leadT1ad

এসএসসির ফল প্রকাশ

এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে, আগের দুই বছরে কেমন ছিল

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৫: ২১
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৫৪
এসএসসির ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের উল্লাস। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা। স্ট্রিম ছবি

এবারে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী।

আজ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির এসব তথ্য জানান।

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা গত দুই বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম। এবার সব বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫, গত বছর যা ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।

আজ এসএসসির ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের উল্লাস। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে, ঢাকা। স্ট্রিম ছবি
আজ এসএসসির ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের উল্লাস। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে, ঢাকা। স্ট্রিম ছবি

২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের পাসের হার

২০২৩ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশে। তবে, ২০২৫ সালে পাসের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

পাসের হারের পাশাপাশি ২০২৫ এ কমেছে জিপিএ-৫ সংখ্যাও। ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। এ বছর সেটি আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন।

২০২৩ ও ২০২৪ সালে কোন বোর্ড এগিয়ে

বোর্ডভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ পাসের হার ছিল যশোর শিক্ষা বোর্ডে ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ পাসের হার ছিল বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০২৩ ও ২০২৪—এই দুই বছরেই সর্বনিম্ন পাসের হার ছিল সিলেট বোর্ডে। ২০২৩ সালের ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়ায়।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের আনন্দ উদযাপন। স্ট্রিম ছবি
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের আনন্দ উদযাপন। স্ট্রিম ছবি

বোর্ডভিত্তিক জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে দেখা যায়, ২০২৩ ও ২০২৪ উভয় বছরই ঢাকা বোর্ড সর্বাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে শীর্ষে রয়েছে। ২০২৩ সালে ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৬ হাজার ৩০৩ জন, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ১৯০ জনে। সিলেট বোর্ডে উভয় বছরেই সবচেয়ে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৪৫২ জন ও ২০২৪ সালে যা সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৭১ জনে।

মাদ্রাসা বোর্ডে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে, কারিগরি বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। ২০২৩ সালে ১৮ হাজার ১৪৫ জন থেকে ২০২৪ সালে মাত্র ৪ হাজার ৭৮ জনে নেমে এসেছে।

কারা এগিয়ে, ছাত্র নাকি ছাত্রী

২০২৩ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মেয়েদের পাসের হার ছেলেদের পাসের হার চেয়ে ৩ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। ৮৪ হাজার ৯৬৪ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছেলে শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৯৮ হাজার ৬১৪ জন মেয়ে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০২৪ সালেও মেয়েদের সাফল্য ছেলেদের তুলনায় বেশি ছিল। ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যেখানে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও ছেলেদের তুলনায় ১৫ হাজার ৪২৩ জন এগিয়ে ছিল মেয়েরা।

২০২৩ থেকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে

২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পরীক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ধারাবাহিক কমতির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

২০২৩ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়ায় ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জনে। ২০২৫ সালে আরও এক ধাপ নিচে নেমে মোট পরীক্ষার্থী দাঁড়ায় ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় দেড় লাখ পরীক্ষার্থী কমেছে।

ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক
ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক

২০২৩ সালে ছাত্র ছিল ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ জন, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৮ জনে। আর ২০২৫ সালে তা আরও হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৬১ হাজার ২৩১ জনে। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে ছাত্রের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৬০ হাজারের বেশি। একইভাবে, ছাত্রীদের সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন, ২০২৪ সালে কমে হয় ১০ লাখ ৩১ হাজার ৩১৪ জন এবং ২০২৫ সালে আরও কমে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৯ জনে। দুই বছরের ব্যবধানে ছাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৮৩ হাজার ২২৭ জন।

পরীক্ষায় অনুপস্থিতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা গেছে। ২০২৩ সালে মোট অনুপস্থিত ছিল ৩১ হাজার ৪৪৭ জন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ৯৯৭ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৫ হাজার ৫৫০ জন বেশি। ২০২৫ সালে পরীক্ষার প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড। খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা গেছে বিয়ে হয়ে যাওয়া (৪০ শতাংশ), অসুস্থতা (২৪ শতাংশ), প্রস্তুতি ভালো না থাকা (১১ শতাংশ) এবং অসচ্ছলতা বা আর্থিক সংকট (৭ শতাংশ)।

বিষয়:

Ad 300x250

সম্পর্কিত