leadT1ad

টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধ হলো কেন, কী বলছে সরকার

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৩২
টিসিবির ট্রাকের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। স্ট্রিম ছবি

অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে থাকা নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে ২০২২ সালে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ভর্তুকি মূল্যে এই ট্রাক সেল পরিচালনা করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও চলতি মাসের ১৩ তারিখ ট্রাক সেল বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেক গ্রাহক।

টিসিবির ট্রাক থেকে নিয়মিত পণ্য কিনতেন মিরপুরের বাসিন্দা রফিক মিয়া। স্ট্রিমকে রফিক বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুর মানুষ। যা ইনকাম করি, তার প্রায় সব খাবার কেনার পিছে চলে যায়। তাই আমার বাড়িওয়ালী (স্ত্রী) টিসিবির ট্রাকে সিরিয়াল ধরে খাবার কিনতেন। সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। এখন বেঁচে থাকাই কষ্টের।’

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আরাফাত ট্রাক সেল আবার চালু করার দাবি জানিয়েছেন। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা তো ঢাকায় নাই। অর্ধেক দামে ট্রাক থেকে পণ্য কিনতাম এতদিন। এখন পুরা পরিবার নিয়ে বিপদে পড়েছি।’

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে ট্রাক সেল চালু রাখা উচিত। তবে বাজেটের সীমাবদ্ধতা এবং ব্যাপক ভর্তুকির কথা বলছেন টিসিবির কর্মকর্তারা। আগামী রমজান বা বিশেষ সময়ে আবার ট্রাক সেল চালু হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

ট্রাকে পণ্য বিক্রি

সরকারি হিসাব মতে, ২০২২ সালে দেশে দারিদ্রের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ৫ দশমিক ৬ থেকে বেড়ে অতি দারিদ্রের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের ১৮ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর একটি পরিবারের মাসের মোট খরচের প্রায় ৫৫ শতাংশ চলে যায় খাবারের পেছনে।

এসব বিবেচনা করেই মূলত ট্রাকে পণ্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যেন অতি দরিদ্র মানুষ একটু স্বস্তি পায়।

টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। স্ট্রিম ছবি
টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। স্ট্রিম ছবি

টিসিবির দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকায় ৬০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হয়। এসব ট্রাক থেকে ৪৫০ টাকায় একজন ক্রেতা ২ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারেন। বাজারে এই পণ্যের দাম পড়ে ৬২০-৬৫০ টাকা। অন্যদিকে ওএমএসের ট্রাক থেকে একজন ব্যক্তি পাঁচ কেজি চাল ও চার কেজি আটা কিনতে পারেন। এতে ব্যয় হয় ২৬০ টাকা। বাইরে যার মূল্য প্রায় ৫০০ টাকা।

কেন বন্ধ হলো ট্রাক সেল

টিসিবির দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ট্রাকে পণ্য বিক্রির জন্য টিসিবিকে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। গত অর্থবছর এই ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

টিসিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফ্যামিলি কার্ডের পাশাপাশি ট্রাক সেল চালালে ভর্তুকির পরিমাণটা বেড়ে যায়। ভর্তুকি কমাতে ট্রাক সেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

টিসিবির মুখপাত্র ও উপপরিচালক (বাণিজ্যিক) মো. শাহাদত হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘ট্রাক সেল আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম না। আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম হলো ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিতরণ করা। আর ট্রাক সেলটা দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ক্ষেত্র লক্ষ্য করে। যেমন এর আগে আমরা রমজান উপলক্ষে দিয়েছিলাম। এরপরে কোরবানি উপলক্ষে দেওয়া হয়েছে, পূজা উপলক্ষে দেওয়া হয়েছে।’

শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, এরপরেও যদি সরকার মনে করে আমাদের আরও ট্রাক সেল দেওয়ার দরকার আছে, তখন আবার ট্রাক সেল দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন স্ট্রিমকে বলেন, ‘এমনি মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের অবস্থা খুব জর্জরিত এবং মানুষের আয় বাড়েনি। মানুষের বরং দারিদ্রতা বেড়েছে। এ সময়ে এই সোশ্যাল সেফটি নেটের আওতায় খোলা বাজারে আরও বেশি সরকারি সাপোর্ট দরকার। হঠাৎ করে এটা বন্ধ করাটা তাদের উপর ভীষণ চাপ তৈরি করবে। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা, তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের উপর একটা প্রভাব পড়বে।’

ফ্যামিলি কার্ড

২০২২ সাল থেকে কার্ড ব্যবস্থা চালু করে তৎকালীন সরকার। ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সারা দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে টিসিবির মুখপাত্র ও উপপরিচালক (বাণিজ্যিক) মো. শাহাদত হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের যে এক কোটি পরিবার টার্গেট, এর মধ্যে প্রায় ৬৫ লাখ কার্ড আমরা বিতরণ করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ লাখ কার্ড অলরেডি অ্যাক্টিভ হয়ে গেছে। অন প্রসেসে আছে আরও প্রায় ৫ লাখ কার্ড। বাকি ৩০ লাখের জন্য কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।

শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন যাচাই-বাছাই করে দেখবে যে নিম্ন আয়ের পরিবার কারা। তাঁদের মধ্যে ১ কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্যগুলো দেওয়া হচ্ছে। এগুলো মূলত ভর্তুকি মূল্যের পণ্য। যা বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে দেওয়া হয়।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত