সম্প্রতি ‘শান্তির খোঁজে’ নিজেদের যাত্রা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ব্যান্ডদল ‘কাকতাল’। ‘আবার দেখা হলে’, ‘গোলোকধাঁধা’, ‘সোডিয়াম’ বা ‘চর্কি’র মতো গান দিয়ে শ্রোতাপ্রিয় এই ব্যান্ড আসলেই কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, নাকি তাঁরা সাময়িক বিরতি নিলেন? এসব প্রশ্নে স্ট্রিম কথা বলেছে দলটির লিড ভোকালসহ অন্য সদস্যদের সঙ্গে। পাশাপাশি ব্যান্ডটির সূচনাপর্ব থেকে শুরু করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা, বিরতির পেছনের কারণ ও ‘অনির্দিষ্টকালের বিরতি’ শেষে নতুনভাবে ফিরে আসার সম্ভাবনা।
গৌতম কে শুভ
১৭ই মে। শনিবারের সন্ধ্যা। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগ ডেতে গাইতে উঠেছিল ব্যান্ডদল ‘কাকতাল’। মঞ্চের আলো জ্বলছে, শ্রোতারা অপেক্ষায়। কিন্তু কনসার্ট শুরুর আগেই ঘোষণা আসে ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে, ‘আমাদের যাত্রা এখানেই থামাতে হচ্ছে।’
এই হঠাৎ ঘোষণা অবাক করে দেয় শ্রোতা-ভক্তদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় নানা আলোচনা, বিস্ময় আর প্রশ্ন, কেন থামল কাকতাল?
কারাগারে কাকতালীয় পথচলা
কাকতাল ব্যান্ডটির জন্ম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কয়েদিদের জন্য কিছু বাদ্যযন্ত্র আসে সেখানে। গিটার, হারমোনিয়াম, তবলা আর বাঁশি। কিন্তু কীভাবে কী হবে, কেউ জানত না। বছরখানেক পর দেখা গেল, সেই বাদ্যযন্ত্র ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে একগুচ্ছ স্বর, এক ঝাঁক গল্প। আর একটা ব্যান্ড, যার নাম ‘কাকতাল’।
কারাগারে ব্যান্ডটি গড়ার প্রধান কারিগর আসিফ ইকবাল অন্তু। তিনি তখন একটি মামলায় সাজা খাটছিলেন। কারাজীবনে অন্তুর অবলম্বন হয়ে ওঠেছিল গিটার আর গানের খাতা। ব্যান্ডের ঝুলিতে ততদিনে জমা হয়েছে দুই শর বেশি গান। কাকতালের ‘ধুলো’, ‘কতবার’, ‘আবার দেখা হলে’র মতো শ্রোতাপ্রিয় গানের সৃষ্টি কিন্তু জেলখানাতেই।
জেল থেকে বেরিয়ে অন্তু ঠিক করলেন, আর গান গাইবেন না। কারণ গান লিখতে যে স্থিরতা দরকার সেটা পাচ্ছিলেন না। জেলে যাবার আগে কখনো গান লেখেননি। কিন্তু নতুন করে আবার কাকতালের শুরুটা হলো কাকতালীয়ভাবেই। হঠাৎ একদিন মহল্লার এক বন্ধু অনুরোধ করল, একটা শো করতেই হবে। অন্তু বন্ধুকে সেদিন ‘না’ বলতে পারেননি। শুরুটা তখন থেকেই, শ্রোতাদের সামনে আসার দিনটি ছিল ২০ আগস্ট ২০২১।
বিরতির ঘোষণা এল কেন
ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও ভোকাল আসিফ ইকবাল অন্তু সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তটি এসেছে একদম হঠাৎ করেই। তাঁদের মনে হয়েছে, গান থেকে যে স্বস্তি, যে আনন্দ পাওয়ার কথা, সেটা আর ঠিকমতো পাচ্ছেন না। নিজেদের ভেতরে যেমন একধরনের চাপ তৈরি হয়েছে, তেমনি শ্রোতাদের প্রত্যাশা বাড়তে থাকায় তৈরি হয়েছে মানসিক ভারও। এ কারণেই দীর্ঘ বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাকতাল। তবে এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ব্যক্তিগত কারণও, কিছুদিন আগে তাঁর বাবার মৃত্যু।
নতুনভাবে ফিরে আসার প্রস্তুতি
অর্নিষ্টকালের জন্য এই বিরতি কি নতুনভাবে ফিরে আসার প্রস্তুতিরই অংশ, এই প্রশ্ন আমরা করেছিলাম ব্যান্ডের লিড ভোকালসহ অন্য সদস্যদের। খোলামেলাভাবেই তাঁরা জানিয়েছেন নিজেদের কথা।
প্রশ্নের জবাবে লিড ভোকাল আসিফ ইকবাল অন্তু স্ট্রিমকে বলেন, ‘ফেরার আশাতেই তো বিরতি নেওয়া। শিল্পী বা লেখকের “রাইটার্স ব্লক” আসতেই পারে। সেই সময়ে কিন্তু প্রেশার করা যায় না। জোর করলে জিনিসটা আরও খারাপ হয়। এতে নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যেতে হয়। তাই সবকিছু বাদ দিয়ে লম্বা সময় যদি একটু নিশ্বাস নেওয়া যায়, আরও কিছু এক্সপেরিয়েন্স করা যায়, তাহলে আবার ইন্সিপিরেশন পাওয়া যেতে পারে।’
কাকতালের এই বিরতির সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের শিল্পীদের জন্য শান্তি বনাম সফলতার ভারসাম্য নিয়ে নতুনভাবে ভাবার একটা বার্তা হতে পারে কি না, প্রশ্নের জবাবে অন্তুর কথা হলো, ‘হতে পারে। সবার আগে তো শন্তিটাই জরুরি। আমরা আর্ট বা ক্রিয়েটিভ কাজ করিই একরকম শান্তি খোঁজার জন্যই। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কাজটা খুব কঠিন। বারবারই আমরা আটকে যাই কর্মাশিয়াল ভ্যালুর কাছে। ধরেন, টাকা-পয়সা আসছে, তখন আমি কী করব? এসব চিন্তা আসে। তবে আমরা পেরেছি। কারণ আমরা কখোনোই গান গেয়ে টাকা উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম না। তারপরেও এটা আমাদের অনেক সাপোর্ট দিয়েছে।’
ব্যান্ডের আরেক সদস্য নাজেম আনোয়ারের সঙ্গেও কথা হলো। স্ট্রিমকে তিনি বললেন, ‘অন্তু মিউজিক করে পিনিক পাচ্ছিল না, শান্তি পাচ্ছিল না। আমিও এই শান্তি পাওয়ার নীতিতেই চলি। তাই মনে হয়েছে, তাঁর সিদ্ধান্তকে সন্মান জানানো উচিত।’
নতুনভাবে ফিরে আসার ব্যাপারে কথা বলেছেন ব্যান্ডের ব্যবস্থাপক জাভেদ হকও। তাঁর ভাষ্য, ‘শিল্প তো ক্রিয়েটিভ এক্সপ্রেশন। মানুষ যখন একই কাজ বারবার করতে থাকে, তখন ক্লান্তি আসে। সৃষ্টিশীল মানুষের ক্ষেত্রে এ সময় মস্তিষ্কের ক্রিয়েটিভ অংশটা ব্লক হয়ে যায়। তাই নতুনভাবে শুরু করার জন্যই সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমনই।’
‘কাকতাল’ যেভাবে শ্রোতাদের ভালোবাসা পেয়েছে
‘আবার দেখা হলে’, ‘গোলকধাঁধা’, ‘সোডিয়াম’ বা ‘চর্কি’র মতো গানগুলো কাকতালকে শ্রোতাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। জীবনের আবেগ, অভিজ্ঞতা আর তাৎক্ষণিক মুগ্ধতা - এসবকে সুরে-সুরে মিশিয়েই সৃষ্টি হয়েছে কাকতালের গান। রেকর্ডিং, মাস্টারিং বা মিক্সিংয়ের নিখুঁত কাঠামো নয়; বরং তাঁদের কাছে গানের আবেগটাই মুখ্য। অন্তু নিজেই বলেছেন, ‘আমার জন্য “ফিনিশড” গান দরকার নেই। আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে, ততটুকু দিয়েই করব।’
এজন্য কাকতালের গানসংখ্যাও অনেক। কাকতালের গান তাই অনেকটাই ডায়েরির পাতার মতো। জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত গান হয়ে ওঠে সেখানে। যেন একেবারে নিজের জন্যই লেখা, নিজেরই একান্ত কথা। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে তা ছুঁয়ে যায় অন্যের হৃদয়। কারণ, সেগুলো সবার রোজকার অনূভূতির গল্প।
ব্যান্ডটি ভক্তদেরকে কাছে টেনেছে মূলত ছোট ছোট আয়োজন দিয়ে। যেমন ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বাসাবাড়ির ছাদে ‘বড় খাওন’ নামে এক ধরণের বিশেষ কনসার্টের আয়োজন করেছিল। এছাড়া ‘অনুসেশন’ নাম দিয়েও ঘরোয়াভাবে কনসার্ট করত তারা। এ পর্যন্ত ঘরোয়াভাবে অনুসেশনের ১৫টি পর্ব হয়েছে। এর বাইরে ‘গল্প-গানের আসর’ নামে আরেকটি আয়োজন ছিল তাদের। তা ছাড়া একাধিক একক কনসার্ট কিংবা বাসে করে ভক্তদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ায় ঘুরতে যাওয়ার প্রকল্প ‘ঘরছাড়া’ কাকতালকে অনেক একান্ত-ভক্ত এনে দিয়েছে। আর চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, শুরুর দিকে কাকতালের লিড ভোকাল অন্তু নিজের উদ্যোগে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আর গান গাইতে যেতেন, কোনো আমন্ত্রণের তোয়াক্কা না করেই।
কাকতালের এমন নানাবিধ আয়োজনে কথা বলতে বলতে গান গাওয়ার আন্তরিকতা শ্রোতাদের ছুঁয়ে গেছে গভীরভাবে। পাশাপাশি সম্পর্কও তৈরি হয়েছে ব্যান্ডের সঙ্গে। আবার ভক্তদের নিজেদের মধ্যেও বন্ধত্বও হয়েছে এসব আয়োজনে যোগ দিয়ে। আর এগুলোর মাধ্যমে ব্যান্ডদল কাকতাল যেন গড়ে তুলেছে এক কমিউনিটি মডেল। এর বাইরে গতানুগতিক কনসার্টেও তাদের দেখা মিলত। তরুণদের মুখে-মুখে প্রায় চার বছর ধরে এভাবেই ছড়িয়েছে কাকতালের গান।
বিরতিকে কীভাবে দেখছে ভক্তরা
বিরতি ঘোষণার ফেসবুক পোস্টের কমেন্টবক্সে হাজারো ভক্তদের মন্তব্য এসেছে। তাঁদের সবার লেখাতেই ঘুরেফিরে এসেছে ফিরে আসার আহ্বান। নিয়মিত যাঁরা ব্যান্ডটির গান শোনেন এবং কনসার্টে যান, এমন কয়েকজন ভক্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম আমরা। কাকতাল বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য হলো, ফিরে এসো, ফিরে এসো, ফিরে এসো। যেমন ঢাকার ফারদিন আহমেদ বলেছেন, ‘কাকতাল আবার ফিরবে হয়তো লম্বা বিরতির পর। এই আশা আমাদের সবার। আসলে তাঁদের গান আমার নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতিরই প্রকাশ। ভক্ত হিসেবে তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সন্মান জানাই।’
আবার বরিশালের অরণি মল্লিকের কথা হলো, ‘কাকতাল ব্যান্ড এখন আর সক্রিয় নেই, এই ব্যাপারটাতে নিজের ভেতরে খালি খালি লাগছে। তাঁরা আর গাইবে কি না জানি না। তবে ওদের ভাবনা, ওদের এই শান্তির খোঁজটাও আমাদের সবার ভেতরে বয়ে যাবে।’
আর ‘আমরা সবাই তাঁদের ভালোবাসি।’ বলে ব্যান্ডটির আরেক ভক্ত রাজশাহীর রুদ্র প্রতাপ বলেছেন, ‘ভালোবাসার টানে তাদের আবার ফিরে আসতেই হবে।’
১৭ই মে। শনিবারের সন্ধ্যা। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগ ডেতে গাইতে উঠেছিল ব্যান্ডদল ‘কাকতাল’। মঞ্চের আলো জ্বলছে, শ্রোতারা অপেক্ষায়। কিন্তু কনসার্ট শুরুর আগেই ঘোষণা আসে ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে, ‘আমাদের যাত্রা এখানেই থামাতে হচ্ছে।’
এই হঠাৎ ঘোষণা অবাক করে দেয় শ্রোতা-ভক্তদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় নানা আলোচনা, বিস্ময় আর প্রশ্ন, কেন থামল কাকতাল?
কারাগারে কাকতালীয় পথচলা
কাকতাল ব্যান্ডটির জন্ম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কয়েদিদের জন্য কিছু বাদ্যযন্ত্র আসে সেখানে। গিটার, হারমোনিয়াম, তবলা আর বাঁশি। কিন্তু কীভাবে কী হবে, কেউ জানত না। বছরখানেক পর দেখা গেল, সেই বাদ্যযন্ত্র ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে একগুচ্ছ স্বর, এক ঝাঁক গল্প। আর একটা ব্যান্ড, যার নাম ‘কাকতাল’।
কারাগারে ব্যান্ডটি গড়ার প্রধান কারিগর আসিফ ইকবাল অন্তু। তিনি তখন একটি মামলায় সাজা খাটছিলেন। কারাজীবনে অন্তুর অবলম্বন হয়ে ওঠেছিল গিটার আর গানের খাতা। ব্যান্ডের ঝুলিতে ততদিনে জমা হয়েছে দুই শর বেশি গান। কাকতালের ‘ধুলো’, ‘কতবার’, ‘আবার দেখা হলে’র মতো শ্রোতাপ্রিয় গানের সৃষ্টি কিন্তু জেলখানাতেই।
জেল থেকে বেরিয়ে অন্তু ঠিক করলেন, আর গান গাইবেন না। কারণ গান লিখতে যে স্থিরতা দরকার সেটা পাচ্ছিলেন না। জেলে যাবার আগে কখনো গান লেখেননি। কিন্তু নতুন করে আবার কাকতালের শুরুটা হলো কাকতালীয়ভাবেই। হঠাৎ একদিন মহল্লার এক বন্ধু অনুরোধ করল, একটা শো করতেই হবে। অন্তু বন্ধুকে সেদিন ‘না’ বলতে পারেননি। শুরুটা তখন থেকেই, শ্রোতাদের সামনে আসার দিনটি ছিল ২০ আগস্ট ২০২১।
বিরতির ঘোষণা এল কেন
ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও ভোকাল আসিফ ইকবাল অন্তু সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তটি এসেছে একদম হঠাৎ করেই। তাঁদের মনে হয়েছে, গান থেকে যে স্বস্তি, যে আনন্দ পাওয়ার কথা, সেটা আর ঠিকমতো পাচ্ছেন না। নিজেদের ভেতরে যেমন একধরনের চাপ তৈরি হয়েছে, তেমনি শ্রোতাদের প্রত্যাশা বাড়তে থাকায় তৈরি হয়েছে মানসিক ভারও। এ কারণেই দীর্ঘ বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাকতাল। তবে এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ব্যক্তিগত কারণও, কিছুদিন আগে তাঁর বাবার মৃত্যু।
নতুনভাবে ফিরে আসার প্রস্তুতি
অর্নিষ্টকালের জন্য এই বিরতি কি নতুনভাবে ফিরে আসার প্রস্তুতিরই অংশ, এই প্রশ্ন আমরা করেছিলাম ব্যান্ডের লিড ভোকালসহ অন্য সদস্যদের। খোলামেলাভাবেই তাঁরা জানিয়েছেন নিজেদের কথা।
প্রশ্নের জবাবে লিড ভোকাল আসিফ ইকবাল অন্তু স্ট্রিমকে বলেন, ‘ফেরার আশাতেই তো বিরতি নেওয়া। শিল্পী বা লেখকের “রাইটার্স ব্লক” আসতেই পারে। সেই সময়ে কিন্তু প্রেশার করা যায় না। জোর করলে জিনিসটা আরও খারাপ হয়। এতে নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যেতে হয়। তাই সবকিছু বাদ দিয়ে লম্বা সময় যদি একটু নিশ্বাস নেওয়া যায়, আরও কিছু এক্সপেরিয়েন্স করা যায়, তাহলে আবার ইন্সিপিরেশন পাওয়া যেতে পারে।’
কাকতালের এই বিরতির সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের শিল্পীদের জন্য শান্তি বনাম সফলতার ভারসাম্য নিয়ে নতুনভাবে ভাবার একটা বার্তা হতে পারে কি না, প্রশ্নের জবাবে অন্তুর কথা হলো, ‘হতে পারে। সবার আগে তো শন্তিটাই জরুরি। আমরা আর্ট বা ক্রিয়েটিভ কাজ করিই একরকম শান্তি খোঁজার জন্যই। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কাজটা খুব কঠিন। বারবারই আমরা আটকে যাই কর্মাশিয়াল ভ্যালুর কাছে। ধরেন, টাকা-পয়সা আসছে, তখন আমি কী করব? এসব চিন্তা আসে। তবে আমরা পেরেছি। কারণ আমরা কখোনোই গান গেয়ে টাকা উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম না। তারপরেও এটা আমাদের অনেক সাপোর্ট দিয়েছে।’
ব্যান্ডের আরেক সদস্য নাজেম আনোয়ারের সঙ্গেও কথা হলো। স্ট্রিমকে তিনি বললেন, ‘অন্তু মিউজিক করে পিনিক পাচ্ছিল না, শান্তি পাচ্ছিল না। আমিও এই শান্তি পাওয়ার নীতিতেই চলি। তাই মনে হয়েছে, তাঁর সিদ্ধান্তকে সন্মান জানানো উচিত।’
নতুনভাবে ফিরে আসার ব্যাপারে কথা বলেছেন ব্যান্ডের ব্যবস্থাপক জাভেদ হকও। তাঁর ভাষ্য, ‘শিল্প তো ক্রিয়েটিভ এক্সপ্রেশন। মানুষ যখন একই কাজ বারবার করতে থাকে, তখন ক্লান্তি আসে। সৃষ্টিশীল মানুষের ক্ষেত্রে এ সময় মস্তিষ্কের ক্রিয়েটিভ অংশটা ব্লক হয়ে যায়। তাই নতুনভাবে শুরু করার জন্যই সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমনই।’
‘কাকতাল’ যেভাবে শ্রোতাদের ভালোবাসা পেয়েছে
‘আবার দেখা হলে’, ‘গোলকধাঁধা’, ‘সোডিয়াম’ বা ‘চর্কি’র মতো গানগুলো কাকতালকে শ্রোতাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। জীবনের আবেগ, অভিজ্ঞতা আর তাৎক্ষণিক মুগ্ধতা - এসবকে সুরে-সুরে মিশিয়েই সৃষ্টি হয়েছে কাকতালের গান। রেকর্ডিং, মাস্টারিং বা মিক্সিংয়ের নিখুঁত কাঠামো নয়; বরং তাঁদের কাছে গানের আবেগটাই মুখ্য। অন্তু নিজেই বলেছেন, ‘আমার জন্য “ফিনিশড” গান দরকার নেই। আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে, ততটুকু দিয়েই করব।’
এজন্য কাকতালের গানসংখ্যাও অনেক। কাকতালের গান তাই অনেকটাই ডায়েরির পাতার মতো। জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত গান হয়ে ওঠে সেখানে। যেন একেবারে নিজের জন্যই লেখা, নিজেরই একান্ত কথা। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে তা ছুঁয়ে যায় অন্যের হৃদয়। কারণ, সেগুলো সবার রোজকার অনূভূতির গল্প।
ব্যান্ডটি ভক্তদেরকে কাছে টেনেছে মূলত ছোট ছোট আয়োজন দিয়ে। যেমন ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বাসাবাড়ির ছাদে ‘বড় খাওন’ নামে এক ধরণের বিশেষ কনসার্টের আয়োজন করেছিল। এছাড়া ‘অনুসেশন’ নাম দিয়েও ঘরোয়াভাবে কনসার্ট করত তারা। এ পর্যন্ত ঘরোয়াভাবে অনুসেশনের ১৫টি পর্ব হয়েছে। এর বাইরে ‘গল্প-গানের আসর’ নামে আরেকটি আয়োজন ছিল তাদের। তা ছাড়া একাধিক একক কনসার্ট কিংবা বাসে করে ভক্তদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ায় ঘুরতে যাওয়ার প্রকল্প ‘ঘরছাড়া’ কাকতালকে অনেক একান্ত-ভক্ত এনে দিয়েছে। আর চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, শুরুর দিকে কাকতালের লিড ভোকাল অন্তু নিজের উদ্যোগে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আর গান গাইতে যেতেন, কোনো আমন্ত্রণের তোয়াক্কা না করেই।
কাকতালের এমন নানাবিধ আয়োজনে কথা বলতে বলতে গান গাওয়ার আন্তরিকতা শ্রোতাদের ছুঁয়ে গেছে গভীরভাবে। পাশাপাশি সম্পর্কও তৈরি হয়েছে ব্যান্ডের সঙ্গে। আবার ভক্তদের নিজেদের মধ্যেও বন্ধত্বও হয়েছে এসব আয়োজনে যোগ দিয়ে। আর এগুলোর মাধ্যমে ব্যান্ডদল কাকতাল যেন গড়ে তুলেছে এক কমিউনিটি মডেল। এর বাইরে গতানুগতিক কনসার্টেও তাদের দেখা মিলত। তরুণদের মুখে-মুখে প্রায় চার বছর ধরে এভাবেই ছড়িয়েছে কাকতালের গান।
বিরতিকে কীভাবে দেখছে ভক্তরা
বিরতি ঘোষণার ফেসবুক পোস্টের কমেন্টবক্সে হাজারো ভক্তদের মন্তব্য এসেছে। তাঁদের সবার লেখাতেই ঘুরেফিরে এসেছে ফিরে আসার আহ্বান। নিয়মিত যাঁরা ব্যান্ডটির গান শোনেন এবং কনসার্টে যান, এমন কয়েকজন ভক্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম আমরা। কাকতাল বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য হলো, ফিরে এসো, ফিরে এসো, ফিরে এসো। যেমন ঢাকার ফারদিন আহমেদ বলেছেন, ‘কাকতাল আবার ফিরবে হয়তো লম্বা বিরতির পর। এই আশা আমাদের সবার। আসলে তাঁদের গান আমার নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতিরই প্রকাশ। ভক্ত হিসেবে তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সন্মান জানাই।’
আবার বরিশালের অরণি মল্লিকের কথা হলো, ‘কাকতাল ব্যান্ড এখন আর সক্রিয় নেই, এই ব্যাপারটাতে নিজের ভেতরে খালি খালি লাগছে। তাঁরা আর গাইবে কি না জানি না। তবে ওদের ভাবনা, ওদের এই শান্তির খোঁজটাও আমাদের সবার ভেতরে বয়ে যাবে।’
আর ‘আমরা সবাই তাঁদের ভালোবাসি।’ বলে ব্যান্ডটির আরেক ভক্ত রাজশাহীর রুদ্র প্রতাপ বলেছেন, ‘ভালোবাসার টানে তাদের আবার ফিরে আসতেই হবে।’
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় এক কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছে মেটা। ফেসবুক ক্রিয়েটরস ব্লগে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নকল প্রোফাইল, স্প্যাম অ্যাকাউন্ট ও অনুমতি ছাড়া অন্যদের কনটেন্ট ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে এ ব্যবস্থা।
১৪ ঘণ্টা আগেপেঁয়াজ কীভাবে কাটলে খাবারের স্বাদ বেশি হবে—রান্নাঘরে এ নিয়ে তর্কের শেষ নেই। পেঁয়াজ কেউ পাতলা পাতলা কুচি করেন, কেউবা মোটা টুকরা পছন্দ করেন। কিন্তু এই বিতর্ক আসলে কত বছর পুরোনো? শত বছর, হাজার বছর?
২ দিন আগেজেনেটিক ত্রুটিযুক্ত সাতজন গর্ভবতী নারীর ভ্রূণে আইভিএফ পদ্ধতিতে প্রবেশ করানো হয়েছিল তিনজনের ডিএনএ। ফলে ওই সাত নারী জন্ম দিয়েছেন জেনেটিক ত্রুটিহীন আট শিশুর। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে যা এক যুগান্তকারী ঘটনা।
৪ দিন আগেসোশ্যাল মিডিয়া খুললেই চোখে পড়ছে লাল সুতা নিয়ে রহস্যময় নানান ছবি, আর নানা রকম মিম। সবাই যেন কিছু একটা বোঝাতে চাইছে, কিন্তু সেটা ঠিক কী? এর উত্তর লুকিয়ে আছে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন থ্রিলার সিরিজ ‘এস লাইন’-এ।
৪ দিন আগে