.png)
প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি বা পিএমসি এখন আধুনিক যুদ্ধের অপরিহার্য উপাদান। রাষ্ট্রের জবাবদিহি এড়িয়ে, করপোরেট শক্তির ছায়ায় এই সংস্থাগুলো আজ যুদ্ধের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রযুক্তিনির্ভর ও গোপন এই নতুন যুদ্ধের ধরনে লাভের হিসাব মানবিকতার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে। ফলে যুদ্ধ এখন শুধু রণাঙ্গনে নয়, করপোরেট চুক্তির কাগজেও লড়াই হচ্ছে।

তুফায়েল আহমদ

বর্তমান দুনিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি (পিএমসি) বা ব্যক্তিগত সামরিক সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। একই সঙ্গে পিএমসির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে বৈশ্বিক আলোচনা-সমালোচনার শুরু হয়েছে।
২০২৩ সালে রাশিয়ার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মৃত্যুর পরেও আফ্রিকা জুড়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালে ইউক্রেনে উন্নত অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য সামরিক ঠিকাদারদের কাজ করার অনুমতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এসবই বৈশ্বিক সংঘাতের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ফলে রাষ্ট্রীয় সামরিক পদক্ষেপ ও ব্যক্তিগত ব্যবসার মধ্যকার সীমারেখা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের ভবিষ্যৎকে নতুন রূপ দেওয়া পিএমসির উত্থান কেবল কৌশলগত পরিবর্তন নয়, বরং বিশ্বব্যাপী এক মৌলিক রূপান্তর।
প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি বা পিএমসি হলো এমন কর্পোরেট সংস্থা যা অর্থের বিনিময়ে সামরিক অথবা নিরাপত্তা পরিষেবা সরবরাহ করে। পিএমসি পুরোনো দিনের ভাড়াটে সৈন্যদের মতো নয়, আধুনিক পিএমসি সংস্থাগুলো ব্যবসার আদলে গঠিত হয়। পিএমসির পরিষেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে লজিস্টিক সহায়তা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, স্থানীয় বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, কূটনীতিক ও কর্পোরেট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা প্রদান এবং সরাসরি যুদ্ধ পরিচালনা।
আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ও প্রাক্তন প্যারাট্রুপার ও প্রাইভেট মিলিটারি ঠিকাদার ড. শন ম্যাকফেটের মতে, ‘ভাড়াটে সৈন্যরা ব্যক্তিগত সেনাবাহিনীর মতো, যারা অর্থের জন্য কাজ করে।’
পিএমসির গ্রাহকদের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার, বহুজাতিক কর্পোরেশন, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং এমনকি জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও।
১৯৬০-এর দশকে ব্রিটিশ স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের (এসএএস) ডেভিড স্টার্লিং-এর প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ সংস্থা ওয়াচগার্ড ইন্টারন্যাশনালকে আধুনিক যুগের প্রথম প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থ রক্ষা করা, বিশেষ করে এমন সব অঞ্চলে যেখানে সরকার সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারত না। ওয়াচগার্ড প্রাথমিকভাবে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করত। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর পিএমসি শিল্পের নাটকীয় উত্থান ঘটে।
১৯৯০-এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের সামরিক বাহিনীর আকার ছোট করতে শুরু করলে প্রচুর প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ সৈন্য কর্মহীন হয়ে পড়ে। এই বিশাল সংখ্যক দক্ষ সৈন্য পিএমসিগুলোর জন্য বড় কর্মী সংগ্রহের সুযোগ তৈরি করে দেয়।
ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে ব্যক্তিগত ঠিকাদারদের সংখ্যা কখনও কখনও মোতায়েনকৃত সৈন্যের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরের কার্যালয়ের ২০০৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, সে সময় মার্কিন গোয়েন্দাদের কর্মশক্তির ২৯ শতাংশ ছিল ব্যক্তিগত ঠিকাদার।
ইউরোপিয়ান প্রোসিডিংসের ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘প্রাইভেট মিলিটারি অ্যান্ড সিকরিটি কোম্পানিজ: সার্চ ফর ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল অ্যান্ড ন্যাশনাল ল’জ’ প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশে প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি কাজ করেছে।
গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চের’ ২০২৪-এর গবেষণা বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ১৫০টিরও বেশি প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে।

পিএমসি প্রসঙ্গ এলে আমরা সাধারণত ইউক্রেনে ওয়াগনার গ্রুপ ও ইরাক যুদ্ধে ব্ল্যাকওয়াটার গ্রুপের কথাই আলোচনা করি। নৃশংস কৌশল, বিতর্কিত ভূমিকা, প্রভাবের জন্য কুখ্যাত এই দুই গ্রুপ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী আরও অনেক পিএমসি রয়েছে।
ডাইনকর্প ইন্টারন্যাশনাল: ডাইনকর্প গ্রুপ লম্বা সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিমান চলাচল সহায়তা, লজিস্টিকস এবং প্রশিক্ষণের মতো বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে আসছে। সংস্থাটির ৩ বিলিয়ন ডলার বার্ষিক আয়ের ৯৬ শতাংশের বেশি মার্কিন ফেডারেল চুক্তি থেকে এসেছে।
জি৪এস সিকিউর সলিউশনস: ব্রিটিশ এই পিএমসিতে প্রায় ৬ লাখ ২০ হাজার কর্মী কাজ করেন। যদিও এই সংস্থার প্রধান কাজ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের নিরাপত্তা প্রদান, তবে ২০০৮ সালে আর্মারগ্রুপকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে জি৪এস সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে তার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করে। ইরাকের অসামরিক সরবরাহ কনভয়গুলোর একটি বড় অংশকে সুরক্ষা দিত এই সংস্থা।
ওয়াগনার গ্রুপ: সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি। প্রয়াত ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের নেতৃত্বে এই সংস্থাটি ক্রেমলিনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করত। ইউক্রেনের বাখমুত থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত ছিল ওয়াগনারের কার্যক্রম। বিশেষ করে আফ্রিকায় স্বৈরশাসকদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিনিময়ে সোনা ও হীরার মতো প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিত সংস্থাটি। চরম নৃশংসতা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বারবার গণমাধ্যমে সংস্থাটির নাম এসেছে।
২০২৩ সালে রাশিয়ার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহ এবং পরবর্তীতে রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ওয়াগনারের নেতা প্রিগোজিনের। তার মৃত্যুর পর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটির কার্যক্রম এখনো বিশ্বজুড়ে সক্রিয় রয়েছে।
অ্যাকাডেমি (পূর্বের ব্ল্যাকওয়াটার): ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন নেভি সিল এরিক প্রিন্স প্রতিষ্ঠা করেন ব্ল্যাকওয়াটার। ২০০১ পরবর্তী ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম করে ব্যাপক আলোচিত হয় এই গ্রুপ। ২০০৭ সালে ইরাকের বাগদাদের নিসুর স্কয়ারে ১৭ জন ইরাকি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে এই গ্রুপ। এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে নিজেদের কাজের পরিসর কমিয়ে আনে ব্ল্যাকওয়াটার।
পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে তারা আবার কাজ শুরু করে। বর্তমানে অ্যাকাডেমি নামে সক্রিয় থাকা এই সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনায় ৭ হাজার একরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে।
সাদাত: তুরস্কের সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক-ঘনিষ্ঠ সামরিক ও প্রশিক্ষণ মিশনে যুক্ত বলে ধারণা করা হয়। এই গ্রুপ সামরিক প্রশিক্ষণ, কৌশলগত সহায়তা ও প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার মতো কাজে গ্রাহককে সাহায্য করে।
এক্সিকিউটিভ আউটকামস: ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাকে আধুনিক প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির অন্যতম পথিকৃৎ মডেল হিসেবে গণ্য করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই সংস্থা অ্যাঙ্গোলা ও সিয়েরা লিওনের মতো আফ্রিকার গৃহযুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলোতে তাদের কার্যক্রমের জন্য পরিচিত।
তাদের মূল কাজের মধ্যে ছিল সরাসরি বিদ্রোহ দমন অভিযান পরিচালনা, সরকারি বাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কৌশলগত পরামর্শ দেওয়া।
এজিস ডিফেন্স সার্ভিসেস: ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর অন্যতম প্রধান নিরাপত্তা ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত। তাদের মূল কাজ ছিল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) নিরাপত্তা প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক কনভয় রক্ষা করা এবং কৌশলগত সামরিক পরামর্শ দেওয়া।
বিশ্বজুড়ে যেসব এলাকায় যুদ্ধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, সেখানে পিএমসির প্রভাব বাড়ছে। রাষ্ট্রগুলো এখন অনেক সময় নিজের সেনাবাহিনী পাঠানোর বদলে এই বেসরকারি সৈন্য ভাড়া করে কাজ করায়। এতে সরকারগুলো সরাসরি দায় এড়াতে পারে। ফলে এখনকার সময়ে যুদ্ধ আরও গোপন, প্রযুক্তিনির্ভর ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে।

বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধের ধরন দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এখন আর যুদ্ধ মানে শুধু সেনাবাহিনী, ট্যাঙ্ক বা বন্দুক নয়, বরং তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ড্রোন ও সাইবার প্রযুক্তি হয়ে উঠছে প্রধান অস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সির বিশ্লেষণ বলছে, ভবিষ্যতের যুদ্ধ প্রযুক্তিনির্ভর ও অটোমেটেড (স্বয়ংক্রিয় চালিত) হবে। এই বাস্তবতায় প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানিগুলো দ্রুত নিজেদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ঊর্ধ্বে থাকায় পিএমসি সংস্থা সহজেই নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর তুলনায় দ্রুত অভিযানে যেতে পারে।
বড় শক্তিগুলো এখন সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে গোপনে পিএমসি বা প্রক্সি বাহিনী ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে দেশগুলো এসব ঘটনায় নিজেদের রাজনৈতিক দায় এড়াতে পারে কিন্তু কৌশলগত লক্ষ্যও পূরণ করে। লিচেনস্টাইন-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক জিআইএস ও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংক ট্যাংক দ্য সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ আলাদা প্রতিবেদনে বলছে, পিএমসির মাধ্যমে পরিচালিত ‘ছায়াযুদ্ধ’ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। কারণ প্রাইভেট মিলিটারি গ্রুপকে নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসতে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো দেশই বড় কোনো উদ্যোগ নেবে না। বরং পিএমসিগুলো বর্তমান বিভক্ত ও বহুমাত্রিক বিশ্বে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’
অন্যদিকে, পিএমসির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো দুর্বল। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের গবেষণায় বলা হয়েছে, এই আইনগত ঘাটতি অনেক রাষ্ট্রকে সুযোগ দিচ্ছে পিএমসি ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় এড়াতে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলো নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পিএমসির সাহায্য নিচ্ছে, আর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো তাদের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করছে। ফলে ভবিষ্যতের যুদ্ধ আরও ছায়াময়, নিয়ন্ত্রণহীন ও জবাবদিহিতাহীন হয়ে উঠবে।
ফলে এখন আর যুদ্ধক্ষেত্রের সীমা সাইবার জগৎ ও প্রযুক্তির ভেতরেও বিস্তৃত হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে, বাংলাদেশি তরুণদের রুশ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওগুলোতে যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহতা, বিস্ফোরণ, ধ্বংসস্তূপ ও সহযোদ্ধাদের আহত বা নিহত হওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। এক ভিডিওতে, মাদারীপুরের তরুণ সোহেল সরদার দাবি করেছেন, তিনি রুশ বাহিনীর একজন অভিজ্ঞ স্নাইপার।
এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের কার্যক্রমের অংশ। চাকরি বা উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি তরুণদের রাশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে। সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে জোরপূর্বক সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় এবং স্বল্প প্রশিক্ষণে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়।
রাশিয়া রাষ্ট্র হিসেবে সরাসরি বাংলাদেশি তরুণদের নিয়োগ দিচ্ছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মানবপাচারকারী চক্রগুলো (যারা অর্থের জন্য কাজ করে) তরুণদের সংগ্রহ করে রুশ সেনাবাহিনীর কাছে ‘বিক্রি’ করছে। আটলান্টিক কাউন্সিলের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া তার সামরিক নিয়োগ ব্যবস্থাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুর্বলদের শোষণ করার জন্য তৈরি করেছে। অভিবাসীদের নাগরিকত্ব বা অর্থের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কামানের খোরাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে, মানবপাচারকারী চক্র অনানুষ্ঠানিক ‘রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি’ হিসেবে কাজ করছে, যা আসলে পিএমসির অন্যতম প্রধান কাজ। এই তরুণরা শেষ পর্যন্ত অর্থের বিনিময়ে অন্যের যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অর্থের বিনিময়ে কাজ করার ব্যাপারটিও পিএমসির সঙ্গে মিলে যায়।
প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি আধুনিক যুদ্ধের এক অবিচ্ছেদ্য ও বিপজ্জনক অংশ হয়ে উঠেছে। জনৈতিক দায় এড়িয়ে কৌশলগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব ভাড়াটে সংস্থার ব্যবহার যুদ্ধকে আরও গোপন ও জবাবদিহিহীন করে তুলেছে। পিএমসির উত্থানের ফলে প্রযুক্তিনির্ভর ও নিয়ন্ত্রণহীন এক ছায়াযুদ্ধের ভবিষ্যৎ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্র ও ব্যক্তিগত ব্যবসার সীমারেখা ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে যুদ্ধের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে মুনাফাভিত্তিক সামরিক পরিষেবা।

বর্তমান দুনিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি (পিএমসি) বা ব্যক্তিগত সামরিক সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। একই সঙ্গে পিএমসির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে বৈশ্বিক আলোচনা-সমালোচনার শুরু হয়েছে।
২০২৩ সালে রাশিয়ার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মৃত্যুর পরেও আফ্রিকা জুড়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালে ইউক্রেনে উন্নত অস্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য সামরিক ঠিকাদারদের কাজ করার অনুমতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এসবই বৈশ্বিক সংঘাতের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ফলে রাষ্ট্রীয় সামরিক পদক্ষেপ ও ব্যক্তিগত ব্যবসার মধ্যকার সীমারেখা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের ভবিষ্যৎকে নতুন রূপ দেওয়া পিএমসির উত্থান কেবল কৌশলগত পরিবর্তন নয়, বরং বিশ্বব্যাপী এক মৌলিক রূপান্তর।
প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি বা পিএমসি হলো এমন কর্পোরেট সংস্থা যা অর্থের বিনিময়ে সামরিক অথবা নিরাপত্তা পরিষেবা সরবরাহ করে। পিএমসি পুরোনো দিনের ভাড়াটে সৈন্যদের মতো নয়, আধুনিক পিএমসি সংস্থাগুলো ব্যবসার আদলে গঠিত হয়। পিএমসির পরিষেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে লজিস্টিক সহায়তা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, স্থানীয় বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, কূটনীতিক ও কর্পোরেট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা প্রদান এবং সরাসরি যুদ্ধ পরিচালনা।
আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ও প্রাক্তন প্যারাট্রুপার ও প্রাইভেট মিলিটারি ঠিকাদার ড. শন ম্যাকফেটের মতে, ‘ভাড়াটে সৈন্যরা ব্যক্তিগত সেনাবাহিনীর মতো, যারা অর্থের জন্য কাজ করে।’
পিএমসির গ্রাহকদের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার, বহুজাতিক কর্পোরেশন, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং এমনকি জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও।
১৯৬০-এর দশকে ব্রিটিশ স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের (এসএএস) ডেভিড স্টার্লিং-এর প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ সংস্থা ওয়াচগার্ড ইন্টারন্যাশনালকে আধুনিক যুগের প্রথম প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থ রক্ষা করা, বিশেষ করে এমন সব অঞ্চলে যেখানে সরকার সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারত না। ওয়াচগার্ড প্রাথমিকভাবে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করত। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর পিএমসি শিল্পের নাটকীয় উত্থান ঘটে।
১৯৯০-এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের সামরিক বাহিনীর আকার ছোট করতে শুরু করলে প্রচুর প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ সৈন্য কর্মহীন হয়ে পড়ে। এই বিশাল সংখ্যক দক্ষ সৈন্য পিএমসিগুলোর জন্য বড় কর্মী সংগ্রহের সুযোগ তৈরি করে দেয়।
ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে ব্যক্তিগত ঠিকাদারদের সংখ্যা কখনও কখনও মোতায়েনকৃত সৈন্যের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরের কার্যালয়ের ২০০৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, সে সময় মার্কিন গোয়েন্দাদের কর্মশক্তির ২৯ শতাংশ ছিল ব্যক্তিগত ঠিকাদার।
ইউরোপিয়ান প্রোসিডিংসের ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘প্রাইভেট মিলিটারি অ্যান্ড সিকরিটি কোম্পানিজ: সার্চ ফর ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল অ্যান্ড ন্যাশনাল ল’জ’ প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশে প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি কাজ করেছে।
গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চের’ ২০২৪-এর গবেষণা বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ১৫০টিরও বেশি প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে।

পিএমসি প্রসঙ্গ এলে আমরা সাধারণত ইউক্রেনে ওয়াগনার গ্রুপ ও ইরাক যুদ্ধে ব্ল্যাকওয়াটার গ্রুপের কথাই আলোচনা করি। নৃশংস কৌশল, বিতর্কিত ভূমিকা, প্রভাবের জন্য কুখ্যাত এই দুই গ্রুপ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী আরও অনেক পিএমসি রয়েছে।
ডাইনকর্প ইন্টারন্যাশনাল: ডাইনকর্প গ্রুপ লম্বা সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিমান চলাচল সহায়তা, লজিস্টিকস এবং প্রশিক্ষণের মতো বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে আসছে। সংস্থাটির ৩ বিলিয়ন ডলার বার্ষিক আয়ের ৯৬ শতাংশের বেশি মার্কিন ফেডারেল চুক্তি থেকে এসেছে।
জি৪এস সিকিউর সলিউশনস: ব্রিটিশ এই পিএমসিতে প্রায় ৬ লাখ ২০ হাজার কর্মী কাজ করেন। যদিও এই সংস্থার প্রধান কাজ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের নিরাপত্তা প্রদান, তবে ২০০৮ সালে আর্মারগ্রুপকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে জি৪এস সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে তার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করে। ইরাকের অসামরিক সরবরাহ কনভয়গুলোর একটি বড় অংশকে সুরক্ষা দিত এই সংস্থা।
ওয়াগনার গ্রুপ: সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি। প্রয়াত ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের নেতৃত্বে এই সংস্থাটি ক্রেমলিনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করত। ইউক্রেনের বাখমুত থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত ছিল ওয়াগনারের কার্যক্রম। বিশেষ করে আফ্রিকায় স্বৈরশাসকদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিনিময়ে সোনা ও হীরার মতো প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিত সংস্থাটি। চরম নৃশংসতা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বারবার গণমাধ্যমে সংস্থাটির নাম এসেছে।
২০২৩ সালে রাশিয়ার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহ এবং পরবর্তীতে রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ওয়াগনারের নেতা প্রিগোজিনের। তার মৃত্যুর পর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটির কার্যক্রম এখনো বিশ্বজুড়ে সক্রিয় রয়েছে।
অ্যাকাডেমি (পূর্বের ব্ল্যাকওয়াটার): ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন নেভি সিল এরিক প্রিন্স প্রতিষ্ঠা করেন ব্ল্যাকওয়াটার। ২০০১ পরবর্তী ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম করে ব্যাপক আলোচিত হয় এই গ্রুপ। ২০০৭ সালে ইরাকের বাগদাদের নিসুর স্কয়ারে ১৭ জন ইরাকি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে এই গ্রুপ। এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে নিজেদের কাজের পরিসর কমিয়ে আনে ব্ল্যাকওয়াটার।
পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে তারা আবার কাজ শুরু করে। বর্তমানে অ্যাকাডেমি নামে সক্রিয় থাকা এই সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনায় ৭ হাজার একরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে।
সাদাত: তুরস্কের সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক-ঘনিষ্ঠ সামরিক ও প্রশিক্ষণ মিশনে যুক্ত বলে ধারণা করা হয়। এই গ্রুপ সামরিক প্রশিক্ষণ, কৌশলগত সহায়তা ও প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার মতো কাজে গ্রাহককে সাহায্য করে।
এক্সিকিউটিভ আউটকামস: ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাকে আধুনিক প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির অন্যতম পথিকৃৎ মডেল হিসেবে গণ্য করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই সংস্থা অ্যাঙ্গোলা ও সিয়েরা লিওনের মতো আফ্রিকার গৃহযুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলোতে তাদের কার্যক্রমের জন্য পরিচিত।
তাদের মূল কাজের মধ্যে ছিল সরাসরি বিদ্রোহ দমন অভিযান পরিচালনা, সরকারি বাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং কৌশলগত পরামর্শ দেওয়া।
এজিস ডিফেন্স সার্ভিসেস: ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর অন্যতম প্রধান নিরাপত্তা ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত। তাদের মূল কাজ ছিল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) নিরাপত্তা প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক কনভয় রক্ষা করা এবং কৌশলগত সামরিক পরামর্শ দেওয়া।
বিশ্বজুড়ে যেসব এলাকায় যুদ্ধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, সেখানে পিএমসির প্রভাব বাড়ছে। রাষ্ট্রগুলো এখন অনেক সময় নিজের সেনাবাহিনী পাঠানোর বদলে এই বেসরকারি সৈন্য ভাড়া করে কাজ করায়। এতে সরকারগুলো সরাসরি দায় এড়াতে পারে। ফলে এখনকার সময়ে যুদ্ধ আরও গোপন, প্রযুক্তিনির্ভর ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে।

বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধের ধরন দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এখন আর যুদ্ধ মানে শুধু সেনাবাহিনী, ট্যাঙ্ক বা বন্দুক নয়, বরং তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ড্রোন ও সাইবার প্রযুক্তি হয়ে উঠছে প্রধান অস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সির বিশ্লেষণ বলছে, ভবিষ্যতের যুদ্ধ প্রযুক্তিনির্ভর ও অটোমেটেড (স্বয়ংক্রিয় চালিত) হবে। এই বাস্তবতায় প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানিগুলো দ্রুত নিজেদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ঊর্ধ্বে থাকায় পিএমসি সংস্থা সহজেই নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর তুলনায় দ্রুত অভিযানে যেতে পারে।
বড় শক্তিগুলো এখন সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে গোপনে পিএমসি বা প্রক্সি বাহিনী ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে দেশগুলো এসব ঘটনায় নিজেদের রাজনৈতিক দায় এড়াতে পারে কিন্তু কৌশলগত লক্ষ্যও পূরণ করে। লিচেনস্টাইন-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক জিআইএস ও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংক ট্যাংক দ্য সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ আলাদা প্রতিবেদনে বলছে, পিএমসির মাধ্যমে পরিচালিত ‘ছায়াযুদ্ধ’ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। কারণ প্রাইভেট মিলিটারি গ্রুপকে নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসতে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো দেশই বড় কোনো উদ্যোগ নেবে না। বরং পিএমসিগুলো বর্তমান বিভক্ত ও বহুমাত্রিক বিশ্বে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’
অন্যদিকে, পিএমসির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো দুর্বল। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের গবেষণায় বলা হয়েছে, এই আইনগত ঘাটতি অনেক রাষ্ট্রকে সুযোগ দিচ্ছে পিএমসি ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় এড়াতে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলো নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পিএমসির সাহায্য নিচ্ছে, আর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো তাদের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করছে। ফলে ভবিষ্যতের যুদ্ধ আরও ছায়াময়, নিয়ন্ত্রণহীন ও জবাবদিহিতাহীন হয়ে উঠবে।
ফলে এখন আর যুদ্ধক্ষেত্রের সীমা সাইবার জগৎ ও প্রযুক্তির ভেতরেও বিস্তৃত হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে, বাংলাদেশি তরুণদের রুশ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওগুলোতে যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহতা, বিস্ফোরণ, ধ্বংসস্তূপ ও সহযোদ্ধাদের আহত বা নিহত হওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। এক ভিডিওতে, মাদারীপুরের তরুণ সোহেল সরদার দাবি করেছেন, তিনি রুশ বাহিনীর একজন অভিজ্ঞ স্নাইপার।
এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের কার্যক্রমের অংশ। চাকরি বা উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি তরুণদের রাশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে। সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে জোরপূর্বক সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় এবং স্বল্প প্রশিক্ষণে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়।
রাশিয়া রাষ্ট্র হিসেবে সরাসরি বাংলাদেশি তরুণদের নিয়োগ দিচ্ছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মানবপাচারকারী চক্রগুলো (যারা অর্থের জন্য কাজ করে) তরুণদের সংগ্রহ করে রুশ সেনাবাহিনীর কাছে ‘বিক্রি’ করছে। আটলান্টিক কাউন্সিলের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া তার সামরিক নিয়োগ ব্যবস্থাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুর্বলদের শোষণ করার জন্য তৈরি করেছে। অভিবাসীদের নাগরিকত্ব বা অর্থের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কামানের খোরাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে, মানবপাচারকারী চক্র অনানুষ্ঠানিক ‘রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি’ হিসেবে কাজ করছে, যা আসলে পিএমসির অন্যতম প্রধান কাজ। এই তরুণরা শেষ পর্যন্ত অর্থের বিনিময়ে অন্যের যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অর্থের বিনিময়ে কাজ করার ব্যাপারটিও পিএমসির সঙ্গে মিলে যায়।
প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি আধুনিক যুদ্ধের এক অবিচ্ছেদ্য ও বিপজ্জনক অংশ হয়ে উঠেছে। জনৈতিক দায় এড়িয়ে কৌশলগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব ভাড়াটে সংস্থার ব্যবহার যুদ্ধকে আরও গোপন ও জবাবদিহিহীন করে তুলেছে। পিএমসির উত্থানের ফলে প্রযুক্তিনির্ভর ও নিয়ন্ত্রণহীন এক ছায়াযুদ্ধের ভবিষ্যৎ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্র ও ব্যক্তিগত ব্যবসার সীমারেখা ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে যুদ্ধের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে মুনাফাভিত্তিক সামরিক পরিষেবা।
.png)

সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ আমলের মতো কারচুপির ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, আবারও একটা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকে যাচ্ছি আমরা।
১৪ ঘণ্টা আগে
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর এশিয়া সফর শুরু করেন। এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের চাপের মধ্যে কৌশলগত স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা করছে।
১ দিন আগে
তরুণেরা কোনো নির্দিষ্ট নেতা বা দলের বিরুদ্ধে লড়ছে না; তারা লড়ছে একটি পচে যাওয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। যে ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ, প্রতিষ্ঠান ও নীতি—সবকিছুই সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে একটি ক্ষুদ্র সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহৃত হয়।
১ দিন আগে
এই মাসে প্রথমবারের মতো আইসল্যান্ডে মশা শনাক্ত হয়েছে। এর ফলে দেশটি পৃথিবীর মশামুক্ত স্থানগুলোর তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। সোমবার আইসল্যান্ডের জাতীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২ দিন আগে