leadT1ad

আল-জাজিরার প্রতিবেদন

জয়পুরহাটের গ্রাম থেকে যেভাবে দরিদ্র মানুষের ‘কিডনি পাচার’ হচ্ছে ভারতে

জয়পুরহাটের কালাই বাংলাদেশের অন্যতম দরিদ্র উপজেলা। কালাই এখন ‘কিডনি ব্যবসার’ একটি কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল গ্লোবাল হেলথ-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, এই অঞ্চলের প্রতি ৩৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন কিডনি বিক্রি করেছেন।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৭: ০৯
জয়পুরহাটের একটি গ্রাম ‘এক কিডনির গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ছবি: আল-জাজিরা

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বাইগুনী গ্রামের বাসিন্দা সফিরুদ্দিন। বয়স ৪৫। অনেকদিন ধরে পেটের একপাশের ব্যথা নিয়ে সংগ্রাম করছেন তিনি। সফিরুদ্দিনের এই ব্যাথার পেছনে রয়েছে একটি গল্প। এটি মূলত বাংলাদেশের দরিদ্রতার গল্প। সেই দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে এক দালাল চক্র ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই গ্রাম থেকে ‘কিডনি পাচার’ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত বছর গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে জুন মাস) সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের শরীরের একটি কিডনি ভারতে বিক্রি করেছিলেন সফিরুদ্দিন। তাঁর ধারণা ছিল, এই টাকা দিয়ে তিনি কিছুটা স্বচ্ছল হতে পারবেন। পরিবারের দারিদ্র্য দূর করে তিন সন্তানের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু টাকা শেষ হয়ে গেলেও বাড়ির কাজ অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে তাঁর।

একদিকে শরীরের ব্যথা আর অন্যদিকে কিডনির বিনিময়েও দরিদ্রতা থেকে মুক্তি না পাওয়া, সব মিলিয়ে দীর্ঘ হতাশার মধ্যে পড়েছেন সফিরুদ্দিন। এখন একটি কোল্ড স্টোরেজে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু শরীরের ব্যথা ও ক্লান্তির কারণে প্রতিদিনের সাধারণ কাজ করাও তাঁর জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

সফিরুদ্দিন বলেন, ‘আমার পরিবার যেন একটি ভালো জীবন পায় তার জন্যেই কিডনি দিয়েছি। আমার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্যেই সব করেছি।’

ভারতে যাওয়ার সময় কিডনি বিক্রি খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়নি সফিরুদ্দিনের। কিডনি পাচারকারী দালালেরা পুরো বিষয়টিকে তাঁর কাছে অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপন করে। যেন সফিরুদ্দিনের কাছে এটি এক অনবদ্য সুযোগ। শুরুতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে বেশ সংশয়ের মধ্যে থাকলেও, দারিদ্র্য ও চরম হতাশার কাছে শেষ পর্যন্ত তাঁর সংশয় পরাজিত হয়।

প্রথমে দালালচক্র তাঁকে একটি মেডিকেল ভিসার মাধ্যমে ভারতে নিয়ে যায়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই তাঁদের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। ফ্লাইট টিকিট থেকে শুরু করে কাগজপত্র ও হাসপাতালের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা, সবকিছুই করেছে ওই দালাল চক্র।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এক ধরনের দ্বিধার মধ্যে আছে। একদিকে রয়েছে আইন রক্ষা করার চাপ, অন্যদিকে রয়েছে চিকিৎসা-পর্যটন খাতকে উৎসাহিত করার অর্থনৈতিক আগ্রহ—যেটির বাজারমূল্য ২০২৪ সালে ৯৩ হাজার ২ শত কোটি ৬২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।

সফিরুদ্দিন নিজের বাংলাদেশি পাসপোর্টের মাধ্যমে যাত্রা করলেও, ভারতে যাওয়ার পর কিডনি গ্রহণকারীর সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক দেখাতে তৈরি করা হয় একাধিক জাল নথিপত্র। এমনকি ভুয়া পারিবারিক সম্পর্ক প্রমাণের জন্য প্রস্তুত করা হয় জাল সার্টিফিকেটও। এমনকি বদলে দেওয়া হয় সফিরুদ্দিনের পরিচয়। এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় একজন অপরিচিত ব্যক্তির শরীরে।

ভারতের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কেবল নিকট আত্মীয়দের মধ্যেই অঙ্গদানের অনুমতি রয়েছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে নেওয়া হয় সরকারি অনুমোদন। তবে পাচারকারীরা নানা উপায়ে ফাঁকি দেয় এই আইনগুলো। তারা কখনো নকল পারিবারিক ইতিহাস তৈরি করে, আবার কখনো জালিয়াতি করে হাসপাতালের নথিপত্র। প্রয়োজনে তারা ভুয়া ডিএনএ রিপোর্টও বানিয়ে ফেলে।

এই বিষয়ে কথা হয় দক্ষিণ এশিয়ায় অঙ্গ পাচার বিষয়ক গবেষক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য মনিরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাধারণত (কিডনি বিক্রির ক্ষেত্রে) বিক্রেতার নাম পরিবর্তন করা হয়। এরপর তৈরি করা হয় একজন আইনজীবীর স্ট্যাম্প দেওয়া নোটারি সার্টিফিকেট। যাতে কিডনি গ্রহীতার সঙ্গে ভূয়া পারিবারিক সম্পর্ক প্রমাণ করা যায়। আর সেই দাবিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ব্যবহার করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র (জাল)। এতে করে বিক্রেতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন তিনি কিডনি গ্রহীতার কোনো একজন আত্মীয়।

কিডনি হারানোর এই বেদনা কেবল সফিরুদ্দিনের একার নয়। জয়পুরহাট জেলার বাইগুনী গ্রামে এমন ঘটনা এতটাই সাধারণ হয়ে উঠেছে যে, স্থানীয়রা এখন গ্রামটিকে ‘এক কিডনির গ্রাম’ নামে চেনে। ছয় হাজার মানুষের গ্রামটির অনেকেই কমবেশি এই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন।

জয়পুরহাটের কালাই বাংলাদেশের অন্যতম দরিদ্র উপজেলা। কালাই এখন ‘কিডনি ব্যবসার’ একটি কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল গ্লোবাল হেলথ-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, এই অঞ্চলের প্রতি ৩৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন কিডনি বিক্রি করেছেন। অধিকাংশ দাতাই পুরুষ। বয়স ৩০ বছরের কম। দ্রুত টাকা উপার্জনের একটি পথ হিসেবে কিডনি বিক্রিকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা।

গ্রামটির অনেকেই কমবেশি কিডনি বিক্রির অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন। ছবি: আল-জাজিরা
গ্রামটির অনেকেই কমবেশি কিডনি বিক্রির অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন। ছবি: আল-জাজিরা

গবেষণাটিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ মানুষ তাঁদের এমন পদক্ষেপের পেছনে দরিদ্রতাকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে কেউ ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে, কেউ মাদকাসক্তি থেকে বের হতে, কেউ আবার জুয়া খেলার ক্ষতি সামলাতে গিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সফিরুদ্দিন জানান, অস্ত্রোপচারের পর তাঁর পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়নি। এমনকি দেওয়া হয়নি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনও। সবকিছু নিয়ে নিয়েছেন দালালেরা।

দালাল চক্রের আরেকটি চরম নিষ্ঠুরতা হলো, অস্ত্রোপচারের পর প্রমাণ লোপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। অনেক সময় জব্দ করে রাখা হয় দাতাদের পাসপোর্ট ও মেডিকেল প্রেসক্রিপশন। যাতে কিডনিদাতারা ভবিষ্যতে চিকিৎসা বা আইনি সুরক্ষা দাবি করার জন্য নথিপত্র ব্যবহার না করতে পারেন।

সংগৃহীত এই কিডনিগুলো মূলত বিক্রি হয় বাংলাদেশ বা ভারতের ধনী রোগীদের কাছে। কারণ এসব রোগীরা দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে সরকারি বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে এড়িয়ে যেতে চান। যেমন ২০২৩ সালে ভারতে মাত্র ১৩ হাজার ৬০০টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। অথচ দেশটিতে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ মানুষ চূড়ান্ত পর্যায়ের (প্রতিস্থাপনযোগ্য) কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। এ থেকে বোঝা যায় একটি বড় অংশের নথিপত্র সরকারি ফাইলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বাংলাদেশের একাধিক কিডনিদাতার সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁদের সবার গল্পেই ঘুরে ফিরে এসেছে প্রায় একই ধরনের ট্র্যাজেডি। যারা অর্থকষ্টের কারণে নিজেদের শরীর বিক্রি করে হলেও বাঁচার চেষ্টা করেছেন।

ভুক্তভোগীরা সাধারণত কাজের জন্য মরিয়া হয়ে থাকেন। তাঁদের মিথ্যা অজুহাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অস্ত্রোপচার করানো হয়। যেমন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে একটি পাচারকারী চক্র কিছু বাংলাদেশি চাকরিপ্রত্যাশীকে আটক রেখে জোরপূর্বক বা প্রতারণার মাধ্যমে তাঁদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনে বাধ্য করে।

হতাশার মূল্য

কালাই উপজেলার বিনাই গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী জ্যোৎস্না বেগম। ২০১২ সালে স্বামী মারা যায় তাঁর। এরপর ১৮ ও ২০ বছর বয়সী দুই মেয়েকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে নেমে পরেন তিনি। সংসারের খরচ জোগাতে একসময় ঢাকায় চলে যান। কাজ নেন একটি পোশাক কারখানায়। সেখানেই তাঁর পরিচয় হয় বেলাল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। যাকে পরে বিয়ে করেন জ্যোৎস্না বেগম।

বিয়ের কয়েক বছর পর ২০১৯ সালে জ্যোৎস্না ও বেলাল দুজনেই এক দালালচক্রের খপ্পরে পড়েন। তাঁদেরকে ভারতে গিয়ে কিডনি বিক্রির বিনিময়ে বড় অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখানো হয়।

জ্যোৎস্না বলেন, ‘এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। শুরুতে দালালরা আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে আমাকে রাজি করাতে সেই অঙ্ক বাড়িয়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে যায়। কিন্তু অপারেশনের পর আমি পেয়েছি মাত্র তিন লাখ।’

জ্যোৎস্না ও বেলালের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে বাসে করে বেনাপোল সীমান্ত পেড়িয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। এরপর হাসপাতালের কাছাকাছি একটি ভাড়া বাড়িতে রাখা হয়। পরে দালালরা তাঁদের নিয়ে কলকাতার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সে যায়। যেখানে তাঁদের অস্ত্রোপচার হয়।

এই বিষয়ে আল-জাজিরা একাধিকবার চেষ্টা করেও কলকাতার ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পায়নি। তবে জানা যায়, ২০১৭ সালে কলকাতা পুলিশ একই হাসপাতালে অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কিছু দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল।

জ্যোৎস্না বলেন, অপারেশনের সময় ও পুরো যাত্রাপথে তাঁর পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র দালালদের কাছেই ছিল। জ্যোৎস্না বলেন, প্রেসক্রিপশন নিয়ে নিলেও আমার কিছু বলার ছিল না। কিন্তু আমি বারবার আমার পাসপোর্ট চাইছিলাম। তারা কোনোভাবেই সেটা ফেরত দেয়নি।

জ্যোৎস্না বেগম। ছবি: আল-জাজিরা
জ্যোৎস্না বেগম। ছবি: আল-জাজিরা

দুই মাস ধরে ভারতে থাকতে হয়েছে জ্যোৎস্না বেগমকে। এরপর দেশে ফিরেছেন দালালদের সহায়তায়। তখনও তারা তাঁকে বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছিল। শুধু টাকা নয়, আরও অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দালালেরা। যেমন, পরিবারের খরচ চালানোতে সহায়তা করবে, মেয়েদের চাকরি দেবে ইত্যাদি। কিন্তু অল্প কিছু টাকা দিলেও, পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় চক্রটি।

অস্ত্রোপচারের পরপরই কিডনী প্রতিস্থাপনের বিনিময়ে পাওয়া তিন লাখ টাকা নিয়ে জ্যোৎস্নাকে ছেড়ে চলে যান বেলাল। বিয়ে করেন অন্যত্র। এই ঘটনা জ্যোৎস্নার জীবনে জন্ম দেয় আরও গভীর এক হতাশার।

জ্যোৎস্না জানান, তাঁর জীবনটা যেন একেবারে শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন শরীরের দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা তাঁর একমাত্র সঙ্গী। নিয়মিত ওষুধ ছাড়া চলা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্যোৎস্না বেগম আরও জানান, কোনো ভারী কাজ করতে পারেন না তিনি। কিন্তু ওষুধ ছাড়া একদিনও চলে না তাঁর।

কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরাই হয়ে উঠছেন অপরাধী

ঢাকার মোহাম্মদ সজল (ছদ্মনাম) একসময় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-ভ্যালিতে রান্নাঘরের মালামাল বিক্রি করতেন। কিন্তু ২০২১ সালে ইভ্যালি কেলেঙ্কারির পর তাঁর সঞ্চয় ও জীবিকা, দুটোই ধ্বংস হয়ে যায়।

ঋণের ভারে ডুবে যাওয়া সজল ২০২২ সালে দিল্লির ভেঙ্কটেশ্বর হাসপাতালে নিজের কিডনি বিক্রি করেন। কিন্তু তাঁকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি পেয়েছেন মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা।

হতাশায় একপর্যায়ে সজল ভাবেন, কিডনির জন্য যে টাকা আশা করেছিলেন, তা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো—নিজেই দালালদের দলে ভিড়ে অন্যদের ঠকানো। এরপর কয়েক মাস তিনি দালাল হিসেবে কাজ করেন। ভারতের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি দাতাদের কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করেন। পরে তাঁর চক্রের উর্ধ্বতনদের সঙ্গে আর্থিক বিবাদের ফলে প্রাণভয়ে এই পথ ছেড়ে দেন তিনি।

‘কিডনির বৈধ দাতার অভাব একটি “প্রধান চ্যালেঞ্জ” যা অবৈধভাবে পাচারকৃত কিডনির চাহিদা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ।’ বসুন্ধরা রাঘবন, সিইও, কিডনি ওয়ারিয়র্স ফাউন্ডেশন, ভারত

সজলের মতে, ‘এই নেটওয়ার্ক নির্বিঘ্নে কাজ করছে, যা বাংলাদেশের হাসপাতাল থেকে ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যন্ত ছড়ানো।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘সীমান্তের দুই পাশের ডাক্তার, কিডনি গ্রহীতা, দালাল সবাই এই ব্যবসায় জড়িত।’

বর্তমানে সজল ঢাকায় রাইড-শেয়ার সার্ভিসে কাজ করেন। অতীত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শারীরিক ও মানসিকভাবে এখনও ক্ষত-বিক্ষত। সজল বলেন, ‘কেউই শখের বশে কিডনি দেয় না। একটা সহজ হিসাব আছে—অসহায় হলেই মানুষ এই পথ বেছে নেয়।’

বাংলাদেশ পুলিশের ভাষ্য, এই কিডনি পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল এনামুল হক সাগর জানান, ইউনিফর্মধারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এই পাচারকারীদের শনাক্ত করতে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে আছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অঙ্গপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। যাদের মধ্যে দালালও রয়েছে। অনেকেই এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কিডনি বিক্রিতে জড়িয়ে পড়ে, আমরা তাদের ধরতে কাজ করছি।’

সীমান্তের ওপারে ভারতেও কিডনি পাচারে জড়িত কিছু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দিল্লি পুলিশ ৫০ বছর বয়সী কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিজয়া রাজকুমারীকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তে জানা গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে অন্তত ১৫ জন বাংলাদেশি রোগীর অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন করিয়েছিলেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের গ্রেপ্তার কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিডনি পাচারের পেছনে থাকা পুরো ব্যবসায়িক কাঠামোতে বড় আঘাত হানার জন্য এগুলো যথেষ্ট নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এক ধরনের দ্বিধার মধ্যে আছে। একদিকে রয়েছে আইন রক্ষা করার চাপ, অন্যদিকে রয়েছে চিকিৎসা-পর্যটন খাতকে উৎসাহিত করার অর্থনৈতিক আগ্রহ—যেটির বাজারমূল্য ২০২৪ সালে ৯৩ হাজার ২ শত কোটি ৬২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির (নোটো) একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালগুলো শুধু দালাল ও আপাতদৃষ্টিতে বৈধ নথিপত্রসহ দাতাদেরই নয়, বরং আর্থিকভাবে সচ্ছল গ্রহীতাদের চাপের মুখেও পড়ে।

‘অধিক কিডনি প্রতিস্থাপন মানে অধিক রাজস্ব’

ভারতে মানব অঙ্গ-প্রতিস্থাপন নিয়ে যে আইন রয়েছে, সেটি চালু হয় ১৯৯৪ সালে। আইনটি ট্রান্সপ্লান্টেশন অব হিউম্যান অর্গানস অ্যাক্ট (টিএইচওএ) নামে পরিচিত। এই আইন অনুযায়ী, সাধারণত নিকট আত্মীয়, যেমন মা-বাবা, ভাইবোন, সন্তান কিংবা স্বামী বা স্ত্রীরা কিডনি প্রতিস্থাপনের অনুমতি পেয়ে থাকেন। উদ্দেশ্য হলো, অঙ্গদান যেন আর্থিক লেনদেন বা বাণিজ্যিক শোষণের শিকার না হয়। তবে যেসব ক্ষেত্রে দাতা নিকট আত্মীয় নন, সেসব ক্ষেত্রে ‘সরকারি অনুমোদন কমিটি’র স্বীকৃতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। এতে করে নিশ্চিত করা হয় যে, দানটি নিঃস্বার্থ ও অ-বাণিজ্যিক। কিন্তু বাস্তব চিত্র আলাদা। কিডনি পাচারকারীরা এই আইন-কানুনের ফাঁকফোকর খুব ভালোভাবেই জানেন।

অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তারা দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণে ভুয়া কাগজপত্র বানায়। এগুলো তৈরির খরচ খুবই কম ও অল্প সময়েই হয়ে যায়। এরপর সেই জাল নথি দিয়েই কর্তৃপক্ষের কাছে এমনভাবে সবকিছু উপস্থাপন করা হয় যেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিকট আত্মীয়রা কিডনিটি দান করেছেন।’

ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর বলেছেন, ‘কিডনি পাচারের সঙ্গে জড়িত নথিপত্র জালিয়াতিতে বাংলাদেশের কোনো সরকারি কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা নেই।’

তানভীর মনসুর দাবি করেন, তারা প্রতিটি আইনি প্রক্রিয়া ‘যথাযথভাবে অনুসরণ’ করেছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই পাচার বন্ধে কোনো ধরনের তথ্য বিনিময়ের চর্চাও নেই, বরং তিনি এ বিষয়ে সহযোগিতার কথা অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে, চিকিৎসক রাজকুমারীর ঘটনাসহ শহরের কিডনি পাচার সংশ্লিষ্ট একাধিক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, দিল্লি পুলিশের উপকমিশনার অমিত গোয়েল জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায়ই জাল নথিপত্র শনাক্তে ব্যর্থ হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অনুমোদনের মাধ্যমে অবৈধ প্রতিস্থাপন হয়ে যায়।

তবে মনিরুজ্জামান এটিকে দেখছেন আরেক দৃষ্টিকোণ থেকে। তাঁর মতে, ভারতের অনেক হাসপাতালের জন্য এসব নথিতে থাকা অসঙ্গতি ‘উপেক্ষা’ করার পেছনে রয়েছে আর্থিক প্রণোদনা। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে চোখ বন্ধ করে রাখে, কারণ কাগজপত্রে যেহেতু প্রতিস্থাপনটি আইনসম্মত দেখায়, তারা সেটাকেই গ্রহণ করে নেয়।’

দালাল চক্রের আরেকটি চরম নিষ্ঠুরতা হলো, অস্ত্রোপচারের পর প্রমাণ লোপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। অনেক সময় জব্দ করে রাখা হয় দাতাদের পাসপোর্ট ও মেডিকেল প্রেসক্রিপশন। যাতে কিডনিদাতারা ভবিষ্যতে চিকিৎসা বা আইনি সুরক্ষা দাবি করার জন্য নথিপত্র ব্যবহার না করতে পারেন।

মনিরুজ্জামান জোর দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টা খুবই সহজ, অধিক প্রতিস্থাপন মানেই অধিক রাজস্ব। আর জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়লেও হাসপাতালগুলো দায় স্বীকার করে না। তারা বরং নথিপত্র বৈধ বলেই দাবি করে। আর এই প্যাটার্নটিই এই অবৈধ বাণিজ্যকে টিকিয়ে রাখে।’

বাংলাদেশের একাধিক জেলায় সক্রিয় একজন দালাল মিজানুর রহমান। তিনি জানান, পাচারকারীরা প্রায়ই একক চিকিৎসক অথবা হাসপাতালের অনুমোদন কমিটির সদস্যদের টার্গেট করে। যাতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াকে সহজ করতে তাঁদের ঘুষ দেওয়া যায়। আল-জাজিরাকে মিজান বলেন, ‘সাধারণত বাংলাদেশের দালালেরা ভারতের দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, তাঁদের জন্য এসব ডাক্তার ঠিক করে দেয়। এই ডাক্তাররা প্রায়শই টাকার বড় একটি অংশ নিয়ে নেন।’

ভারতে অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপন কার্যক্রম তদারকি করা কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘জাতীয় অঙ্গ ও টিস্যু প্রতিস্থাপন সংস্থার’ (নোটো) পরিচালক ডা. অনিল কুমার অঙ্গ পাচার বেড়ে যাওয়ার পেছনে কাঠামোগত অসঙ্গতির অভিযোগের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির (নোটো) একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালগুলো শুধু দালাল ও আপাতদৃষ্টিতে বৈধ নথিপত্রসহ দাতাদেরই নয়, বরং আর্থিকভাবে সচ্ছল গ্রহীতাদের চাপের মুখেও পড়ে।

তিনি বলেন, ‘যখন হাসপাতালের অনুমোদন বোর্ড কোনো কেসে সন্তুষ্ট হয় না, তখন অনেক গ্রহীতা বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যায় অথবা আদালতে চ্যালেঞ্জ করে। ফলে হাসপাতালগুলোও আইনি জটিলতা এড়াতে চায় এবং সরাসরি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করে।’

এই অবস্থার মধ্যে অঙ্গ পাচারকারী চক্রগুলোও প্রতিনিয়ত তাদের কৌশল বদলাতে থাকে। যখন কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় পুলিশ বা প্রশাসনের নজরদারি বাড়ে, তখন ব্যবসাটি সহজেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট একটি হাসপাতাল ব্যবহার করা হয় না; সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী জায়গাগুলোও বদলানো হয়।’

মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘যখন পুলিশ কোনো হাসপাতালে অভিযান চালায়, সেই হাসপাতাল অঙ্গ প্রতিস্থাপন বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশি ও ভারতীয় দালালদের সমন্বয়ে গঠিত এই নেটওয়ার্ক পরে নতুন হাসপাতাল খুঁজে বের করে কাজ চালিয়ে যায়।’

অনিরাপদ সীমান্ত

যেসব দালাল ও হাসপাতাল এই পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য এটি একটি বড় অর্থনৈতিক ব্যবসা। কিডনি গ্রহণকারীরা সাধারণত একেকটি কিডনির জন্য ২৬ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬০ টাকা থেকে ৩১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করে থাকেন।

দালাল মিজানুর রহমান বলেন, ‘তাঁরা (দাতারা) সাধারণত তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন। বাকি টাকা দালাল, নথিপত্র জালকারী কর্মকর্তা এবং যদি কোনো ডাক্তার জড়িত থাকেন, তাঁদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। আবার কিছু টাকা খরচ করা হয় দাতাদের ভারতে থাকা-খাওয়ার জন্যও।’

কিন্তু প্রতারণা এখানেই শেষ নয়। এর গভীরতা আরও ভয়াবহ।

অনেক সময় পাচারকারীরা বাংলাদেশের নাগরিকদের ভালো বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। তারপর জোর করে বা ধোঁকা দিয়ে তাঁদের কিডনি দানে বাধ্য করে।

ভুক্তভোগীরা সাধারণত কাজের জন্য মরিয়া হয়ে থাকেন। তাঁদের মিথ্যা অজুহাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অস্ত্রোপচার করানো হয়। যেমন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে একটি পাচারকারী চক্র কিছু বাংলাদেশি চাকরিপ্রত্যাশীকে আটক রেখে জোরপূর্বক বা প্রতারণার মাধ্যমে তাঁদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনে বাধ্য করে। পরে সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে ফেলে রেখে যায়।

এমনকি গত বছর বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকায় তিনজন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে, যারা অন্তত ১০ জনকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নয়াদিল্লি নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে তাঁদের জোর করে কিডনি প্রতিস্থাপন করানো হয়।

বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর একটি ব্র্যাক। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরীফুল হাসান বলেন, ‘কিছু মানুষ চরম দারিদ্র্যের কারণে জেনেশুনে তাঁদের কিডনি বিক্রি করেন। তবে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ প্রতারিত হয়। ভারতের একজন ধনী রোগীর কিডনি প্রয়োজন হলে; হয় একজন দালাল দরিদ্র বাংলাদেশি দাতা খুঁজে আনে, নয়তো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কাউকে ফাঁদে ফেলে। এই চক্র এভাবেই চলতে থাকে।’

ভারতে কিডনি রোগে আক্রান্তদের জন্য সহায়তামূলক সংগঠন ‘কিডনি ওয়ারিয়র্স ফাউন্ডেশন’-এর সিইও বসুন্ধরা রাঘবন জানান, কিডনির বৈধ দাতার অভাব একটি ‘প্রধান চ্যালেঞ্জ’ যা অবৈধভাবে পাচারকৃত কিডনির চাহিদা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। অতি আগ্রহী রোগী তখন অবৈধ পন্থা বেছে নেয়, যা দরিদ্রদের শিকার বানানো এই ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

রাঘবন স্বীকার করেন, ভারতের আইনি কাঠামো মূলত তৈরি হয়েছিল কিডনি প্রতিস্থাপনকে একটি শোষণমূলক শিল্পে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু বাস্তবে এই আইন কেবল এ ধরনের ব্যবসাকে গোপন ও অদৃশ্য জগতে ঠেলে দিয়েছে।

রাঘবন বলেন, যদি অঙ্গ ব্যবসা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হয়, তাহলে আরও সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত একটি পদ্ধতির কথা বিবেচনা করা উচিত। এতে নিশ্চিত করতে হবে, দাতারা বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যপরীক্ষা সম্পন্ন করবেন, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসা সহায়তা পাবেন ও তাঁদের ভবিষ্যতের কল্যাণের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

(আল-জাজিরার ইংরেজি প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন তৌহিদুল ইসলাম)

Ad 300x250

সম্পর্কিত