leadT1ad

রাখাইনে আরাকান আর্মি: চীন-ভারতের স্বার্থ ও রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ

সামরিক অভিযানের মুখে টিকতে না পেরে শুধু ২০১৭ সালেই প্রায় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই ঘটনার আজ আট বছর পূর্ণ হচ্ছে। আরাকান আর্মির একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, এই অঞ্চলের দুই বৃহৎ শক্তি চীন-ভারতের স্বার্থের খেলা আর রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা দুদিন আগে (২৩ আগস্ট) একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। লোরকান লাভেটের লেখা প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন সালেহ ফুয়াদ

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১১: ১৮
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১২: ১০
রাখাইনে আরাকান আর্মি: চীন-ভারতের স্বার্থ ও রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ। স্ট্রিম গ্রাফিক

বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশটির কৌশলগত পশ্চিম সীমান্ত পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পথে ক্রমশ এগোচ্ছে আরাকান আর্মি। ক্ষমতার এই পালাবদল মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধই শুধু নয়, আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিও বদলে দিতে পারে।

জান্তা সরকার দেশের অন্যত্র কিছু অঞ্চল আবারও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলেও রাখাইনের ১৭টি শহরের ১৪টিই নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি। পশ্চিম মিয়ানমারের বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা রাখাইন রাজ্য আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বিজয়ে উজ্জীবিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী রাজধানী সিত্তেসহ রাখাইনের অন্য অঞ্চলগুলোও দ্রুত দখলে নিতে তৎপর। ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর প্রকল্প, তেল ও গ্যাস পাইপলাইন থাকা কিয়াকফিউ শহর এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি কেন্দ্রীয় গভীর সমুদ্রবন্দর দখলের শপথ নিয়েছে বিদ্রোহীরা।

প্রসঙ্গত, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ মূলত দুই হাজার বছর আগে চীনের জিয়ান প্রদেশ থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত যে বাণিজ্যিক পথ গড়ে উঠেছিল, তার আধুনিকতম সংস্করণ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিদ্রোহীদের চূড়ান্ত আক্রমণের জানালা খোলা আছে। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির এই লড়াই এক ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের মধ্যে ঘটছে, রাখাইনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুরুতর নির্যাতনের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অবরোধ এই সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জাতিসংঘ অনুমান করছে, দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম সতর্ক করে দিয়েছে, মধ্য রাখাইনের ৫৭ শতাংশ পরিবার এখন মৌলিক খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারছে না। গত ডিসেম্বরে এই হার ছিল ৩৩ শতাংশ।

বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। স্ট্রিম ছবি
বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। স্ট্রিম ছবি

হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক সিত্তেতে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। সমুদ্র বা আকাশপথ ছাড়া সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। বাসিন্দারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ভয়াবহ। সেখানে আগে শূকরের মাংসের দাম ছিল ২ ডলার, এখন তা ছাড়িয়ে গেছে ১৩ ডলারে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর, হতাশায় অনেকে আত্মহত্যা করছে, ভিক্ষাবৃত্তি ও যৌনপেশা বেড়ে গেছে, দিনে-দুপুরে ডাকাতি হচ্ছে। এককথায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে।

সম্প্রতি বিমানে সিত্তে থেকে ঘুরে আসা এক বাসিন্দা আল-জাজিরাকে বর্ণনা দিয়েছেন, ওই শহরে অপরাধ কতটা বেড়ে গেছে। ওই বাসিন্দা বলেন, ‘তারা গ্যাংস্টারদের মতো। দিন-দুপুরে ঘরে ঢুকে পড়ে। এমনকি আসবাবপত্রও নিয়ে যায়’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিত্তের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র আল-জাজিরাকে জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান লিবারেশন আর্মি স্থানীয় বাসিন্দাদের কথাবার্তা নজরদারি করে। সেনারা ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালায়। কারো শরীরে আরাকান আর্মির সমর্থনের চিহ্ন ট্যাটু আছে কিনা তা খুঁজে দেখে। সূত্রটি বলে, ‘পরিস্থিতি অনিশ্চিত। ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে আমরা তা অনুমানও করতে পারি না’।

আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লীগ অব আরাকানের (ইউএএল) একজন প্রতিনিধি সিত্তেকে সামরিক শাসনের ‘প্রকৃষ্ট উদাহরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, জান্তা নেতারা কয়েক দশক ধরে আরাকানকে ‘অধিকৃত অঞ্চল’ হিসেবে ব্যবহার করছে।

বেড়ে চলেছে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা

আরাকান আর্মি রাখাইন জুড়ে একদিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, অন্যদিকে সামরিক জান্তা বিমান হামলার দিকে ঝুঁকছে। ২০২১ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর জেনারেলরা সারা দেশে এই কৌশলই ব্যবহার করেছেন।

ইউএএল জানায়, ২০২৩ সালের শেষ থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাখাইনে শুধু বিমান হামলায় ৪০২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতের ৯৬ জনই শিশু। এছাড়া এ বছর ভারী অস্ত্র, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন আরও ২৬ জন।

ইউএএল প্রতিনিধি বলেন, কিয়াকফিউ আরাকান আর্মির জন্য একটি ‘সংবেদনশীল অঞ্চল’, সেখানে তারা সবচেয়ে কম শক্তি প্রয়োগ করেন এবং বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মীদের রক্ষায় ‘কঠোর নীতি’ মেনে চলেন।

এই ধরনের হত্যাকাণ্ডকে সন্ত্রাস আখ্যা দিয়ে ইউএএল প্রতিনিধি আল-জাজিরাকে বলেন, বেসামরিক মানুষের ওপর বিমান হামলা ‘কোনো কার্যকর সামরিক ফলাফল আনতে পারে না’। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৮০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

তীব্র সংঘাতের এই সময়ে জনশক্তি বাড়াতে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনী উভয়েই জোরপূর্বক সেনানিয়োগ করছে। আরাকান আর্মি গত মে মাস থেকে ‘জাতীয় মুক্তির যুদ্ধ’ (ওয়ার অব ন্যাশনাল লিবারেশন) নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছে। এতে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ ও ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারীদের যোদ্ধা হিসেবে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বাধ্য করছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী গত ১৬ মাসে প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করেছে।

রোহিঙ্গাদের সশস্ত্রকরণ: রাখাইনের সংঘাতে নাটকীয় মোড়

রাখাইন বহুবার জাতিগত সহিংসতায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। ২০১৭ সালে সামরিক দমন অভিযানে টিকতে না পেরে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাদের ওপর চালানো নৃশংসতা ও জেনোসাইডের অভিযোগ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্তের শরণার্থী শিবিরে বাস করছে। জাতিসংঘ জানাচ্ছে, গত ১৮ মাসে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে নতুন করে পালিয়ে এসেছে।

আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রাখাইনে বেসামরিক রোহিঙ্গা নাগরিকদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, শুধু গত বছর ৬০০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে তারা। যদিও তারা এটি অস্বীকার করেছে। তাদের মতে, প্রচারিত মৃতদেহগুলো আসলে যুদ্ধে নিহত সরকারি সেনাদের।

আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউএএল বলছে, তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ‘মুসলিম বাসিন্দারা সাম্প্রতিক ইতিহাসের যেকোনও সময়ের চেয়ে ভালো জীবনযাপন করছে’।

ইউএএল ও সামরিক জান্তা সরকার কেউই রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে না। এর মাধ্যমে তারা বোঝাতে চায়, রোহিঙ্গারা রাখাইনের আদি বাসিন্দা নয়।

দেশে আসা রোহিঙ্গাদের সারি। স্ট্রিম ছবি
দেশে আসা রোহিঙ্গাদের সারি। স্ট্রিম ছবি

রাখাইনে সংঘাত একটি নাটকীয় মোড় নিয়েছে। সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র দিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর হাতে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য এটি একেবারেই নতুন ঘটনা।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) সতর্ক করেছে দিয়ে বলেছে, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ধর্মীয় বয়ান ব্যবহার করে বাংলাদেশে থাকা শরণার্থীদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংগঠিত করছে।

তবে তারা এ-ও বলেছে যে, ‘আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা বিদ্রোহ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম’। বরং এটি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা-বিরোধী মনোভাব বাড়াতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে তাদের ফেলে যাওয়া বাড়িঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে।

বাংলাদেশের সঙ্গেও উত্তেজনা বাড়ছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পুরো সীমান্ত অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি। ফলে বাংলাদেশে চায়, আরাকান আর্মি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়াকে অনুমোদন করুক।

খবরে বলা হচ্ছে, আরাকান আর্মির ওপর চাপ তৈরির জন্য বাংলাদেশ রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন যোগাচ্ছে। অন্যদিকে আরাকান আর্মি সতর্ক যে, বাংলাদেশ হয়তো রাখাইনে একটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল তৈরিকে সমর্থন করতে পারে। এটি করলে রাখাইন রাজ্য নিয়ে তাদের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

চীনের বন্দর নিয়ে লড়াই

সিত্তের দক্ষিণে কিয়াকফিউ নিয়ে একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। উপকূলীয় এ শহর চীনের ইউনান প্রদেশের সঙ্গে তেল ও গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত। এ শহরেই রয়েছে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর।

ব্যাংকক-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা প্রকাশনা জেনেসের বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিসের অনুমান, সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে বর্ষার সময় আরাকান আর্মি আক্রমণ চালাতে পারে। মেঘলা আকাশ বিমান হামলা এড়াতে সহায়ক হবে। এতে কিয়াকফিউ দখলের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

ডেভিস বলেন, ২০২৪ সালে দখল করা আরাকান আর্মির অস্ত্রশস্ত্র ২০২৬ নাগাদ ফুরিয়ে যেতে পারে, পাশাপাশি চীনের চাপে উত্তর মিয়ানমার হয়ে বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র আসা সীমিত হয়ে যেতে পারে। এ কারণে এখনই জোরদার আক্রমণ করার চাপ রয়েছে তাদের ওপর।

ডেভিসের অনুমান, প্রায় ৩ হাজার সরকারি সেনা কিয়াকফিউ রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে, যাদের পেছনে আছে যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও নৌবাহিনীর গোলাবারুদ।

আরাকান আর্মি অন্তত ৪০,০০০ যোদ্ধা নিয়ে মিয়ানমারের বৃহত্তম জাতিগত সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাদের পক্ষে প্রায় ১০ হাজার সেনা নিয়ে কিয়াকফিউতে হামলা করা সম্ভব।

ট্র্যাক রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে ডেভিসের বিশ্বাস, বন্দরটি আরাকান আর্মি দখল করতে পারবে, তাদের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল যুদ্ধ হবে এটি।

চীনের প্রায় ৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী এখনও কিয়াকফিউতে অবস্থান করছেন। ডেভিসের মতে, বেইজিং মেনে নিয়েছে আরাকান আর্মি হয়তো এই স্থাপনাটি দখল করবে।

তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেইজিং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রতি তাদের সমর্থনও বাড়িয়েছে।

ইউএএল প্রতিনিধি বলেন, কিয়াকফিউ আরাকান আর্মির জন্য একটি ‘সংবেদনশীল অঞ্চল’, সেখানে তারা সবচেয়ে কম শক্তি প্রয়োগ করেন এবং বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মীদের রক্ষায় ‘কঠোর নীতি’ মেনে চলেন।

তিনি যোগ করেন, আরাকান আর্মি চীনের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়তে ‘সবরকম চেষ্টা করবে’।

যুদ্ধের বিস্তার

রাখাইনে ভারতেরও স্বার্থ রয়েছে। রাখাইনে তাদের কালাদান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট রয়েছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য, ভারতের প্রত্যন্ত উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে ভারত-নির্মিত সিত্তে বন্দর ও আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীপথের মাধ্যমে সংযুক্ত করা।

এই প্রকল্প বাংলাদেশকে এড়িয়ে ভারতকে মিয়ানমারের সঙ্গে বিকল্প বাণিজ্যপথ সৃষ্টির সুযোগ করে দেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আরাকান আর্মি এই বন্দর, সড়ক ও নদীপথ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তারা ভারতের ওপর বাণিজ্য কর আরোপ করতে পারবে। এতে তাদের অর্থায়ন বাড়বে ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক দুর্বল হবে।

আরাকান আর্মি রাখাইনের উপকূলীয় বন্দরগুলো দখল করতে পারলে তারা কার্যত চীন ও ভারতের জন্য অপরিহার্য বাণিজ্য ও পরিবহন প্রবেশদ্বারগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি এমন এক প্রভাব সৃষ্টি করবে যা মিয়ানমারের অন্য কোনও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে নেই।

ডেভিসের মতে, এটি হলে আরাকান আর্মি সমর্থিত ‘আরাকান পিপলস রেভল্যুশনারি গভর্নমেন্ট’ আঞ্চলিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসবে।

মিয়ানমারের ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি বলছে, আরাকান আর্মি শুধু রাখাইন নয়, দেশজুড়ে সবচেয়ে বিস্তৃত সশস্ত্র জোটেরও নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা লিখেছে, ‘দেশের তরুণ যোদ্ধাদের মধ্যে এমন বিস্তৃত প্রভাব আর কোনো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী তৈরি করতে পারেনি।'

দেশের অন্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী যখন হারানো এলাকা পুনর্দখল করছে ও আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে—যা ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে প্রহসন হিসেবে বিবেচিত—তখন আরাকান আর্মি হয়তো একদিন সামরিক জান্তার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারে অথবা লড়াই চালিয়ে যেতে পারে ও যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে একা সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করতে পারে।

এই পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ইউএএল প্রতিনিধি সতর্ক করেছেন সেনাবাহিনীর ঐতিহ্যবাহী ডিভাইড অ্যান্ড রুল কৌশলের বিরুদ্ধে। প্রতিনিধি বলেন, ‘যুদ্ধ কখনো এগিয়ে যাওয়া, কখনো পিছিয়ে যাওয়ার নাম। তবে এবার আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, প্রতিরোধ বাহিনী দেশটিতে অর্থবহ পরিবর্তন আনতে পারবে’।

Ad 300x250

যে ছয় মাস আছি, প্রত্যেক জেলায় লিগ্যাল এইডের ব্যবস্থা করে যাব: আইন উপদেষ্টা

মুসলমানি-বাংলা থেকে বাংলাদেশি: ভাষার রাজনৈতিক বিভাজন

রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে প্রস্তুত: খলিলুর রহমান

ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের পাটশিল্পে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা

‘রোহিঙ্গা সংকট স্থবির হয়ে আছে, সমাধানে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক সক্রিয়তা জরুরি’

সম্পর্কিত