leadT1ad

ঢাবি প্রশাসনকে নিয়ে যেসব অভিযোগ ডাকসু প্রার্থীদের

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৩
ঢাবি প্রশাসনকে নিয়ে যেসব অভিযোগ ডাকসু প্রার্থীদের। স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় সাড়ে ১৬ ঘণ্টা পর আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে শীর্ষ তিন পদসহ ২৮টি পদের ২৩টিতেই জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’।

তবে ফলাফল ঘোষণা করার আগেই বিভিন্ন প্যানেল ও নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। জনপ্রিয় ভিপি প্রার্থীদের অভিযোগ থাকলো এই প্রতিবেদনে।

প্রশাসনের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ আবিদের

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেন,‌ ‘পরিকল্পিত কারচুপির এই ফলাফল দুপুরের পরপরই অনুমান করেছি। নিজেদের মতো করে সংখ্যা বসিয়ে নিন। এই পরিকল্পিত প্রহসন প্রত্যাখ্যান করলাম।’

এর আগে সন্ধ্যায় ভোট গণনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারচুপি করছে বলে অভিযোগ তুলেন ছাত্রদলসহ দুটি প্যানেলের প্রার্থীরা। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে টিএসসি কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়ে এই অভিযোগ তোলেন তাঁরা। এ সময় প্রার্থীদের সামনে কেন্দ্রটির ভোট গণনা করার দাবি জানান এই প্রার্থীরা। তবে তাতে সাড়া দেয়নি প্রশাসন।

প্রাপ্ত ফলাফলে আবিদুল ইসলাম ৫৭০৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন।

ভোট গণনায় ‘স্থবিরতা’ নিয়ে শামীমের প্রশ্ন

মঙ্গলবার বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ফলাফল প্রকাশ করা হয় পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে আটটায়। মঙ্গলবার রাত আটটায় স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শামীম হোসেন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘ভোট গণনায় এত স্থবিরতা কেন? এলইডি বন্ধ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বচ্ছতা বজায় না রাখলে জুলাই অভ‍্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জনগণ তাদের ছাড় দিবে না।’

প্রাপ্ত ফলাফলে শামীম হোসেন ৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন।

শিবির পালিত প্রশাসন বললেন উমামা

স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ২৪ মিনিটে স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বয়কট! বয়কট! ডাকসু বর্জন করলাম। সম্পূর্ণ নির্লজ্জ কারচুপির নির্বাচন। ৫ আগস্টের পরে জাতিকে লজ্জা উপহার দিল ঢাবি প্রশাসন। শিবির পালিত প্রশাসন।’

দুই ঘণ্টা পরে দেওয়া আরেকট স্ট্যাটাসে অভিনব পন্থায় নির্বাচন কারচুপি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন উমামা। তিনি লিখেন, ‘কারচুপির নির্বাচনের জন্য ১৪০০ মানুষ মরছে! একি ইতিহাস, একি ব্যবস্থা। মাঝে দিয়ে এতগুলা পরিবার নিঃস্ব হলো। অভিনব পন্থায় নির্বাচন কারচুপি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো রাত হয়ে থাকবে। নিজেদের হীনস্বার্থের জন্য ইসলামি ছাত্রশিবির কি পরিমাণ বেঈমানি করেছে জাতির সঙ্গে তা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।’

প্রাপ্ত ফলাফলে উমামা ফাতেমা ৩৩৮৯ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন।

জামায়াত-শিবিরের ছায়া সরকার

মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভাগাভাগি করে নির্বাচন কারচুপির অভিযোগ তুলেন। ১২টা ৫০ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন,‘আমরা এমন ডাকসু নির্বাচন চাই নাই, যেখানে শিবির, ছাত্রদল আর বিএনপি জামাত মিলে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করবে। নির্বাচন কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভাগাভাগি করে শিবির ছাত্রদলকে নির্বাচনে কারচুপি করতে, অনিয়ম করে সহযোগিতা করেছে।’

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে অভিযোগ তুলে রাত ৯টার দিকে টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ। এসময় ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ‘আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন ক্ষমতার ভাগাভাগির রাজনীতিতে নিমজ্জিত। আমরা দেখেছি, ভিসি, প্রক্টর, সহকারী প্রক্টররা সবাই ভাগাভাগির মাধ্যমে পদ বণ্টন করেছেন। অনেকে জামায়াতপন্থী, অনেকে বিএনপিপন্থী। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।’

বিশেষ করে ভিসি (উপাচার্য) একটি সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম (এসএমটি) গঠন করে প্রক্টরকে ক্ষমতাশালী করেছেন উল্লখে করে আব্দুল কাদের বলেন, ‘অথচ প্রক্টর শিক্ষকের মর্যাদায় ভিসির অনেক নিচে। এভাবে তাঁকে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে বসানো হয়েছে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। প্রক্টর হলগুলোতে শৃঙ্খলা কমিটির নামে ছায়া সরকার চালাচ্ছেন, সব জায়গায় মেকানিজম করছেন। ১৭০ জন পোলিং অফিসার নিয়োগের বিষয়েও কেবল প্রক্টরই জানতেন, কারা দায়িত্বে থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনের একটি ভিডিও নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন কাদের। সেখানে ডাকসু নির্বাচনকে জামায়াত ও বিএনপির ক্ষমতার ভাগাভাগি বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশনকে তিনি আনাড়ি, অর্থব ও অযোগ্য বলেন।

প্রাপ্ত ফলাফলে আব্দুল কাদের ১১০৩ ভোট পেয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত