leadT1ad

আমার মাকে কী করবে, তিনি ভারতে নিরাপদে আছেন: সজীব ওয়াজেদ

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ১৪
সজীব ওয়াজেদ জয় (ছবি: ফেসবুক থেকে)

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে আজ। এর আগের দিন রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘আমরা জানি ঠিক কী রায় হতে চলেছে। ওরা টেলিভিশনে দেখাবে। তাঁকে দোষী করবে, আর সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড দেবে। আমার মাকে কী করবে ওরা? আমার মা ভারতে নিরাপদে আছেন। ভারত তাঁকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিচ্ছে।’

গত বছরের জুলাইয়ে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। আন্দোলনের সময় সহিংসতায় বহু হতাহত হয়, যা পরবর্তীতে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ হিসেবে আলোচনায় আসে।

গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এ উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালকে পুনর্গঠন করা হয় এবং এর এখতিয়ারে জুলাইয়ের সহিংসতাজনিত অপরাধগুলো যুক্ত করা হয়। নতুন আইনে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি স্পষ্টভাবে যোগ করা হয়েছে, যা আগের আইনে ছিল না। পুনর্গঠনের পর ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় হওয়ায় এটি ভবিষ্যতের মামলাগুলোর দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এই রায়ের আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা বলেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঠেকিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দলকে (আওয়ামী লীগ) নিষিদ্ধ রেখে নির্বাচন হলে আন্দোলন আরও ঘনীভূত হবে, আর পরিস্থিতি গড়াতে পারে সহিংসতায়।’

২০২৪ সালের আগস্টে দেশ ছাড়ার পর শেখ হাসিনা এখন দিল্লিতে নির্বাসনে। জয় জানান, ভারত তাঁকে ‘রাষ্ট্রপ্রধানের মতো’ নিরাপত্তা দিচ্ছে।

হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ রয়েছে। সরকারের দাবি, দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত ও নিরাপত্তাজনিত কারণে এ নিষেধাজ্ঞা।

এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, আদালত ‘স্বচ্ছভাবে বিচার করেছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিয়ে ও নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করে।’ তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার না করলে বা জবাবদিহির প্রক্রিয়ায় অংশ না নিলে’ নিষেধাজ্ঞা ওঠানোর সুযোগ নেই।

অন্যদিকে হাসিনা অক্টোবরেই রয়টার্সকে বলেছিলেন, রায় ‘অগ্রিম নির্ধারিত’ এবং ‘রাজনৈতিক প্রহসন’।

জয় বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আপিল করবেন না। ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হতে দেব না। আমাদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছু না করলে সহিংসতা অনিবার্য হয়ে উঠবে।’

রায়কে ঘিরে ঢাকায় সহিংসতা বেড়েছে। রোববারও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ১২ নভেম্বর ৩২টি বিস্ফোরণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। অগ্নিসংযোগে পুড়েছে অসংখ্য বাস। নাশকতার অভিযোগে আওয়ামী লীগ কর্মীদেরও আটক করেছে পুলিশ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্ডার গার্ড মোতায়েন, চেকপোস্ট জোরদার এবং গণজমায়েত সীমিত করেছে সরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বলেন, ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’

এ প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, তিনি ও শেখ হাসিনা দেশের ভেতরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বা বিএনপির সঙ্গে নয়। তাঁর দাবি, ‘দেশজুড়ে অবরোধ চলছে, গণবিক্ষোভ বাড়ছে- এগুলো আরও বাড়বে।’

চতুর্থবারের মতো পরপর সরকার গঠনের সময়ই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদলের দমন-পীড়নের অভিযোগ ছিল। গত বছরের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশ নেয়নি, বেশির ভাগ শীর্ষ নেতা তখন কারাগারে বা বিদেশে।

এখন পাল্টে গেছে অবস্থান। জয় বলেন, ‘তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, ব্যথিত, ক্ষুব্ধ। আর আমরা সবাই লড়াই চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যে কোনো উপায়ে।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত