leadT1ad

গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে আগুন

১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে, কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি দাবি ব্যবসায়ীদের

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৩৭
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৪৪
রাজধানীর গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে আগুন লেগেছে। বেলা ১১ টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্ট্রিম ছবি

রাজধানীর গুলিস্তানের অন্যতম ব্যস্ত ও জনবহুল বিপণিবিতান সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট। আজ শনিবার (২ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে মার্কেটটির পঞ্চম তলায় একটি গোডাউনে হঠাৎ আগুন লাগে। এক ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও, ততক্ষণে কয়েকটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে কোটি টাকার পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

আগুনের সূত্রপাত ও নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১১ ইউনিট

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, সকাল ১০টা ৩ মিনিটে আগুনের খবর পেয়ে প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে, যার মধ্যে ৯টি ইউনিট সক্রিয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং বাকি ২টি ইউনিট রাখা হয় ‘স্ট্যান্ড-বাই’ অবস্থায়। অবশেষে সকাল ১১টা ১২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ আগেই সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটকে অগ্নি-নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলাম। এখানে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান নেই, নেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। আমরা বারবার নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু মার্কেট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান। স্ট্রিম ছবি
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান। স্ট্রিম ছবি

পরে নজমুজ্জামান স্ট্রিমকে আরও বলেন, ‘এই মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ এলোমেলো ও অনিরাপদ। তারগুলো খোলা অবস্থায় ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। যেহেতু এটি ইলেকট্রনিক পণ্যের মার্কেট, ফলে মোবাইল অ্যাকসেসরিজ, প্লাস্টিক সামগ্রী থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রচণ্ড ধোঁয়ার সৃষ্টি করে।’

ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক ও ক্ষয়ক্ষতি

মার্কেটের পঞ্চম তলায় থাকা একটি গোডাউনের মালিক মো. সোহান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনের মতো সকাল ১০টার দিকে দোকান খুলি। কিছুক্ষণ পর দেখি ওপরের দিক থেকে কালো ধোঁয়া উঠছে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে যায়। পঞ্চম তলার গোডাউনে আগুন লাগে। আমার দোকানে বেশি ক্ষতি হয়নি, তবে যাদের গোডাউন পুড়েছে, তারা কোটি টাকার মালামাল হারিয়েছে।’

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বিজিবি উপস্থিতি ছিল। স্ট্রিম ছবি
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বিজিবি উপস্থিতি ছিল। স্ট্রিম ছবি

সোহান আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় মার্কেটে শতাধিক দোকান খোলা ছিল। আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্রেতা-বিক্রেতারা আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। অনেকে নিজের পণ্য রক্ষা করতে গিয়ে ঝুঁকিও নিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাইকিং করে লোকজনকে দ্রুত ভবন ছাড়ার নির্দেশ দিলেও অনেকেই তা অমান্য করে অবস্থান করতে থাকেন, যা ফায়ার সার্ভিসের কাজকে ব্যাহত করেছে।

উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ

ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার (কেরানীগঞ্জ) মো. আনোয়ার হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘ভবনের নিচতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত অনেক মানুষ অবস্থান করছিলেন। আমাদের সদস্যরা যখন ওপরে কাজ করছিলেন, তখন নিচে মানুষের ভিড় থাকায় রিস্ক বেড়ে যায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের সরে যেতে বললেও অনেকেই কথা শোনেননি। এতে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়েছে।’

আনোয়ার হোসেন জানান, পঞ্চম তলার দুটি দোকানের শাটার খুলে আগুনের উৎস চিহ্নিত করা হয় এবং সেখান থেকেই আগুন নির্বাপণ করা সম্ভব হয়। ওই দুটি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে, তবে আরও কিছু দোকানে ধোঁয়া ও পানি ঢুকে পড়েছে।

এখন পর্যন্ত কেউ নিহত বা গুরুতর আহত হননি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সিনিয়র স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এত বড় একটি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরও কোনো প্রাণহানি হয়নি, এটি একটি ভালো খবর।’

আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে বলে জানিয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত