একদিকে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি রাজস্ব, অন্যদিকে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই কারখানা স্থাপনের চাপ তৈরি হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা বলছেন, উচ্চ শুল্কারোপ দেশীয় কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি ট্রাম্প বাণিজ্যঘাটতির ব্যবধান কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এই নীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে—শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত কার ঘাড়ে চাপবে, আর সেই অর্থের গন্তব্যই বা কোথায়?
মো. ইসতিয়াক
দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসেই পুরোনো কৌশলে ফিরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ককে হাতিয়ার বানিয়ে শুরু করেছেন নতুন এক বাণিজ্যযুদ্ধ। তাঁর চোখে এটি শুধু অর্থনৈতিক নীতি নয়, বরং বহুমুখী লক্ষ্য অর্জনের কৌশল।
একদিকে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি রাজস্ব, অন্যদিকে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই কারখানা স্থাপনের চাপ তৈরি হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা বলছেন, উচ্চ শুল্কারোপ দেশীয় কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি ট্রাম্প বাণিজ্যঘাটতির ব্যবধান কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এই নীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে—শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত কার ঘাড়ে চাপবে, আর সেই অর্থের গন্তব্যই বা কোথায়?
এসবের মধ্যেই দেখা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আগের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করে।
শুল্ক আসলে কী
ইন্ডিপেন্ডেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক খালেদ সাইফুল্লাহ স্ট্রিমকে বলছেন, ‘শুল্ক এক ধরনের ট্যাক্স বা সরকারি কর। যেটা বিদেশ থেকে পণ্য এলে আমদানির সময় দিতে হয়।
এখন অনেকে ভাবেন, এই টাকা বুঝি বিদেশি কোম্পানিগুলো দেয়। আসলে তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এই শুল্ক পরিশোধ করে সেখানকার আমদানিকারকেরা— মানে, যে প্রতিষ্ঠান পণ্যটা আমদানি করছে, তারাই সরকারকে এই অতিরিক্ত অর্থটা দেয়। এই টাকা জমা পড়ে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে, যেটা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়।
কাজেই শুল্ক একদিকে রাজস্ব বাড়ায়, অন্যদিকে নীতিগত বার্তাও দেয়। যেন বলছে, আমরা চাই, তোমরা এখানেই এসে পণ্য তৈরি করো। এটা একটা কৌশল, কেবল অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিকও বটে।’
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, খুচরা বিক্রেতা অ্যামাজন ভারতে উৎপাদিত একটি ২০০ ডলারের স্মার্টফোন আমদানি করলো। ওই স্মার্টফোনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হলে, অ্যামাজনকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে ৪০ ডলার শুল্ক দিতে হবে।
এরপর এই অতিরিক্ত খরচ সামাল দিতে অ্যামাজন বিভিন্ন উপায় নিতে পারে— যেমন, ভারতীয় প্রস্তুতকারককে পণ্যের দাম কমিয়ে দিতে অনুরোধ করা, নিজের মুনাফা কমিয়ে শুল্কের বোঝা নিজেই বহন করা, অথবা স্মার্টফোনের দাম বাড়িয়ে বাড়তি খরচ শেষ পর্যন্ত ক্রেতার ওপর চাপানো। কখনো কখনো এই সব উপায় একসঙ্গে প্রয়োগ করাও হয়ে থাকে।
শুল্কের দ্বৈত প্রভাব, কর্মসংস্থান বনাম উৎপাদন খরচ
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা বলেন, উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণ বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য আমদানি যেন ব্যয়বহুল হয়। এর ফলে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপনে বাধ্য হবে, যা দেশীয় কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
পাশাপাশি, এই শুল্ক থেকে আসা রাজস্ব সরকার কর কমানো ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ব্যয়ে ব্যবহার করতে পারবে।
তবে খালেদ সাইফুল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি অনেকটাই জটিল। এই সব লক্ষ্য একসঙ্গে পূরণ করা খুবই কঠিন। শুল্ক বাড়ালে আমদানির ওপর নির্ভরশীল মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। যা তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে ফেলতে পারে। পাশাপাশি, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশীয় উৎপাদনকারী শিল্পও প্রভাবিত হয়। কারণ তারা যেসব কাঁচামাল আমদানি করে, তাতে দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ফলে পণ্যের দাম বাড়ে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তাদের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে।’
অধ্যাপক খালেদ আরও বলেন, ‘শুল্ক থেকে সরকার অবশ্য রাজস্ব আয় করতে পারে, কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির অন্যান্য সেক্টরে দীর্ঘমেয়াদে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে। শুল্ক শুধু অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নয়, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিরও একটি হাতিয়ার, তবে এর বহুমুখী প্রভাব বুঝে নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি।’
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তাঁর যুক্তি ছিল, এই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার ও অবৈধ অভিবাসন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ট্রাম্প হঠাৎ সামাজিকমাধ্যমে জানিয়ে দেন, কলম্বিয়া থেকে আসা সব পণ্যের ওপর তাৎক্ষণিকভাবে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হবে। কারণ, হিসেবে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো অবৈধ অভিবাসীদের বহন করা বিমান ফেরত যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে কলম্বিয়া সরকার। এ ঘটনায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দেন, তবে কিছুক্ষণ পর দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক স্থগিত রাখা হয়।
ট্রাম্পের সই করা নির্বাহী আদেশে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি হওয়া প্রায় সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীন থেকে আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। আদেশে বলা হয়, মাদক পাচার ও অবৈধ অভিবাসন রোধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর জবাবে কানাডা ও মেক্সিকো পাল্টা শুল্ক ঘোষণা দেয়। চীন দেয় ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণের হুমকি।
শুল্ক আরোপ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘কিছুটা কষ্ট হবে, হয়তোবা না-ও হতে পারে।’ অর্থাৎ, নেতিবাচক প্রভাব স্বীকার করলেও নিজের নীতি থেকে সরে আসেননি তিনি।
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
চীনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়। চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
ট্রাম্প বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধ আরও বাড়ানো হবে। অন্যান্য দেশের ওপরও পাল্টা শুল্ক চাপানো হবে। যদিও কোনো দেশের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
বিদেশি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ২৫ শতাংশ শুল্ক আবার চালু করে। এটি ছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের পুরোনো নীতির পুনরাবৃত্তি।
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ব্যাপক পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, এতে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় রদবদল আসবে। মূল উদ্দেশ্য বিদেশি কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রেই পণ্য উৎপাদনে বাধ্য করা।
বিদেশি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ২ এপ্রিল থেকে আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। প্রথমে ১ এপ্রিল ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল।
বাণিজ্যমন্ত্রীকে তামার ওপর শুল্ক আরোপের জাতীয় নিরাপত্তা প্রভাব খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প জানান, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক ৪ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। মেক্সিকো ও কানাডো থেকে মাদক প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কানাডা থেকে আমদানি হওয়া কাঠ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের কাঠ আমদানির প্রধান উৎসই কানাডা।
কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকর হয়। এই তিন দেশই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার।
গাড়ির ওপর শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। জেনারেল মোটরস, ফোর্ড ও স্টেলান্টিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার পর ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেন।
ট্রাম্প জানান, বাজারের প্রভাব বিবেচনা করে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক পুনরায় স্থগিত করা হয়েছে। তবে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ১২ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। এর মধ্যে রয়েছে— মুরগি, ভুট্টা, সয়াবিন ও ফল।
কানাডার অন্টারিও প্রদেশের বিদ্যুতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। ট্রাম্প একে অপমানজনক হুমকি হিসেবে অভিহিত করেন। কানাডার ওপর ধাতু পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন।
ইইউ ও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করে। তবে ইউরোপীয় নেতারা এই শুল্ক ১ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখার কথা জানান, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চান।
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কেনা দেশগুলোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা গাড়ি ও যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এমনকি বিদেশে তৈরি আমেরিকান ব্র্যান্ড হলে শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
যেসব পণ্যের ওপর আগে থেকে কোনো আলাদা শুল্ক ছিল না, সেগুলোর ওপর ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্ক আরোপ করে। তবে এর সঙ্গে অনেক দেশের জন্য আলাদাভাবে পাল্টা শুল্কও যুক্ত হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্রদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ আগের চেয়ে অনেক বেশি শুল্কের আওতায় পড়ে। ওই দিনই বাংলাদেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে। এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড় শুল্কহার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করেন রপ্তানিকারকেরা। কারণ, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, ১১ মার্কিন কোম্পানিকে চীনে ব্যবসা নিষিদ্ধ করে। ভিয়েতনাম শুল্ক আরোপে বিলম্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে।
যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক আরোপে তিন মাস বিলম্বের জন্য অনুরোধ করে বাংলাদেশ। ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি দেন।
৯ এপ্রিল থেকে ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতি কার্যকর হয়। চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ, ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, জাপানের ওপর ২৪ শতাংশ এবং ভিয়েতনামি পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হয়। এর জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এতে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৮৪ শতাংশ। চীনের এই পাল্টা শুল্ক ট্রাম্পের ঘোষণার ১২ ঘণ্টা পর থেকেই কার্যকর হয়। একই দিন ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের অনুমোদন দেয়। বিকেলে ট্রাম্প আকস্মিকভাবে ঘোষণা দেন, চীন বাদে বাকি দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। এর ফলে বেশির ভাগ বাণিজ্য অংশীদারের জন্য শুল্ক কমিয়ে সাধারণভাবে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তবে চীনের ক্ষেত্রে এ ছাড় প্রযোজ্য নয়; বরং ট্রাম্প জানিয়ে দেন, বেইজিং ‘প্রতিশোধমূলক শুল্ক’ আরোপ করায় চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করা হবে।
চীনের ওপর শুল্ক মোট ১৪৫ শতাংশে পৌঁছায়। ইইউ পাল্টা শুল্ক স্থগিত রাখে। ট্রাম্প অস্থায়ীভাবে ইলেকট্রনিক পণ্য শুল্কমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন।
গাড়ি নির্মাতাদের ওপর শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন নতুন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হয়, কিছু আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হয়।
চীনের ওপর সর্বোচ্চ হারে আরোপিত শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার ঘোষণা আসে।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন। তবে আলোচনার স্বার্থে শুল্ক আরোপ ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখেন।
ট্রাম্প ইস্পাতের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ বাড়ান। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করে।
যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করা গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক কমায় যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যকাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি, আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ট্রাম্প অন্তত ২১টি দেশকে জানান, নতুন বাণিজ্য চুক্তি না হলে ১ আগস্ট থেকে অন্তত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। ব্রাজিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকোর ওপরও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।
ইইউ ও মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়।
ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি করেন এবং ইইউর সঙ্গে শুল্ক নির্ধারণে সম্মত হন।
ভারত থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। দক্ষিণ কোরিয়া, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়।
মেক্সিকোকে বাণিজ্য চুক্তির জন্য অতিরিক্ত ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়।
হোয়াইট হাউস নতুন করে ৬৭টি দেশের জন্য শুল্কহার ঘোষণা করে, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ঘোষণা অনুযায়ী ওইসব দেশের জন্য শুল্ক হার ১০ থেকে ৪১ শতাংশের মধ্যে নির্ধারণ করা হয়। তবে সিরিয়া, লাওস ও মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি শুল্কের আওতায় পড়বে।
ট্রান্সশিপমেন্ট শুল্ক ও চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির সমঝোতা
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এড়িয়ে অন্য কোনো দেশের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর অর্থ হলো, যদি কোনো পণ্য চীনে তৈরি হয়ে অন্য দেশে পাঠানো হয় এবং সেখানে প্যাকেট বা লেবেল বদলে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা হয় সেক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত শুল্ক প্রযোজ্য হবে। এই ব্যবস্থা মূলত ট্রানজিট বা ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ নামে পরিচিত।
একই সময়ে, ট্রাম্প প্রশাসন ও চীন বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর ঘোষণা করে। যদিও তাদের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে এখনো কোনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। তারা দুই পক্ষই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে বিরোধ মীমাংসার জন্য শরৎকাল পর্যন্ত সময় নিতে সম্মত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতি, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের ওপর এর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। যা আগে ঘোষিত শুল্কের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের ওপর বড় প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা আছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি বাজার। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও পাল্টা শুল্ক ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। পাকিস্তানের ওপর শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ।
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার ওপর আরোপ করা হয়েছে ১৯ শতাংশ শুল্ক। ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার জন্য ২০ শতাংশ, ফিলিপাইন ও মিয়ানমারের জন্য যথাক্রমে ১৯ এবং ৪০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। এসব দেশের অর্থনীতিতেও এই শুল্কের প্রভাব গভীর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কানাডার ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানায়, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে এবং ফেন্টানিল মাদক-বাণিজ্য রোধে যথাযথ সহযোগিতা করেনি। তবে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ‘উত্তর আমেরিকার’ হিসেবে বিবেচিত পণ্যের ওপর এই নতুন শুল্ক আরোপিত হবে না।
ভারতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বদলানো কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব। ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের উচ্চ শুল্ক আরোপ এবং রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়গুলোকে সমালোচনা করেছেন।
মার্কিন জনগণের ওপর শুল্কের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা এই উচ্চ শুল্ক আমদানি কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াবে এবং সরকারি রাজস্বও বাড়বে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এই দাবি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাদের মতে, শুল্ক ছোট ও মাঝারি শিল্পকে সাময়িকভাবে রক্ষা করতে পারে, তবে আধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া অনেকটাই আমদানি করা যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভরশীল।
সাধারণ ক্রেতারা পুরোপুরি দাম বাড়ার প্রভাব এখনো অনুভব করেননি। কিন্তু ইউনিলিভার ও অ্যাডিডাসের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা বাজারে মূল্যস্ফীতির সংকেত দিচ্ছে। এর ফলে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউস এবং ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হতে পারে। তবে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না এবং তা কংগ্রেসের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল।
সর্বশেষ তথ্য বলছে, কিছু মাস আগে আমদানিকারকেরা শুল্কের চাপ নিজেদের ওপর নিয়েছিলেন, এখন সেটি ভোক্তাদের ওপর এসে পড়ছে। জুন মাসের মূল্যস্ফীতিকে শুল্কের প্রভাব হিসেবে ধরা হচ্ছে।
দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসেই পুরোনো কৌশলে ফিরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ককে হাতিয়ার বানিয়ে শুরু করেছেন নতুন এক বাণিজ্যযুদ্ধ। তাঁর চোখে এটি শুধু অর্থনৈতিক নীতি নয়, বরং বহুমুখী লক্ষ্য অর্জনের কৌশল।
একদিকে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি রাজস্ব, অন্যদিকে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই কারখানা স্থাপনের চাপ তৈরি হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা বলছেন, উচ্চ শুল্কারোপ দেশীয় কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি ট্রাম্প বাণিজ্যঘাটতির ব্যবধান কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এই নীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে—শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত কার ঘাড়ে চাপবে, আর সেই অর্থের গন্তব্যই বা কোথায়?
এসবের মধ্যেই দেখা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আগের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করে।
শুল্ক আসলে কী
ইন্ডিপেন্ডেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক খালেদ সাইফুল্লাহ স্ট্রিমকে বলছেন, ‘শুল্ক এক ধরনের ট্যাক্স বা সরকারি কর। যেটা বিদেশ থেকে পণ্য এলে আমদানির সময় দিতে হয়।
এখন অনেকে ভাবেন, এই টাকা বুঝি বিদেশি কোম্পানিগুলো দেয়। আসলে তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এই শুল্ক পরিশোধ করে সেখানকার আমদানিকারকেরা— মানে, যে প্রতিষ্ঠান পণ্যটা আমদানি করছে, তারাই সরকারকে এই অতিরিক্ত অর্থটা দেয়। এই টাকা জমা পড়ে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে, যেটা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়।
কাজেই শুল্ক একদিকে রাজস্ব বাড়ায়, অন্যদিকে নীতিগত বার্তাও দেয়। যেন বলছে, আমরা চাই, তোমরা এখানেই এসে পণ্য তৈরি করো। এটা একটা কৌশল, কেবল অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিকও বটে।’
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, খুচরা বিক্রেতা অ্যামাজন ভারতে উৎপাদিত একটি ২০০ ডলারের স্মার্টফোন আমদানি করলো। ওই স্মার্টফোনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হলে, অ্যামাজনকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে ৪০ ডলার শুল্ক দিতে হবে।
এরপর এই অতিরিক্ত খরচ সামাল দিতে অ্যামাজন বিভিন্ন উপায় নিতে পারে— যেমন, ভারতীয় প্রস্তুতকারককে পণ্যের দাম কমিয়ে দিতে অনুরোধ করা, নিজের মুনাফা কমিয়ে শুল্কের বোঝা নিজেই বহন করা, অথবা স্মার্টফোনের দাম বাড়িয়ে বাড়তি খরচ শেষ পর্যন্ত ক্রেতার ওপর চাপানো। কখনো কখনো এই সব উপায় একসঙ্গে প্রয়োগ করাও হয়ে থাকে।
শুল্কের দ্বৈত প্রভাব, কর্মসংস্থান বনাম উৎপাদন খরচ
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা বলেন, উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণ বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য আমদানি যেন ব্যয়বহুল হয়। এর ফলে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপনে বাধ্য হবে, যা দেশীয় কর্মসংস্থান ও মজুরি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
পাশাপাশি, এই শুল্ক থেকে আসা রাজস্ব সরকার কর কমানো ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ব্যয়ে ব্যবহার করতে পারবে।
তবে খালেদ সাইফুল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি অনেকটাই জটিল। এই সব লক্ষ্য একসঙ্গে পূরণ করা খুবই কঠিন। শুল্ক বাড়ালে আমদানির ওপর নির্ভরশীল মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। যা তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে ফেলতে পারে। পাশাপাশি, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশীয় উৎপাদনকারী শিল্পও প্রভাবিত হয়। কারণ তারা যেসব কাঁচামাল আমদানি করে, তাতে দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ফলে পণ্যের দাম বাড়ে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তাদের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে।’
অধ্যাপক খালেদ আরও বলেন, ‘শুল্ক থেকে সরকার অবশ্য রাজস্ব আয় করতে পারে, কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির অন্যান্য সেক্টরে দীর্ঘমেয়াদে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে। শুল্ক শুধু অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নয়, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিরও একটি হাতিয়ার, তবে এর বহুমুখী প্রভাব বুঝে নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি।’
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তাঁর যুক্তি ছিল, এই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার ও অবৈধ অভিবাসন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ট্রাম্প হঠাৎ সামাজিকমাধ্যমে জানিয়ে দেন, কলম্বিয়া থেকে আসা সব পণ্যের ওপর তাৎক্ষণিকভাবে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হবে। কারণ, হিসেবে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো অবৈধ অভিবাসীদের বহন করা বিমান ফেরত যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে কলম্বিয়া সরকার। এ ঘটনায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দেন, তবে কিছুক্ষণ পর দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক স্থগিত রাখা হয়।
ট্রাম্পের সই করা নির্বাহী আদেশে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি হওয়া প্রায় সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীন থেকে আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। আদেশে বলা হয়, মাদক পাচার ও অবৈধ অভিবাসন রোধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর জবাবে কানাডা ও মেক্সিকো পাল্টা শুল্ক ঘোষণা দেয়। চীন দেয় ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণের হুমকি।
শুল্ক আরোপ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘কিছুটা কষ্ট হবে, হয়তোবা না-ও হতে পারে।’ অর্থাৎ, নেতিবাচক প্রভাব স্বীকার করলেও নিজের নীতি থেকে সরে আসেননি তিনি।
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
চীনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়। চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
ট্রাম্প বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধ আরও বাড়ানো হবে। অন্যান্য দেশের ওপরও পাল্টা শুল্ক চাপানো হবে। যদিও কোনো দেশের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
বিদেশি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ২৫ শতাংশ শুল্ক আবার চালু করে। এটি ছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের পুরোনো নীতির পুনরাবৃত্তি।
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ব্যাপক পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, এতে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় রদবদল আসবে। মূল উদ্দেশ্য বিদেশি কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রেই পণ্য উৎপাদনে বাধ্য করা।
বিদেশি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ২ এপ্রিল থেকে আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। প্রথমে ১ এপ্রিল ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল।
বাণিজ্যমন্ত্রীকে তামার ওপর শুল্ক আরোপের জাতীয় নিরাপত্তা প্রভাব খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প জানান, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক ৪ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। মেক্সিকো ও কানাডো থেকে মাদক প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কানাডা থেকে আমদানি হওয়া কাঠ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের কাঠ আমদানির প্রধান উৎসই কানাডা।
কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকর হয়। এই তিন দেশই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার।
গাড়ির ওপর শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। জেনারেল মোটরস, ফোর্ড ও স্টেলান্টিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার পর ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেন।
ট্রাম্প জানান, বাজারের প্রভাব বিবেচনা করে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক পুনরায় স্থগিত করা হয়েছে। তবে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ১২ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। এর মধ্যে রয়েছে— মুরগি, ভুট্টা, সয়াবিন ও ফল।
কানাডার অন্টারিও প্রদেশের বিদ্যুতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। ট্রাম্প একে অপমানজনক হুমকি হিসেবে অভিহিত করেন। কানাডার ওপর ধাতু পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন।
ইইউ ও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করে। তবে ইউরোপীয় নেতারা এই শুল্ক ১ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখার কথা জানান, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চান।
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কেনা দেশগুলোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা গাড়ি ও যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এমনকি বিদেশে তৈরি আমেরিকান ব্র্যান্ড হলে শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
যেসব পণ্যের ওপর আগে থেকে কোনো আলাদা শুল্ক ছিল না, সেগুলোর ওপর ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্ক আরোপ করে। তবে এর সঙ্গে অনেক দেশের জন্য আলাদাভাবে পাল্টা শুল্কও যুক্ত হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্রদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ আগের চেয়ে অনেক বেশি শুল্কের আওতায় পড়ে। ওই দিনই বাংলাদেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে। এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড় শুল্কহার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করেন রপ্তানিকারকেরা। কারণ, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, ১১ মার্কিন কোম্পানিকে চীনে ব্যবসা নিষিদ্ধ করে। ভিয়েতনাম শুল্ক আরোপে বিলম্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে।
যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক আরোপে তিন মাস বিলম্বের জন্য অনুরোধ করে বাংলাদেশ। ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি দেন।
৯ এপ্রিল থেকে ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতি কার্যকর হয়। চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ, ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, জাপানের ওপর ২৪ শতাংশ এবং ভিয়েতনামি পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হয়। এর জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এতে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৮৪ শতাংশ। চীনের এই পাল্টা শুল্ক ট্রাম্পের ঘোষণার ১২ ঘণ্টা পর থেকেই কার্যকর হয়। একই দিন ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের অনুমোদন দেয়। বিকেলে ট্রাম্প আকস্মিকভাবে ঘোষণা দেন, চীন বাদে বাকি দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। এর ফলে বেশির ভাগ বাণিজ্য অংশীদারের জন্য শুল্ক কমিয়ে সাধারণভাবে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তবে চীনের ক্ষেত্রে এ ছাড় প্রযোজ্য নয়; বরং ট্রাম্প জানিয়ে দেন, বেইজিং ‘প্রতিশোধমূলক শুল্ক’ আরোপ করায় চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করা হবে।
চীনের ওপর শুল্ক মোট ১৪৫ শতাংশে পৌঁছায়। ইইউ পাল্টা শুল্ক স্থগিত রাখে। ট্রাম্প অস্থায়ীভাবে ইলেকট্রনিক পণ্য শুল্কমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন।
গাড়ি নির্মাতাদের ওপর শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন নতুন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হয়, কিছু আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হয়।
চীনের ওপর সর্বোচ্চ হারে আরোপিত শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার ঘোষণা আসে।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন। তবে আলোচনার স্বার্থে শুল্ক আরোপ ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখেন।
ট্রাম্প ইস্পাতের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ বাড়ান। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করে।
যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করা গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক কমায় যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যকাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি, আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ট্রাম্প অন্তত ২১টি দেশকে জানান, নতুন বাণিজ্য চুক্তি না হলে ১ আগস্ট থেকে অন্তত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। ব্রাজিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকোর ওপরও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।
ইইউ ও মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়।
ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি করেন এবং ইইউর সঙ্গে শুল্ক নির্ধারণে সম্মত হন।
ভারত থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। দক্ষিণ কোরিয়া, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়।
মেক্সিকোকে বাণিজ্য চুক্তির জন্য অতিরিক্ত ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়।
হোয়াইট হাউস নতুন করে ৬৭টি দেশের জন্য শুল্কহার ঘোষণা করে, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ঘোষণা অনুযায়ী ওইসব দেশের জন্য শুল্ক হার ১০ থেকে ৪১ শতাংশের মধ্যে নির্ধারণ করা হয়। তবে সিরিয়া, লাওস ও মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি শুল্কের আওতায় পড়বে।
ট্রান্সশিপমেন্ট শুল্ক ও চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির সমঝোতা
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এড়িয়ে অন্য কোনো দেশের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর অর্থ হলো, যদি কোনো পণ্য চীনে তৈরি হয়ে অন্য দেশে পাঠানো হয় এবং সেখানে প্যাকেট বা লেবেল বদলে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা হয় সেক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত শুল্ক প্রযোজ্য হবে। এই ব্যবস্থা মূলত ট্রানজিট বা ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ নামে পরিচিত।
একই সময়ে, ট্রাম্প প্রশাসন ও চীন বাণিজ্যিক উত্তেজনা কমানোর ঘোষণা করে। যদিও তাদের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে এখনো কোনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। তারা দুই পক্ষই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে বিরোধ মীমাংসার জন্য শরৎকাল পর্যন্ত সময় নিতে সম্মত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতি, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের ওপর এর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। যা আগে ঘোষিত শুল্কের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের ওপর বড় প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা আছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি বাজার। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রেও পাল্টা শুল্ক ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। পাকিস্তানের ওপর শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ।
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার ওপর আরোপ করা হয়েছে ১৯ শতাংশ শুল্ক। ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার জন্য ২০ শতাংশ, ফিলিপাইন ও মিয়ানমারের জন্য যথাক্রমে ১৯ এবং ৪০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। এসব দেশের অর্থনীতিতেও এই শুল্কের প্রভাব গভীর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কানাডার ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানায়, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে এবং ফেন্টানিল মাদক-বাণিজ্য রোধে যথাযথ সহযোগিতা করেনি। তবে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ‘উত্তর আমেরিকার’ হিসেবে বিবেচিত পণ্যের ওপর এই নতুন শুল্ক আরোপিত হবে না।
ভারতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বদলানো কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব। ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের উচ্চ শুল্ক আরোপ এবং রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়গুলোকে সমালোচনা করেছেন।
মার্কিন জনগণের ওপর শুল্কের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা এই উচ্চ শুল্ক আমদানি কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াবে এবং সরকারি রাজস্বও বাড়বে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এই দাবি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাদের মতে, শুল্ক ছোট ও মাঝারি শিল্পকে সাময়িকভাবে রক্ষা করতে পারে, তবে আধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া অনেকটাই আমদানি করা যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভরশীল।
সাধারণ ক্রেতারা পুরোপুরি দাম বাড়ার প্রভাব এখনো অনুভব করেননি। কিন্তু ইউনিলিভার ও অ্যাডিডাসের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা বাজারে মূল্যস্ফীতির সংকেত দিচ্ছে। এর ফলে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউস এবং ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হতে পারে। তবে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না এবং তা কংগ্রেসের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল।
সর্বশেষ তথ্য বলছে, কিছু মাস আগে আমদানিকারকেরা শুল্কের চাপ নিজেদের ওপর নিয়েছিলেন, এখন সেটি ভোক্তাদের ওপর এসে পড়ছে। জুন মাসের মূল্যস্ফীতিকে শুল্কের প্রভাব হিসেবে ধরা হচ্ছে।
গত বছর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর গড়ে শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য থেকে এই শুল্কহারে শুল্ক আদায় করেছে ১২৭ কোটি ডলার।
১২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্টের সঙ্গে গোপন চুক্তি হয়েছে বলে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে তা নাকচ করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
১৪ ঘণ্টা আগেমর্কিন শুল্ক ২০ শতাংশের নিচে আরোপ করা হবে বলে আশা করেছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তবে শুল্ক ২০ শতাংশ করায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
২ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতিরিক্ত শুল্ক বাস্তবায়ন করার পর তাঁর নিজ দেশেই তৈরি হয়েছে নানামুখী চাপ। বিশেষ করে, শুল্ক আরোপের সবচেয়ে প্রভাব পড়েছে মার্কিনিদের ওপরেই। দেশটির কোম্পানিগুলো কীভাবে এই চাপ সামলাবে, তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন।
৩ দিন আগে