leadT1ad

কীভাবে ফোনালাপের ‘ফরেনসিক টেস্ট’ করা হয়

শিশির রায়ঢাকা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৪: ২০
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৮: ০২
স্ট্রিম গ্রাফিক

চারদিকে বেশ উত্তেজনা। একটি ফোনকল ফাঁস হয়েছে। সারা দেশে প্রায় ঝড় তুলেছে ঘটনাটি, বিশেষ করে রাজনীতির অঙ্গনে। ফোনালাপটি ছিল দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তির। যেখানে এমনকিছু কথা আছে যা জনমনে তুলেছে নানা প্রশ্ন। কেউ বলছে এটি ষড়যন্ত্র, কেউ বলছে ঘটনা সত্য। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি।

গতকাল বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শেখ হাসিনার একটি ফোনকলের ফরেনসিক পরীক্ষার ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শেখ হাসিনা পুলিশকে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন– এমন আলোচনা সেই ফোনকলে ছিল। এরপর প্রশ্ন উঠছে এই ফোনকলের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে কীভাবে। বিবিসি বলছে, ফরেনসিক পরীক্ষা মাধ্যমে ফোনকলের অডিও রেকর্ডের মেটাডাটা বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যমটি এই সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

কীভাবে করা হয় ফোনকলের ফরেনসিক পরীক্ষা

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্পর্কে প্রায় সবাই জানে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিএম-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট এমন একটি ডিজিটাল শনাক্তকারী, যা কোনো ফাইল, যন্ত্র, নেটওয়ার্ক কিংবা কোনো ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। যেমন কেউ যদি একটি ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানে তার নিজের কিছু তথ্য দিয়ে একটি ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি করে তাহলে পরবর্তীতে সে ওই ওয়েবসাইটে ঢুকলে ওয়েবসাইট নিজে থেকেই তাকে শনাক্ত করে নিতে পারবে।

ঠিক একইভাবে ভয়েস ফিঙ্গারপ্রিন্ট কাজ করে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এনআইএসটি) এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ভয়েস ফিঙ্গারপ্রিন্ট হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির কণ্ঠস্বরের ফ্রিকোয়েন্সি, পিচ, টেম্পো বিশ্লেষণ করা যায়।

টেকনোলোজির এই অসাধারণ উদ্ভাবনের মাধ্যমেই করা হয় ফোনালাপের ফরেনসিক টেস্ট। তবে এটি সবসময় প্রয়োগ করা হয় না। যখন গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্দিষ্ট কোনো কারণে কোনো ব্যক্তির কণ্ঠ শনাক্ত করার প্রয়োজন হয় তখনই শব্দের ফরেনসিক টেস্ট করানো হয়।

ফরেনসিক ল্যাবে শব্দের ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট

কোনো কল রেকর্ড বা ভয়েস রেকর্ড শনাক্ত করার জন্য যখন ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয় তখন প্রথমে জানার চেষ্টা করা হয়, ভয়েসটি মানুষের নাকি এআই দিয়ে বানানো। এরপর কোনো কাটছাঁট বা এডিট আছে কিনা, তা যাচাই করা হয়। টেস্টের জন্য ফরেনসিক ল্যাবে স্পেক্টোগ্রাম নামে একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া আরো কিছু টুলস রয়েছে। যেমন, ফরম্যান্ট অ্যানালাইজার, ব্যাটভক্স, ভয়েসগ্রিড, নয়েস রিডাকশন ইত্যাদি।

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা কীভাবে কাজ করেন

প্রথমে একজন বিশেষজ্ঞ অডিওটি বারবার শোনেন, এরপর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন কথার পেছনে আর কোনো শব্দ আছে কিনা। সেটি হতে পারে ফ্যানের শব্দ, গাড়ির হর্নের শব্দ ইত্যাদি। কথার মাঝের বিরতি, ফ্যান বন্ধ হয়ে গেল কিনা, কথার সুর বা গতির কোনো পরিবর্তন হলো কিনা, দরজা খোলা কিংবা বন্ধের শব্দ হলো কিনা।

এরপর স্পেক্টোগ্রামের সাহায্যে একটি গ্রাফিক্যাল প্রতিচ্ছবি তৈরি করেন বিশেষজ্ঞরা। ঠিক যেমন একজন মানুষের আঙ্গুলের ছাপ অন্য একজনের আঙ্গুলের ছাপের থেকে আলাদা হয়, তেমনি প্রত্যেক মানুষের কথা বলার ভঙ্গি, স্বরযন্ত্রের গঠন, মুখ জিহ্বার ব্যবহারের কারণে ভয়েসপ্রিন্টও আলাদা আলাদা হয়।

তাই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা যা করেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তির কণ্ঠের নমুনা সংগ্রহ করেন, হতে পারে তার অন্য কথার অডিও রেকর্ড বা গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার। এরপর ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ভয়েসপ্রিন্টের সঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভয়েসপ্রিন্ট মিলিয়ে দেখেন। যদি দুটি ভয়েসপ্রিন্ট মিলে যায়, তবে কণ্ঠটি একই ব্যক্তির হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এ ব্যাপারে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং ফ্যাক্টওয়াচ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, ‘ফোনকলের কণ্ঠের সত্যতা নিশ্চিত করার এখন পর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হচ্ছে ফরেনসিক টেস্ট। এ জন্য বেশ কিছু টুলস ব্যবহার করা হয়। তবে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি, যার মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত