leadT1ad

ভারত-চীনের ঘনিষ্ঠতা কি যুক্তরাষ্ট্রকে কোণঠাসা করবে

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারত ও চীনকে কাছাকাছি এনেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন কোয়াড দুর্বল হতে পারে এবং এশিয়ায় নতুন আঞ্চলিক বাণিজ্য জোট গড়ে উঠতে পারে।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৫৭
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ০২
ভারত-চীনের ঘনিষ্ঠতা এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে কোণঠাসা করবে। স্টিম গ্রাফিক্স

মাত্র পাঁচ বছর আগে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। তখন জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভারতে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সেইসময় চীনের তীব্র সমালোচনাতেও মুখর ছিল ভারত।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প প্রথমবার ভারতে সফর করেন। আহমেদাবাদে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ শীর্ষক বিশাল সমাবেশে তিনি ভাষণ দেন। সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক রমরমা ছিল। ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত সখ্যতাও ফুটে উঠেছিল প্রকাশ্যে।

একই বছরের জুনে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও ভেঙে পড়ে। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হন। টিকটকসহ ২০০-রও বেশি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে ভারত। দুই দেশের সেনারা সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একই সময়ে ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও কোয়াডের সঙ্গে প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ায়। কোয়াড জোটে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জাপান ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে।

এমনকি চলতি বছরের মে মাসেও ভারত চীনকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখছিল। ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে এক ‘সন্ত্রাসী’ হামলার পর চার দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান চীনা যুদ্ধবিমান ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করলে ভারতের এ অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়।

‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংগৃহীত ছবি
‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংগৃহীত ছবি

তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতি, বিশেষত ভারতের আমদানির ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং দ্রুত বদলে যাওয়া ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নয়াদিল্লি-বেইজিং সম্পর্কের বরফ গলাতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে, বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে এশিয়ায় দুর্বল করে তুলছে। এতে গত কয়েক দশকের কূটনৈতিক ও কৌশলগত অর্জন নষ্ট হচ্ছে। অথচ এশিয়াতেই বিশ্বের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষের বসবাস।

‘ড্রাগন-হাতির ট্যাঙ্গো নৃত্য’

গত সপ্তাহের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনের শীর্ষ কূটনীতিক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে ‘পারস্পরিক স্বার্থ ও সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা’ এবং ‘স্থিতিশীল অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ওয়াং ই দুই দিনের সফরে দিল্লিতে এসেছিলেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই দেশ এখন ‘স্থিতিশীল উন্নয়নের পথে’ এগোচ্ছে। তাদের একে অপরকে ‘বিশ্বাস ও সমর্থন’ করা উচিত। দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ, ভিসা প্রক্রিয়া সহজকরণ এবং সীমান্ত বাণিজ্য বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।

ড্রাগন-হাতির ট্যাঙ্গো নৃত্য। সংগৃহীত ছবি
ড্রাগন-হাতির ট্যাঙ্গো নৃত্য। সংগৃহীত ছবি

এর আগে জুনে চীন ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের তিব্বতের পবিত্র স্থানে যাওয়ার অনুমতি দেয়। দুই দেশ তাদের দীর্ঘকালীন সীমান্ত বিরোধের কিছু অংশ দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজতেও সম্মত হয়।

মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণও গ্রহণ করেছেন। এ মাসের শেষে তিনি তিয়ানজিনে অনুষ্ঠেয় সাংহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেবেন। এটি হবে মোদির সাত বছরের মধ্যে প্রথম চীন সফর। চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক সংগঠন এসসিওকে অনেক বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব প্রতিরোধের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখেন।

ওয়াং ই বলেন, ‘গত কয়েক বছরে যেসব বিপর্যয় ঘটেছে, তা আমাদের দুই দেশের জনগণের স্বার্থে ছিল না। সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে দেখে আমরা আনন্দিত।’ তিনি গালওয়ান সংঘর্ষের প্রসঙ্গও টানেন, যেখানে চারজন চীনা সেনাও নিহত হয়েছিল।

এর আগে চলতি বছরেই প্রেসিডেন্ট শি ভারত-চীন সম্পর্ককে ‘ড্রাগন-এলিফ্যান্ট ট্যাঙ্গো নৃত্য’ আকারে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এই উপমা দুই এশীয় শক্তির প্রতীক প্রাণী ড্রাগন ও হাতিকে নির্দেশ করে।

তাইওয়ান-এশিয়া এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশনের ফেলো সানা হাশমি আল জাজিরাকে বলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা ও মতভেদ কমানোর চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চলছে। গত অক্টোবরে দীর্ঘ বিরতির পর রাশিয়ার কাজানে মোদি ও শি প্রথমবার সাক্ষাৎ করেন। বহু বছর ধরে তারা বহুপাক্ষিক ফোরামেও একে অপরকে এড়িয়ে চলছিলেন।

হাশমি বলেন, ‘কিন্তু ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং পাকিস্তানের প্রতি তাঁর নমনীয়তা ভারতের সামনে আর কোনও বিকল্প অবশিষ্ট রাখেনি। তাই ভারতকে প্রতিপক্ষের সংখ্যা কমাতে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতেই হচ্ছে।’

গত অক্টোবরে দীর্ঘ বিরতির পর রাশিয়ার কাজানে মোদি ও শি প্রথমবার সাক্ষাৎ করেন। সংগৃহীত ছবি
গত অক্টোবরে দীর্ঘ বিরতির পর রাশিয়ার কাজানে মোদি ও শি প্রথমবার সাক্ষাৎ করেন। সংগৃহীত ছবি

এই বছর যুক্তরাষ্ট্র দুবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এমনকি হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার অভূতপূর্ব বৈঠকও হয়। ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘর্ষ শেষে যুদ্ধবিরতি তাঁর মধ্যস্থতায় হয়েছে। যদিও দিল্লি তা বরাবরই অস্বীকার করেছে।

হাশমির মতে, বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি এই উদ্যোগ কৌশলগত। অন্যদিকে দিল্লির প্রেরণা এসেছে অনিশ্চয়তা এবং পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে।

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প প্রকাশ্যে চীনকে একঘরে করার চেষ্টা করছেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিতভাবেই ভারতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদারকে কোণঠাসা করতে চাইছে।

ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর দুই দফায় ২৫ শতাংশ করে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। কারণ ভারত এখনও রাশিয়ার তেল আমদানি করছে। অথচ চীনের ক্ষেত্রে, যারা রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতা, এমন কোনো শুল্ক আরোপ করা হয়নি।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ ধর বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি এশিয়ায় নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, গত কয়েক মাসে ভারত-চীন সম্পর্কে উন্নতির গতি স্পষ্টভাবে বেড়েছে।

তাঁর ভাষায়, ‘সুম্পর্কে বাস্তব পরিবর্তন ঘটছে। এটি স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’

এশীয় বাণিজ্য জোট?

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত-চীনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে উভয় দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব কিছুটা কমতে পারে।

ওয়াশিংটন যখন ভারতের প্রধান রপ্তানির পথে বাধা তৈরি করছে, তখন চীনের বাজারে প্রবেশাধিকার, সীমান্ত বাণিজ্যের সহজীকরণ এবং যৌথ সাপ্লাই চেইন নেটওয়ার্ক দিল্লিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করতে পারে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে। এর পেছনে প্রধান কারণ ইলেকট্রনিক সামগ্রীর আমদানি বৃদ্ধি। যুক্তরাষ্ট্রের পরই চীন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ।

তাইওয়ান-এশিয়া এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশনের হাশমি জানান, চীন ভারতকে কাছে টানতে চাইছে। এজন্য তারা ভারতীয় পণ্যের জন্য আরও বেশি বাজার খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তাঁর মতে, এটা ট্রাম্পের শুল্কের চাপ থেকে ভারতকে কিছুটা স্বস্তি দেবে। একই সঙ্গে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দুর্বলতার প্রভাবও কমাবে এবং বর্তমান বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে।

হাশমি আরও বলেন, ভারতের সমর্থন পাওয়া চীনের জন্যও বড় কৌশলগত সাফল্য হবে। এতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের প্রভাব বাড়বে।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ-এর ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো ইভান লিদারেভ বলেন, ভারত ও চীন উভয়েই বুঝতে পেরেছে যে তাদের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণে ভূ-কৌশলগতভাবে নিজেদেরই বড় ক্ষতি হয়েছে।

ভারত-চীন সীমান্ত। সংগৃহীত ছবি
ভারত-চীন সীমান্ত। সংগৃহীত ছবি

তিনি বলেন, চীন উপলব্ধি করেছে যে তারা ভারতকে অতিরিক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অন্যদিকে দিল্লিও বুঝতে পারছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরও বড় মূল্য দিতে হচ্ছে।

লিদারেভ মনে করেন, ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতি এশিয়ায় নতুন বাণিজ্য জোট গঠনের সুযোগ তৈরি করবে, যা ওয়াশিংটনের বাইরে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে পারবে। একই সঙ্গে ভারত-চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও বাড়তে পারে।

তবে হাশমি কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, ভারতসহ অনেক দেশ সাপ্লাই চেইনের ঝুঁকি কমাতে কোনো একক উৎসের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাচ্ছে। কিন্তু চীনের ওপর বাড়তে থাকা নির্ভরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। ভারতের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জ নতুন মার্কিন শুল্কের কারণে আরও গভীর হয়েছে।

হাশমি বলেন, সম্পর্কের বরফ গললে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। তবে তা মৌলিক পরিবর্তন আনবে না, কারণ প্রতিযোগিতা ও সংঘাত থেকে যাবে।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে চীনের ওপর নির্ভরতা আরও বাড়তে থাকবে। কারণ ট্রাম্পের শুল্কের মধ্যে অনেক দেশ বেইজিংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য তড়িঘড়ি করছে।

কোয়াডের শক্তি কমবে

জর্জ ডব্লিউ বুশের আমল থেকে ওয়াশিংটনে ভারতকে চীনের গণতান্ত্রিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। বারাক ওবামার ‘পিভট টু এশিয়া’ নীতিতে দিল্লি বেইজিংয়ের উত্থান ঠেকানোর কেন্দ্রীয় ভূমিকা পায়। এই ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয় কোয়াড জোট গঠনের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতও এতে যোগ দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোয়াড এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই কাঠামোর মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয় অবকাঠামো, সাপ্লাই চেইন স্থিতিশীলতা এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোয়াড যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক জোটের বাইরে থেকেও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে এটি দিল্লিকে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার কাঠামোয় যুক্ত করেছে।

স্নায়ু যুদ্ধের সময় থেকেই ভারত কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের নীতি অনুসরণ করছে। অর্থাৎ, তারা নির্দিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব করবে। কিন্তু কোনো সামরিক জোটে যোগ দেবে না। আর কোনো বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে মতাদর্শভিত্তিক অবস্থানও নেবে না।

কোয়াড। সংগৃহীত ছবি
কোয়াড। সংগৃহীত ছবি

তবুও ওয়াশিংটনের ধারণা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের ঘনিষ্ঠতা এবং নয়াদিল্লি-বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক অবিশ্বাস মিলে ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভে পরিণত করবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র সবসময় নয়াদিল্লির ওপর চাপ প্রয়োগে সতর্ক থেকেছে। বিশেষ করে মস্কোর সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সম্পর্কের ক্ষেত্রে। গত অর্ধশতকে রাশিয়া ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও এই নীতি বহাল থাকে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়ার তেল কিনতে উৎসাহিত করে। এতে বৈশ্বিক অপরিশোধিত তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল।

কিন্তু এখন ট্রাম্প সেই সমীকরণ বদলাচ্ছেন। তিনি চান ভারত স্পষ্টভাবে একটি পক্ষ বেছে নিক।

১৮ আগস্ট ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য ও উৎপাদনবিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাভারো লিখেছেন, ‘বাইডেন প্রশাসন এই কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাকে এড়িয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এখন সেটার মোকাবিলা করছে। ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হতে চায়, তাহলে তাকে সেইভাবেই আচরণ শুরু করতে হবে।’

কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, দিল্লি তার ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ ছাড়বে না।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) চীনা স্টাডিজের অধ্যাপক বি আর দীপক বলেন, ভারত-চীন সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চীনকে একঘরে করার যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা জটিল হয়ে উঠবে।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, দিল্লি যদি বেইজিংয়ের সঙ্গে উন্নয়ন অর্থায়ন, বহুপাক্ষিক সংস্কার, ডলারমুক্তকরণ বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে ঘনিষ্ঠ হয়, তাহলে তা চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বয়ানকে দুর্বল করবে। এতে বেইজিংয়ের বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা গড়ার প্রচেষ্টাও বৈধতা পাবে।

দীপক মনে করেন, দিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক উন্নত হলে ভারত কোয়াডে প্রকাশ্যে চীনবিরোধী অবস্থান নেওয়ার প্রবণতা কমাতে পারে। বরং কোয়াডকে সরাসরি চীনের বিরোধী জোট হিসেবে নয় বরং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে মনোযোগী হওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লিদারেভ বলেন, ভারত-চীন সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে কোয়াডের ভেতরে জটিলতা তৈরি হবে। এতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক আস্থা ও উদ্দেশ্যের ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তবে দীপক মনে করেন, কোয়াডের ‘কৌশলগত গুরুত্ব’ অক্ষুণ্ন থাকবে। বিশেষ করে সাপ্লাই চেইনের স্থিতিশীলতা, উদীয়মান প্রযুক্তি, জলবায়ু সহযোগিতা এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তার মতো যৌথ লক্ষ্যে।

হাশমি উল্লেখ করেন, ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে কোয়াডকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি এর ঐক্যকেই দুর্বল করছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অগ্রাধিকারের মধ্যে নেই। তবে যদি পরিস্থিতি পাল্টায়, ওয়াশিংটনও নতুন এক আঞ্চলিক বাস্তবতার মুখোমুখি হবে।

তিনি সতর্ক করেন, তখন ভারতের মতো দেশকে চীনবিরোধী জোটে যুক্ত করা খুব কঠিন হবে।

  • আল জাজিরায় প্রকাশিত যশরাজ শর্মার ফিচার প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন মাহবুবুল আলম তারেক
Ad 300x250

যে ছয় মাস আছি, প্রত্যেক জেলায় লিগ্যাল এইডের ব্যবস্থা করে যাব: আইন উপদেষ্টা

মুসলমানি-বাংলা থেকে বাংলাদেশি: ভাষার রাজনৈতিক বিভাজন

রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে প্রস্তুত: খলিলুর রহমান

ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের পাটশিল্পে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা

‘রোহিঙ্গা সংকট স্থবির হয়ে আছে, সমাধানে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক সক্রিয়তা জরুরি’

সম্পর্কিত