প্রস্তাবিত শ্রম আইন
বর্তমান আইনে কারখানার মোট শ্রমিকের অন্তত ২০ শতাংশের সমর্থন প্রয়োজন হলেও নতুন আইনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে শুধু ২০ জন শ্রমিক একত্র হলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের মধ্যে দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান আইনে কারখানার মোট শ্রমিকের অন্তত ২০ শতাংশের সমর্থন প্রয়োজন হলেও নতুন আইনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে শুধু ২০ জন শ্রমিক একত্র হলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। বিকল্পভাবে, কারখানার ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতিতেও এ সুযোগ মিলতে পারে। পাশাপাশি, একটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের সর্বোচ্চসংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচটিতে উন্নীত করার প্রস্তাবও রয়েছে।
এসব প্রস্তাব সম্প্রতি ‘ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদে’ (টিসিসি) উত্থাপিত হয়েছে এবং ৩১ জুলাইয়ের পরের বৈঠকে তা আবার আলোচনা হবে। সংশোধিত শ্রম আইনের খসড়ায় একদিকে যেমন শতাধিক ধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্রমিকের সংগঠিত হওয়ার অধিকারে নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে মালিকপক্ষ ও শিল্প বিশ্লেষকদের মধ্যে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এই প্রস্তাব ইতিমধ্যেই শিল্প খাতের নেতা ও বিশেষজ্ঞদের সমালোচনার মুখে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন উঠছে, প্রস্তাবিত এই সংস্কার শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার বাস্তব পদক্ষেপ, নাকি তা শিল্প খাতে নতুন বিভাজনের দরজা খুলে দেবে।
২০০৬ সালে প্রণীত বাংলাদেশ শ্রম আইনকে আধুনিকীকরণ ও শ্রমিকদের অধিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে তৃতীয় দফায় বড় ধরনের সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে সীমিত পরিসরে পরিবর্তন ঘটলেও এবারের সংশোধনে শ্রমিক, মালিক ও সরকারের সমন্বয়ে গঠিত ৬০ সদস্যের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জানুয়ারি মাসে কয়েক দফা বৈঠকের মাধ্যমে ১০১টি ধারার মধ্যে ৭৯টি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং বাকি বিষয়গুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
নতুন খসড়ায় সবচেয়ে আলোচিত পরিবর্তন হলো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য আগের আইনে প্রয়োজন ছিল মোট শ্রমিকের ২০ শতাংশের অংশগ্রহণ, খসড়ায় তা কমিয়ে মাত্র ২০ জন করা হয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ স্ট্রিমকে জানান, এটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ‘বেটার ওয়ার্ক’ প্রোগ্রামের সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭ থেকে ২০ জন শ্রমিক মিলেও ইউনিয়ন গঠন করতে পারেন।
অন্যদিকে, একটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা সর্বোচ্চ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
মিলিনিয়া ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের মিয়া স্ট্রিমকে এ প্রসঙ্গে বলেন, মালিকপক্ষের আশঙ্কা রয়েছে, সহজেই কেনো সংগঠন গঠনের সুযোগ পেলে শিল্পক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
এ ছাড়াও এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা ও শ্রম বিশেষজ্ঞেরা মালিকপক্ষের উদ্বেগকে যথাযথ সমাধানের প্রয়োজনীয়তা হিসেবে দেখছেন।
শ্রম আইনে সংশোধনে শীর্ষ নেতাদের জেলা বদলির ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যায়ভাবে বরখাস্ত শ্রমিকদের পুনর্বহালের বিধান সংযোজনের মাধ্যমে শ্রমিক সুরক্ষা জোরদার করা হচ্ছে। অংশগ্রহণ তহবিলের ব্যবস্থাপনাও বদলানো হচ্ছে; যেখানে আগে দুই-তৃতীয়াংশ নগদে বণ্টন ও এক-তৃতীয়াংশ বিনিয়োগ হতো, নতুন নিয়মে তহবিলের সম্পূর্ণ অর্থ সমান হারে শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাশুকুর রহমান সিকদার এর কার্যকারিতা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে ১০০ জন বা তার বেশি স্থায়ী শ্রমিক থাকেন, সেখানে প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব রয়েছে। শ্রম অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ৯ হাজার ৯৩৭টি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ১ হাজার ৩৮১টি হলেও কার্যকর সংগঠনের সংখ্যা মাত্র ১০০টির নিচে। যার মধ্যে সিবিএ নিবন্ধন পাওয়া সংগঠন মাত্র ৪০টি। শ্রমিক নেতারা বলছেন, শুধু সংখ্যা বৃদ্ধি শ্রমিক অধিকার রক্ষায় যথেষ্ট নয়; কার্যকর দরকষাকষি ও সংগঠন শক্তির বিকাশ অপরিহার্য।
শ্রম আইন নিয়ে কাজ করা আইনজীবী জাফরুল হাসান মনে করেন, আইএলও ও শ্রমিকপক্ষ সহজে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ চায়, কিন্তু মালিকপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া সংশোধন কার্যকর হবে না।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, টিসিসিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পরে অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর হবে, যা বাংলাদেশের শ্রম আইন ও শ্রমিক সংগঠন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
নারী শ্রমিকদের অধিকার ও সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রম আইনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রসূতি ছুটির সময়কাল বর্তমান ১১২ দিনের পরিবর্তে ১২০ দিনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে প্রসব-পরবর্তী কাজ না করার সময়কাল ৫৬ দিনের বদলে ৬০ দিনে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব রয়েছে। তা ছাড়া চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও ছুটির ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আসছে; যেখানে বর্তমানে প্রতি ২২ দিনের কাজের বিনিময়ে ১ দিনের বার্ষিক ছুটি পাওয়া যায়, নতুন নিয়মে তা ১৮ দিনে ১ দিন করার প্রস্তাব রয়েছে।
উৎসব ছুটির মেয়াদও ২ দিন বৃদ্ধি করে ১১ দিনের বদলে ১৩ দিনে উন্নীত করার কথা বলা হচ্ছে, যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ আরও বাড়াবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, যদিও কিছু ধারা সংশোধনের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে নারী শ্রমিকদের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু যদি বিষয়টি ঠিকমতো নজরদারি করা না হয় তাহলে প্রসূতি ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের মজুরি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি শ্রম কমিশনের প্রতিবেদনের ফলাফলকে গুরুত্ব দিয়ে এই সংশোধনগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে কমিশনের সুপারিশগুলো শ্রম আইনের সংশোধনে আরও ব্যাপক ও কার্যকর পরিবর্তন আনবে। এই পরিবর্তনগুলো শ্রমিকদের কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শ্রম আইনে ‘শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ’ নামে একটি নতুন ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
যা কর্মক্ষেত্রে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম, রাজনৈতিক মতামত, জাতীয়তা, সামাজিক অবস্থান, বংশ বা প্রতিবন্ধিতার কারণে কোনো শ্রমিককে বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে রক্ষা করবে। এর মাধ্যমে কর্মস্থলে সমতা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, শিশু-কিশোরদের অবৈধ নিয়োগের শাস্তির ক্ষেত্রে জরিমানা বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ট্রেড ইউনিয়নের গঠন সহজীকরণের পক্ষে। তবে তিনি মনে করেন, শুধু সংখ্যায় নির্ধারণ করা হলে বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কারখানায় ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার প্রস্তাবে মালিকেরা রাজি হয়েছেন, তবে ২০ জন শ্রমিকের ভিত্তিতে করার বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত নয়।’
এ ছাড়া, ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে মালিকপক্ষের পক্ষ থেকে বিরোধিতা পাওয়া গেছে। মোহাম্মদ হাতেম জানান, শ্রমিকেরাও এটির পক্ষে নয় এবং এ বিষয়ে একাধিক বিষয়ে এখনো একমত হয়নি মালিক-শ্রমিকপক্ষ। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সরকারের একতরফা আইন সংশোধনের ফলে কারখানাগুলোর ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
শুধু ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়ানো যথেষ্ট নয়। কার্যকর কালেক্টিভ বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) বা দরকষাকষির প্রতিনিধির অভাব থাকলে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা কঠিন হবে। এমনটি বহু শ্রমিক নেতা ও অধিকারকর্মীর মতামত। তাঁরা মনে করেন, প্রকৃত শ্রমিক অধিকার রক্ষার জন্য শুধু ইউনিয়ন নিবন্ধনের সহজীকরণ নয়, নিয়মিত ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করাও অপরিহার্য।
গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, ‘শ্রমিকদের যেন যেকোনো সংখ্যায় সংগঠিত হওয়ার অধিকার থাকে, সেটি নিশ্চিত করা উচিত। প্রস্তাব যদি আন্তরিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, আমরা তা ইতিবাচক মনে করি।’
একইভাবে, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি ও টিসিসি সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ‘টিসিসির বৈঠকে এই প্রস্তাব আমরা সমর্থন করেছি, যদিও মালিকপক্ষের তীব্র আপত্তি রয়েছে।’
আইএলও নির্দিষ্ট শতাংশভিত্তিক সদস্যসংখ্যার পরিবর্তে নির্দিষ্ট সংখ্যাভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। তবে শ্রমিক অধিকারকর্মীরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের বড় পরিবর্তন আনতে হলে শ্রম আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো—বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিধানগুলো—সুষ্ঠু ও কার্যকর করতে হবে।
বাংলাদেশ শ্রম আদালত আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম নাসিম বলেন, ‘শ্রম আইনের সংশোধনগুলো এককভাবে কার্যকর না হলে, সংগঠনগুলোর অধিকার নিশ্চিত করা কঠিন হবে।’
বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের মধ্যে দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান আইনে কারখানার মোট শ্রমিকের অন্তত ২০ শতাংশের সমর্থন প্রয়োজন হলেও নতুন আইনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে শুধু ২০ জন শ্রমিক একত্র হলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। বিকল্পভাবে, কারখানার ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতিতেও এ সুযোগ মিলতে পারে। পাশাপাশি, একটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের সর্বোচ্চসংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচটিতে উন্নীত করার প্রস্তাবও রয়েছে।
এসব প্রস্তাব সম্প্রতি ‘ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদে’ (টিসিসি) উত্থাপিত হয়েছে এবং ৩১ জুলাইয়ের পরের বৈঠকে তা আবার আলোচনা হবে। সংশোধিত শ্রম আইনের খসড়ায় একদিকে যেমন শতাধিক ধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্রমিকের সংগঠিত হওয়ার অধিকারে নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে মালিকপক্ষ ও শিল্প বিশ্লেষকদের মধ্যে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এই প্রস্তাব ইতিমধ্যেই শিল্প খাতের নেতা ও বিশেষজ্ঞদের সমালোচনার মুখে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন উঠছে, প্রস্তাবিত এই সংস্কার শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার বাস্তব পদক্ষেপ, নাকি তা শিল্প খাতে নতুন বিভাজনের দরজা খুলে দেবে।
২০০৬ সালে প্রণীত বাংলাদেশ শ্রম আইনকে আধুনিকীকরণ ও শ্রমিকদের অধিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে তৃতীয় দফায় বড় ধরনের সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে সীমিত পরিসরে পরিবর্তন ঘটলেও এবারের সংশোধনে শ্রমিক, মালিক ও সরকারের সমন্বয়ে গঠিত ৬০ সদস্যের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জানুয়ারি মাসে কয়েক দফা বৈঠকের মাধ্যমে ১০১টি ধারার মধ্যে ৭৯টি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং বাকি বিষয়গুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
নতুন খসড়ায় সবচেয়ে আলোচিত পরিবর্তন হলো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য আগের আইনে প্রয়োজন ছিল মোট শ্রমিকের ২০ শতাংশের অংশগ্রহণ, খসড়ায় তা কমিয়ে মাত্র ২০ জন করা হয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ স্ট্রিমকে জানান, এটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ‘বেটার ওয়ার্ক’ প্রোগ্রামের সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭ থেকে ২০ জন শ্রমিক মিলেও ইউনিয়ন গঠন করতে পারেন।
অন্যদিকে, একটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা সর্বোচ্চ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
মিলিনিয়া ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের মিয়া স্ট্রিমকে এ প্রসঙ্গে বলেন, মালিকপক্ষের আশঙ্কা রয়েছে, সহজেই কেনো সংগঠন গঠনের সুযোগ পেলে শিল্পক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
এ ছাড়াও এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা ও শ্রম বিশেষজ্ঞেরা মালিকপক্ষের উদ্বেগকে যথাযথ সমাধানের প্রয়োজনীয়তা হিসেবে দেখছেন।
শ্রম আইনে সংশোধনে শীর্ষ নেতাদের জেলা বদলির ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যায়ভাবে বরখাস্ত শ্রমিকদের পুনর্বহালের বিধান সংযোজনের মাধ্যমে শ্রমিক সুরক্ষা জোরদার করা হচ্ছে। অংশগ্রহণ তহবিলের ব্যবস্থাপনাও বদলানো হচ্ছে; যেখানে আগে দুই-তৃতীয়াংশ নগদে বণ্টন ও এক-তৃতীয়াংশ বিনিয়োগ হতো, নতুন নিয়মে তহবিলের সম্পূর্ণ অর্থ সমান হারে শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাশুকুর রহমান সিকদার এর কার্যকারিতা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে ১০০ জন বা তার বেশি স্থায়ী শ্রমিক থাকেন, সেখানে প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব রয়েছে। শ্রম অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ৯ হাজার ৯৩৭টি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ১ হাজার ৩৮১টি হলেও কার্যকর সংগঠনের সংখ্যা মাত্র ১০০টির নিচে। যার মধ্যে সিবিএ নিবন্ধন পাওয়া সংগঠন মাত্র ৪০টি। শ্রমিক নেতারা বলছেন, শুধু সংখ্যা বৃদ্ধি শ্রমিক অধিকার রক্ষায় যথেষ্ট নয়; কার্যকর দরকষাকষি ও সংগঠন শক্তির বিকাশ অপরিহার্য।
শ্রম আইন নিয়ে কাজ করা আইনজীবী জাফরুল হাসান মনে করেন, আইএলও ও শ্রমিকপক্ষ সহজে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ চায়, কিন্তু মালিকপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া সংশোধন কার্যকর হবে না।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, টিসিসিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পরে অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর হবে, যা বাংলাদেশের শ্রম আইন ও শ্রমিক সংগঠন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
নারী শ্রমিকদের অধিকার ও সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রম আইনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রসূতি ছুটির সময়কাল বর্তমান ১১২ দিনের পরিবর্তে ১২০ দিনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে প্রসব-পরবর্তী কাজ না করার সময়কাল ৫৬ দিনের বদলে ৬০ দিনে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব রয়েছে। তা ছাড়া চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও ছুটির ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আসছে; যেখানে বর্তমানে প্রতি ২২ দিনের কাজের বিনিময়ে ১ দিনের বার্ষিক ছুটি পাওয়া যায়, নতুন নিয়মে তা ১৮ দিনে ১ দিন করার প্রস্তাব রয়েছে।
উৎসব ছুটির মেয়াদও ২ দিন বৃদ্ধি করে ১১ দিনের বদলে ১৩ দিনে উন্নীত করার কথা বলা হচ্ছে, যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ আরও বাড়াবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, যদিও কিছু ধারা সংশোধনের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে নারী শ্রমিকদের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু যদি বিষয়টি ঠিকমতো নজরদারি করা না হয় তাহলে প্রসূতি ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের মজুরি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি শ্রম কমিশনের প্রতিবেদনের ফলাফলকে গুরুত্ব দিয়ে এই সংশোধনগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে কমিশনের সুপারিশগুলো শ্রম আইনের সংশোধনে আরও ব্যাপক ও কার্যকর পরিবর্তন আনবে। এই পরিবর্তনগুলো শ্রমিকদের কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শ্রম আইনে ‘শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ’ নামে একটি নতুন ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
যা কর্মক্ষেত্রে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম, রাজনৈতিক মতামত, জাতীয়তা, সামাজিক অবস্থান, বংশ বা প্রতিবন্ধিতার কারণে কোনো শ্রমিককে বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে রক্ষা করবে। এর মাধ্যমে কর্মস্থলে সমতা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, শিশু-কিশোরদের অবৈধ নিয়োগের শাস্তির ক্ষেত্রে জরিমানা বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ট্রেড ইউনিয়নের গঠন সহজীকরণের পক্ষে। তবে তিনি মনে করেন, শুধু সংখ্যায় নির্ধারণ করা হলে বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কারখানায় ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার প্রস্তাবে মালিকেরা রাজি হয়েছেন, তবে ২০ জন শ্রমিকের ভিত্তিতে করার বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত নয়।’
এ ছাড়া, ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে মালিকপক্ষের পক্ষ থেকে বিরোধিতা পাওয়া গেছে। মোহাম্মদ হাতেম জানান, শ্রমিকেরাও এটির পক্ষে নয় এবং এ বিষয়ে একাধিক বিষয়ে এখনো একমত হয়নি মালিক-শ্রমিকপক্ষ। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সরকারের একতরফা আইন সংশোধনের ফলে কারখানাগুলোর ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
শুধু ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়ানো যথেষ্ট নয়। কার্যকর কালেক্টিভ বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) বা দরকষাকষির প্রতিনিধির অভাব থাকলে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা কঠিন হবে। এমনটি বহু শ্রমিক নেতা ও অধিকারকর্মীর মতামত। তাঁরা মনে করেন, প্রকৃত শ্রমিক অধিকার রক্ষার জন্য শুধু ইউনিয়ন নিবন্ধনের সহজীকরণ নয়, নিয়মিত ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করাও অপরিহার্য।
গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, ‘শ্রমিকদের যেন যেকোনো সংখ্যায় সংগঠিত হওয়ার অধিকার থাকে, সেটি নিশ্চিত করা উচিত। প্রস্তাব যদি আন্তরিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, আমরা তা ইতিবাচক মনে করি।’
একইভাবে, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি ও টিসিসি সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ‘টিসিসির বৈঠকে এই প্রস্তাব আমরা সমর্থন করেছি, যদিও মালিকপক্ষের তীব্র আপত্তি রয়েছে।’
আইএলও নির্দিষ্ট শতাংশভিত্তিক সদস্যসংখ্যার পরিবর্তে নির্দিষ্ট সংখ্যাভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। তবে শ্রমিক অধিকারকর্মীরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের বড় পরিবর্তন আনতে হলে শ্রম আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো—বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিধানগুলো—সুষ্ঠু ও কার্যকর করতে হবে।
বাংলাদেশ শ্রম আদালত আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম নাসিম বলেন, ‘শ্রম আইনের সংশোধনগুলো এককভাবে কার্যকর না হলে, সংগঠনগুলোর অধিকার নিশ্চিত করা কঠিন হবে।’
পাশাপাশি ছয়টি নতুন কবর। বৃষ্টিতে যেন ভেঙে না পড়ে, তাই পলিথিন দিয়ে ঢাকা। কবরের সামনে দাঁড়িয়ে একেক জনের নাম ধরে ডাকছিলেন লিপি আক্তার। কিন্তু কারও সাড়া মেলে না। আদরের ছোট বোন ও ভাগনিকে ডাকতে ডাকতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর কান্না ছড়িয়ে পড়ে পাশে দাঁড়ানো আরও কয়েকজন নারীর মধ্যে।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন ৩২ বিশিষ্ট নাগরিক। পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দলটির রাজনৈতিক তৎপরতা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
৫ ঘণ্টা আগেদায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে হবিগঞ্জ কোর্ট পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সবুজ চন্দ ও কনস্টেবল উজ্জ্বল মিয়াকে ক্লোজড করেছে কর্তৃপক্ষ।
৭ ঘণ্টা আগেনির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু আজ থেকে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে নির্বাচন সুন্দরভাবে করা।
৮ ঘণ্টা আগে