leadT1ad

‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের’ অগ্রগতি পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

স্ট্রিম ডেস্কঢাকা
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ২৭
মঙ্গলবার গণভবনে নির্মাণাধীন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’র নির্মাণকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে নির্মাণাধীন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’-এর নির্মাণকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে জাদুঘরের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন তিনি।

জাদুঘরটি ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম, শহীদ এবং বিজয়ের দলিলরূপে নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন এলাকায় পৌঁছে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, স্থপতি এবং কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং দ্রুততম সময়ে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।

পরিদর্শনকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং জাদুঘর বাস্তবায়ন কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

একবছর আগেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ‘গণভবন’

মাত্র একবছর আগেও বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ‘গণভবন’। এই ভবনেই বসবাস করতেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্র পরিচালনার মূল কর্মকাণ্ড চলত এখান থেকেই, যার চারপাশে সবসময় থাকত কড়া নিরাপত্তা। কিন্তু সময়ের আবর্তে এক বছরেই সেই গণভবনের চিত্র পাল্টে গেছে। এখন এটি একটি স্মৃতিচিহ্ন ও প্রদর্শনীর কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে—সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে সেই ইতিহাস, যেখানে ছিল এক সময়ের ক্ষমতার উত্থান-পতনের নানা অধ্যায়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গণভবন নির্মাণ করা হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সময়। তবে তিনি নিজে পরিবারসহ থাকতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে—যেটি পরে‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর' করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার গণভবনে নির্মাণাধীন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’র নির্মাণকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক
মঙ্গলবার গণভবনে নির্মাণাধীন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’র নির্মাণকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

১৯৮৫ সালে জেনারেল এরশাদ গণভবন সংস্কার করে এটিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হিসেবে ঘোষণা করেন এবং নাম দেন 'করতোয়া'। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আতিথেয়তা দিতে এই ভবন ব্যবহৃত হতো। জানা যায়, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ঢাকা সফরের সময় এখানে অবস্থান করেছিলেন।

এরপর কিছুদিন এই ভবন রাষ্ট্রীয় কাজেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বসবাস শুরু করেন। ২০০১ সালের ২০ জুন জাতীয় সংসদে ‘জাতির পিতার পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তা আইন, ২০০১’ পাস হয়। এই আইনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে আজীবন এসএসএফ নিরাপত্তা, আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার বিধান করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালের ২ জুলাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ হাসিনাকে গণভবন এবং শেখ রেহানাকে ধানমন্ডির ছয় নম্বর সড়কে এক বিঘার একটি সরকারি বাসভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আজ সেই গণভবন আর ক্ষমতার প্রতীক নয়—বরং হয়ে উঠেছে ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল, যেখানে উঠে এসেছে এক সময়কার শাসনকেন্দ্রের গল্প, রাজনৈতিক বাঁকবদল এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

গণভবন এখন ইতিহাসের স্মারক, জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ চলমান

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে হাজারো মানুষ উল্লাস প্রকাশে গণভবনে প্রবেশ করে। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের পর সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, তেজগাঁওয়ে অবস্থিত এ রাষ্ট্রীয় স্থাপনাকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে।

মঙ্গলবার গণভবনে নির্মাণাধীন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’র নির্মাণকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক
মঙ্গলবার গণভবনে নির্মাণাধীন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’র নির্মাণকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হবে। যদিও আজ ৫ আগস্ট জাদুঘর উদ্বোধনের কথা ছিল, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার জন্য তেজগাঁওয়ে অবস্থিত গণভবনের ১৭ দশমিক ৬৮ একর জমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত সপ্তাহে তেজগাঁও সাবরেজিস্ট্রি অফিসে জমির লিজ সংক্রান্ত দলিল সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের মডেল দেখাচ্ছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মস্তোফা সরয়ার ফারুকী। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক
প্রধান উপদেষ্টাকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের মডেল দেখাচ্ছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মস্তোফা সরয়ার ফারুকী। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাদুঘরটি এমনভাবে সাজানো হচ্ছে, যাতে দর্শনার্থীরা সহজেই বুঝতে পারেন কেন এই অভ্যুত্থান ঘটেছিল, কীভাবে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে দেশ এক প্রকার দুঃশাসনের মধ্যে ছিল এবং ছাত্র-জনতা কিভাবে সেই শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

জাদুঘরে থাকছে শহিদদের ব্যবহৃত পোশাক, ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, পত্রিকার কাটিং, অডিও-ভিডিও দলিল, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ফুটেজ এবং ঐতিহাসিক নথিপত্র। প্রতীকী গণকবর এবং আলোচিত ‘আয়নাঘর’-এর একটি রেপ্লিকাও স্থাপন করা হচ্ছে, যা জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন আয়োজকরা।

বিষয়:

Ad 300x250

সম্পর্কিত