leadT1ad

৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

দেশে বিএনপিই একমাত্র মধ্যপন্থার দল

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে দলটিকে। জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দলটি অন্তর্ভূক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনে মধ্যপন্থার রাজনীতি থেকে কখনো সরে আসেনি। তিনবার ক্ষমতায় আসা দলটি এরশাদের স্বৈরশাসন আর হাসিনার ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করেছে জনগণকে পাশে নিয়ে। দেখিয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল আনুগত্য।

মারুফ মল্লিক
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ১২
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৮
বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

৪৮ বছরে পা দিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদল স্বপ্নবান মানুষকে সঙ্গে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। নতুন এক দেশ গড়ার স্বপ্ন বুনে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করে।এরপর নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে দলটিকে যেতে হয়েছে। কিন্তু নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে কখনো আপস করেনি। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অবিচল আনুগত্য দেখিয়েছে বিএনপি। অন্তর্ভূক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনে মধ্যপন্থার রাজনীতি থেকে বিএনপি কখনো সরে আসেনি।

রাজনৈতিক দর্শনের জায়গা থেকে বিবেচনা করলে আমাদের দেশে বিএনপিই একমাত্র মধ্যপন্থার দল। বা কিছু বামে সরে আসা মধ্যবামও বলা যায়। রাজনৈতিক চিন্তার জায়গা থেকে বিএনপি কখনোই কট্টর অবস্থানে ছিল না। উদারপন্থীদের সঙ্গে যেমন সখ্য ছিল, তেমনি ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখেছে বিএনপি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। সংগৃহীত ছবি
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। সংগৃহীত ছবি

মূলত সব মত ও পথের রাজনৈতিক দলের চিন্তা ও ভাবনা প্রকাশের নীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সব সময়ই বিএনপিকে ডানপন্থী বলে সমালোচনা শুনতে হয়েছে। কোর ইসলামপন্থীরা বিএনপিকে সমগোত্রীয় বলেই মনে করে। মাঝে বিএনপি জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সরকার গড়েছিল। এটা একধরনের নির্বাচনী জোট। আদর্শিক কোনো জোট নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ভিন্ন মত ও পথের দলের মধ্যে নির্বাচনী জোট হয়। কিন্তু তাই বলে তারা নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচয়কে বিলুপ্ত করে না। বিএনপিকে অনৈতিকভাবে একটি ডানপন্থী ও ইসলামপন্থী দল বলে অপপ্রচার করা হয়েছে। সম্প্রতি জামায়াতসহ কিছু ইসলামপন্থীর মধ্যে এই ধরনের ভয়াবহ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এই গোষ্ঠীটি বিএনপির মধ্যপন্থী অবস্থানকে অত্যন্ত নোংরাভাবে আক্রমণ করছে। তারা মনে করে বিএনপি কেন ইসলামপন্থীদের মতো আচরণ করছে না। বিএনপি ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী। পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম পালনের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে ও সম্মান প্রদর্শন করে।

রাজনৈতিক দর্শনের জায়গা থেকে বিবেচনা করলে আমাদের দেশে বিএনপিই একমাত্র মধ্যপন্থার দল। বা কিছু বামে সরে আসা মধ্যবামও বলা যায়। রাজনৈতিক চিন্তার জায়গা থেকে বিএনপি কখনোই কট্টর অবস্থানে ছিল না। উদারপন্থীদের সঙ্গে যেমন সখ্য ছিল, তেমনি ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখেছে বিএনপি।

বিএনপির রাজনীতির ভরকেন্দ্র হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। আর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রই হচ্ছে অর্ন্তভূক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন। বিএনপিই প্রথম দেশে কার্যকরভাবে মধ্যপন্থার রাজনীতি শুরু করে। এর আগে কোনো রাজনৈতিক দল মধ্যপন্থার উদার রাজনীতি শুরু করেনি—আদর্শিক ও দার্শনিক জায়গা থেকে।

ব্রিটিশ বাংলায় মুসলিম লীগ বা কংগ্রেস কার্যকরভাবে মধ্যপন্থার দল ছিল না। বহুলাংশে ইসলাম ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাজনৈতিক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ফলে এই দল দুটি কখনোই মধ্যপন্থী দল হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। যদি দল দুটিতে ধর্মনিরপেক্ষ অনেক নেতাই ছিলেন। বিশেষ করে কংগ্রেসের ধর্ম নিরপেক্ষ হিসাবে একধরনের পরিচিতি ছিল। কিন্তু আচরণে তারা হিন্দু ধর্ম প্রভাবিত রাজনৈতিক দর্শন থেকে বের হতে পারেনি। একই অবস্থা মুসলিম লীগেরও। ব্রিটিশ বাংলায় অনেকটাই সেক্যুলার রাজনীতি করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান আমলে কার্যত মুসলমানদের দলেই পরিণত হয়।

আশির দশকে একটি জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। সংগৃহীত ছবি
আশির দশকে একটি জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। সংগৃহীত ছবি

১৯৪৭ সালের পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগের পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি শুরু করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভর করে নির্মিত হওয়ার কারণে অচিরেই তাদের কট্টর জাতিবাদী রাজনীতির চরিত্র প্রকাশিত হয়ে যায়। সময় যত এগোতে থাকে ক্রমশ আওয়ামী লীগের ভেতর বাঙালি জাতীয়তাবাদের নগ্ন রূপ প্রকাশ পেতে শুরু করে। কট্টর জাতিবাদী রাজনীতি বেশিরভাগ সময়ই ফ্যাসিবাদে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সংগৃহীত ছবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সংগৃহীত ছবি

স্বাধীনতা সংগ্রামের পর আওয়ামী লীগ মোট তিন দফায় ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে। এর মধ্যে দুইবারই ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। প্রথমবার শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল কায়েম করে দেশের মানুষকে ফ্যাসিবাদের স্বরূপ বুঝিয়েছেন। এরপর শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আরোহণ করলে দেশে মানুষের ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত দেখতে পায়।

রাজনৈতিক দর্শনের তাত্ত্বিক জায়গাতেই বিএনপির কেবল উদার বা মধ্যপন্থী দল না। একই সঙ্গে এর সফল প্রয়োগ করেছে রাজনৈতিক চর্চায়। বিএনপিই একমাত্র দল, যারা একাধিক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে।

আমাদের দেশের সর্বশেষ নতুন দল হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এনসিপি শুরুতে মধ্যপন্থী দল বলে দাবি করে। কিন্তু দলটি গঠনের কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের মধ্যে 'কট্টর ডানপন্থী' রাজনীতির চরিত্র প্রকাশ হতে শুরু করে। বড়জোর শেষ পর্যন্ত দলটি একটি মডারেট ইসলালামি দলে পরিণত হতে পারে তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান দলের মতো। কিন্তু এই দলের পক্ষে ডানপন্থা থেকে সরে আসা মুশকিল। কারণ, দুয়েকজন ব্যতিক্রম বাদে দলটির অধিকাংশ সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের আচরণে ডানপন্থী রাজনীতির ধারা পরিস্ফুটিত হয়েছে।

এর বাইরে মার্কসপন্থী, লেনিনপন্থী বা মাওবাদী বাম ধারার দলগুলো বা জামায়াতের ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটের মতো দলগুলো ঘোষণা দিয়েই আদর্শিক রাজনীতি করে। তাদের কেউ কট্টর বাম, কেউ কট্টর ডান। আর জাতীয় পার্টির কোনো রাজনৈতিক চরিত্রই নেই। ফলে তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো পন্থার দল বলে উল্লেখ করা কঠিন।

উল্লিখিত দলগুলোর বাইরে রাজনৈতিক দর্শনের জায়গা থেকে বিবেচনা করলে বিএনপিই একমাত্র মধ্যপন্থার উদারনৈতিক দল। বিএনপি রাজনৈতিক দর্শনের জায়গা থেকে বাঙালি-অবাঙালির বিভাজন ঘুচিয়ে দিয়েছিল। পাহাড় ও সমতলের মানুষকে একটি একক রাজনৈতিক পরিচয়ের অধীনে এনেছে। আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দলগুলোর মতো রাষ্ট্র ও সমাজে পরিচয়গত বিভাজনের কোনো সুযোগ বিএনপি গ্রহণ করেনি।

রাজনৈতিক দর্শনের তাত্ত্বিক জায়গাতেই বিএনপির কেবল উদার বা মধ্যপন্থী দল না। একই সঙ্গে এর সফল প্রয়োগ করেছে রাজনৈতিক চর্চায়। বিএনপিই একমাত্র দল, যারা একাধিক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। নির্বাচন বা ক্ষমতায় থাকা নিয়ে কখনোই অনড় অবস্থানে ছিল না। আওয়ামী লীগ দুবার ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছে নির্মমভাবে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে বাকশালের নির্মম পতন ঘটে। এবার ২০২৪ সালে গণহত্যার দায় নিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে পালিয়ে ভারতে যেতে হয়েছে।

এ দিক থেকে বিএনপি ব্যতিক্রম। নিজেদের কখনোই কট্টর রাজনীতির মায়াজালে আবদ্ধ করেনি। বরং নিজেরা উদার ও মধ্যপন্থার রাজনীতি করে অন্যদের মধ্যে উদার রাজনীতি ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। এসব বিবেচনা করলে দেখা যাবে বিএনপিই দেশের একমাত্র উদার মধ্যপন্থী দল।

ড. মারুফ মল্লিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Ad 300x250

‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকানোর পরিকল্পনা হয় গণভবনে: রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন

রিটকারীকে গণধর্ষণের হুমকি: শিবিরের দিকে আঙুল তুলছে সবাই

নির্বাচন বানচালের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সতর্ক হতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

হিউম্যান রাইটস ডিউ ডিলিজেন্স বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিল বিলস

তাহারির স্কয়ারের আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অনেক মিল আছে

সম্পর্কিত