leadT1ad

মানবাধিকার কমিশনের অফিস প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ

সরকারের সিদ্ধান্ত ন্যায়ানুগ হয়নি, আমরাও উদ্বিগ্ন

দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস চায় না হেফাজত।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৮: ০৬
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৯: ১৫
হেফাজতের গোলটেবিল আলোচনা। ছবি: স্ট্রিম ছবি

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের সরকারি সিদ্ধান্ত ন্যায়ানুগ হয়নি এবং এ নিয়ে বিএনপিও উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

আজ সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।

‘ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিসসংক্রান্ত চুক্তিকে কেন্দ্র করে করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক এ আলোচনায় অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরাও উদ্বিগ্ন বাকি সবার মতো। বাংলাদেশে যে মানবাধিকার পরিস্থিতি, তার থেকে অনেক বেশি খারাপ গাজায়, প্যালেস্টাইনে, আরাকানে। বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদের ওপর অনেক অত্যাচার হচ্ছে। সেখানে আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা এরকম দেখতে পাই না।’

এ সময় শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম, খুন, নির্যাতনের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ২০১৩ সালের শাপলা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত হিসাব এখনো বের করা যায়নি। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঘোরতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হওয়ায় সরকার ও জাতিসংঘ এ দেশে মানবাধিকার অফিস স্থাপনের প্রয়োজন বোধ করেছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ছাড়া সরকার চুক্তি করায় সেটি ন্যায়ানুগ হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আসলে মৌলিক কোনো অধিকার নেই। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা দরকার।

হেফাজতের গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতি মানবাধিকারের কোন কোন বিষয় অনুমোদন করে, তা বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের সংজ্ঞার মধ্যে এখানে যদি বাস্তবায়নের জন্য এলজিবিটিকিউ-কে নিয়ে আসা হয় সেটা কি আমাদের সমাজব্যবস্থা আমাদের ধর্মীয় কালচার মেনে নেবে? মানা সম্ভব নয়। আমাদের এখানে অনেক আঞ্চলিক ইস্যু আছে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যু আছে। এখানে মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে যদি আমাদের দেশের অখণ্ডতা হুমকির সম্মুখীন হয় সেক্ষেত্রেও আমাদের চিন্তা করতে হবে।’

এসব কারণে একটি বৃহৎ পরিসরে রাজনৈতিক আলোচনার পর চুক্তিটি হলে এখন আর বিতর্ক হতো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, তিন বছরের জন্য যে মানবাধিকার কমিশন অথবা অফিস স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেটা রিভিউ করার একটা সময়সীমা আছে, সম্ভবত সেটা ১ বছর বা ২ বছর পরে সেটা রিভিউ হবে। আর ৩ বছর পরে সেই কন্টাক্ট রিনিউ করবে কিনা, সেটা পরবর্তী সরকার ও জনগণ বিবেচনা করবে। এগুলো বিবেচনায় আমি এই সরকারকে পরামর্শ দিবো তারা যেন সব কিছু যাচাই-বাছাই করে মানবাধিকার কমিশনের ঢাকায় অফিস স্থাপনের বিষয়টা পুনর্বার বিবেচনা করে।’

হেফাজত নেতাদের উদ্দেশ্যে এ সময় সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের মতামত আপনাদের মতামতের সঙ্গে প্রায় এক। তবে আমরা চাই, বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত থাকুক।’

এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নিয়েও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘একটা সাংঘাতিক খবর আছে, আমরা শুনতে পাচ্ছি যে বাংলাদেশে জাতিসংঘের বর্তমান যে আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস উনার মেয়াদ সমাপ্তির দিকে। উনার স্থলে যিনি আসবেন, তাঁর ব্যাপারে আমরা কিছু আপত্তিকর কথা শুনেছি। তাকে অনুমতি দেওয়ার আগে বাংলাদেশ সরকার সে বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। আমি এর বেশি খোলাসা করে বলতে চাই না। বিষয়টা সেন্সেটিভ। তিনি যদি তার ব্যক্তি আচরণের বিষয়টা বাংলাদেশে ইমপ্লিমেন্ট করতে চায় তাহলে হয়তো আমাদের সমাজের জন্য সেটা একটু অসুবিধাজনক হবে। আপনারা যে যা বোঝার বুঝে নিন, আমি এর বেশি খোলাসা করে এই মুহূর্তে বলাটা ঠিক হবে না।’

দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস চায় না হেফাজত

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, দেশে আধিপত্যবাদী শক্তির কুনজর পড়েছে। অন্যদিকে সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, হেফাজতে ইসলাম জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস বাংলাদেশে চায় না। এই ক্ষেত্রে হেফাজতের অবস্থান পরিষ্কার।

হেফাজতের উপদেষ্টা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলকে ঘিরে ইসরায়েলের আদলে একটি রাষ্ট্র তৈরি করতে চাইছে একটা পক্ষ। দেশ ও সমাজবিরোধী কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, হেফাজতে ইসলাম সরকারকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ জানিয়েছে। হেফাজত দেশ ও ইসলামের কল্যাণে কারো মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল সকলের মতামতকে সামনে রেখে হেফাজত এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় স্থির করবে।

দেশের সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে সরকারকে অনুরোধ করেন হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক।

আলেমদের পরামর্শ না মানলে হেফাজত কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন হেফাজতের নায়েবে আমির মহিউদ্দিন রব্বানী। মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজি বলেন, ‘এই কমিশন চালু হলে ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে কটুক্তি করা হলে তারা বলবে বাকস্বাধীনতা, আমরা প্রতিবাদ করলে হয়ে যাবো বিশৃঙ্খলাকারী।’

হেফাজতের সহকারী মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিনী বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশন স্পষ্টত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দালালি ছাড়া কিছুই করে না। মূলত মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এই কমিশন আসছে।’

জাতিসংঘকে মুসলিম বিরোধী সংস্থা বলে মন্তব্য করেছেন যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করিম কাসিমি। তিনি বলেন, দেশে দেশে যেখানে মুসলমান রয়েছেন সেখানেই নিপীড়ন চলছে। এই নিপীড়নের পেছনে রয়েছে জাতিসংঘের কালো হাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানের এই দেশে অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিল করার আহ্বান জানান তিনি।

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মীর মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, এ দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, তা নিয়েই আমরা থাকতে চাই। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস এসে এ দেশে এলজিবিটির মতো অসভ্যতা কায়েম করবে আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।

হেফাজতে ইসলামকে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন উল্লেখ করে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল হক পিএসসি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না অথচ এই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মুন্সী আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত