leadT1ad

ফলোআপ

রামেবি ক্যাম্পাসের গাছ লুটের কথা ‘আগেই জানতেন’ রেজিস্ট্রার

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণকৃত জায়গায় থাকা হাজারো গাছ লুট করে নিয়েছেন দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর গত ২৬ আগস্ট ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক সিরাজুম মুনীরের দপ্তরে গিয়ে এ বিষয়ে বর্ণনা দিয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আকাশ। যার ভয়েস রেকর্ড স্ট্রিমের হাতে এসেছে। তাঁর বর্ণনায় উঠে এসেছে, গাছ কাটার বিষয়টি রেজিস্ট্রার আগে থেকেই অবগত ছিলেন।

স্ট্রিম সংবাদদাতারাজশাহী
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৩৩
চলতি আগস্টের দ্বিতীয়ার্ধে রামেবি ক্যাম্পাস থেকে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়। স্ট্রিম ছবি

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ক্যাম্পাস থেকে গাছ লুটের কথা আগে থেকেই জানতেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. হাসিবুল হোসেন। গাছ লুটের হোতা হাফিজুল ইসলাম তাঁর কথা বলেই গাছ কেটেছেন। এ সংশ্লিষ্ট দাপ্তরিক কথোপকথনের রেকর্ড ঢাকা স্ট্রিমের হাতে এসে। এর আগে গাছ কাটার ঘটনায় বিশেষ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে স্ট্রিম। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রেজিস্ট্রার বলছেন, তিনি ওই বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

চলতি আগস্টের দ্বিতীয়ার্ধে রামেবি ক্যাম্পাস থেকে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়। এ সময় সেখানে শ্রমিকদের বাধা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলামান ক্যাম্পাস স্থাপন কাজের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আকাশ। বাধা পেয়ে প্রকৌশলী আকাশের সঙ্গে মোবাইল ফোনে হাফিজুল ইসলামের কথা বলিয়ে দেন শ্রমিকেরা। তিনি মো. আকাশকে জানান, তাঁদের গাছ কাটার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হাসিবুল হোসেন জানেন।

সোমবার (২৬ আগস্ট) ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক সিরাজুম মুনীরের দপ্তরে গিয়ে এমন বর্ণনা দিয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আকাশ। এ সময় ওই কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। মো. আকাশের বর্ণনা দেওয়ার একটি অডিও রেকর্ড স্ট্রিমে হাতে এসেছে।

চলতি আগস্টের দ্বিতীয়ার্ধে রামেবি ক্যাম্পাস থেকে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়। স্ট্রিম ছবি
চলতি আগস্টের দ্বিতীয়ার্ধে রামেবি ক্যাম্পাস থেকে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়। স্ট্রিম ছবি

সেদিন মো. আকাশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানান, অভিযুক্ত হাফিজুল ইসলাম রামেবির রেজিস্ট্রারের কথা বলে ক্যাম্পাসের গাছ কাটলেও তাঁর কাছে কোনো লিখিত কাগজপত্র ছিল না। তাই তিনি মোবাইল ফোনে উপাচার্য ডা. মোহা. জাওয়াদুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিছু সময় পর নাজমুল ফিরতি ফোন কলে জানান, গাছ কাটার বিষয়টি রেজিস্ট্রার অবগত আছেন। (হাফিজুলের লোকজন) গাছ কাটছে কাটুক, জড়ো করে রাখুক। এ কারণে তিনি ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক শ্রমিকদের বাধা দেননি।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হাসিবুল হোসেন বলেন, ‘আমি গাছ কাটার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, একটা টাকাও অনিয়ম করে গ্রহণ করিনি। তাঁরা (আকাশ ও মাসুদ) আমার নাম কেন বলবেন?’ তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘যদি দায়িত্বপ্রাপ্তরা গাছ কাটা দেখেন, তাহলে তাঁরা আমাকে জানাবেন অথবা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জানাবেন। তাঁরা কেন উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারীকে জানাবেন?’

সহকারী প্রকৌশলী মো. আকাশের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করেন উপপ্রকল্প পরিচালক সিরাজুম মুনীর। তিনি বলেন, ‘তাঁরা এসেছিলেন, কিন্তু পুরোটা সময় আমি অফিসে ছিলাম না। তাঁরা এমন বর্ণনা দিয়েছেন কি না, তা আমি জানি না।’ বক্তব্যের বিষয়ে ঢাকা স্ট্রিমের হাতে প্রমাণ আছে জানালে তিনি মন্তব্য না করে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেন অবশ্য সেদিন আকাশের সঙ্গে কথোপকথন হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর দাবি, তাজা গাছ কাটার আগে ড্রেন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় কিছু গাছ পড়ে গিয়েছিল। সেগুলোর বিষয়েই রেজিস্ট্রারকে অবহিত করে জড়ো করে রাখতে বলা হয়েছিল। উপসহকারী প্রকৌশলী আকাশও একই দাবি করেছেন।

রামেবি সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরের বাজেসিলিন্দা এলাকার আমবাগানে ঘেরা সবুজ ও নির্মল পরিবেশে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থায়ী ক্যাম্পাস। এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের পর বছরখানেক আগে জায়গাটি বুঝে পায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকেই ২০৫ বিঘা আয়তনের এই জায়গায় চলছে লুটপাট। ক্যাম্পাসে পানি নিষ্কাশনের নালা (ড্রেন) ও সীমানাপ্রাচীর করতে দরপত্র কিংবা বনবিভাগের অনুমতি ছাড়াই অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এই ঠিকাদারি কাজের অংশীদার সাবেক ছাত্র নেতা খাইরুল ইসলাম। তাঁর হয়ে কাজ দেখাশোনা করেন হাফিজুল ইসলাম।

চলতি আগস্টের দ্বিতীয়ার্ধে রামেবি ক্যাম্পাস থেকে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়। স্ট্রিম ছবি
চলতি আগস্টের দ্বিতীয়ার্ধে রামেবি ক্যাম্পাস থেকে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়। স্ট্রিম ছবি

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু শ্রমিক করাত দিয়ে ক্যাম্পাসে তাজা গাছ কাটছেন। একজন ভিডিও করতে করতে জানতে চাইছেন, তাঁরা কার লোক। এ সময় একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা হচ্ছি হাফিজ ভাইয়ের লোক, হাজি সাহেব।’ তবে গাছ কাটার বিষয়টি জানাজানি হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো বালুভরাটের কাজ পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করে কর্তৃপক্ষ। পরে প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ অস্বীকার করে জবাব দিয়েছে। ঘটনা তদন্তে চলতি আগস্টের ২৪ তারিখ কোষাধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন খন্দকারকে প্রধান একটি কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

রামেবির গাছ লুটের বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘এসব বিষয়গুলো আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে আমরা বিষয়গুলো দেখি। আমরা এ বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনব। তারপর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Ad 300x250

দেশের সব ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

সিজারের সময় পেটে এক ফুট গজ রেখেই সেলাই, সাত মাস পর অপসারণ

ডিপ্লোমা বনাম বিএসসি: প্রমোশন ও পদমর্যাদা নিয়ে উত্তাল প্রকৌশল খাত

ইসির ঘোষিত নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মিশ্র প্রতিক্রিয়া

শীর্ষ ২০ শতাংশ মানুষ অন্য জগতে বাস করেন, জরিপে উঠে এলো গভীর অর্থনৈতিক বিভাজন

সম্পর্কিত