leadT1ad

মোহাম্মদপুরে জোড়া খুন: যেভাবে ধরা পড়ল আয়েশা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০০
গ্রেপ্তার আয়েশা। সংগৃহীত ছবি

মোহাম্মদপুরে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যার ঘটনায় ‘ক্লুলেস’ অবস্থায় শুরু হয়েছিল তদন্ত। গৃহকর্মী আয়েশার কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর; কিছুই না থাকায় এটি ছিল পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সিসিটিভি ফুটেজেও তাকে শনাক্ত করা যায়নি, কারণ সে প্রতিবারই বোরকা পরে মুখ ঢেকে আসা–যাওয়া করত। তবে ধাপে ধাপে ছিন্নসূত্র জোড়া লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত আয়েশাকে স্বামীসহ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান জানান, মা-মেয়ের হত্যাকাণ্ড ঘটে ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫১ থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে। নিহত লায়লার স্বামী আজিজুল ইসলাম (৫৭) তিন দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে মামলা করেন। তবে কোনো ছবি বা পরিচয় না থাকায় তদন্ত দল ডিজিটাল প্রমাণ ছাড়াই ম্যানুয়াল পথে অনুসন্ধান শুরু করে।

তদন্ত দল গত এক বছরে গৃহকর্মীদের সম্পৃক্ত চুরির ঘটনাগুলো খুঁজতে থাকে। গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্পে বসবাস এবং পূর্বে চুরির ইতিহাস; এসব মিলিয়ে সম্ভাব্য সন্দেহভাজনের তালিকা সংকুচিত করা হয়। এক পর্যায়ে হুমায়ুন রোডের একটি ভুক্তভোগী পরিবার থেকে পুরোনো একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। সিডিআর বিশ্লেষণে দেখা যায়, নম্বরটি ব্যবহার করত রাব্বি নামের একজন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে— রাব্বির স্ত্রীই হলো সেই আয়েশা এবং তারা আগে জেনেভা ক্যাম্পে থাকত; যা বাদীর দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়।

পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার আয়েশা। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে
পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার আয়েশা। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে

পরে হেমায়েতপুরে গিয়ে তাদের বাড়ি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অবশেষে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামের একটি বাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় আয়েশার কাছে পাওয়া যায় একটি চুরি করা ল্যাপটপ।

ডিএমপি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন ২ হাজার টাকা চুরি করে। টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তর্ক বাধে। চতুর্থ দিনে সুইচ গিয়ার চাকু লুকিয়ে বাসায় আসে। গৃহকর্ত্রী ফোনে স্বামীকে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে পেছন থেকে ছুরি মেরে আক্রমণ শুরু করে। মায়ের চিৎকার শুনে এগিয়ে আসা নাফিসাকেও ছুরিকাঘাত করে। নাফিসা ইন্টারকমে সাহায্য চাইতে গেলে আয়েশা ইন্টারকমের তার ছিঁড়ে ফেলে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনের মৃত্যু হয়।

উদ্ধার করা আলামত। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে
উদ্ধার করা আলামত। ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে

হত্যার পর আয়েশা নিজের রক্তমাখা কাপড় বদলে নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ ও ফোন নিয়ে যায়। পরে সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন ও পোশাকভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেয়। অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল বলেন, আয়েশার পূর্বেও একাধিক চুরির রেকর্ড রয়েছে; এমনকি নিজের বোনের বাসা থেকেও টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করেছিল।

তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই শহিদুল ওসমান মাসুম জানিয়েছেন, আয়েশা ও তার স্বামীর ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই তাঁদের আদালতে হাজির করা হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত