ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের ‘সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে’ স্তন ক্যানসার সন্দেহে বায়োপসির জন্য টিস্যু সংগ্রহে অস্ত্রোপচার করেছে এক ওটিবয় (অপারেশন থিয়েটারের কর্মচারী)। তাঁর অস্ত্রোপচারের পর গুরুতর সংক্রমণে পড়েন ভুক্তভোগী নারী। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে স্তনের সংক্রমিত অংশ কেটে ফেলতে হয়েছে তাঁর।
ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর স্বজনদের ভাষ্য, হাসপাতালে বায়োপসি পরীক্ষার জন্য টিস্যু সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়াটি একাই সম্পন্ন করেন ওটিবয় শেখ নিয়ামুল (২৬)। ওই নারী ফরিদপুরের কানাইপুর ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের প্রবাসী সরোয়ার আলমের স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮)। তাঁর সাত বছর বয়সী এক মেয়ে ও এক বছর বয়সী দুগ্ধপোষ্য ছেলে রয়েছে। বর্তমানে তিনি ঝিলটুলীর সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের নথিপত্র ও ববিতা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৮ নভেম্বর মাকে সঙ্গে নিয়ে পূর্বপরিচিত ওটিবয় নিয়ামুলের সহায়তায় সুরক্ষা হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতিকুর আহসানের কাছে দেখান। এক পর্যায়ে চিকিৎসক তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বায়োপসি পরীক্ষার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর ওটিবয় নিয়ামুল তাঁকে মেডিকেলে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, কম খরচে তিনিই অস্ত্রোপচারের কাজ করে দিতে পারবেন।
ববিতা বেগম বলেন, ‘ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে নিয়ামুল বলে, মেডিকেলে অনেক ঝামেলা, থাকতে হবে। আমি এই কাজ পারি, আমি করে দেব। কোনো সমস্যা হবে না। তখন আমি বলি, আমার দুইটা বাচ্চা আছে, যেন কোনো ক্ষতি না হয়। পরে সে ওটি রুমে নিয়ে গিয়ে একাই অপারেশন করে।’
অভিযুক্ত ওটিবয় শেখ নিয়ামুল ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ‘ভুল করেছেন’ বলে স্বীকার করেছেতিনি জানান, অস্ত্রোপচার শেষে চারটি সেলাই দিয়ে নিয়ামুল নিজেই একটি প্রেসক্রিপশন লিখে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। প্রায় ১৫ দিন পর বায়োপসির রিপোর্ট হাতে পান তিনি। এরমধ্যে অস্ত্রোপচারস্থলে তীব্র সংক্রমণ দেখা দেয়। এরপর ২ ডিসেম্বর ফের চিকিৎসক আতিকুর আহসানের শরণাপন্ন হলে তিনি সংক্রমণের ভয়াবহতা তুলে ধরে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। গত ৪ ডিসেম্বর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সেদিনই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংক্রমিত অংশটি কেটে ফেলা হয়।
এ বিষয়ে সার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান ডা. আতিকুর আহসান বলেন, সাধারণত চিকিৎসক একটি ফাঁপা সুঁচ ব্যবহার করে টিস্যু সংগ্রহ করেন। প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে ওটিবয় নিয়ামুল অস্ত্রোপচার করে বসেন। তিনি বলেন, ‘পুরো স্তন নয়, সংক্রমিত অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য ওই ওটিবয়ই দায়ী। তাঁর এ ধরনের অপারেশন করার অধিকার নেই।’
বায়োপসি রিপোর্টে আরও প্রতারণার তথ্য পাওয়া গেছে। পরীক্ষাটি ঢাকার গ্রিনরোডের এনএন ল্যাবে করানো হলেও সেখানে উল্লেখ রয়েছে—নমুনা পাঠানো হয়েছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে।
অভিযুক্ত ওটিবয় শেখ নিয়ামুল ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ‘ভুল করেছেন’ বলে স্বীকার করেছে।
সুরক্ষা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের কারও অজানায় নিয়ামুল এ কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেও লোক পাঠিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।’