leadT1ad

সেন্ট মার্টিনের জন্য মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া, টাকার হিসাবে অসংগতি

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে ঘিরে সরকারের প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যানে মোট ২৬টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরে (ডিওই) প্রস্তুত করা এই মাস্টারপ্ল্যানে জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পর্যটন নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জনজীবনের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ বছর ধরে দ্বীপের সার্বিক সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা দিতে এই প্রকল্পগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে মাস্টারপ্ল্যানটির প্রকল্প ব্যয়ের হিসাবে কিছু অসংগতি লক্ষ করা গেছে

টেকসই পর্যটন, মৎস্য উন্নয়ন, প্রবাল পুনরুজ্জীবন, কচ্ছপ সংরক্ষণ, স্থলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র্য, কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা, সড়ক উন্নয়ন এবং স্থানীয় মানুষের জীবন–জীবিকা—এই নয়টি খাতেই রয়েছে সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা দলিলে বলা হয়েছে, এই ২৬টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দ্বীপের প্রবাল, কচ্ছপ, মাছ ও ভূগর্ভস্থ পানির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে এটি স্থানীয় মানুষের আয় বৃদ্ধি ও পরিবেশ সুরক্ষায় একটি দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তি তৈরি করবে।

পর্যটন ও নিরাপত্তা

পর্যটন খাতে মোট চারটি বড় প্রকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পর্যটকদের অনলাইন নিবন্ধনব্যবস্থা, তথ্য বিশ্লেষণ, সৈকতের নিরাপত্তা–সুবিধা উন্নয়ন এবং কমিউনিটি–ভিত্তিক পর্যটন (সিবিটি) সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। প্রথম প্রকল্পটি সেন্ট মার্টিনে প্রবেশ করা পর্যটকসংখ্যা ও আচরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। সৈকত উন্নয়ন প্রকল্পে থাকবে টয়লেট, শাওয়ার, উদ্ধার টিম, নিরাপত্তা ও পর্যটন নির্দেশিকা।

মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য

মৎস্য উন্নয়নে দুটি প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রবালনির্ভর মাছের আবাসস্থল সুরক্ষা, লেগুন পুনর্খনন ও অভয়ারণ্য ঘোষণা। অপর প্রকল্পে রয়েছে জেলেদের প্রশিক্ষণ, এমসিএস (মনিটরিং, কন্ট্রোল অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স) ব্যবস্থা এবং খাঁচা–মাছ চাষের মাধ্যমে বিকল্প আয়–সুবিধা।

প্রবাল সংরক্ষণ খাতে তিনটি প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো ৫ কোটি টাকার প্রবাল পুনরুজ্জীবন প্রকল্প, যেখানে প্রবাল নার্সারি ও কৃত্রিম প্রবাল স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কোরাল এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ এবং ১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি মনিটরিং পরিকল্পনাও রয়েছে। কচ্ছপ সংরক্ষণে দুটি গবেষণা প্রকল্প বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে কচ্ছপের প্রজনন ও ডিম পাড়ার স্থান সংরক্ষণে জোর দেওয়া হয়েছে।

উদ্ভিদ ও বনায়ন

স্থলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণে ছয়টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধার, ঝোপঝাড়-নির্ভর বন্য উদ্ভিদ সংরক্ষণ, নতুন এলাকায় গাছরোপণ এবং সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় পাইন-কেয়া রোপণ। এসব প্রকল্প ছোট ব্যয়ের হলেও বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার এবং দ্বীপের সুরক্ষায় এগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পানি সংকট

দ্বীপের সবচেয়ে বড় সংকট বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় (সংশোধিত হিসাবে) প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি–নির্ভর বর্জ্য সংগ্রহ, ৩০টি রঙভিত্তিক ডাস্টবিন, সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস), কম্পোস্ট প্লান্ট এবং প্লাস্টিক বর্জ্য মূল ভূখণ্ডে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া তরল বর্জ্য শোধনাগারের মডেল তৈরিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে আরও ৫ কোটি টাকা।

সুপেয় পানির সংকট কাটাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বালিয়াড়ির উদ্ভিদ পুনরুজ্জীবনের দুটি প্রকল্প রাখা হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা বাড়ায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখাকেই প্রধান সমাধান হিসেবে দেখছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

অবকাঠামো ও জীবিকা

দ্বীপের তাপমাত্রা কমাতে রাস্তায় ‘কুল পেভমেন্ট’ প্রযুক্তি এবং নতুন ভবনগুলোতে ভার্টিক্যাল গ্রিনিং সিস্টেম (ভিজিএস) চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষের জীবিকা উন্নয়নে নারীর ক্ষুদ্র উদ্যোগ, স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের বাজারজাতকরণে তিনটি পৃথক প্রকল্প রাখা হয়েছে।

বাজেট বিভ্রান্তি: ৮৬ নাকি ৫৪ কোটি

মাস্টারপ্ল্যানটির প্রকল্প ব্যয়ের হিসাবে অসংগতি লক্ষ করা গেছে। নথির ১১ নম্বর অধ্যায়ের সারসংক্ষেপে মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৫৪৭.৯ মিলিয়ন বা ৫৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। কিন্তু ৮ নম্বর অধ্যায়ে প্রতিটি প্রকল্পের বিস্তারিত বর্ণনায় দেওয়া টাকার অঙ্ক যোগ করলে তা দাঁড়ায় ৮৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকায়।

এই ৩১ কোটি ৬০ লাখ টাকার গরমিলটি মূলত সৃষ্টি হয়েছে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ডব্লিউএম-০১)’ প্রকল্পটিকে কেন্দ্র করে। বিস্তারিত বর্ণনায় এই প্রকল্পের ব্যয় লেখা হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। সারসংক্ষেপ টেবিলে আবার একই প্রকল্পের ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। নথির চূড়ান্ত হিসাব (৫৪ কোটি ৭৯ লাখ) সঠিক ধরে নিলে বোঝা যায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ৩৫ কোটি টাকার তথ্যটি আসলে করণিক ভুল, যা বাস্তবে সাড়ে ৩ কোটি টাকা হবে।

বিষয়টি ‘টাইপিং মিসটেক’ হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখার পরিচালক মো. হাছান হাছিবুর রহমান। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটা খসড়া মাস্টারপ্ল্যান। জনসাধারণ ও অংশীজনের লিখিত মতামতের উন্মুক্ত করা হয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত হলে এ সব ভুল থাকবে না।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত