leadT1ad

বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর ঢাকা, আশার আলো দেখাচ্ছে ‘ব্রিদ ইজি’

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৫, ১৪: ৫৯

সজিব তুষার ও তৌহিদুল ইসলাম

বায়ুদূষণ সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে আয়োজন করা হয় ‘ব্রিদ ইজি, ঢাকা’ ম্যুরাল পেইন্টিং উৎসব। আজ বুধবার (২৮ মে) রাজধানীর খিলগাঁও গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন নতুন করে আলোচনায় এনেছে রাজধানীর বায়ুদূষণ পরিস্থিতি ও তা থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা।

উৎসবের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের (অন্তর্বর্তী) কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন। উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীরা রঙ-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলে তাদের পরিবেশবিষয়ক চিন্তা ও চেতনা।

ম্যুরাল চিত্রে উঠে আসে বিশুদ্ধ বাতাস, সবুজ প্রকৃতি ও দূষণমুক্ত পরিবেশের আকাঙ্ক্ষা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নেয় শিল্পকলাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘কার্টুন পিপল’। আয়োজনের শেষে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও শিল্পীদের হাতে সনদ তুলে দেন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা ও শিক্ষকরা।

দূষণের ভয়াবহ বাস্তবতা

‘বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৪’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষিত দেশ। ঢাকার বাতাসে পিএম ২ দশমিক ৫ এবং কণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৭৮ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি। শহর হিসেবে দূষণে ঢাকার অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। ঢাকার ওপরে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর এবং শীর্ষে ভারতের দিল্লি।

স্মার্ট এয়ার ফিল্টারসের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের সবচেয়ে দূষিত শহর ক্রোয়েশিয়ার স্লাভোনস্কি ব্রডে পিএম ২ দশমিক ৫ এর পরিমাণ ২৬ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম পার কিউবিক মিটার। আর সুইডেনের উপসালায় মাত্র ৪ মাইক্রোগ্রাম পার কিউবিক মিটার। তুলনায় ঢাকার বায়ুদূষণ ইউরোপের সবচেয়ে দূষিত শহরের চেয়েও প্রায় তিনগুণ বেশি।

দূষণের উৎস: ইটভাটা, নির্মাণকাজ ও যানবাহন

বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে ঢাকার বায়ুদূষণের তিন প্রধান উৎস:

নির্মাণকাজের ধুলাবালি (৩০ শতাংশ), ইটভাটা (২৯ শতাংশ), পুরনো যানবাহনের ধোঁয়া (১৫ শতাংশ)। 

বর্তমানে দেশে সক্রিয় ৭ হাজার ৮৬টি ইটভাটার মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫টির কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটায় প্রতিবছর ব্যবহৃত হয় প্রায় ১৩ কোটি মেট্রিক টন মাটি। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেপরোয়া নির্মাণকাজ ও অযোগ্য যানবাহনের ধোঁয়া—যা মিলে ঢাকার বাতাসকে করে তুলেছে বিষাক্ত।

হুমকির মুখে অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য

বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১১ দশমিক ৫ থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদনশীল সময়।

স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার (এসওজিএ) ২০২৪-এর তথ্যানুসারে, দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন কর্মঘণ্টা।

স্বাস্থ্যের দিক থেকেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ২০২১ সালেই বায়ুদূষণের কারণে দেশে অকালমৃত্যু ঘটেছে ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের। শিশুদের মধ্যে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও কম ওজন নিয়ে জন্মের ঝুঁকি।

আঞ্চলিক সমাধান ও প্রযুক্তির হাতছানি

এই সংকট শুধু বাংলাদেশের একার নয়, বরং একটি আঞ্চলিক সংকট। ভারতের দিল্লি বা পাঞ্জাব অঞ্চলের দূষণও প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশের বায়ু মানে।

তবে আশার আলোও আছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে ঢাকায় গ্রীন স্পেস চিহ্নিতকরণ এবং দূষণকারী ইটভাটা শনাক্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশবিদদের মতে, সরকার, সিভিল সোসাইটি ও গণমাধ্যম একসঙ্গে কাজ করলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ‘ব্রিদ ইজি, ঢাকা’ কেবল একটি দেয়ালচিত্র নয়, বরং এটি একটি প্রতীক—একটি বার্তা, যা বলে, এখনই সময় জেগে ওঠার, সচেতন হওয়ার।

Ad 300x250

সম্পর্কিত