leadT1ad

সিলেট সীমান্তে ‘গুলিতে’ যুবকের মৃত্যু: বিজিবি-স্থানীয়দের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
ঢাকা

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২০
সংগৃহীত ছবি

সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় গুলিতে আলমাস উদ্দিন (২৩) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত আলমাস উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছেন। আর বিজিবির দাবি, তাদের ওপর হামলা হয়েছে, এতে এক বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন। অবশ্য ‘তাদের গুলিতে নিহতের’ অভিযোগের বিষয়ে বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার বলেছেন, হেডকোয়ার্টার্সে তথ্য পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে মেসেজ আসলে বিস্তারিত জানানো হবে।

বুধবার সকাল ১০টার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুরের সীমান্তবর্তী চারিকাটা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বালিদাড়া কান্দির মুখ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে বিজিবির জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ সুইরঘাট বিওপির চারজন বিজিবি সদস্য দুটি মোটরসাইকেলে টহল দিচ্ছিলেন। এ সময় জৈন্তাপুরের সীমান্তবর্তী চারিকাটা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বালিদাড়া কান্দিরমুখ মসজিদের দক্ষিণে তাজ উদ্দিনের বাড়ির পাশে চতুল-লালাখাল রোডের ওপর পিকআপে করে দেশীয় সুপারি নিয়ে যাওয়ার সময় গুলির ঘটনা ঘটে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আলমাস উদ্দিন নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী বরাত দিয়ে স্থানীয়রা আরও জানান, বালিছড়ার কান্দিরমুখে মসজিদের কাছে এলে বিজিবিকে দেখতে পেয়ে গাড়ি (পিকআপ) ঘুরিয়ে বাজারের দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। গাড়ি ঘুরানো মাত্র বিজিবি তাদের লক্ষ্য করে গুলি শুরু করে। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হলেও তারা সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় গাড়ির টায়ার লক্ষ্য করে গুলি করে বিজিবি। তেলের ট্যাংকেও গুলি করে। পরে গাড়ি থামলে তারা এসে অস্ত্র দিয়ে গাড়িতে আঘাত করে গাড়ির গ্লাস ভাঙে। হাত দিয়ে ঘুষি দিয়ে গ্লাস ভাঙে, এতে তাদের হাতও জখম হয়। স্থানীয় অনেকে এসব দেখেছেন। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য সামসুজ্জামান সেলিমের জিম্মায় জব্দ সুপারি রেখে গেছে। সুপারির বস্তায়ও বিজিবির ছোড়া গুলি পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় পরে বিজিবির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সকাল ১০টার দিকে সুরাইঘাট বিওপির একটি টহল দল জৈন্তাপুরের চারিকাটা ইউনিয়নের ভিত্তিখলা সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানবিরোধী অভিযানে যায়। অভিযানের সময় টহল দলের একটি অবৈধ পণ্যবাহী পিকআপ আটক করলে অজ্ঞাতনামা একদল সশস্ত্র চোরাকারবারী দেশীয় ধারালো অস্ত্র, দা, বল্লম, লাঠিসোঁটাসহ টহল দলের ওপর আকস্মিক হামলা করে জব্দকৃত মালপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সরকারি সম্পদ অস্ত্র ও গোলাবারুদ ও টহল দলের সদস্যদের জান-মাল রক্ষার্থে বিজিবি সদস্যরা নিরুপায় হয়ে চার থেকে পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলাকারীদের আক্রমণে বিজিবির এক সদস্য মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’

বিজিবির এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন জৈন্তাপুরের চারিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান করিম। তিনি বাংলা স্ট্রিমকে বলেন, ‘একটি পিকআপে দেশী সুপারি ছিল। বিডিআর (বিজিবি) ধাওয়া দিয়ে পিকআপে বেশ কয়েকটি গুলি করে। পিকআপের ওপরে থাকা একটা ছেলে ডিরেক্ট (সরাসরি) গুলি করে। গুলির আঘাতে ছেলেটা মারা গেছে। হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যায়।’

বিজিবির ওপর হামলার যে দাবি করা হয়েছে সেটি সঠিক নয় দাবি করে চেয়ারম্যান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিজিবির উপর আক্রমণের বিন্দুমাত্র তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং বিজিবির এক সদস্য পিকআপের লোকিং গ্লাস কিলাইয়া (ঘুষি) দিয়ে ভাঙতে গিয়ে হাতে আঘাত পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পরে পাশের ছোটখালে গিয়ে শরীরে কাঁদা মাটি লাগান ওই বিজিবি সদস্য। নিহত ছেলেটি পিকআপ শ্রমিক, মানে চালকের সহকারী; চোরাকারবারি নন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার বাংলা স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের হেডকোয়ার্টার্সে তথ্য পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে মেসেজ আসলে আপনাদের জানানো হবে। এর বাইরে এখন কিছু বলতে পারবো না।’

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মো. বদরুজ্জামান বাংলা স্ট্রিমকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আমরা লাশ সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। নিহতের শরীরে তিনটি গুলির আঘাত পাওয়া গেছে।’

বিজিবির গুলিতে নিহতের অভিযোগ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দাবি করেছেন, বিজিবির গুলিতে আলমাস মিয়া মারা গেছেন।’ এ ঘটনায় এখনো কেউ তাদের কাছে কোনো অভিযোগ করতে আসেননি বলেও তিনি জানান।

Ad 300x250

সম্পর্কিত