leadT1ad

বঞ্চিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৪
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে তদন্ত কমিটি। ছবি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সৌজন্যে

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর যেসব সদস্য অন্যায়ভাবে বৈষম্য, নিপীড়ন ও প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন, তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে বর্তমান সরকার।

আজ রোববার (৩০ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিগত সরকারের আমলে (২০০৯ সাল থেকে ৪ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত) সশস্ত্র বাহিনীতে বঞ্চনা ও অবিচারের শিকার কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজের নেতৃত্বে প্রতিবেদন হস্তান্তর করার সময় এই আশ্বাস দেন অধ্যাপক ইউনূস।

প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন আপনাদের এই দায়িত্ব দিয়েছিলাম তখন মনে হয়েছিল সামান্য কিছু অনিয়ম হয়তো হয়েছে। কিন্তু আপনারা যে পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে এনেছেন তা রীতিমতো ভয়াবহ। এটা কল্পনার একেবারে বাইরে।’ তিনি পূর্ণ পেশাদারিত্ব ও নির্মোহভাবে সত্য উদঘাটন করার জন্য কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

কমিটি সূত্র জানায়, তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা মোট ৭৩৩টি আবেদন গ্রহণ করে। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ১৪৫টি আবেদনের বিষয়ে প্রতিকারের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীতে বঞ্চিত ১১৪ জন, নৌবাহিনীতে ১৯ জন ও বিমান বাহিনীতে ১২ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। কমিটির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—যাদের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, তাদের স্বাভাবিক অবসর প্রদান, ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নিশ্চিত করা। এছাড়া চারজন কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনঃবহাল করার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিটির অনুসন্ধানে জানা যায়, আবেদনকারীদের মধ্যে ছয়জন অফিসারকে তাদের আত্মীয়-স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অজুহাতে বা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অপবাদ দিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ১ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত গুম করে রাখা হয়েছিল। এমনকি একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসারকে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় এবং পরবর্তীতে তার স্ত্রী ও এক বছরের শিশুসন্তানকে বিনা বিচারে দুই দফায় দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়।

তদন্তে আরও দেখা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করায় কিছু অফিসারকে টার্গেট করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে ব্যারিস্টার তাপস হত্যাচেষ্টার ভুয়া মামলায় ফাঁসিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। এছাড়া বিডিআর বিদ্রোহের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দরবারে প্রশ্ন তোলায় ও সেখানে হট্টগোল হওয়ার জেরে পাঁচজন অফিসারকে কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই বরখাস্ত করা হয়েছিল। এমনকি ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ডিজিএফআইতে কর্মরত থাকার কারণেও পাঁচজন অফিসারকে মিথ্যা অভিযোগে বা বিনা অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার কারণে চারজন জুনিয়র অফিসারকে জঙ্গি বা দলীয় ট্যাগ দিয়ে চাকরিচ্যুত করার প্রমাণও পেয়েছে কমিটি।

কমিটির সভাপতি আব্দুল হাফিজ জানান, স্ব স্ব বাহিনী কর্তৃক গঠিত বোর্ড যাদের বিষয়ে নেতিবাচক সুপারিশ করেছিল, তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই কোনো নৈতিক স্খলনজনিত বাস্তব অভিযোগ ছিল না। কমিটি ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বঞ্চনার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।

প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় কমিটির সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মুহম্মদ শামস-উল-হুদা, মেজর জেনারেল (অব.) শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ শফিউল আজম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মুহাম্মদ শাফকাত আলী ও প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক উপস্থিত ছিলেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত