বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁর বাবা মির্জা রুহুল আমিন ভারতে শরণার্থীশিবিরে ছিলেন। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে কিছু মানুষ তাঁর বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি গত দুদিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে আছি! কিছু কথা বলা খুব জরুরি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ, তরুণ প্রজন্মের জন্য। এসব কথা বলার কখনো প্রয়োজন মনে করিনি। জীবনের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে যখন দেখি সমাজে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে মিথ্যার চাষ করছে, তখন বলা আরও জরুরি!’
এই প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, ‘আমার আব্বা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭১-এর মার্চের ২৭ তারিখে আমার নানাবাড়ি যান আমার দুই ছোট ভাই, দুই বোন এবং মাকে নিয়ে। তারপর এপ্রিলে চলে যান ভারতের ইসলামপুরে। রিফিউজি ক্যাম্পে ছিলেন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়। ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও স্বাধীন হয়। আমার বাবা ঠাকুরগাঁও ফিরে আসেন তখনই। যখন ফিরে আসেন, দেখেন সব লুট হয়ে গেছে। আমার মরহুম মা তাঁর গয়না বিক্রি করেন। আমি যোগ দিই অর্থনীতি শিক্ষকতায়। প্রথম বেতন তুলে দিই আম্মার হাতে।’
‘আল্লাহর রহমতে জীবন চলে যায়। ১৯৭১-এর পরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এভাবেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি করেছে জীবন। গত ৫৪ বছরে আমার বাবার নামে কোথাও কোনো মামলা হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলার যা কিছু আধুনিক, তার শুরু আমার বাবার হাতে। এই জেলার প্রতিটি সৎ মানুষ জানে আমার বাবার কথা। আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে তাঁর স্মৃতি রক্ষার জন্য যে ফাউন্ডেশন হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সকল নামকরা রাজনীতিক। ১৯৯৭-এ তাঁর মৃত্যুতে সরকারি শোক প্রকাশ করা হয়।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমার বাবা সম্পর্কে মিথ্যাচার শুরু হয় গত আওয়ামী রেজিমে এবং দুঃখজনকভাবে, গত এক বছর ধরে একটি গোষ্ঠী যারা নিজেদের জুলাইয়ের আন্দোলনের অংশীদার মনে করে, তারাও এই মিথ্যাচারে অংশ নিচ্ছে! মিথ্যা, গুজব ও অপবাদ সমাজ ধ্বংস করে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আমার সারাজীবন এ দেশ আর জাতির জন্য দিয়েছি! গত বছর জুলাইয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশকে আশা দেখিয়েছে! আমি আশা করব, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে মিথ্যার চাষ আমাদের ছেলে-মেয়েরা করবে না!’
‘এরা সত্যের পথে থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মেধা, বুদ্ধিমত্তা, সততা আর নীতিতে! শঠতা আর মিথ্যা দিয়ে জনপ্রিয়তা কেনা যায়, কিন্তু দেশ গড়া যায় না! আসুন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা, দেশপ্রেম আর নতুন প্রজন্মের সাহস ও দেশপ্রেম দিয়ে তৈরি করি একটি মর্যাদাপূর্ণ, সৎ ও মানবিক বাংলাদেশ,’ বলেন মির্জা ফখরুল।
পবিত্র কোরআনের সুরা আল–হুজুরাতের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে পোস্টটি শেষ করেছেন বিএনপি মহাসচিব—‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ।’