leadT1ad

শাহজালালে কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড

‘ফায়ার সার্ভিস প্রবেশে অনুমতি দিতে কালক্ষেপণ, আগুনে পুড়ে গেছে সব’— বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি শাখায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে বিপুল পরিমাণ পণ্য। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সিভিল এভিয়েশন ও বিমানবাহিনীর দমকল কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি।

শনিবার দুপুর দুইটার কিছু আগে লাঞ্চ বিরতির সময় আগুনের সূত্রপাত হয় কার্গো ভিলেজের ৮ নম্বর গেট সংলগ্ন স্কাই এয়ারলাইন্সের লাউঞ্জ এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সেখানে রাখা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই আগুনের উৎপত্তি। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কুরিয়ার ও গার্মেন্টস পণ্যের গুদামগুলোতে।

কার্গো ভিলেজে দায়িত্বে থাকা বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের একাধিক কর্মচারী বলেন, আগুন লেগেছিল যখন সবাই খাবারের বিরতিতে ছিলেন। ফলে শুরুতেই কেউ আগুনের উৎসস্থলে ছিলেন না। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে বিমান ও সেনাবাহিনীর অগ্নিনির্বাপক দল এগিয়ে আসে। পরে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, ‘অনুমতি’ না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে প্রথমে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

বিমানবন্দরে কুরিয়ারের মাস্টার ইয়ার কোম্পানির সিএন্ডএফ এজেন্ট মো. রোকন মিয়া বলেন, প্রতিদিন টন টন পণ্য বিদেশ থেকে আসে এখানে। আজ চোখের সামনে পুড়ে গেল কোটি কোটি টাকার মালামাল। আমাদের কিছুই করার সুযোগ হয়নি।

বিমানবন্দরে আগুন লাগার আগে দুপুরের দিকে আড়াই টন আমদানি করা গার্মেন্টস পন্য নামিয়েছিল কুরিয়ার কোম্পানি তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেড। কোম্পানিটির পরিচালক সুলতান আহমেদ আগুনে পুড়তে থাকা কার্গো কমপ্লেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার হাফ শিফটিং কার্যক্রম চলে কার্গো কমপ্লেক্সে। সকাল ৯টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত খোলা ছিল। আমাদের কোম্পানির আড়াই টন মালামাল নেমেছে। মনে হচ্ছে সব পুড়ে গেছে। সেখানে কী ধরণের পণ্য ছিল প্রশ্নে তিনি বলেন, বোতাম, জিপার, ফেব্রিকস ও বিভিন্ন লেবেল আইটেমসহ সবই ছিল সব গার্মেন্টস এক্সেসরিজ পণ্য।

কার্গো ভিলেজের একজন স্টাফ সোহেল মিয়া জানান, ডেঞ্জারাস গুডসের গুদামেই আগুন লাগে, যেখানে বিস্ফোরক পদার্থ রাখা ছিল। সেইসব দ্রব্যই বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে দেয় চারপাশে, জানান তিনি।

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুন লাগার সময় শুধুমাত্র ২ নম্বর গেট খোলা ছিল। কুরিয়ার গেটের পাশের ইউনাইটেড কুরিয়ার অফিস থেকেই আগুনের শুরু বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে কার্গো ভিলেজের কর্মীরা জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত হয় লাঞ্চ আওয়ারে। আমাদের লাঞ্চ আওয়ার একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত। সেখানে মাসিক রোস্টারভিত্তিক ডিউটি পালন করতে হয় কার্গো ভিলেজের আমাদানি শাখার কর্মচারীদের। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন থাকায় রোস্টারভিত্তিক দায়িত্বপালনকারীরাই সেখানে থাকেন। ছুটির দিনগুলোতে তারা ছাড়া আর কোনো বড় কর্মকর্তা থাকেন না। ঘটনার সময় একশো থেকে দেড় শতাধিক কর্মচারী ছিলেন। তবে অন্য দিনগুলোতে এইসময়ে ৪ থেকে ৫ হাজার লোকের যাতায়াত থাকে সেখানে।

আগুনের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়লে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এলাকাটি ঘিরে ফেলেন। আশপাশে থাকা জনতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

কার্গো ভিলেজের পণ্যভাণ্ডারে ছিল বিদেশ থেকে আসা নানা মালামাল। গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ, রাসায়নিক দ্রব্য, ফার্মাসিউটিক্যাল কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, এমনকি প্রবাসীদের মরদেহও। এসবের প্রায় সবই পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের কর্মীরা।

সামিট গ্রুপের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম রতন জানান, তাদের পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রায় পাঁচ লাখ ইউরো মূল্যের যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস এলেও ভেতরে ঢুকতে অনুমতির ঝামেলায় অনেক সময় নষ্ট হয়। তখন আগুন অনেকটা ছড়িয়ে গেছে।

একজন বিমানের স্টাফ জামাল নামের কর্মী বলেন, “ভেতরে শতাধিক কনটেইনার পুড়েছে। হাজার কোটি টাকার পণ্য একেবারে শেষ।”

আগুনের কারণ সম্পর্কে কেউ এখনো নিশ্চিত নন। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, আগুন সম্পূর্ণ নেভানোর পর কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, অবহেলা ও বিলম্বই আগুনকে ভয়াবহ রূপ দিয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত