leadT1ad

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বরাবরই নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানের কথা বলে আসছে চীন। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধানের বৈঠক চীনের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানকে আবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে চীনের লাভ

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৪: ১৮
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৪০
বার্লিনে ৩ জুলাই বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেপফুল ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ছবি: গেটি ইমেজ।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার হার চীন মেনে নিতে পারবে না। কারণ, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি চীনের দিকে মনোযোগ দিতে পারবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিকদের এমনটাই বলেছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা দাবি করছেন। হংকং-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর বরাতে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত বুধবার (২ জুলাই) ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাসের সঙ্গে ওয়াং ইর চার ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকে এই মন্তব্য করেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তার ভাষ্য মতে, এই বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা, বিরল খনিজ, বাণিজ্যবৈষম্য, তাইওয়ান, মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা জটিল বিষয়ে সম্মানজনক আলোচনা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ওয়াংয়ের এই ব্যক্তিগত মন্তব্য ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধকেই চীন পছন্দ করছে, এমন ইঙ্গিত দেয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে চীন প্রকাশ্যে যতই ‘অনাগ্রহ’ দেখাক, ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের ঝুঁকি ও স্বার্থ অনেক বেশি বলে মনে করছেন চীনের সমালোচকেরা।

গত শুক্রবার (৪ জুলাই) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মাও নিংকে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তবে এর উত্তরে বরাবরের মতোই বেইজিংয়ের দীর্ঘদিনের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

মাও নিং বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে চীন কোনো পক্ষে নয়। এ যুদ্ধ নিয়ে চীনের অবস্থান পক্ষপাতশূন্য । চীন আলোচনা, যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চায়। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া কারও জন্যই লাভজনক নয়।’

মাও নিং আরও বলেন, চীন চায় যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিকভাবে এই সংকটের সমাধান হোক। ইউক্রেন-রাশিয়ার মতামতের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে থাকবে।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চীনের এমন ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান বাস্তব চিত্রকে পুরোপুরি তুলে ধরে না।

ইউক্রেনে পুরোদমে হামলা চালানোর কয়েক সপ্তাহ আগেই রাশিয়ার সঙ্গে ‘সীমাহীন সম্পর্কের’ ঘোষণা করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং । এর পর থেকেই মস্কো-বেইজিংয়ের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

চীন নিজেকে শান্তির মধ্যস্থতাকারী রূপে প্রতীয়মান করার চেষ্টা করছে। তবে সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রধান মিত্র রাশিয়াকে হারানোর ঝুঁকি বেইজিং কখনোই নেবে না।

রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বারবার অস্বীকার করে আসছে চীন। রাশিয়াকে ড্রোনের যন্ত্রাংশ ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি দিয়েছে বলে বেশ কিছু চীনা কোম্পানিকে ইতিধ্যেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে ইউক্রেন।

গত শুক্রবার (৪ জুলাই) ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রেকর্ড পরিমাণ হামলা চালায় রাশিয়া। হামলার পর ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা রাশিয়ার ছোড়া গেরান-২ ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের একটি ছবি প্রকাশ করেন। ছবিতে দেখা যায় ধ্বংস হওয়া ড্রোনের গায়ে প্রস্তুতকারক হিসেবে চীনের নাম লেখা আছে।

সিবিহা বলেন, ওই রাতে ওডেসা শহরে চালানো রুশ হামলায় চীনা কনস্যুলেটের ভবনও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুতিন যেভাবে যুদ্ধ ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে যাচ্ছেন এবং উত্তর কোরিয়া, ইরান ও চীনকে জড়াচ্ছেন তা নজিরবিহীন। যার সঙ্গে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত।

এ বছরে চীনা নাগরিকেরা রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। তবে বেইজিং বরাবরের মতোই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং চীনা নাগরিকদের প্রতি, ‘কোনো পক্ষের হয়ে সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশ না নিতে’ আহ্বান জানিয়েছে।

সিএনএন অবলম্বনে তুফায়েল আহমদ

Ad 300x250

সম্পর্কিত