leadT1ad

কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ভিডিও, তিনজন কারাগারে

শৈলকূপায় গত শুক্রবার সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরের দিন প্রধান আসামি এনামুলের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন করে ভুক্তভোগী কিশোরী। তবে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এনামুলের পক্ষে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মেয়েটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন গ্রামের সামাজিক মাতব্বরেরা। তবে ঘটনা জানাজানি হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
ঝিনাইদহ

শৈলকুপায় কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন। সংগৃহীত ছবি

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এক কিশোরীকে ফোনে ডেকে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা তাঁদের কারাগারে পাঠিয়েছেন বিচারক। এছাড়া প্রধান আসামি এনামুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন— উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের উত্তরকচুয়া গ্রামের মাসুদ বিশ্বাস, রইচ বিশ্বাস ও হাবিবুর রহমান। গতকাল রোববার (২৩ নভেম্বর) রাতে নিজ গ্রাম থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাতে একটি ধানখেতে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে গতকাল রোববার দুপুরে শৈলকুপা থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস আগে প্রধান আসামি এনামুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ভুক্তভোগী কিশোরীর। সেই সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ফোন করে বাড়ির বাইরে আসতে বললেন এনামুল। বাড়ির বাইরে এলে কিশোরীকে টেনেহিঁচড়ে একটি ধানখেতে নিয়ে ধর্ষণ করেন তিনি। এ সময় রইচ বিশ্বাস তাদের ভিডিও ধারণ করেন এবং অপর ‍দুজন সহকারী মাসুদ বিশ্বাস ও হাবিবুর রহমানকে ফোনে ডেকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন। পরে রইচের সহযোগিতা ও পাহারায় কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন তাঁরা। এই ঘটনা কাউকে না বলতে অভিযুক্তরা তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে।

ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ

ভুক্তভোগীর পরিবার ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ধর্ষণ ঘটনার পরের দিন এনামুলের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন করে ভুক্তভোগী কিশোরী। তবে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এনামুলের পক্ষে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সালিশ মীমাংসার চেষ্টা করেন উত্তর কচুয়া গ্রামের শরিফুল মেম্বার ও খন্দকবাড়ীয়া গ্রামের সামাজিক মাতব্বররা। তাঁরা মেয়েটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। তবে ঘটনা জানাজানি হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। পরে থানা-পুলিশের তদন্তের এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের তথ্য।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সামাজিক মাতব্বর শরিফুল বলেন, ‘খবর পেয়ে যখন এনামুলের বাড়িতে যাই, তখন সে বাড়িতে ছিল না। তাঁর পরিবারে শুধু মেয়ে মানুষ থাকায় (ভুক্তভোগী) মেয়েটিকে বুঝিয়ে তার বাড়ির লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ধর্ষণের বিষয়টি জানতে পেরে তাদের থানায় মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়। আমরা ঘটনা ধামাচাপা বা কোনো টাকার লেনদেন করিনি।’

জানতে চাইলে প্রধান অভিযুক্ত এনামুলের মা বলেন, ‘আমার ছেলে এসব করতে পারে না। আমার ছেলের বউ আছে। সংসার ভাঙার জন্য আমার নিরীহ ছেলেকে ফাঁসানো হচ্ছে।’

গ্রেপ্তার মাসুদ বিশ্বাসের বাবা লেন, ‘ওই মেয়েটি গ্রামের মাতব্বরদের সামনে বলেছিল, এনামুল তাকে ধর্ষণ করেছে। তখন সে অন্যদের বিষয়ে অভিযোগ দেয়নি। হঠাৎ পুলিশ এসে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারলাম ছেলের নামেও মামলা হয়েছে। আমার ছেলে নির্দোষ।’

অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, ধর্ষণের ঘটনা জানার পরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এক পর্যায়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের তথ্য পাওয়া যায়। ভুক্তভোগী পরিবারকে ন্যায়বিচারের আশ্বস্ত করলে কিশোরীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত