহত-নিহতদের তথ্য জেলা প্রশাসককে পাঠাবেন। তারপর ট্রাস্টি বোর্ডে যাবে। নিহতদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয় ৫ লাখ টাকা। আর আহত বিবেচনায় দেওয়া হয় ১ থেকে ৩ লাখ টাকা।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
রাজশাহী

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৫২
রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বুধবার নিরাপদ সড়ক দিবসে সভা। স্ট্রিম ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবার ও আহতদের ২০২৩ সাল থেকে অনুদান দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ট্রাস্টি বোর্ড। নিহতদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয় ৫ লাখ টাকা। আর আহত বিবেচনায় দেওয়া হয় ১ থেকে ৩ লাখ টাকা। এই টাকা দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রথম সুপারিশটি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। তবে রাজশাহীর বাগমারার ইউএনও মাহবুবুল ইসলাম এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) রাজশাহীতে এক আলোচনা সভা থেকে বিভাগী কমিশনারের দেওয়া ফোন কলে এই অবস্থা উঠে আসে।

বিআরটিএর ট্রাস্টি বোর্ড থেকে ২০২৩ সাল থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। সকালে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই অনুদানের ব্যাপারে কথা বলেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপজেলা পর্যায় থেকে আহত-নিহতদের তথ্য জেলা প্রশাসককে পাঠাবেন। তারপর ট্রাস্টি বোর্ডে যাবে।

এ সময় বিভাগীয় কমিশনার সভায় উপস্থিত বাস চালক, তার সহকারী (হেলপার), শ্রমিক নেতা ও পরিবহন মালিকদের কাছে জানতে চান, তাঁরা এই অনুদানের বিষয়ে কিছু জানেন কি না। এ সময় বেশকিছু ব্যক্তি উচ্চস্বরে জানান, তাঁদের জানানো হয়নি।

সভায় বিভাগীয় কমিশনার জানতে চান, চলতি বছরের ২৪ আগস্ট জেলার বাগমারা উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুজনকে এই অনুদান দেওয়া হয়েছে কি না। বিষয়টি জানতে তাঁর নির্দেশে জেলা প্রশাসনের একজন নারী কর্মকর্তা বাগমারার ইউএনও মাহবুবুল ইসলামকে ফোন করে বিভাগীয় কমিশনারকে কথা বলতে দেন। বিভাগীয় কমিশনার মোবাইল ফোনে লাউড স্পিকার দিয়ে সেটি মাইক্রোফোনের সামনে ধরে কথা বলেন।

কমিশনার বলেন, ‘মাহবুবুল ইসলাম, তোমার ওইখানে মাস দুয়েক আগে যে একটা অ্যাকসিডেন্টে মা মারা গেল দুইটা বাচ্চা রেখে, তুমি গেছিলা সেই বাড়িতে?’ ইউএনও বলেন, ‘জ্বী স্যার’। কমিশনার জানতে চান, ‘সেই বাচ্চাদের অবস্থা কি?’ ইউএনও বলেন, ‘বাচ্চাদের অবস্থা এখন ভালো স্যার। আর দুইজনকে ৫০ হাজার করে মোট এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।’ বিভাগীয় কমিশনার জানতে চান, ‘এই টাকা তুমি কই পাইলা?’ ইউএনও জানান, উপজেলা পরিষদের অপ্রত্যাশিত ব্যয় থেকে এটা দেওয়া হয়েছে।

এরপর বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘বিআরটিএর যে এই ধরনের অনুদানের খাত রয়েছে, এটা তুমি জানো?’ এ সময় কিছুটা থেমে ইউএনও বলেন, ‘স্যার, এইটা জানা ছিল না আমার।’ বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘এইটা তুমি জান না, এইটা কেউই জানে না। … তুমি ওই পরিবারকে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করার জন্য বলো। আর যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, জেলা প্রশাসনকে বলছি— সকল কেস, কোনো কেস যেন বাদ না পড়ে। সবাই আবেদন করবে।’

বিভাগীয় কমিশনার জানান, সড়ক দুর্ঘটনার একমাসের মধ্যে অনুদানের জন্য আবেদন করতে হয়। তবে এক বছর নয়, রাজশাহীতে যেন এক বছর পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হয়, সেই নির্দেশনা দেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি বিআরটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান।

জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেল এই সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলের সহকারী পরিচালক ফয়সাল হাসানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত