বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যুদ্ধপরিস্থিতি ছাড়াই মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তবে এই সমস্যার আপাতত কোনো সমাধান নেই বলেও মনে করেন তিনি।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব)– এর ‘ডিক্যাব টক’-এ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার অভিযোগ, আমাদের কর্মকর্তারাও এটিকে (সীমান্ত হত্যা) এক পর্যায়ে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পর তারা বলেছেন, হ্যাঁ, অপরাধ হয়েছে, কাজেই ইত্যাদি ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, অপরাধ হলে তাঁকে ধরে আদালতে সোপর্দ করতে হবে। আদালত নির্ধারণ করবেন তাকে কী শাস্তি দেওয়া যায়। আপনি একজন বন্দুকধারী মানুষকে অ্যাকিউজার, জাজ ও এক্সিকিউশনার— তিনটি অবস্থান দিয়ে দিতে পারেন না। কিন্তু এটা হচ্ছে। এখন আমরা নিন্দা করতে পারি, আপত্তি করতে পারি– সেটি করে যাচ্ছি। এর চেয়ে বেশি যদি কিছু করা সম্ভব বলে আপনারা (সাংবাদিক) মনে করেন, তাহলে আমাকে জানাবেন, আমি চেষ্টা করব সেটি করার।
‘টিকিং টাইম বোম্ব’ রোহিঙ্গা সংকট
রোহিঙ্গাদের একজন, একজন করে প্রত্যাবাসন হোক– এমন চাচ্ছেন না বলে মত দিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি বড় চুক্তি হতে হবে। দুবার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু ৫ হাজার লোককে টোকেন ফেরত পাঠানোর। আমি পত্রিকায় লিখেছি এটির বিরুদ্ধে। এটি শুধু মিয়ানমারকে একটা পাবলিসিটি করার সুযোগ দেবে, আমাদের কোনো উপকার হবে না। আমি সব সময় বলেছি, একটি রোডম্যাপ থাকতে হবে, সবাইকে ফেরত নেওয়ার। অথবা প্রায় সবাইকে। দু-চারজন যদি তাদের কাগজপত্রের ঘাটতি থাকে, সেটা অন্য কথা। কিন্তু সেটা না হওয়া পর্যন্ত ওই একজন বা এক হাজার জনকে পাঠানোর আমি পক্ষপাতী নই।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি একটি রোডম্যাপে আসতে পারি কিনা। এখানে সমস্যা অনেকগুলো। কারণ আশেপাশের দেশগুলোর স্বার্থ আছে। আমি কিন্তু তাদের শুধু দোষারোপ করতে চাই না পয়েন্ট ব্ল্যাংক। তারা তাদের স্বার্থ অনুযায়ী চেষ্টা করবে। এই সংঘাত থেকে বা মিয়ানমারের পরিস্থিতি থেকে তারা নিজেদের স্বার্থ কতটুকু উদ্ধার করতে পারবে, সেটাই তারা চেষ্টা করবে। এজন্য তাদের দোষারোপ করলে কোনো লাভ নেই।’
তিনি বলেন, ‘তাদের আমরা পারসুয়েড (রাজি) করার চেষ্টা করব যে আমাদের এই সমস্যা হচ্ছে, এটাও দেখার চেষ্টা কর। একটা হয়তো মাঝামাঝি অবস্থায় আসা যেতেও পারে। কিন্তু আমার বিদেশি অতিথিরাও যারা থাকেন, তাদেরও সব সময় বলে থাকি– এটা একটা টিকিং টাইম বোম্ব (মুহূর্তে বিস্ফোরণের ঝুঁকি)। টাইম বোম্ব এই কারণে যে, এখানে আপনি পাঁচ, ছয় ও সাত লাখ ইয়ং মানুষ, যাদের বয়স টিনএজার বা ২০-এর নিচে, তাদের আপনি এই একটা ঘেরাটোপের মধ্যে ফেলে রাখবেন সারাজীবন, এটা তারা মেনে নেবে না।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা তরুণরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হবে। যেটার লক্ষণ দেখছি, এরইমধ্যে তারা জড়িত হচ্ছে, গান (বন্দুক) ও ড্রাগ (মাদক) রানিংয়ে। যেই লোকগুলো তাদের অত্যাচার করে পাঠিয়েছে, তাদের মাদক বহন করছে এখন। অল্প কিছু পয়সার বিনিময়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কলিগ, যিনি তখন পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন, তিনি এই শব্দও বলেছিলেন যে, এটা একটা হিউম্যানিটেরিয়ান ইস্যু, এটাকে আমরা যেন সিকিউরিটাইজড না করি। আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ, এটা একটা হিউম্যানিটেরিয়ান ইস্যু। কিন্তু একই সঙ্গে এটা একটা সিকিউরিটি ইস্যু এবং আমি বলেছিলাম যে এরা এক বা দুই বছরের মধ্যে ফেরত যাবে না। আনফরচুনেটলি, আমার কথা ঠিক হয়েছে।’