leadT1ad

সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার

‘পদ স্থগিত’ সভাপতির নিঃশর্ত মুক্তি চায় কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি

পাথর লুটে জড়িত থাকা ছাড়াও দখল, চাদাঁবাজি, দলের নীতি আর্দশ পরিপন্থি অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুস্পষ্ট অভিযোগে গত ১১ আগস্ট কেন্দ্র থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর ‘পদ স্থগিত’ করা হয়।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
সিলেট
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮: ৫৬
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন। সংগৃহীত ছবি

সিলেটের সাদাপাথর লুটকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পদ হারানো সাবেক উপজেলা সভাপতি সাহাব উদ্দিনের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছে কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি। পাথর লুটে জড়িত থাকা ছাড়াও দখল, চাদাঁবাজি, দলের নীতি আর্দশ পরিপন্থি অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুস্পষ্ট অভিযোগে গত ১১ আগস্ট কেন্দ্র থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর ‘পদ স্থগিত’ করা হয়। তবে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর দ্রুত মুক্তির দাবি জানানো হয়। এ ঘটনায় দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এদিকে বিবৃতির দুদিনের মাথায় উল্টো কথা বলছে উপজেলা বিএনপি। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, ‘আমরা ঢাকায় ছিলাম। এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমরা কোনো বিবৃতিও দেইনি। এটা আমাদের স্বাক্ষর না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’

এর আগে গত শনিবার (১৩ সেস্টেম্বর) রাতে সিলেট নগরের কুমারপাড়া এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯)। পরে সোমবার উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তাঁর দ্রুত মুক্তি চাওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির একাধিক নেতা স্ট্রিমকে বলেছেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় উপজেলা বিএনপি কীভাবে ওই নেতার পক্ষে বিবৃতি দেয়, সেটা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কেন সংগঠন নেবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

বিবৃতি নিয়ে যা হলো

সোমবার কোম্পানিগঞ্জ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাহাব উদ্দিন বিগত স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত নেতা। তাঁকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোয় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অনতিবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়।’

বিবৃতির পর জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, ‘আমরা মাঠে রাজনীতিতে আছি। আমরা তাঁকে ভালোভাবে চিনি। তিনি কোনো লুটপাটে ছিলেন না। বরং লুটপাটের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা মিছিল, মানববন্ধন করেছি। এ তথ্য আমরা মৌখিকভাবে জেলা বিএনপিকেও জানিয়েছি।’

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি। সংগৃহীত ছবি
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি। সংগৃহীত ছবি

উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে সাহাব উদ্দিনের বিষয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে সদ্য পদ স্থগিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। বুধবার এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো বক্তব্য নাই। তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু। উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।’

সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ

‘মিথ্যা অভিযোগে’ সাহাব উদ্দিনের ‘পদ স্থগিত’ হয়েছে বলে উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে দাবি করা হলেও দলীয় অনুসন্ধানেই সরকারি জমি দখলসহ পাথর লুটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের ১৮ মার্চ স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং ১০০টি পাথর ভাঙার যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জমি দখল ও লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

এদিকে সিলেট নগর থেকে ১৩ সেস্টেম্বর রাতে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত অন্যতম মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত