leadT1ad

তারেক রহমানের ফেরা: প্রস্তুত বাসভবন-কার্যালয়, নিরাপত্তায় তোড়জোড়

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

তারেক রহমান। স্ট্রিম গ্রাফিক

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে লন্ডন থেকে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের শীর্ষনেতার এই ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক এবং স্মরণীয় দিন’ করে রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বিমানবন্দরে তাঁকে জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনা দেওয়া এবং সেখানে লাখো মানুষের সমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। চলতি বছরের ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের পর বিষয়টি আরও জোরালো হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ‘শিগগিরই আসছেন’ বলা হলেও অবশেষে বিজয়ের মাসে ঢাকায় পা রাখছেন তারেক রহমান।

বিএনপি সূত্র জানায়, তারেক রহমান একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরবেন। এরই মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটা হয়েছে। তবে তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান অসুস্থ্য খালেদা জিয়াকে দেখতে বর্তমানে ঢাকা অবস্থান করছেন। তারেক রহমান দেশে আসার আগে জুবাইদা লন্ডনে ফিরে যাবেন বলে জানা গেছে। তিনি সেখান থেকে আবার স্বামীর সঙ্গে দেশে ফিরবেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লন্ডন বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের সঙ্গে জাইমা রহমান ছাড়াও লন্ডন বিএনপির বেশ কিছু নেতা একই বিমানে দেশে ফিরবেন।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তারেক রহমান ফেরার দিন যেন দেশ কেঁপে ওঠে।’

বিএনপি সূত্র জানায়, সরকার আশ্বাস দিয়েছে যে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। তবে দলের পক্ষ থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর জন্য আবেদন করা হয়নি। জানা গেছে, তাঁর নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ডিজাইনের বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়েছে এবং সিএসএফ-এর সদস্যসংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫-এর বেশি করা হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেল সূত্র জানায়, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) যৌথ সভা ডাকেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল। সভায় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি আমিনুল হক স্ট্রিমকে বলেন, ‘তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো মানুষ আসবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ তিনি শুধু একটি দলের নন, সারা বাংলাদেশের মানুষের নেতা। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তাঁকে বরণ করে নেওয়ার জন্য দেশের মানুষ অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা জানান, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস রয়েছে। তিনি আসার পর দলের নির্বাচনী প্রচারণায় গতি আসবে। তিনি সারা দেশ সফর করবেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের চিকিৎসার দেখভালও করবেন।

তবে দলের নেতারা তারেক রহমানের ফেরার পর কিছু চ্যালেঞ্জও দেখছেন। তাঁরা বলছেন, তাঁকে ঘিরে নাগরিকদের মধ্যে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করা প্রথম চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া রাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তনের কথা তিনি বলে আসছেন, তা কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করবেন, সেটিও দেখার বিষয়।

গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এক আলোচনা সভায় তারেক রহমান নিজেই বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে, ওয়ার্ডে-মহল্লায়, অলিগলিতে, রাজপথে জনগণের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই নির্বাচনে মিছিলে আমিও আপনাদের সঙ্গে থাকব।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিয়ে আমরা (বিএনপি) কী প্রস্তুতি নেব, জনগণই তো প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে।’

উল্লেখ্য, ১/১১-এর সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিন পান এবং ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি মামলা হয় এবং ৫টিতে দণ্ডিত হন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা পেন্ডিং নেই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সংগৃহীত ছবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সংগৃহীত ছবি

কড়া নিরাপত্তায় চলছে বাড়ি সংস্কার
বিএনপি সূত্র জানায়, তারেক রহমান দেশে ফেরার পর তাঁর মা খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র পাশের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন। তবে, এই সময়ের মধ্যে কোনো কারণে সংস্কার কাজ শেষ না হলে ফিরোজায় তারেক রহমানের থাকার জন্য তিনটি কক্ষও প্রস্তুত করা হয়েছে।

১৯৮১ সালের ৩১ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়াকে গুলশানে দেড় বিঘা জমির ওপর ১৯৬ নম্বর বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরও আরেকটি বাড়ি বরাদ্দ ছিল, যা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বাতিল করে। চলতি বছরের ৫ জুন গুলশানের বাড়ির নামজারির কাগজ খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

সরেজমিনে গুলশান এভিনিউর ৭৯ নম্বর সড়কের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে দেখা যায়, বাড়ির সামনে পুলিশের পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসনস সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা অবস্থান করছেন। সাধারণ নাগরিক বা গণমাধ্যমকর্মীদের কাউকে ভেতরে প্রবেশ বা ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বাড়িটির সংস্কারকাজ চলছে। বাড়ির প্রাচীরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে এবং ভেতরে-বাইরে সাদা রং করা হচ্ছে। সংস্কার শেষে নতুন আসবাবে বাড়িটি সাজানো হবে।

বাড়ির সংস্কারকাজ তদারক করছেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাসার সংস্কার চলছে, এখনো শেষ হয়নি। তবে কাজ শেষ হয়নি বলে তিনি আসতে পারবেন না—বিষয়টি এমন নয়। উনার মা (খালেদা জিয়া) ফিরোজায় তাঁর জন্য তিনটি কক্ষ প্রস্তুত রেখেছেন।’

বাসভবনের পাশাপাশি তারেক রহমানের জন্য গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও একটি কক্ষ প্রস্তুত করা হচ্ছে। গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় মহাসচিবের ব্যবহৃত কক্ষটি সংস্কার করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। মহাসচিবকে নিচতলায় একটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তার জন্য ‘এসএসএফ’-এর আবেদন করেনি বিএনপি
বিএনপি সূত্র জানায়, সরকার আশ্বাস দিয়েছে যে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। তবে দলের পক্ষ থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর জন্য আবেদন করা হয়নি। জানা গেছে, তাঁর নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ডিজাইনের বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়েছে এবং সিএসএফ-এর সদস্যসংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫-এর বেশি করা হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য এখন পর্যন্ত এসএসএফ চেয়ে আবেদন করা হয়নি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে এসএসএফ চাওয়া হবে না। সরকার যদি ভিআইপি হিসেবে এই নিরাপত্তা দেয়, সেটা দিতে পারে।’

গুলশান নয়াপল্টন কার্যালয়েও প্রস্তুত কক্ষ
বাসভবনের পাশাপাশি তারেক রহমানের জন্য গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও একটি কক্ষ প্রস্তুত করা হচ্ছে। গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় মহাসচিবের ব্যবহৃত কক্ষটি সংস্কার করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। মহাসচিবকে নিচতলায় একটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে।

চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, পুরো কার্যালয় সংস্কার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারে সীমানা প্রাচীরে কাঁটাতারের বেড়া এবং প্রধান ফটকে রিমোট কন্ট্রোল দরজা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের পেছনে টিনের শেড এবং সড়কের পাশে নিরাপত্তা বক্স বসানো হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, ‘দলের কার্যক্রম দেখভালের জন্য গুলশান কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একটি কক্ষ করা হচ্ছে। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তাঁর জন্য একটি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে।’

একনজরে তারেক রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে তারেক রহমান বগুড়ার গাবতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য হন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের আগেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশব্যাপী প্রচারে অংশ নেন। ২০০২ সালে তিনি দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হন। লন্ডনে থাকাকালে ২০০৯ সালে বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিলে তিনি জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২০১৬ সালে ষষ্ঠ কাউন্সিলে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে কথা রয়েছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত