leadT1ad

যৌন কেলেঙ্কারিতে সব রাজকীয় উপাধি ও বাসভবন হারালেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

ব্রিটিশ যুবরাজ অ্যান্ড্রু (বামে) ও রাজা তৃতীয় চার্লস (ডানে)। ছবি: রয়টার্স।

যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস তার ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সব রাজকীয় উপাধি বাতিল করেছেন এবং তাকে রাজকীয় বাসভবন থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে অ্যান্ড্রুর সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিনের চাপের পর রাজা এই সিদ্ধান্ত নেন।

বাকিংহাম প্যালেস জানায়, রাজা তৃতীয় চার্লস প্রিন্স অ্যান্ড্রুর রাজকীয় উপাধি, সম্মাননা ও বিশেষাধিকার বাতিলের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এর মধ্যে জন্মগতভাবে পাওয়া তার ‘প্রিন্স’ উপাধি এবং ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস’ (এইচআরএইচ) মর্যাদাও রয়েছে।

পাশাপাশি রাজা তাকে উইন্ডসর পার্কে অবস্থিত দীর্ঘদিনের বাসভবন রয়্যাল লজ থেকে সরিয়ে স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে একটি ব্যক্তিগত আবাসে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনি ভাই হিসেবে রাজা চার্লসের কাছ থেকে ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তা পেতে থাকবেন।

এই পদক্ষেপ আসে যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে অ্যান্ড্রুর সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্ট যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে নতুন করে চাপ তৈরি হওয়ার পর। যদিও অ্যান্ড্রু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, রাজপরিবারের এই বিরল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এটি রাজপরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষায় রাজা চার্লসের কঠোর অবস্থানকে স্পষ্ট করে।

ব্রিটিশ ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রায় নজিরবিহীন। সর্বশেষ ১৯১৯ সালে প্রিন্স আর্নেস্ট অগাস্টাস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে তার ব্রিটিশ উপাধি হারান। অ্যান্ড্রুর এই ঘটনা আধুনিক রাজপরিবারের ইতিহাসে অন্যতম কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সম্প্রতি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নতুন করে আলোচনায় আসার পর রাজপ্রাসাদের ওপর অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চাপ বাড়ে। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ উপাধিও ত্যাগ করেন। কিন্তু রাজা আরও কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে জন্ম থেকেই পাওয়া তার ‘প্রিন্স’ উপাধিও বাতিল করেন।

যুবরাজ অ্যান্ড্রু ও ভার্জিনিয়া জিউফ্রে। ছবি: সংগৃহীত।
যুবরাজ অ্যান্ড্রু ও ভার্জিনিয়া জিউফ্রে। ছবি: সংগৃহীত।

রাজপ্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘অ্যান্ড্রু এখনো অভিযোগ অস্বীকার করলেও এই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন মনে করা হয়েছে। রাজা ও রানি সবসময় নির্যাতনের শিকারদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছেন।’

ভিকটিম ভার্জিনিয়া রবার্টস জিউফ্রের ভাই স্কাই রবার্টস বলেন, ‘আজ এক সাধারণ মার্কিন মেয়ের সত্য ও সাহস একজন ব্রিটিশ রাজপুত্রকে পরাস্ত করেছে।’ ভার্জিনিয়া ২০২৫ সালের এপ্রিলে ৪১ বছর বয়সে আত্মহত্যা করে মারা যান।

অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয় যখন ইমেইল ফাঁস হয়, যা প্রমাণ করে তিনি এপস্টেইনের সঙ্গে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় যোগাযোগ রাখতেন। জিউফ্রের মৃত্যুর পর গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয় তার স্মৃতিকথা ‘নোবডিস গার্ল। বইয়ে তিনি দাবি করেন, ১৭ বছর বয়সে অ্যান্ড্রু তার সঙ্গে তিনবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বইয়ে তিনি লেখেন, ‘অ্যান্ড্রু মনে করতেন আমার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা তার জন্মগত অধিকার।’

৬৫ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। ২০১৯ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করলেও সেটি তার ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাকে সব রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হয়।

২০২২ সালে তিনি নিউ ইয়র্কে জিউফ্রের দায়ের করা দেওয়ানি মামলা আদালতের বাইরে গোপন অর্থে (প্রায় ১২ মিলিয়ন পাউন্ড বলে ধারণা করা হয়) মীমাংসা করেন। তাতে তিনি অপরাধ স্বীকার না করলেও এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় এবং জিউফ্রের ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তবুও তিনি তখনও ‘প্রিন্স’ উপাধি, এইচআরএইচ মর্যাদা এবং রয়্যাল লজে বসবাসের অধিকার ধরে রাখেন।

রাজা চার্লসের এই সিদ্ধান্তের ফলে অ্যান্ড্রু আর ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস’, ‘ডিউক অব ইয়র্ক’, ‘আর্ল অব ইনভারনেস’ বা ‘ব্যারন কিলিলিয়’ নামে পরিচিত হবেন না। তিনি আর অর্ডার অব দ্য গার্টার বা রয়্যাল ভিক্টোরিয়ান অর্ডারের নাইট গ্র্যান্ড ক্রসের সম্মানও বহন করবেন না।

ভার্জিনিয়া জিউফ্রে ২০২৫ সালের এপ্রিলে আত্মহত্যা করে মারা যান। ছবি: সংগৃহীত।
ভার্জিনিয়া জিউফ্রে ২০২৫ সালের এপ্রিলে আত্মহত্যা করে মারা যান। ছবি: সংগৃহীত।

অ্যান্ড্রু এখন রাজপরিবারের স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে অবস্থিত একটি ব্যক্তিগত বাসভবনে চলে যাবেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ভবিষ্যতে রাজার কাছ থেকে সীমিত ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তা পাবেন।

রাজা তৃতীয় চার্লসের ছোট ভাই এবং প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কনিষ্ঠ সন্তান প্রিন্স অ্যান্ড্রু ২০১৯ সাল থেকে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এর মূল কারণ ছিল মার্কিন অর্থলগ্নিকারী ও দণ্ডপ্রাপ্ত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এপস্টিন নাবালিকা মেয়েদের যৌন শোষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন এবং ২০১৯ সালে বিচারাধীন অবস্থায় আত্মহত্যা করেন।

এই সিদ্ধান্তের সময়কাল রাজপরিবারের ওপর বাড়তে থাকা জনচাপের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। ভার্জিনিয়া রবার্টস জিউফ্রের মৃত্যুর পর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত তার স্মৃতিকথা নোবডিস গার্ল নতুন করে বিতর্ক উসকে দেয়। বইটিতে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনটি যৌন মিলনের অভিযোগ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়, যা পরে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে প্রকাশিত এপস্টিন-সংক্রান্ত নথিপত্রের মাধ্যমে আরও সমর্থন পায়।

এর পর জনমত ও সংসদীয় পর্যায়ে চাপ ক্রমেই বেড়ে যায়। লেবার পার্টির সংসদ সদস্য জেস ফিলিপসসহ বহু রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব রাজপরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষায় অ্যান্ড্রুকে সম্পূর্ণভাবে রাজকীয় জীবন থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানান।

রাজপ্রাসাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারিবারিক অভ্যন্তরীণ বিবেচনাও বড় ভূমিকা রেখেছে। অ্যান্ড্রুর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ পাউন্ড ব্যয়ের বিষয়টি পরিবারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। একইসঙ্গে রাজা চার্লসের নেতৃত্বে চলমান ‘স্লিম মনার্কি’ সংস্কারের লক্ষ্য—অর্থাৎ রাজতন্ত্রকে আরও আধুনিক ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা—এই পদক্ষেপকে ত্বরান্বিত করেছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত