ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে ‘হরমুজ প্রণালি’। পারস্য উপসাগরের এই জলপথ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ইউরোপ-এশিয়াসহ বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
গৌতম কে শুভ
পারস্য উপসাগরের একমাত্র সামুদ্রিক প্রবেশপথ ‘হরমুজ প্রণালি’। ইরান-ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকেই এই জলপথ আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। এর পরই হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে তেহরান।
গতকাল রোববার (২২ জুন) ইরানের সংসদ এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। ‘গ্লোবাল অয়েল লাইফলাইন’ নামে পরিচিত এই প্রণালির ভবিষ্যৎ এখন তাদের হাতেই।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসে। কারণ, এই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে।
যেভাবে নাম হলো ‘হরমুজ প্রণালি’
হরমুজ প্রণালি ইরান ও ওমানের মধ্যে থাকা একটি চ্যানেল বা খাল। এটি পারস্য উপসাগরকে সরাসরি যুক্ত করেছে আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের সঙ্গে। এর প্রবেশ ও প্রস্থানপথ প্রায় ৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত। আর এর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশও প্রায় ৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত। হরমুজ প্রণালির মাঝখানের অংশটি বড় আকারের জাহাজ চলাচলের জন্য যথেষ্ট গভীর।
হরমুজ প্রণালিই পারস্য উপসাগর থেকে সাগরে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। এর ওপর নির্ভর করে ইরান, সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বড় বড় জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো।
হরমুজ প্রণালির নামকরণ নিয়ে দুটি ইতিহাস জানা যায়। একটি মতে, এটি পারস্যের দ্বিতীয় শাপুরের মা ইফরা হুরমিজদের নাম থেকে এসেছে, যিনি খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে রাজত্ব করেছিলেন। আবার অনেকে মনে করেন, ১০ম থেকে ১৭শ শতকের মধ্যে এই অঞ্চলে ‘হরমুজ রাজ্য’ গড়ে উঠেছিল, সেখান থেকেই এই নামের উৎপত্তি।
হরমুজ প্রণালি কেন গুরুত্বপূর্ণ
হরমুজ প্রণালি বিশ্বের সবচেয়ে কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথগুলোর একটি। প্রতিদিন এই জলপথ দিয়েই প্রবাহিত হয় কোটি কোটি ডলারের জ্বালানি। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল এই জলপথ দিয়ে পরিবহন হয়।
হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত তেলের বেশির ভাগই এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যায়। চীন ও ভারতের মতো জনবহুল দেশও এই প্রণালির ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। শুধু তেল নয়, এই প্রণালি দিয়েই দৈনিক পরিবাহিত হয় বিপুল পরিমাণ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)।
ভরটেক্সা নামের জ্বালানি ও পরিবহন বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা জানায়, প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য এই জলপথ দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হয়।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, এই প্রণালি যদি কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে বেড়ে যেতে পেতে পারে। সেই সঙ্গে জ্বালানি নিরাপত্তাও ব্যাহত হতে পারে।
এর আগে হরমুজ প্রণালি কখনো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়নি। কোনো যুদ্ধ বা সংঘাতের সময়েও ইরান কখনো এই প্রণালি অবরোধ করেনি।
হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে
হরমুজ প্রণালি বন্ধের ইরানের হুমকির পর থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আজ সোমবার বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট তেলের দাম ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ১২ ডলারে। আর যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ৯৮ ডলার।
আর এই পরিস্থিতির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফিউচার্স লেনদেনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ হলে ব্রেন্ট তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি কমপক্ষে ১০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। শুধু তেলের দামই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপরেও বড় আঘাত আসবে। পরিবহণ খরচ বাড়বে, অনেক দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে জ্বালানি সরবরাহে। প্রথম সপ্তাহেই তেলের দাম ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন জ্বালানি বিশ্লেষকেরা।
ইতিহাস ঘেটে জানা যাচ্ছে, হরমুজ প্রণালিতে বাধার প্রভাবে তেলের দামে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৯১ সালে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় এক দফা তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়, কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই তা স্বাভাবিক হয়ে আসে। ২০০৩ সালের দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ বা ২০২২ সালের ইউক্রেন যুদ্ধের সময়েও তেলের দাম হঠাৎ বাড়লেও পরে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
তবু এশিয়ার শেয়ারবাজারের জন্য পরিস্থিতি স্পষ্টতই চাপের। বিশেষ করে জ্বালানি খাত ও শক্তিনির্ভর শিল্পগুলোর শেয়ারে বড় ধরনের পতনের আশঙ্কা রয়েছে। বাজারের অস্থিরতায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কমে যেতে পারে।
হরমুজ প্রণালি বন্ধে বাংলাদেশের চিন্তা
এই জলপথ বন্ধের সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আরপিজিসিএল বলছে, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত হরমুজ প্রণালি হয়ে বাংলাদেশে ৪৮৭টি এলএনজি কার্গো এসেছে। এর মধ্যে ২৬৭টি এসেছে কাতার থেকে আর ১২২টি এসেছে ওমান থেকে। বাংলাদেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করছে এই দুই দেশ।
চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৫৬টি এলএনজি কার্গোর মধ্যে ৪৬টিই এসেছে হরমুজ প্রণালি দিয়ে। হরমুজ বন্ধ হলে এই আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে জ্বালানি ঘাটতিতে পড়তে পারে দেশ।
তবে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তির বিষয় হলো, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে যে ১৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আসে, তার বিকল্প সরবরাহপথ আছে। সৌদি আরব লোহিত সাগর, এডেন ও আরব সাগর হয়ে বাংলাদেশে তেল পাঠাতে সক্ষম।
হরমুজ প্রণালির বিকল্প কী
বিভিন্ন সময়ে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার হুমকির কারণে উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো বিকল্প নৌপথ তৈরিতে উৎসাহী হয়েছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতিমধ্যেই এই বিকল্প রুটগুলো কার্যকর করেছে।
এনার্জি ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রধান বিকল্প রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের ইস্ট-ওয়েস্ট পাইপলাইন, যা ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি ইস্টার্ন প্রদেশ থেকে রেড সির ইয়ানবু বন্দরে তেল পরিবহন করে। এই পাইপলাইনের দৈনিক ধারণক্ষমতা ৫০ লাখ ব্যারেল হলেও বর্তমানে মাত্র ৫ লাখ ব্যারেল ব্যবহার হচ্ছে।
অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ রুট হরমুজ প্রণালির বাইরে। এই পথে দিনে ১৫ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করা যায়। ফুজাইরাহ বন্দরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভূগর্ভস্থ তেল মজুতাগার আছে, যেখানে ৪২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রাখা যায়।
ইরানও বিকল্প পথ হিসেবে জাস্ক টার্মিনাল ব্যবহার করছে। ২০২১ সালে চালু হওয়া গোরেহ-জাস্ক পাইপলাইনের মাধ্যমে দিনে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করা যায়। তবে এই পথ পুরোপুরি এখনো কাজে লাগানো হয়নি।
পারস্য উপসাগরের একমাত্র সামুদ্রিক প্রবেশপথ ‘হরমুজ প্রণালি’। ইরান-ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকেই এই জলপথ আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। এর পরই হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে তেহরান।
গতকাল রোববার (২২ জুন) ইরানের সংসদ এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। ‘গ্লোবাল অয়েল লাইফলাইন’ নামে পরিচিত এই প্রণালির ভবিষ্যৎ এখন তাদের হাতেই।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসে। কারণ, এই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে।
যেভাবে নাম হলো ‘হরমুজ প্রণালি’
হরমুজ প্রণালি ইরান ও ওমানের মধ্যে থাকা একটি চ্যানেল বা খাল। এটি পারস্য উপসাগরকে সরাসরি যুক্ত করেছে আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের সঙ্গে। এর প্রবেশ ও প্রস্থানপথ প্রায় ৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত। আর এর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশও প্রায় ৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত। হরমুজ প্রণালির মাঝখানের অংশটি বড় আকারের জাহাজ চলাচলের জন্য যথেষ্ট গভীর।
হরমুজ প্রণালিই পারস্য উপসাগর থেকে সাগরে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। এর ওপর নির্ভর করে ইরান, সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বড় বড় জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো।
হরমুজ প্রণালির নামকরণ নিয়ে দুটি ইতিহাস জানা যায়। একটি মতে, এটি পারস্যের দ্বিতীয় শাপুরের মা ইফরা হুরমিজদের নাম থেকে এসেছে, যিনি খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে রাজত্ব করেছিলেন। আবার অনেকে মনে করেন, ১০ম থেকে ১৭শ শতকের মধ্যে এই অঞ্চলে ‘হরমুজ রাজ্য’ গড়ে উঠেছিল, সেখান থেকেই এই নামের উৎপত্তি।
হরমুজ প্রণালি কেন গুরুত্বপূর্ণ
হরমুজ প্রণালি বিশ্বের সবচেয়ে কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথগুলোর একটি। প্রতিদিন এই জলপথ দিয়েই প্রবাহিত হয় কোটি কোটি ডলারের জ্বালানি। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল এই জলপথ দিয়ে পরিবহন হয়।
হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত তেলের বেশির ভাগই এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যায়। চীন ও ভারতের মতো জনবহুল দেশও এই প্রণালির ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। শুধু তেল নয়, এই প্রণালি দিয়েই দৈনিক পরিবাহিত হয় বিপুল পরিমাণ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)।
ভরটেক্সা নামের জ্বালানি ও পরিবহন বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা জানায়, প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য এই জলপথ দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হয়।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন, এই প্রণালি যদি কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে বেড়ে যেতে পেতে পারে। সেই সঙ্গে জ্বালানি নিরাপত্তাও ব্যাহত হতে পারে।
এর আগে হরমুজ প্রণালি কখনো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়নি। কোনো যুদ্ধ বা সংঘাতের সময়েও ইরান কখনো এই প্রণালি অবরোধ করেনি।
হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে
হরমুজ প্রণালি বন্ধের ইরানের হুমকির পর থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আজ সোমবার বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট তেলের দাম ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ১২ ডলারে। আর যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ৯৮ ডলার।
আর এই পরিস্থিতির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফিউচার্স লেনদেনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ হলে ব্রেন্ট তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি কমপক্ষে ১০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। শুধু তেলের দামই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপরেও বড় আঘাত আসবে। পরিবহণ খরচ বাড়বে, অনেক দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে জ্বালানি সরবরাহে। প্রথম সপ্তাহেই তেলের দাম ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন জ্বালানি বিশ্লেষকেরা।
ইতিহাস ঘেটে জানা যাচ্ছে, হরমুজ প্রণালিতে বাধার প্রভাবে তেলের দামে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৯১ সালে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় এক দফা তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়, কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই তা স্বাভাবিক হয়ে আসে। ২০০৩ সালের দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ বা ২০২২ সালের ইউক্রেন যুদ্ধের সময়েও তেলের দাম হঠাৎ বাড়লেও পরে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
তবু এশিয়ার শেয়ারবাজারের জন্য পরিস্থিতি স্পষ্টতই চাপের। বিশেষ করে জ্বালানি খাত ও শক্তিনির্ভর শিল্পগুলোর শেয়ারে বড় ধরনের পতনের আশঙ্কা রয়েছে। বাজারের অস্থিরতায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কমে যেতে পারে।
হরমুজ প্রণালি বন্ধে বাংলাদেশের চিন্তা
এই জলপথ বন্ধের সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আরপিজিসিএল বলছে, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত হরমুজ প্রণালি হয়ে বাংলাদেশে ৪৮৭টি এলএনজি কার্গো এসেছে। এর মধ্যে ২৬৭টি এসেছে কাতার থেকে আর ১২২টি এসেছে ওমান থেকে। বাংলাদেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করছে এই দুই দেশ।
চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৫৬টি এলএনজি কার্গোর মধ্যে ৪৬টিই এসেছে হরমুজ প্রণালি দিয়ে। হরমুজ বন্ধ হলে এই আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে জ্বালানি ঘাটতিতে পড়তে পারে দেশ।
তবে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তির বিষয় হলো, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে যে ১৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আসে, তার বিকল্প সরবরাহপথ আছে। সৌদি আরব লোহিত সাগর, এডেন ও আরব সাগর হয়ে বাংলাদেশে তেল পাঠাতে সক্ষম।
হরমুজ প্রণালির বিকল্প কী
বিভিন্ন সময়ে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার হুমকির কারণে উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো বিকল্প নৌপথ তৈরিতে উৎসাহী হয়েছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতিমধ্যেই এই বিকল্প রুটগুলো কার্যকর করেছে।
এনার্জি ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রধান বিকল্প রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের ইস্ট-ওয়েস্ট পাইপলাইন, যা ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি ইস্টার্ন প্রদেশ থেকে রেড সির ইয়ানবু বন্দরে তেল পরিবহন করে। এই পাইপলাইনের দৈনিক ধারণক্ষমতা ৫০ লাখ ব্যারেল হলেও বর্তমানে মাত্র ৫ লাখ ব্যারেল ব্যবহার হচ্ছে।
অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ রুট হরমুজ প্রণালির বাইরে। এই পথে দিনে ১৫ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করা যায়। ফুজাইরাহ বন্দরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভূগর্ভস্থ তেল মজুতাগার আছে, যেখানে ৪২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রাখা যায়।
ইরানও বিকল্প পথ হিসেবে জাস্ক টার্মিনাল ব্যবহার করছে। ২০২১ সালে চালু হওয়া গোরেহ-জাস্ক পাইপলাইনের মাধ্যমে দিনে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করা যায়। তবে এই পথ পুরোপুরি এখনো কাজে লাগানো হয়নি।
ইরান ২০০৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয়। সাম্প্রতিক সময়েও পেগেন্টাগনের বিশ্লেষণ ছিল তেমনই।
৭ ঘণ্টা আগেভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল জুড়ে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে গত দুই দিনে অন্তত ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন । নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
১৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সরাসরি হুশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, যেন এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয় যা ইরানের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনার পথ রুদ্ধ করে দেয়।
১৬ দিন আগেগাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও বেসামরিক জনগণের ওপর ব্যাপক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। পাশাপাশি পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন ও সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে লন্ডন।
১৬ দিন আগে