স্ট্রিম প্রতিবেদক
নির্বাচন আমার কাছে একটা উৎসব। সবাই নির্বাচন উপভোগ করছে। যেহেতু দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন হচ্ছে তাই এটাকে আমি স্মরণীয় করে রাখতে আমি লুঙ্গি–গেঞ্জি পরে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে এসেছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বাহার এ সব কথা বলেন। তিনি ড. শহীদুল্লাহ কলা ভবন ভোটকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে স্ট্রিমকে এসব কথা বলেন। তিনি জানান, শহীদ জিয়াউর রহমান হল সংসদে স্বতন্ত্র কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী।
বাহার বলেন, 'মানুষের একটা আকর্ষণ থাকে, তাই না? সেই জায়গা থেকে আমি যেহেতু একজন প্রার্থী, তাই ভোটারদের নজর যেন আমার দিকে পড়ে তাই এভাবে বের হয়েছি। দেখেন আমার গেঞ্জির উপরে ব্যালট নম্বর সবকিছু দিয়েছি যেন সহজে মানুষের নজর কাড়তে পারে। আরেকটি কারণ এটা তো বাঙালি সংস্কৃতিরও অন্যতম অংশ। বাঙালি সংস্কৃতির অংশ— লুঙ্গি, গেঞ্জি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ। ভোটগ্রহণ শেষ হলে এখানেই চলবে ভোট গণনার কাজ। স্ট্রিম ছবি
রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ স্থানে জড়ো হয়েছেন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসের চারপাশে ২০০ গজের মধ্যে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ জমায়েত হলেও পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের পূর্ব পাশে জমায়েত করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিছুটা পশ্চিম দিকে সড়কের উল্টোপাশে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের জমায়েত দেখা গেছে। তারাও সেখানে শামিয়ানা টানিয়েছেন।
বিস্তারিত পড়ুন লিংকে
কঠোর নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক নজরদারির মধ্য দিয়ে চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া বাইরের কারও ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নির্বাচন কমিশন আবেদন সাপেক্ষে প্রতি প্যানেলকে পাঁচজন বহিরাগত প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।
এই অনুমতির সুযোগে ক্যাম্পাসে দেখা মিলছে বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট এলাকায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আমানুল্লাহ আমানকে বসে থাকতে দেখা যায়। এ সময় উপস্থিত অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর আগে গতকাল বিকেলেও টুকিটাকি চত্বরে তাকে দেখা গিয়েছিল।
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, 'আমি নিজেও দেখেছি। প্রশাসনের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও একটি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা কীভাবে ভোট চলাকালে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেন, সেটি এখন বড় প্রশ্ন। তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঢুকেছেন, নাকি অন্যভাবে—তা আমরা জানি না। তবে এ ধরনের ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের।'
এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন সংগঠন আবেদন করেছিল। সেই আবেদন বিবেচনা করে প্রতি প্যানেলকে পাঁচজন বহিরাগত প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, তারা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না, শুধু ক্যাম্পাসে ঘুরে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। ছাত্রদল, শিবিরসহ যারা আবেদন করেছে, সবাইকেই সমানভাবে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।'
রাকসুতে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’-এর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা বলেছেন, জীবনে প্রথম ভোট দিয়েছি আজকে। আমাদের সকলের বলতে গেলে আজকে জীবনের প্রথম ভোট দেওয়া। উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যাপারটা এনজয় করেছি। কীভাবে ভোট দিতে হবে সেই নির্দেশনা যদিও আগে পেয়েছি। ভেতরে যারা ছিলেন, আমাদের প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, তাঁরা বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন। আশা রাখছি, এভাবেই সার্বিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তা বজায় রেখেই আমরা শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারব।’
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবনে ভোট দিয়ে জাহিন বিশ্বাস এষা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এষা বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমতুন্নেসা হলের শিক্ষার্থী।
ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে এষা বলেন, ‘নিরাপত্তাসহসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কার্যক্রম ঠিকঠাক আছে। ভোটের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত প্রশাসন যাতে এভাবে অনড় ও সজাগ থাকে। যেকোনো অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হলে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা মিলে সেটি প্রতিহত করা হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে অন্তত ৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দেবেন বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নসীব।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে ভোটগ্রহণ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ভোটগ্রহণ শুরুর এক ঘন্টা পরেও ভোটার উপস্থিতি কম নিয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, 'ভোটার বাড়বে, সময় দিতে হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেরকম ভোটার হচ্ছে, তেমনটা আমাদের এখানেও হবে। সেক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির আশা তো করতেই পারি।'
উপাচার্য জানান, সকাল থেকেই তিনি ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করছেন। ভোটের পরিবেশ তার কাছে অত্যন্ত সুন্দর মনে হয়েছে। তিনি ভোটের ভোটের পরিবেশকে 'অত্যন্ত চমৎকার' হিসেবে উল্লেখ করেন।
সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব এ সময় সবার সহযোগিতাও কামনা করেন।
রাকসু নির্বাচন পরিদর্শনের পর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য, র্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তারপরও যদি প্রয়োজন হয়, আহবান করলে সেনাবাহিনীও আসবে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবনের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, আমাদের নিরাপত্তার কোন শংকা নেই, কোন সমস্যাও নেই। আমি নিজেও ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করলাম। কোথাও কোন সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সরাসরি এই নির্বাচনে থাকবে।না। যদি প্রয়োজন হয়, আমরা যদি আহবান করি, তাহলে।তারা আসবে।
তিনি আরও বলেন, সবার সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। প্রার্থীরা যদি আচরণবিধি মেনে চলেন, তাহলে।কোন সমস্যা হবে না।
পুলিশ কমিশনার জানান, ভোটের আগের দিন বুধবার থেকেই ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এটি বলবৎ থাকবে শুক্রবার পর্যন্ত।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন, 'আমি বলব, আপনি যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কালি লাগানো মাত্র ঘষাঘষি না করেন, একটু শুকানোর সময় দেন, কালি উঠবে না, ইনশাআল্লাহ।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভোটারদের আঙুলে দেওয়া অমোচনীয় কালি উঠে যাচ্ছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের তিনি এ সব কথা বলেন। সকাল ১০টার দিকে জুবেরী ভবন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে এ সব কথা বলেন তিনি।
উপাচার্য বলেন, নির্বাচনের ফল দিতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লাগতে পারে। ছয়টি ওএমআর মেশিন সর্বোচ্চ পারফরমেন্সে চললে এ সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে এই সময়টা দিতে হবে।
উপাচার্য বলেন, ভোট পুরোপুরি সুষ্ঠুভাবে চলছে। ভেতরে ও বাইরে বড় ডিসপ্লেতে সব কার্যক্রম উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, সবাই দেখতে পারবেন কী হচ্ছে। রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চলেছে।
রাকসু নির্বাচনে ব্যবহৃত অমোচনীয় কালি উঠে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কিছু ভোটার ও প্রার্থী। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার পারভেজ আজহারুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্ট্রিম।
তিনি বলেন, 'বেস্ট অ্যাভেইলেবল কালিই দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে কালি বানানো হয়। আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেটি পাইনি। অ্যাভেইলেবলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো কালিটা আমরা ব্যবহার করছি।'
তা ছাড়া ভোটার শনাক্তের এটিই একমাত্র পদ্ধতি নয় বলেও উল্লেখ করেন পারভেজ আজহারুল হক। তিনি জানান, তিনটি ধাপ পেরিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে ভোট দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাক্ষর, কিউ আর কোড এবং সিসি ক্যামেরা।
‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার বলেছেন, আমরা জীবন্ত একটা ইতিহাসের সাক্ষী। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর পাওয়া আমাদের একটা উৎসব। ম্যাক্সিমাম ভোটারই যৌবনের প্রথম ভোটার। আমরাও জীবনের প্রথমই ক্যান্ডিডেট। সবদিক দিয়ে, সব মিলায়ে আমরা খুবই আশাবাদী যে পরিবেশটা কোনো বিতর্কিত কোনো পরিবেশ বা বিতর্কিত কোনো কর্মকাণ্ড হবে না।
ভোট প্রদান শেষে স্ট্রিমকে তিনি এ সব কথা বলেন।
আমি মাত্রই ভোট দিয়ে আসলাম আর ভোটকেন্দ্রের ভিতরে পরিবেশ খুবই ভালো। আমি তো প্রথমে নার্ভাস ফিল করছিলাম যে আসলে কী হয়। বাট স্মুথলি পুরা প্রসেসটা শেষ হয়েছে এবং আমাদের একটা শঙ্কা ছিল যে নারী শিক্ষার্থীরা হয়তো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিবে না।
ভোট দেওয়া শেষে রাকসুর সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী নাদিয়া হক স্ট্রিমকে এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখছি যে নারী শিক্ষার্থীদের মনে হয় এনথুসিয়াস্টিক ওরা বেশি এই নির্বাচন নিয়ে। আর আজকের পরিবেশটা খুবই উৎসবমুখর। আমরা ক্যাম্পাসে সব শুধু শিক্ষার্থীরা আছি ভোট দেওয়ার জন্য। সবাই সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছে তাঁদের মূল্যবান একটা ভোট দেওয়ার জন্য।
ভোটপ্রদান শেষে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপিপ্রার্থী মুস্তাকুর রহমান জাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা আজকে সকল শিক্ষার্থীরা, আমি শুধু নই, সকল শিক্ষার্থী ভোট দিয়ে যে আনন্দটা পেয়েছে, এই আনন্দটা আমরা আমাদের জীবনে কখনো পাইনি। আল্লাহ্ তায়ালার রহমতে আমরা আশা করছি আমাদের ভালো ফলাফল হবে ইনশাআল্লাহ্। সকল শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে গ্রহণ করবে। শিক্ষার্থীরা আমাদের গ্রহণ করলে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য যেই ইশতেহার দিয়েছি, সেই ইশতেহার অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ্।'
ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে জাহিদ বলেন, 'ভোটকেন্দ্রের অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ্ এখন পর্যন্ত ভালোই দেখছি। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ কারো প্রতি দিচ্ছি না। তবে আমরা অবজারভেশনে রাখছি। আমরা কোনো অভিযোগ পেলে সাথে সাথেই নির্বাচন কমিশন হোক, আপনাদেরকে হোক, আমরা অবশ্যই জানাব।'
ভোটদানের সময় দেওয়া অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল মনোনীত ভিপিপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর।
আজ সকালে ভোটপ্রদান শেষে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'অমোচনীয় কালি এখনই প্রায় উঠে গিয়েছে। একটু পানি দিয়ে ধুলেই কিন্তু উঠে যাবে। আমাদের কথা দেওয়া হয়েছিল অমোচনীয় কালি দেওয়া হবে। সেটি কিন্তু দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আমরা কথা বলব। এ ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি এখনও ভালো।'
আবীর আরও বলেন, 'যদি আমরা কারচুপির কোনো সন্ধান পাই, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আভাস পাই, অবশ্যই আপনাদের জানাব।'
কিছুদিন আগে আবীর বলেছিলেন ছাত্রশিবিরের রাবিকে নিজেদের ক্যান্টনমেন্ট মনে করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ দেবে, এটা শিক্ষার্থীদের ক্যান্টনমেন্ট। কোনো দলীয় ক্যান্টনমেন্ট না।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত ঘরানার প্রশাসন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান। প্রশাসনকে রাকসু নির্বাচনে কোনো বিশেষ পক্ষকে সুবিধা না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আমান বলেন, ' আমরা বলতে চাচ্ছি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্বাচন করেন। সেটি আপনাদের জন্য কল্যাণের, আমাদের জন্য কল্যাণের, দেশের জন্যও কল্যাণের। বিশেষ কোনো পক্ষকে সুবিধা দিলে ওনাদেরকেও জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে হবে ইনশাআল্লাহ।'
ছাত্রদলের জয়ের ব্যাপারে আমান বলেন, 'শিক্ষার্থীরা যদি প্রকৃত অর্থেই তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন এবং কোনো ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং না হয়, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম (ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল) পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে জয়ী হবে।'
গতকাল তিনি অবৈধভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিলেন, এমন অভিযোগের জবাবে বলেন, 'এটি মনগড়া অভিযোগ। আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যাতে এখানে কাজ করতে পারে, সে অনুমতি নেওয়ার জন্য এসেছি। আপনি অনুমতি নেওয়ার জন্য কোথাও যেতে পারবেন না?'
একে শিবিরি ভাষায় অভিযোগ বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী ফাহিম রেজা বলেছেন, ‘খুবই উৎসবমুখর পরিবেশ। আপনারা দেখছেন, শুরু থেকেই একটা লম্বা লাইন। তো শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে ছিল তাদের দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রাকসু নির্বাচনে ভোট দেবেন। তো শিক্ষার্থীরা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন খুবই উচ্ছ্বসিত। সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে লম্বা লাইন ধরে সবাই ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা প্রত্যেকে ঈদের মতো, ঈদের দিন যেরকম আমরা আনন্দিত থাকি, ঠিক সেরকমই আনন্দিত। আমরা উপভোগ করছি।’
আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সকালে শুনেছি, এখনো ব্যাপারটা এখনো ক্লিয়ার হয়নি। শুনেছি, ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে টোকেন দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনকে বলব, শুরু থেকেই ব্যাপারগুলো যাতে এক্সট্রিমলি এগুলো হ্যান্ডেল করা হয় এবং শুরু থেকে ব্যাপারটা যাতে মেইনটেইন করা হয়। আমরা এইমাত্র জানতে পেয়েছি যে কারা দিচ্ছে, একটু পরে আমরা স্পষ্ট করব।’
হাতের অমোচনীয় কালি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা হচ্ছে যে অমোচনীয় যে কালিটি, পার্মানেন্ট কালি, এটি ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক এমন কোনো কার্যক্রম যাতে না হয় এবং সব ধরনের ব্যবস্থা, এত বড় একটি প্রস্তুতি সারার পরেও ছোট্ট একটা কারণে যদি নির্বাচন বিতর্কিত হয়, এটা কোনোভাবে কাঙ্ক্ষিত না। প্রশাসনকে আমরা আহ্বান জানাবো যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কালি পরিবর্তন করে অমোচনীয় যে কালি, এটি ব্যবহার করতে হবে।’
পোলিং এজেন্টদের ছবিসহ ভোটার তালিকা দেখতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর।
আজ সকালে জুবেরী ভবন পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিযোগ করেন তিনি।
আবীর বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো। তবে আমাদের পোলিং এজেন্টরা অভিযোগ করছে যে, তাঁদের ভোটার তালিকা দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, যারা নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন, তাদের ভোটার তালিকা দেখতে দেওয়া হবে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ছবিসহ ভোটার তালিকা দেখতে না পেলে তাঁরা কীভাবে শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করবে? আমি এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।
আজ সকাল ৯টা থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীনস কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ভোট শুরুর আগেই সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছেন ভোটাররা। নয়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে একে একে ভোট দিতে ওই কেন্দ্রে প্রবেশ শুরু করেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী খায়রুন নাহার সুপ্ত স্ট্রিমকে বলেন, 'আমি কখনোই ভোট দিইনি। জাতীয় নির্বাচনেও না। আমার খুব এক্সাইটেড লাগছে। এখন মনে হচ্ছে কখন ভোটটা শেষ হবে, কখন জানতে পারব, আমাদের যোগ্য প্রার্থী কারা।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীনস কমপ্লেক্সে মুন্নুজান হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দিচ্ছেন।
এবার রাকসুতে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৫৯৬ এবং নারী ১১ হাজার ৩০৫ জন। রাকসুর ২৩টি পদে মোট প্রার্থী ২৪৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২২২ এবং নারী ২৫ জন।
'এই আমার জীবনের প্রথমবার ভোটার হয়েছি আমি। ক্যাম্পাসে তো প্রথমই, জীবনে কখনোই ভোট দিইনি আমি। জাতীয় ভোটগুলো যে হয় সেখানেও দেওয়া হয়নি। আমার অনেক অনেক বেশি এক্সাইটেড লাগছে।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খাইরুন নাহার সুপ্ত ভোট দিতে এসে এসব কথা বলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী।
তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে যে কখন দিনটা শেষ হবে, কখন জানতে পারব আমাদের যোগ্য প্রার্থী কারা। সব মিলিয়ে অনেক আনন্দঘন একটা পরিবেশ। অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমার কাছে অনেক অনেক বেশি ভালো লাগছে। শুভকামনা সবার জন্য যেন আমরা যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে সক্ষম হই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারসহ ভোটের সব সরঞ্জাম নির্বাচনী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার পর রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে এসব সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তাঁদের পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে। ভোর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ও ছোট সব প্রবেশপথে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবরাহ করা পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৩ জন, প্রতিটি হল সংসদে ১৫ জন এবং সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে ৫ জনকে নির্বাচিত করবেন শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ একজন ভোটার মোট ৪৩টি ভোট দেবেন।
রাকসুর ২৩টি পদে মোট প্রার্থী ২৪৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২২২ এবং নারী ২৫ জন।
সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই ভোটগ্রহণ চলবে।
রাকসুতে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৫৯৬ এবং নারী ১১ হাজার ৩০৫ জন। ছেলেদের সবচেয়ে বেশি ভোটার শহীদ হাবিবুর রহমান হলে, ২ হাজার ৪৪৬ জন। অন্যদিকে মেয়েদের সবচেয়ে বেশি ভোটার জুলাই ৩৬ হলে, ২ হাজার ৪৭২ জন।
মোট ৯টি ভবনে ১৭টি হলের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি তাদের সম্পন্ন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে মোট ৯৯০টি বুথে ভোট গ্রহণ চলবে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।