leadT1ad

বয়সের বুলি-রেখা: জনতার আদালতে জয়া-বিপাশা

পোস্টে জয়া আহসান ও বিপাশা হায়াতের দুটি সাম্প্রতিক ছবি দিয়ে নিলিমা কবির নামে এক নারী যা বলেছেন তার মোদ্দাকথা দাঁড়ায়–জয়া আর বিপাশার বয়স এক হলেও তাঁদের মধ্যে বিপাশা কম বয়সে ‘বুড়িয়ে’ গেছেন। আর জয়ার বয়স দিন দিন কমছে। এরপর আছে নিজের ‘যত্ন’ করে পিছলা বয়সকে ধরে রাখা-বিষয়ক একটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ।

আদ্রিতা কবিরঢাকা
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২২: ৩৬
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৩৮
বয়সের বুলি-রেখা: জনতার আদালতে জয়া-বিপাশা। স্ট্রিম গ্রাফিকস

জয়া না বিপাশা– কে বেশি সুন্দর? দুই দিন ধরে ফেসবুকীয় কাইজ্জার শীর্ষে এই প্রশ্ন। শুনে মনে হতে পারে সালটা ২০০৪। যেখানে সদ্য গোঁফ-গজানো দুই কিশোর সিডির দোকানের বাইরে ক্যাওক্যাও করছে। অথচ এটা ২০০৪ সাল না, এমপিথ্রি ইজ ডেড, রাইফেলস স্কয়ার এখন সীমান্ত সম্ভার। কিন্তু নেট দুনিয়ার জনতা একটি ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর এই পুরান ঝগড়া নতুন করে করছে।

পোস্টে জয়া আহসান ও বিপাশা হায়াতের দুটি সাম্প্রতিক ছবি দিয়ে নিলিমা কবির নামে এক নারী যা বলেছেন তার মোদ্দাকথা দাঁড়ায়–জয়া আর বিপাশার বয়স এক হলেও তাদের মধ্যে বিপাশা কম বয়সে ‘বুড়িয়ে’ গেছেন। আর জয়ার বয়স দিন দিন কমছে। এরপর আছে নিজের ‘যত্ন’ করে পিছলা বয়সকে ধরে রাখা-বিষয়ক একটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ।

বয়ান-প্রতিবয়ান

গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ৫০০ বার শেয়ার হওয়া এই পোস্টের পোস্টদাতাকে কেউ তার ‘এজিজম’ (তর্জমা একটু পর) -এর জন্য গালাগাল করছেন। কেউ আবার র্ফাঁকতালে দিচ্ছেন বয়সনিরোধক স্কিনকেয়ারের বিজ্ঞাপন। অন্যদিকে, এক বা একাধিক কাঠি সরেস লোকজন আবার টেনে আনছেন বিপাশা আর জয়ার মধ্যে কে ত্বকের যত্ন নিয়েছেন, আর কে পরিবারের। কে কলকাতার নায়িকা আর কে ঢাকার ‘অভিনেত্রী’, কে সম্মানিত অভিনেতার মেয়ে আর কে ‘পরিচালকের-প্রেমিকা’।

এই বিতর্ক নতুন কিছু নয়। পৃথিবীতে অগণিত ধুলিকণা আর ইজমের ভিড়ে বয়সভিত্তিক ইজম অর্থাৎ এজিজমও নতুন কোনো ধারণা নয়। বয়সের ভিত্তিতে, বিশেষ করে, বেশি বয়সের ভিত্তিতে কারোর প্রতি অসম আচরণ করা বা তাকে হেয় করার নাম এজিজম। বিশেষ করে এর শিকার হন নারীরা, আর পাবলিকের নজরে থাকা নারী হলে তো কথাই নেই।

গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ৫০০ বার শেয়ার হওয়া এই পোস্টের পোস্টদাতাকে কেউ তার ‘এজিজম’ (তর্জমা একটু পর) -এর জন্য গালাগাল করছেন। কেউ আবার র্ফাঁকতালে দিচ্ছেন বয়সনিরোধক স্কিনকেয়ারের বিজ্ঞাপন।

উইচ প্লিজ!: বয়সের ‘ভূত’

হলিউড তারকা মেগ রায়ান থেকে মেরিল স্ট্রিপ–কেউই এজিজমের হাত থেকে মুক্তি পাননি। মেরিলের বয়স ৪০ পেরুনোর পর তিনি পরপর তিনটি ডাইনি চরিত্রের প্রস্তাব পান। মেরিল বলেন, ‘এটা থেকে আমি একটা ধারণা পাই, হলিউড বয়স্ক নারীদের কী চোখে দেখে।’

এককালের আমেরিকান সুইটহার্ট মেগ রায়ানের বয়স যখন ৬১ তখন একটা সিনেমার স্ক্রিনিংয়ে যাওয়ার পথে পাপারাজ্জি তাকে পাকড়াও করে। এরপর ট্যাবলয়েডের হেডলাইন হয় ‘মেগ রায়ানকে চেনা যাচ্ছে না’। না চিনে রিপোর্ট করার এই বে-নজির ঘটনাকে নিয়ে পরবর্তীতে দ্য গার্ডিয়ান–এ আরওয়া মাহদায়ী একটি লম্বা আর্টিকেল লিখেন ‘ওহ নো, ইট হ্যাপেন্ড আগেইন: আ ফেমাস ওম্যান ডিডন্ট ফলো দ্যা রুলস অফ এজিং’ শিরোনামে। সেখানে তিনি বলেন, নারীর জন্য বয়স বাড়ার ক্ষেত্রে তিনটি নিয়ম প্রযোজ্য।

এক. ন্যাচারালি বুড়ো হওয়া, তবে সেটা যাতে বেশি ন্যাচারাল না হয়। এমনভাবে বুড়ো হওয়া যাতে আপনার বয়স বোঝা না যায়।

দুই. নানাবিধ সার্জারি করা, তবে এমনভাবে করা যাতে সার্জারি যে করা হয়েছে সেটা বোঝা না যায়।

তিন. আগের দুইটায় ফেল করলে চুপচাপ ঘরের ভেতর বুড়ো হওয়া, ভুলেও ঘর থেকে বের না হওয়া।

এককালের আমেরিকান সুইটহার্ট মেগ রায়ানের বয়স যখন ৬১ তখন একটা সিনেমার স্ক্রিনিংয়ে যাওয়ার পথে পাপারাজ্জি তাকে পাকড়াও করে। এরপর ট্যাবলয়েডের হেডলাইন হয় ‘মেগ রায়ানকে চেনা যাচ্ছে না’।

এই রুলের যেকোনোটা ভাঙলে জনতার আদালতে বিচার বসে।

অভিনেত্রী শার্লিজ থেরন বলেছিলেন যে, জনতার চোখে পুরুষের বয়স বাড়ে ফাইন ওয়াইনের মত। আর নারীর বাড়ে কাটা ফুলের মত। আর এই দেশে নারী ‘কুড়িতেই বুড়ি’, কাজেই তার বয়সের সঙ্গে পাবলিক মেজাজের থার্মোমিটার ওঠানামা করবেই। বয়স্ক নারীকে দর্শক স্ক্রিনে তখনই সহ্য করবে যখন সে ডলি জহুর বা দিলারা জামানের মত ‘মমতাময়ী মা’ হয়।

অক্লান্ত এই বয়স শেমিং কিন্তু র‍্যান্ডম না, পৃথিবীর বাকি সব কিছুর মতই। চিল্লায়ে মার্কেট না পাওয়া গেলেও, শেমের সব সময় মার্কেট পাওয়া যায়।

এজিং আন্টিকে মোকাবিলা করতে অ্যান্টি-এজিং ইন্ডাস্ট্রি(স)

রেটিনল, অ্যাডাপালিন, বাকুচল, পেপটাইড, অ্যাজালাইক এসিড ইত্যাদি শব্দের সঙ্গে আপনি পরিচিত? অভিনন্দন! আপনার সোশাল মিডিয়া অ্যালগরিদম সঠিকভাবে আপনার বাড়ন্ত (পড়ুন বুড়িন্ত) বয়স এবং আপনার জেন্ডার (অতি অবশ্যই নারী) নির্ধারণ করতে পেরেছে। এসব অ্যান্টি-এজিং বা বয়সের দুশমন উপকরণের ককটেল নানা প্যাকেজিংয়ে চড়া দামে আপনার কাছে বিক্রিই এখন অ্যালগরিদমের লক্ষ্য।

বিদ্রোহী ব্রাউজার হিসেবে বারবার এসব বিজ্ঞাপনে নট ইন্টেরেস্টেড বাটনে ক্লিক করলে, ইনফ্লুয়েন্সারদের বয়ানে আবার শুরু হবে আরেক অত্যাচার। তারা এসব ক্রিম মেখে, ভালো-খারাপের র‍্যাংকিং করে লিস্ট বানিয়ে আপনাকে দেখাবে। সেটাও স্কিপ দিলে আসবে কজমো’র মত বড় বড় ম্যাগাজিনের আর্টিকেল, যা আপনাকে জানাবে কীভাবে অমুক নিজের বয়সকে খপ করে ধরে রেখেছেন। এই অমুক হতে পারে মিশেল ওবামা থেকে প্যামেলা অ্যান্ডারসন বা যে কেউ।

শুধু চামড়া না, এর নিচে যা আছে তা-ই গুরুত্বপূর্ণ বললে আসা শুরু করবে জিমের বিজ্ঞাপন, এমনকি বয়স না বাড়ার মেডিটেশন পর্যন্ত। এই বিষয়ে হার্ভার্ডের রিসার্চ থেকে সাধগুরুর টোটকার পরিমাণ দেখলে মনে হবে জগত সংসার সৃষ্টির কারণ কী, ডিম আগে না মুরগি আগে এগুলোর পাশাপাশি ‘হচ্ছি বুড়ি, কী করি?’ পৃথিবীর অন্যতম প্রশ্নগুলোর একটি–যার উত্তর সবাই হন্যে হয়ে খুঁজছে।

এই বিউটি ইন্ডাস্ট্রিকে আপনি স্কিপ বা স্কেপ কোনোটাই করতে পারবেন না। চেষ্টা করলে অন্য ইন্ডাস্ট্রিও আপনাকে মনে করিয়ে দেবে আপনার সময় ফুরিয়ে এসেছে।

মার্গারেট গালেট তার বই ‘এন্ডিং এজিজম, অর হাউ নট টু শ্যুট ওল্ড পিপল (গ্লোবাল পার্সপেক্টিভস অন এজিং)’-এ বলেছেন, এজিং হতে পারে ট্রিগার, তবে এজিজম হলো বুলেট। এই গুলি থেকে শুধু নিজে না বেঁচে আরেকজনকেও রক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ বিখ্যাত লেখক টনি মরিসনের ভাষায়, আপনি নিজে তখনই স্বাধীন হবেন যখন আপনি আরেকজনকে স্বাধীন করতে পারবেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত