leadT1ad

রামপুরায় হত্যা মামলা

আন্দোলন দমনে ওসিকে ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেন হাবিবুর রহমান: আদালতে সাক্ষী

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫১
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সংগৃহীত ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে রামপুরায় আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখায় তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দিয়েছিলেন।

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রামপুরায় শহীদ নাদিম মিজান ও মায়া ইসলামকে হত্যা এবং শিশু মুসাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে এই জবানবন্দি দেন তৎকালীন রামপুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া খান।

ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যরা।

পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ও গ্রেপ্তার আসামি চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পক্ষে আইনজীবী সারওয়ার জাহান উপস্থিত ছিলেন।

এ মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন—ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান, রামপুরা থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) চঞ্চল চন্দ্র সরকার।

এর মধ্যে চঞ্চল চন্দ্র গ্রেপ্তার আছেন এবং আজ তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বাকি চার আসামি পলাতক রয়েছেন।

সাক্ষী এসআই গোলাম কিবরিয়া (৩৩) বর্তমানে বাড্ডা থানায় কর্মরত। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আমি রামপুরা থানায় এসআই পদে কর্মরত ছিলাম। গত বছরের ১৮ জুলাই আমি থানায় অবস্থানকালে থানার বেতার অপারেটরের মাধ্যমে জানতে পারি ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্যার আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশন নিয়ে সিআর বা চাইনিজ রাইফেল ফায়ার করার নির্দেশ দেন।’

তিনি ১৯ জুলাইয়ের ঘটনার বর্ণনায় বলেন, ওই দিন জুমার নামাজের পর থানার আশেপাশে এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার জামায়েত হতে থাকে। ...উক্ত বার্তা পেয়ে ওসি মসিউর রহমান স্যার তৎকালীন খিলগাঁও জোনের এডিসি মাহমুদ রাশেদুল ইসলাম এবং বিজিবির এপিএস (সদস্য) নিয়ে রামপুরা থানায় আসেন। তখন উক্ত পরিস্থিতিতে ওনাদের নির্দেশনায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়।’

সাক্ষী আরও বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে রামপুরা (বিটিভি) ভবনের পাশে বনশ্রী জামে মসজিদের সামনে নাদিম মিজান নামে একজন ব্যক্তি নিহত হয়। থানার পাশের গলিতে মায়া ইসলাম নামে একজন নিহত এবং মুসা খান নামে একজন শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় বলে জানতে পারি।’

আজকের জবানবন্দির গুরুত্বপূর্ণ অংশে এসআই কিবরিয়া বলেন, ‘পরবর্তীতে গত বছরের ২২ জুলাই তারিখে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান থানায় এসে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের দমনের ভূমিকা রাখার জন্য অফিসার ইনচার্জ মহোদয়ের নিকট এক লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার প্রদান করেন।’

তিনি আরও জানান, ইন্টারনেট সচল হওয়ার পর রামপুরা থানা ভবনের পার্শ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবনের কার্নিশে ঝুলন্ত এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে গুলির ভিডিও ভাইরাল হয়। এই ভিডিও নিয়ে ২৯ জুলাই এডিসি রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে মিটিং হয়। তখন সবাই ভিডিওতে এসআই তারিকুল ইসলাম ও এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ওই ব্যক্তিকে গুলি করেছিল বলে শনাক্ত করেন। (সাক্ষী এসময় ডকে উপস্থিত আসামি চঞ্চল চন্দ্রকে শনাক্ত করেন)।

জবানবন্দি শেষে সাক্ষী গোলাম কিবরিয়াকে আসামি চঞ্চল চন্দ্রের আইনজীবী সারওয়ার জাহান এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন জেরা করেন।

আদালত মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১০ নভেম্বর (সোমবার) দিন ধার্য করেছেন।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্যমতে, ওই অভ্যুত্থানে ৮ শতাধিক মানুষ নিহত হন, যাদের ‘জুলাই শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বেশ কয়েকটি মামলার বিচার চলছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত