leadT1ad

চিনির সঙ্গে যৌনতার যে সংযোগ আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যৌনস্বাস্থ্যের ওপর কতটা গভীর প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে অনেকের ধারণা খুবই কম। পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তে বাড়তি চিনির পরিমাণ লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ ও স্নায়ু সংকেত বাধাগ্রস্ত করে। ফলে দেখা দিতে পারে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো সমস্যা। কমে যেতে পারে টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৪০
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৩৪
চিনির সঙ্গে যৌনতার যে সংযোগ আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি। ছবি: সংগৃহীত

চিনির কথা ভাবলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মিষ্টি, চকলেট, ডেজার্ট বা আইসক্রিমের ছবি। আমরা সচরাচর ভাবি না যে, এই চিনি আমাদের শরীর, মন এবং সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলোর ওপর কতটা গভীর প্রভাব ফেলছে।

রক্তে চিনি মানে কি শুধু ডায়াবেটিস?

রক্তে চিনির কথা শুনলে আমরা অনেকেই ভয় পাই। আর ডায়াবেটিস শব্দটা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে ইনজেকশন, ওষুধ আর খাবার নিয়ে বিধিনিষেধের কথা। কিন্তু রক্তে চিনি বা গ্লুকোজের মাত্রা মানে শুধু ডায়াবেটিস নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঘুম, হরমোন, শক্তি এবং আমাদের যৌনস্বাস্থ্যের মতো বিষয়ও।

অনেক মানুষই জানেন না, তাঁরা ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর মতে, প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ আমেরিকান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যার মধ্যে ৪ জনের ১ জন বিষয়টি এখনো টের পাননি।

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যৌনস্বাস্থ্যের ওপর কতটা গভীর প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে অনেকের ধারণা খুবই কম। পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তে বাড়তি চিনির পরিমাণ লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ ও স্নায়ু সংকেত বাধাগ্রস্ত করে। ফলে দেখা দিতে পারে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো সমস্যা। কমে যেতে পারে টেস্টোস্টেরনের মাত্রাও। সবমিলিয়ে যৌন আগ্রহ ও কর্মক্ষমতাও কমে যেতে পারে।

অনেক পুরুষই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান না। যৌনজীবনে সমস্যা হওয়ার পর তাঁরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। তখনই ধরা পড়ে যে তাঁদের রক্তে চিনির পরিমাণ দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

নারীদের ক্ষেত্রেও রক্তে বাড়তি চিনি হলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, রক্তপ্রবাহ কমে। ফলে দেখা দেয় যোনি শুষ্কতা, ব্যথাতুর যৌনমিলন ও অর্গাজমে সমস্যা। বাড়ে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকিও।

এই সমস্যাগুলো অনেক নারী বয়স, স্ট্রেস, কিংবা মেনোপজ সংক্রান্ত সমস্যা মনে করে থাকেন। অথচ আসল কারণ হতে পারে রক্তে অতিরিক্ত চিনি।

ওষুধ, ইনজেকশন, আর জিএলপি-১ বিপ্লব

ডায়াবেটিস চিকিৎসায় একসময় মুখে খাওয়ার ওষুধই ছিল প্রধান। বিশেষ করে মেটফরমিনের মতো ঔষধগুলো। এগুলো লিভারে চিনির উৎপাদন কমায়। পরবর্তী সময়ে অনেকেই ইনসুলিন ইনজেকশনের আশ্রয় নেন। ইনসুলিন সময়মতো ও সঠিক মাত্রায় নিতে হয়। ব্যাপারটা অনেকের কাছেই বাড়তি ঝামেলার মনে হতে পারে।

তবে গত কয়েক বছরে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে জিএলপি-১ রিসেপ্টর আগোনিস্ট নামের নতুন এক শ্রেণির ওষুধ। এর মধ্যে সেমাগলুটাইড, লিরাগলুটাইড, টিরজেপাটাইড ঔষধগুলো মূলত টাইপ-টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন এগুলো ব্যবহার হচ্ছে ওজন কমানো ও হরমোনের ভারসাম্য আনতে।

ওষুধগুলো শরীরের প্রাকৃতিক হরমোনের মতো কাজ করে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে, হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং ক্ষুধাও কমায়। ফলে ওজনও কমে।

হরমোনের ভারসাম্যে সহায়ক?

চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে এন্ডোক্রাইন সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, জিএলপি-১ ইনজেকশন নেওয়া ১১০ জন পুরুষ রোগীর মধ্যে যারা কোনো টেস্টোস্টেরন থেরাপি নিচ্ছিলেন না, ১৮ মাসে তাঁদের ওজন গড়ে ১০ শতাংশ কমেছে। একই সময় জিএলপি-১ গ্রহণ করা পুরুষদের টেস্টোস্টেরন মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে ৭৭ শতাংশে, যা আগে ছিল ৫৩ শতাংশ।

এই প্রাথমিক তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, ওষুধগুলো শুধু ডায়াবেটিস নয়, পুরুষদের হরমোনের ভারসাম্য, যৌনশক্তি ও কর্মক্ষমতার দিকেও প্রভাব ফেলতে পারে।

এই গবেষণা এখনো পিয়ার-রিভিউ হয়নি। তবে এই বড় পরিসরের আরও গবেষণা ডায়েবেটিসের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।

আপাতত ইনজেকশনই একমাত্র উপায়?

জিএলপি-১ ওষুধ কার্যকর হলেও অনেকেই এখন তা ওজন কমানোর শর্টকাট হিসেবে নিচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদে সবার জন্য তা সঠিক নাও হতে পারে।

আমরা যদি চিনি আর অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আমাদের আসক্তি কমাই, অলস জীবনযাত্রা ত্যাগ করি, তাহলে হয়তো ইনজেকশন নেওয়ারই প্রয়োজন হবে না।

নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, পেশিশক্তি ও যৌনক্ষমতা বাড়ায়। হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং, সাঁতার কিংবা নৃত্য এক্ষেত্রে সমান কার্যকর।

সবজি, আঁশযুক্ত খাবার, ফল ও প্রোটিনযুক্ত সুষম খাবার রক্তে গ্লুকোজের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ কমায়। ভালো ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং মদ্যপান কমানো হরমোন ভারসাম্য রক্ষা করে।

ব্যায়াম করা, ঘাম ঝরানো আর প্রতিদিন খাবারের তালিকার দিকে একটু নজর দেওয়া হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পথ।

সূত্র- সিএনএন-এ প্রকাশিত ডা. জামিন ব্রাম্ভাতের লেখা অবলম্বনে

Ad 300x250

সম্পর্কিত