চলতি বছরের ১৩ জুন আচমকা ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানও নিজেদের সবর্স্ব দিয়ে পাল্টা হামলা করে। ১২ দিন স্থায়ী এ যুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির ভবিষ্যত। জীবনের ঝুঁকি থাকায় যুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি বাঙ্কারে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেখান থেকেই দিচ্ছিলেন নির্দেশনা। সব মিলিয়ে ইরানে রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি ও ইরানিদের ক্ষোভ খামেনির অবস্থানকে নড়বড়ে করে তুলেছে। সামগ্রিক দিক নিয়ে এশিয়া টাইমসে লিখেছেন মিডল ইস্টার্ন পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের স্কলার, আরিজোনা স্টেট ইউনির্ভাসিটির স্কুল অব পলিটিকস অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিসের গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাসোসিয়েট শিরভিন জেয়নালজাদেহ। স্ট্রিম পাঠকদের জন্য লেখাটি অনূদিত হলো।
শিরভিন জেয়নালজাদেহ
গত জুনে ইরানের সঙ্গে ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়ায় ইসরায়েল। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনিকে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যায়নি। পরবর্তীতে এই অনুপস্থিতি ৮৬ বছর বয়স্ক এই নেতার স্বাস্থ্য নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়ায়।
আবার মধ্যপ্রাচ্যের অনেক পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে যুদ্ধের ওই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার অনুপস্থিতিতে ইরানের ভবিষ্যত কোন পথে যাবে তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, ১৯৮০ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ইরানের নেতারা সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় এ চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করবেন তা নিয়েও এখন আলোচনা হচ্ছে।
যুদ্ধে ইরানের প্রায় শতাধিক অবস্থানকে লক্ষ্য করে প্রথমে ইসরায়েল এবং পরে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়। এতে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অনেক শীর্ষ সামরিক কমান্ডারসহ হাজারের উপর নিহত হয়। কিন্তু ইসরায়েলের ওই আকস্মিক হামলায় অনেকটা বিস্মিত হয়েছিল ইরানের নেতারা। কারণ ইরান বেশ ভালো আত্মবিশ্বাস নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
এই ব্যাপারে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাসান রুহানির ভাষ্য—আমাদের ভবিষ্যত পথ সংশোধন এবং শাসনব্যবস্থার ভিত্তি পুনর্নির্মাণের জন্য এটি জেগে ওঠার ডাক।
কথা হলো খামেনি কি এ ডাকে সাড়া দেবেন? একজন ইরানিয়ান এবং মিডল ইস্টার্ন পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের স্কলার হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, এই সংঘাত ইরানি নেতৃত্বকে সবকিছু ঢেলে সাজানো এবং নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীলদের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য সংস্কার চাওয়া নাগরিকদেরও সন্তুষ্ট করা যাবে।
ইরানের সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে যখন ইসরায়েল ক্রমাগত বিমান হামলা চালাচ্ছিল, গোয়েন্দা অভিযানে সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করছিল, ঠিক সে সময় খামেনি নিরাপদ বাঙ্কারে অবস্থান নিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।
এতে বুঝা যায় এ সংঘাতে যে তার নিরাপত্তার সম্ভাব্য হুমকি ছিল তা নিয়ে তিনি অবগত ছিলেন। তাই তিনি আকস্মিকভাবেই তার উত্তরসূরি নির্বাচনের পরিকল্পনা করেন এবং সম্ভাব্য উত্তরসূরির নামও ঘোষণা করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে ওই নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তবে গুঞ্জন আছে, নামের সেই তালিকায় তার ছেলে মোজতবা খামেনি ছিলেন না। শোনা যায়, সেখানে তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় খামেনি অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিলেন বলা যায়। নিজের সম্ভাব্য প্রাণনাশের আশঙ্কাকে বিবেচনায় নেওয়ায় খামেনির নেতৃত্বের নড়বড়ে দিক সামনে নিয়ে আসে। বিশ্বে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা নেতাদের একজন খামেনি। এ ছাড়া একসময় তাকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ঐক্যবদ্ধতার প্রধান প্রতীক এবং ইরানি ইসলামি বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা জনকের উত্তরাধিকার মনে করা হতো। কিন্তু সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা সেই খামেনি এখন বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
যদিও যুদ্ধ পরিচালনার জন্য খামেনি এখনো দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রশংসা পাচ্ছেন। কিন্তু সমালোচকরা ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে তার কৌশলগত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের যুক্তি এই সংঘর্ষে কার্যত কোনো সাফল্য ছাড়াই ইরানের সামরিক দুর্বলতাগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। যা সংঘাত শেষে ইরান সরকারের নিজস্ব মূল্যায়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও।
কেউ কেউ আবার এরই মধ্যে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে খামেনির বার্ধক্যকে এবং পরিবর্তনে স্বয়ং তাঁকে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন। এমনকি তার ঘনিষ্ঠতম উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়াতিও বলেছেন, এখন সংস্কারের সময়।
এসব নেতিবাচক ঘটনা এবং ধারণার কথা মাথায় রেখে খামেনির সামনে এখন একটি পথই খোলা। খামেনির প্রতি ইরানের রক্ষণশীল এবং নিরাপত্তা সংস্থাসগুলোর এখনও গভীর আনুগত্য রয়েছে। তবে সাধারণ ইরানিদের কাছে বর্তমান সরকার আগের চেয়েও বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছে।
একইসঙ্গে যুদ্ধ-পরবর্তী প্রেক্ষাপট ইরানের জন্য সংস্কারের একটি পথ তৈরি করেছে। এটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ভবিষ্যতকে শক্তিশালী, সামাজিক চাপকে প্রশমিত এবং কূটনীতি ও বিনিয়োগের দরজা পুনরায় খুলে দিতে পারে।
খামেনির জন্য একটি পথ হতে পারে সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে থেকে ধীরে ধীরে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং ভেতর থেকে নিয়ন্ত্রিত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়া। আরেকটি দিক হতে পারে আরও নাটকীয়। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের মতো আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ করা। এটি তাকে আধ্যাত্মিক এবং প্রতীকী অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং তাকে 'এমেরিটাস নেতা' আখ্যায়িত করার সুযোগ তৈরি করবে। একইসঙ্গে প্রতিদিন উত্তরসূরির কাছে একটু একটু করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এতে প্রকাশ্যে তার উপস্থিতি না কমিয়েই ক্রমশ সংস্কার করতে পারবেন।
পর্যায়ক্রমে ক্ষমতা হস্তান্তরের ফলে ব্যবস্থাটির সঙ্গে পরবর্তী নেতৃত্ব খাপ খাইয়ে নিতে পারবে এবং তরুণ অভিজাতদেরও রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করবে। সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর ছাড়াই নীতি পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করতে পারবেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, খামেনির অনুগত রক্ষণশীল সমর্থক গোষ্ঠী দেশের মানুষের কাছে এখনো বেপরোয়া শক্তি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর, এই গোষ্ঠীগুলি সংস্কারে কম আগ্রহী। তারা বরং সম্ভাব্য তথ্য ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেশি আগ্রহী। কারণ ওই তথ্য ফাঁসের ফলেই ইসরায়েল প্রথমে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আক্রমণ চালিয়েছিল।
তবুও সরকারের অবস্থান বিবেচনা করে অনিবার্যভাবে সংস্কার আলোচ্য সূচিতে আছে। কিছু সংস্কারের ব্যাপারে নীরবে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে ইন্টারনেটের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করা। বিশেষ করে ইরানের বিশাল এবং তরুণ জনগোষ্ঠীর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে তার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।
ডিজিটাল স্পেসের প্রবেশাধিকার শুধু সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় নয় বরং প্রজন্মের সংস্কৃতির চিহ্ন হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর—তাকে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ আটক করে এবং পরবর্তীতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল। ফলে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। সেসময় ইরানের নেতারা সরকারের কঠোর নৈতিকতা আইন সংশোধনের দাবির মুখে পড়েছিলেন।
যদি সরকার সেই লক্ষ্যে সংস্কার আনে, যা ইতিমধ্যেই অনানুষ্ঠানিকভাবে এবং বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে হচ্ছে। তবে তা বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার ভিত্তিকে মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জ না করেই নারী এবং তরুণ ইরানিদের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইরান ইতিমধ্যেই তার পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন শুরু করেছে। ২০২৪ সালে ব্রিকসের সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে তা প্রতিফলিতও হয়েছে। এই পদক্ষেপটি বিশ্ব মঞ্চে ইরানকে নতুন নতুন সম্পর্ক গড়ায় সাহায্য করবে। আর এটি বিশ্ব রাজনীতিতে ইরানের আরও সক্রিয় অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দেয়।
অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে থাকতে পারে—আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্যপদ লাভ। পাশাপাশি পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
যদি সফল হয়, তাহলে এটি দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগের সুযোগ এবং বাণিজ্য অংশীদারিত্বের দ্বার উন্মোচন করবে। যা বছরের পর বছর ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে। এই প্রতিটি পদক্ষেপ, ছোট পরিসরে হলেও তা বৃহত্তর পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেবে। হয়তো রাতারাতি সম্পূর্ণ রূপান্তর সম্ভব না। কিন্তু সতর্কভাবে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ বা গ্রহণের ইচ্ছার ইঙ্গিত অন্তত দেওয়া যাবে।
আর এ সবই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেটি সাম্প্রতিক সংঘাত এবং মার্কিন বাঙ্কার-ধ্বংসকারী হামলায় গুরুতর ক্ষতির খবর সত্ত্বেও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তেহরান জোর দিয়ে বলে আসছে, তার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক প্রকৃতির। তারা এই কর্মসূচি বাদ দেবে না।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রের জন্য এই কর্মসূচি শুধু কৌশলগত বাধাই নয়; এটি জাতীয় গর্ব এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সর্বোচ্চ নেতার অধীনে হোক বা ভবিষ্যতের উত্তরসূরির অধীনে—এই বিষয়টি রাষ্ট্রের পরিচয় এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে তা বলা যায়।
ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময় পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ইরান এখনও চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ। তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনেই হচ্ছে বলে তারা দাবি করে আসছে।
তবুও বৃহত্তর স্বচ্ছতা বা সহযোগিতার জন্য যেকোনো পদক্ষেপকেই অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বিচার করতে হবে। কারণ ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিও একসময় কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে বের করে নেয়। এতে চুক্তি ভেঙে যায় এবং তেহরানের উপর ফের একতরফাভাবে ওয়াশিংটন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ার পর ইরান একাধিক গোপন অভিযান এবং সামরিক হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। মূলত ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ওইসব হামলার জন্য দায়ী ছিল। তেমনই এক হামলায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি পশ্চিমা প্রতিশ্রুতির নির্ভরযোগ্যতা এবং আপস সম্পর্কে তেহরানের নেতৃত্বের মধ্যে সন্দেহকে বাড়িয়ে তুলে।
ফলে, তত্ত্বগতভাবে আরও উন্মুক্ত ও সহযোগিতামূলক ভঙ্গি নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ, অবরুদ্ধ বাণিজ্যের পথ খোলা এবং আন্তর্জাতিক বৈধতার পথ তৈরি করতে পারে। তবে এটি আমেরিকান ও ইসরায়েলের আঞ্চলিক নীতির বিরুদ্ধে ইরানের স্ব-ঘোষিত প্রতিরোধের সক্ষমতাকে দুর্বল করার ঝুঁকিও তৈরি করবে।
এই সবকিছুর প্রভাবই খামেনির উপর পড়বে। কারণ সব বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতিগত বিষয়ে সামগ্রিকভাবে তিনিই কথা বলেন। জীবিত এবং ক্ষমতায় থেকে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে তিনি তার উত্তরাধিকারকে নিজের পছন্দসই পথেই নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ইসলামি বিপ্লবের মূল বিষয়গুলিকে ধারণ করেই দেশকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের দিকে ধীর গতিতে এগিয়ে নিতে পারবেন।
এটি করার মাধ্যমে তিনি ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে একটি বিরল ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারেন। যা তার অনুগত রক্ষণশীলদের এবং সংস্কারের আকাঙ্ক্ষায় থাকা ইরানের তরুণ প্রজন্ম—উভয়ের জন্যই প্রয়োজন। ১২ দিনের সেই যুদ্ধ খামেনিকে সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট এ পদক্ষেপের সুযোগ এনে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, তিনি কী করবেন।
অনুবাদ: রুহুল আমিন
গত জুনে ইরানের সঙ্গে ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়ায় ইসরায়েল। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনিকে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যায়নি। পরবর্তীতে এই অনুপস্থিতি ৮৬ বছর বয়স্ক এই নেতার স্বাস্থ্য নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়ায়।
আবার মধ্যপ্রাচ্যের অনেক পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে যুদ্ধের ওই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার অনুপস্থিতিতে ইরানের ভবিষ্যত কোন পথে যাবে তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, ১৯৮০ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ইরানের নেতারা সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় এ চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করবেন তা নিয়েও এখন আলোচনা হচ্ছে।
যুদ্ধে ইরানের প্রায় শতাধিক অবস্থানকে লক্ষ্য করে প্রথমে ইসরায়েল এবং পরে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়। এতে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অনেক শীর্ষ সামরিক কমান্ডারসহ হাজারের উপর নিহত হয়। কিন্তু ইসরায়েলের ওই আকস্মিক হামলায় অনেকটা বিস্মিত হয়েছিল ইরানের নেতারা। কারণ ইরান বেশ ভালো আত্মবিশ্বাস নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
এই ব্যাপারে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাসান রুহানির ভাষ্য—আমাদের ভবিষ্যত পথ সংশোধন এবং শাসনব্যবস্থার ভিত্তি পুনর্নির্মাণের জন্য এটি জেগে ওঠার ডাক।
কথা হলো খামেনি কি এ ডাকে সাড়া দেবেন? একজন ইরানিয়ান এবং মিডল ইস্টার্ন পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের স্কলার হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, এই সংঘাত ইরানি নেতৃত্বকে সবকিছু ঢেলে সাজানো এবং নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীলদের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য সংস্কার চাওয়া নাগরিকদেরও সন্তুষ্ট করা যাবে।
ইরানের সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে যখন ইসরায়েল ক্রমাগত বিমান হামলা চালাচ্ছিল, গোয়েন্দা অভিযানে সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করছিল, ঠিক সে সময় খামেনি নিরাপদ বাঙ্কারে অবস্থান নিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।
এতে বুঝা যায় এ সংঘাতে যে তার নিরাপত্তার সম্ভাব্য হুমকি ছিল তা নিয়ে তিনি অবগত ছিলেন। তাই তিনি আকস্মিকভাবেই তার উত্তরসূরি নির্বাচনের পরিকল্পনা করেন এবং সম্ভাব্য উত্তরসূরির নামও ঘোষণা করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে ওই নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তবে গুঞ্জন আছে, নামের সেই তালিকায় তার ছেলে মোজতবা খামেনি ছিলেন না। শোনা যায়, সেখানে তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় খামেনি অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিলেন বলা যায়। নিজের সম্ভাব্য প্রাণনাশের আশঙ্কাকে বিবেচনায় নেওয়ায় খামেনির নেতৃত্বের নড়বড়ে দিক সামনে নিয়ে আসে। বিশ্বে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা নেতাদের একজন খামেনি। এ ছাড়া একসময় তাকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ঐক্যবদ্ধতার প্রধান প্রতীক এবং ইরানি ইসলামি বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা জনকের উত্তরাধিকার মনে করা হতো। কিন্তু সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা সেই খামেনি এখন বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
যদিও যুদ্ধ পরিচালনার জন্য খামেনি এখনো দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রশংসা পাচ্ছেন। কিন্তু সমালোচকরা ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে তার কৌশলগত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের যুক্তি এই সংঘর্ষে কার্যত কোনো সাফল্য ছাড়াই ইরানের সামরিক দুর্বলতাগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। যা সংঘাত শেষে ইরান সরকারের নিজস্ব মূল্যায়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও।
কেউ কেউ আবার এরই মধ্যে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে খামেনির বার্ধক্যকে এবং পরিবর্তনে স্বয়ং তাঁকে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন। এমনকি তার ঘনিষ্ঠতম উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়াতিও বলেছেন, এখন সংস্কারের সময়।
এসব নেতিবাচক ঘটনা এবং ধারণার কথা মাথায় রেখে খামেনির সামনে এখন একটি পথই খোলা। খামেনির প্রতি ইরানের রক্ষণশীল এবং নিরাপত্তা সংস্থাসগুলোর এখনও গভীর আনুগত্য রয়েছে। তবে সাধারণ ইরানিদের কাছে বর্তমান সরকার আগের চেয়েও বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছে।
একইসঙ্গে যুদ্ধ-পরবর্তী প্রেক্ষাপট ইরানের জন্য সংস্কারের একটি পথ তৈরি করেছে। এটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ভবিষ্যতকে শক্তিশালী, সামাজিক চাপকে প্রশমিত এবং কূটনীতি ও বিনিয়োগের দরজা পুনরায় খুলে দিতে পারে।
খামেনির জন্য একটি পথ হতে পারে সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে থেকে ধীরে ধীরে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং ভেতর থেকে নিয়ন্ত্রিত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়া। আরেকটি দিক হতে পারে আরও নাটকীয়। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের মতো আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ করা। এটি তাকে আধ্যাত্মিক এবং প্রতীকী অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করবে এবং তাকে 'এমেরিটাস নেতা' আখ্যায়িত করার সুযোগ তৈরি করবে। একইসঙ্গে প্রতিদিন উত্তরসূরির কাছে একটু একটু করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এতে প্রকাশ্যে তার উপস্থিতি না কমিয়েই ক্রমশ সংস্কার করতে পারবেন।
পর্যায়ক্রমে ক্ষমতা হস্তান্তরের ফলে ব্যবস্থাটির সঙ্গে পরবর্তী নেতৃত্ব খাপ খাইয়ে নিতে পারবে এবং তরুণ অভিজাতদেরও রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করবে। সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর ছাড়াই নীতি পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করতে পারবেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, খামেনির অনুগত রক্ষণশীল সমর্থক গোষ্ঠী দেশের মানুষের কাছে এখনো বেপরোয়া শক্তি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর, এই গোষ্ঠীগুলি সংস্কারে কম আগ্রহী। তারা বরং সম্ভাব্য তথ্য ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেশি আগ্রহী। কারণ ওই তথ্য ফাঁসের ফলেই ইসরায়েল প্রথমে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আক্রমণ চালিয়েছিল।
তবুও সরকারের অবস্থান বিবেচনা করে অনিবার্যভাবে সংস্কার আলোচ্য সূচিতে আছে। কিছু সংস্কারের ব্যাপারে নীরবে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে ইন্টারনেটের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করা। বিশেষ করে ইরানের বিশাল এবং তরুণ জনগোষ্ঠীর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে তার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।
ডিজিটাল স্পেসের প্রবেশাধিকার শুধু সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় নয় বরং প্রজন্মের সংস্কৃতির চিহ্ন হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর—তাকে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ আটক করে এবং পরবর্তীতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল। ফলে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। সেসময় ইরানের নেতারা সরকারের কঠোর নৈতিকতা আইন সংশোধনের দাবির মুখে পড়েছিলেন।
যদি সরকার সেই লক্ষ্যে সংস্কার আনে, যা ইতিমধ্যেই অনানুষ্ঠানিকভাবে এবং বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে হচ্ছে। তবে তা বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার ভিত্তিকে মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জ না করেই নারী এবং তরুণ ইরানিদের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইরান ইতিমধ্যেই তার পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন শুরু করেছে। ২০২৪ সালে ব্রিকসের সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে তা প্রতিফলিতও হয়েছে। এই পদক্ষেপটি বিশ্ব মঞ্চে ইরানকে নতুন নতুন সম্পর্ক গড়ায় সাহায্য করবে। আর এটি বিশ্ব রাজনীতিতে ইরানের আরও সক্রিয় অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দেয়।
অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে থাকতে পারে—আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্যপদ লাভ। পাশাপাশি পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
যদি সফল হয়, তাহলে এটি দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগের সুযোগ এবং বাণিজ্য অংশীদারিত্বের দ্বার উন্মোচন করবে। যা বছরের পর বছর ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে। এই প্রতিটি পদক্ষেপ, ছোট পরিসরে হলেও তা বৃহত্তর পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেবে। হয়তো রাতারাতি সম্পূর্ণ রূপান্তর সম্ভব না। কিন্তু সতর্কভাবে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ বা গ্রহণের ইচ্ছার ইঙ্গিত অন্তত দেওয়া যাবে।
আর এ সবই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেটি সাম্প্রতিক সংঘাত এবং মার্কিন বাঙ্কার-ধ্বংসকারী হামলায় গুরুতর ক্ষতির খবর সত্ত্বেও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তেহরান জোর দিয়ে বলে আসছে, তার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক প্রকৃতির। তারা এই কর্মসূচি বাদ দেবে না।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রের জন্য এই কর্মসূচি শুধু কৌশলগত বাধাই নয়; এটি জাতীয় গর্ব এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সর্বোচ্চ নেতার অধীনে হোক বা ভবিষ্যতের উত্তরসূরির অধীনে—এই বিষয়টি রাষ্ট্রের পরিচয় এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে তা বলা যায়।
ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময় পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ইরান এখনও চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ। তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনেই হচ্ছে বলে তারা দাবি করে আসছে।
তবুও বৃহত্তর স্বচ্ছতা বা সহযোগিতার জন্য যেকোনো পদক্ষেপকেই অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বিচার করতে হবে। কারণ ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিও একসময় কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে বের করে নেয়। এতে চুক্তি ভেঙে যায় এবং তেহরানের উপর ফের একতরফাভাবে ওয়াশিংটন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ার পর ইরান একাধিক গোপন অভিযান এবং সামরিক হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। মূলত ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ওইসব হামলার জন্য দায়ী ছিল। তেমনই এক হামলায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি পশ্চিমা প্রতিশ্রুতির নির্ভরযোগ্যতা এবং আপস সম্পর্কে তেহরানের নেতৃত্বের মধ্যে সন্দেহকে বাড়িয়ে তুলে।
ফলে, তত্ত্বগতভাবে আরও উন্মুক্ত ও সহযোগিতামূলক ভঙ্গি নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ, অবরুদ্ধ বাণিজ্যের পথ খোলা এবং আন্তর্জাতিক বৈধতার পথ তৈরি করতে পারে। তবে এটি আমেরিকান ও ইসরায়েলের আঞ্চলিক নীতির বিরুদ্ধে ইরানের স্ব-ঘোষিত প্রতিরোধের সক্ষমতাকে দুর্বল করার ঝুঁকিও তৈরি করবে।
এই সবকিছুর প্রভাবই খামেনির উপর পড়বে। কারণ সব বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতিগত বিষয়ে সামগ্রিকভাবে তিনিই কথা বলেন। জীবিত এবং ক্ষমতায় থেকে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে তিনি তার উত্তরাধিকারকে নিজের পছন্দসই পথেই নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ইসলামি বিপ্লবের মূল বিষয়গুলিকে ধারণ করেই দেশকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের দিকে ধীর গতিতে এগিয়ে নিতে পারবেন।
এটি করার মাধ্যমে তিনি ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে একটি বিরল ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারেন। যা তার অনুগত রক্ষণশীলদের এবং সংস্কারের আকাঙ্ক্ষায় থাকা ইরানের তরুণ প্রজন্ম—উভয়ের জন্যই প্রয়োজন। ১২ দিনের সেই যুদ্ধ খামেনিকে সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট এ পদক্ষেপের সুযোগ এনে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, তিনি কী করবেন।
অনুবাদ: রুহুল আমিন
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার পুরোটাই দখলে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। আজ শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃবিতে বলা হয়েছে, ‘দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদস্যরা গাজা দখলে শিগগিরই কাজ শুরু করবে।’
১ দিন আগেভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে এখন ভারতের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত মোট শুল্ক দাঁড়াল ৫০ শতাংশ। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবেই পরিচিত।
২ দিন আগেপ্রাচীন রোমান আইনও সম্মান রক্ষার্থে হত্যাকে ন্যায্যতা দিত এই বলে যে, ব্যভিচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত নারীদের তাদের স্বামীরা হত্যা করতে পারতেন। চীনে কিং রাজবংশের সময়ে পিতা ও স্বামীদের এমন কন্যাদের হত্যা করার অধিকার ছিল, যারা পরিবারের অসম্মান করেছে বলে মনে করা হতো।
৩ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন পাল্টা শুল্কনীতি সারা দুনিয়ায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে তার প্রায় সব দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশও এ আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
৫ দিন আগে