leadT1ad

মোদিকে গদিতে রাখতে জাল ভোটার তালিকা, যে তথ্য তুলে ধরলেন রাহুল গান্ধী

স্ট্রিম প্রতিবেদকইনস্ক্রিপ্ট প্রতিবেদককলকাতা
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৫৩
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৫৮
রাহুল গান্ধী। সংগৃহীত ছবি

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর কথা বলেছিলেন। ৭ আগস্ট 'ভোট চোরি কা অ্যাটম বোমা সবুত' শিরোনামের সাংবাদিক সম্মেলনে ওই বোমাটি ফাটালেন তিনি। ১ ঘণ্টা ১২ মিনিটের ওই সম্মেলনে রাহুল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কারচুপি ও ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছেন।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাহুলের যত অভিযোগ

কগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করে বলেন, দেশজুড়ে ভোট কারচুপি হচ্ছে। কীভাবে ভোট চুরি হচ্ছে, তা জানতে তাঁদের অনেক সময় লেগেছে । ভোটার তালিকা নিয়ে পাঁচ স্তরে ছয় মাস ধরে তদন্ত করেছে কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। তাঁর অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনে কমিশন জাল ভোটার এবং নকল ভোটারদের ভোটদানের সুযোগ করে দিয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) সুবিধা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন আর বিজেপি সেই সুযোগে ভোটে কারচুপি করেছে।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটচুরি হয়েছে বেঙ্গালুরুর বিধানসভা কেন্দ্র মহাদেবপুরায়। বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রালের অধীনে এই বিধানসভা কেন্দ্র।

রাহুল বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বেঙ্গালুরু সেন্ট্রালে কড়া প্রতিযোগিতা হয়েছিল। কংগ্রেস প্রার্থী মনসুর আলি খান বেশির ভাগ সময়ে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, কংগ্রেস বিজেপির পিসি মোহনের কাছে ৩২ হাজার ৭০৭ ভোটে হেরেছে।

রাহুলের দাবি, কংগ্রেস কর্ণাটকের ২৮টি আসনের মধ্যে ১৬টি জিতবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু কংগ্রেস মাত্র ৯টি আসন পেয়েছে।

এর জন্য ভোট কারচুপিকেই দায়ী করে রাহুল বলেন, 'বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভায় মোট ভোট পড়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার। বিজেপি জিতেছে ৩২ হাজার ৭০৭ ভোটের ব্যবধানে। মহাদেবপুরায় কংগ্রেস পেয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৬ ভোট এবং বিজেপি পেয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৩২ ভোট। এই একটি আসন ছাড়া কংগ্রেস সব বিধানসভা জিতেছে।'

রাহুল আরও বলেন, 'আমরা ১ লাখ ২৫০টি ভোট চুরির প্রমাণ পেয়েছি। পাঁচটি ভিন্ন উপায়ে চুরি করা হয়েছে। কোথাও ভুয়া ভোটার, কোথাও ঠিকানা জাল বা একই ঠিকানায় অনেক ভোটার।'

সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধী ভোটার তালিকা তুলে ধরে দেখান, কীভাবে একটার পর একটা ভোটে ‘কারচুপি’ হয়েছে। ওই তালিকায় দেখা গেছে, চারটি ভিন্ন ভোটকেন্দ্রেই একই ব্যক্তির নাম রয়েছে। এ রকম শত শত ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, ৬৮ জন ভোটারের ঠিকানা ছিল একটি 'পানশালার'।

রাহুল মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, মহারাষ্ট্রেও ভোট কারচুপি হয়েছে। রাহুল বলেন, লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং তার জোট দলগুলোই রাজ্যের সিংহভাগ আসনে জিতেছিল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে তারা হেরে যায়। এর মধ্যে এক কোটি নতুন ভোটারকে যুক্ত করে ভোট তোলার অভিযোগ তুলছেন রাহুল।

হরিয়ানার নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে রাহুল বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস হরিয়ানায় ভালো ফল করেছিল, কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যায় কংগ্রেস। নিয়ম বদলে নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ দেয়নি। তিনি নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করেছেন।

রাহুল গান্ধী জানান, হরিয়ানায় ভুয়া ভোটার ১১ হাজার ৯৬৫। একই ভোটারের নাম একাধিকবার তালিকায় রয়েছে। ভুয়া ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে ৪০ হাজার ৯ জনের। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস-যোজনার ঠিকানাও রয়েছে বলে দাবি করেন রাহুল।

এ সময় রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচন কমিশন কেন ডিজিটাল ভোটার তালিকা প্রকাশ করেনি। ডিজিটাল ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হলে ৩০ সেকেন্ডে তাদের জালিয়াতি সামনে এসে যেত। তিনি বলেন, মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট চুরি হয়েছে। আর তার জন্যই নির্বাচনে হেরেছে কংগ্রেস। ৪০ লাখ সন্দেহজনক ভোটারের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। রাহুল প্রশ্ন তোলেন, পাঁচ বছরে মহারাষ্ট্রে যে ভোটারের সংখ্যা ছিল, তা পাঁচ মাসের মধ্যেই হঠাৎ বেড়ে গেল কী করে।

সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধী বলেন, যদি তারা (বিজেপি) আরও ২৫টি আসন হেরে যেত, তাহলে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা হারাতেন। এই কারণেই দলটি ঘটনাগুলো সাজিয়েছিল।

একাধিক আসনে ভোটার তালিকায় কারচুপি জবাব দিতে হবে জানিয়ে রাহুল নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলেন, 'আপনারা যে পদেই থাকুন না কেন, সিনিয়র হোন বা জুনিয়র, আপনাদের ক্ষমা করা হবে না।’

নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই রাহুল গান্ধীর অভিযোগের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিয়েছে। রাহুলের দাবির প্রমাণ জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে বিজেপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত