স্ট্রিম ডেস্ক
আজ ক্ষণজন্মা চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুদিন। বাংলা চলচ্চিত্রকে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। কেমন ছিল তাঁর সিনেমা-দর্শন। লিখেছেন গৌতম কে শুভ
বাংলা সিনেমার ইতিহাস লিখতে বসলে যাঁর নাম না লিখে উপায় নেই, তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষ। তিনি এমন কিছু গল্প পর্দায় তুলে এনেছেন, যা মানুষকে ভাবতে বাধ্য করেছে। আবার আবেগেও ভরিয়ে দিয়েছে। তবে তিনি শুধু নির্মাতাই ছিলেন না। তাঁর পোশাক, চলাফেরা ও নিজেকে প্রকাশ করার ভঙ্গি নিয়েও চলত অনেক কথা। আলোচনায় ছিলেন সব সময়। পড়েছেন নিন্দার মুখেও। তবু এসব পার করে তিনি এগিয়েছিলেন নিজের মতো করে, যেভাবে তিনি চেয়েছিলেন।
আজ ৩০ মে, চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে থেমে যায় তাঁর ক্যামেরা। কিন্তু তাঁর ছাপ আজও রয়ে গেছে। কেমন ছিল তাঁর সিনেমার দর্শন ও ভাষা?
সিনেমা বলতে আমরা অনেকেই বুঝি গল্প আর নাটকীয়তা। কিন্তু কিছু নির্মাতা আছেন, যাঁরা সিনেমাকে দেখেন একদম অন্যভাবে। ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। তাঁর ছবিগুলো দেখে মনে হয়, তিনি শুধুই গল্প বলতে চাননি। বরং বোঝাতে চেয়েছেন গল্পের ভেতরের আবহাওয়াটা। তিনি চেয়েছেন আমরা যেন শুধু চরিত্রদের কথা না শুনি।
ঋতুপর্ণর সিনেমা ধীর লয়ে চলে। কিন্তু একটু মন দিয়ে তাকালে বোঝা যায়, এই ধীরগতির মধ্যেই আসলে অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে। তাঁর সিনেমার চরিত্রদের মধ্যে চলে সম্পর্কের টানাপোড়েন, নিজের সঙ্গে নিজেরই সংঘর্ষ কিংবা না পাওয়ার যন্ত্রণা।
পর্দায় তিনি সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু সেটা প্রেমের গল্পের মতো সহজ করে বলেন না। পরিবার, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, সবকিছুই মধ্যেই তিনি খুঁজেছেন জটিলতা। আর সেই জটিলতাকে ভয় না পেয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষ অনেক সময় নিজেকেই ঠিকমতো চেনে না। সেই অচেনা নিজেকেই তিনি সামনে এনে দেখিয়েছেন ছবির পর ছবি। এই দৃষ্টিভঙ্গিই ঋতুপর্ণকে আলাদা করে তোলে। তাঁর সিনেমা মানে যেন একটা প্রশ্নের ফাঁদ, যেখানে প্রত্যেক দর্শক একটু নিজের দিকে তাকিয়ে ফেলতে বাধ্য হন।
ঋতুপর্ণের সিনেমার ভাষা কখনোই সরাসরি ছিল না। যেন কিছু একটা বলা হলো, আবার বলা হলো না। এই ধোঁয়াশার মধ্যেই তিনি খুঁজে নেন সত্যের হদিস। সেটি কোনো পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট না হয়েও রাজনৈতিক। আমরা সব সময় বুঝে উঠতে পারি না ঋতুপর্ণ ঘোষ কী বলতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর সিনেমা দেখে আমাদের মনে হয়, আমাদেরও কিছু বলা ছিল, যা আমরা ঠিকমতো কখনো বলতে পারিনি।
ঋতুপর্ণ অনেক সিনেমাই ‘সংসার’কে কেন্দ্র করে। কিন্তু সেটা কোনো সস্তা পারিবারিক নাটক নয়। উচ্চকণ্ঠের ঝগড়া বা নাটকীয় টুইস্ট নয়। যেমন, ‘উনিশে এপ্রিল’ সিনেমায় মা-মেয়ের দূরত্ব বা ‘উৎসব’-এ যৌথ পরিবারে জমে থাকা চাপা ক্লেশ।ঋতুপর্ণর আরেকটি পরিচয়, তিনি সাহিত্যনির্ভর সিনেমার নির্মাতা। তবে সেটা কখনোই ‘শরৎচন্দ্র’ বা ‘রবীন্দ্রনাথ’-এর লেখা হুবহু পর্দায় তোলা নয়। বরং তাঁদের গল্পকে তিনি নিজের মতো করে বলেছেন। ‘চোখের বালি’ তাঁর হাতে এক নারীর আত্মমুক্তির কাহিনি হয়ে ওঠে, ‘নৌকাডুবি’ পায় নতুন ব্যাখ্যা। ঋতুপর্ণ মনে করতেন, সাহিত্য আর সিনেমার সম্পর্কটা প্রেমের মতো। একজন আরেকজনকে বদলে দেয়। তাঁর সাহিত্যনির্ভর সিনেমাতেও আমরা সেই বদলে যাওয়াটাই দেখি।
ঋতুপর্ণর আরেক বড় অবদান, বাংলা সিনেমায় যৌন-পরিচয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা নিয়ে আসা। ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ ছবিগুলোতে তিনি তুলে ধরেন সমকামী পরিচয়ের মানুষের জীবনের জটিলতাকে। তবে সেটা দূর থেকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে নয়, বরং একেবারে মানবিক জায়গা থেকে।
চিত্রাঙ্গদাকে ঋতুর একপ্রকার আত্মজীবনী বলা চলে। তিনি পুরুষ হয়ে জন্মালেও নিজের ভেতরে নারীর সত্তাকে বেশি আপন মনে করতেন। নিজের এই দুই সত্তাকে তিনি আলাদা করে দেখেননি, বরং দুটিকেই একসঙ্গে নিয়ে চলেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। সমাজ আর পরিবারে এই অবস্থান কতটা কঠিন, সেটা ঋতুপর্ণর চেয়ে ভালো কেউ জানতেন না। তাই তিনি নিজেই অভিনয় করেন সেই চরিত্রে। আর এমনভাবে সেটা ফুটিয়ে তোলেন যে বাস্তব আর সিনেমার তফাতই মুছে যায়।
তাঁর সিনেমার অনেক চরিত্রের মতো ঋতুপর্ণও কখনো নিজেকে আড়াল করেননি। তিনি জানতেন, নিজের জীবনের যে সত্যগুলো অনেকেই বলতে ভয় পান, সেগুলোই সবচেয়ে বেশি সাহসী। আর এই ব্যক্তিগত সত্যই তাঁর সিনেমাকে দিয়েছে গভীরতা। যেখানে অন্যেরা গল্প বলেন, আর ঋতুপর্ণ বলে ফেলেন নিজেকে।
আজ ক্ষণজন্মা চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুদিন। বাংলা চলচ্চিত্রকে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। কেমন ছিল তাঁর সিনেমা-দর্শন। লিখেছেন গৌতম কে শুভ
বাংলা সিনেমার ইতিহাস লিখতে বসলে যাঁর নাম না লিখে উপায় নেই, তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষ। তিনি এমন কিছু গল্প পর্দায় তুলে এনেছেন, যা মানুষকে ভাবতে বাধ্য করেছে। আবার আবেগেও ভরিয়ে দিয়েছে। তবে তিনি শুধু নির্মাতাই ছিলেন না। তাঁর পোশাক, চলাফেরা ও নিজেকে প্রকাশ করার ভঙ্গি নিয়েও চলত অনেক কথা। আলোচনায় ছিলেন সব সময়। পড়েছেন নিন্দার মুখেও। তবু এসব পার করে তিনি এগিয়েছিলেন নিজের মতো করে, যেভাবে তিনি চেয়েছিলেন।
আজ ৩০ মে, চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে থেমে যায় তাঁর ক্যামেরা। কিন্তু তাঁর ছাপ আজও রয়ে গেছে। কেমন ছিল তাঁর সিনেমার দর্শন ও ভাষা?
সিনেমা বলতে আমরা অনেকেই বুঝি গল্প আর নাটকীয়তা। কিন্তু কিছু নির্মাতা আছেন, যাঁরা সিনেমাকে দেখেন একদম অন্যভাবে। ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। তাঁর ছবিগুলো দেখে মনে হয়, তিনি শুধুই গল্প বলতে চাননি। বরং বোঝাতে চেয়েছেন গল্পের ভেতরের আবহাওয়াটা। তিনি চেয়েছেন আমরা যেন শুধু চরিত্রদের কথা না শুনি।
ঋতুপর্ণর সিনেমা ধীর লয়ে চলে। কিন্তু একটু মন দিয়ে তাকালে বোঝা যায়, এই ধীরগতির মধ্যেই আসলে অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে। তাঁর সিনেমার চরিত্রদের মধ্যে চলে সম্পর্কের টানাপোড়েন, নিজের সঙ্গে নিজেরই সংঘর্ষ কিংবা না পাওয়ার যন্ত্রণা।
পর্দায় তিনি সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু সেটা প্রেমের গল্পের মতো সহজ করে বলেন না। পরিবার, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, সবকিছুই মধ্যেই তিনি খুঁজেছেন জটিলতা। আর সেই জটিলতাকে ভয় না পেয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষ অনেক সময় নিজেকেই ঠিকমতো চেনে না। সেই অচেনা নিজেকেই তিনি সামনে এনে দেখিয়েছেন ছবির পর ছবি। এই দৃষ্টিভঙ্গিই ঋতুপর্ণকে আলাদা করে তোলে। তাঁর সিনেমা মানে যেন একটা প্রশ্নের ফাঁদ, যেখানে প্রত্যেক দর্শক একটু নিজের দিকে তাকিয়ে ফেলতে বাধ্য হন।
ঋতুপর্ণের সিনেমার ভাষা কখনোই সরাসরি ছিল না। যেন কিছু একটা বলা হলো, আবার বলা হলো না। এই ধোঁয়াশার মধ্যেই তিনি খুঁজে নেন সত্যের হদিস। সেটি কোনো পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট না হয়েও রাজনৈতিক। আমরা সব সময় বুঝে উঠতে পারি না ঋতুপর্ণ ঘোষ কী বলতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর সিনেমা দেখে আমাদের মনে হয়, আমাদেরও কিছু বলা ছিল, যা আমরা ঠিকমতো কখনো বলতে পারিনি।
ঋতুপর্ণ অনেক সিনেমাই ‘সংসার’কে কেন্দ্র করে। কিন্তু সেটা কোনো সস্তা পারিবারিক নাটক নয়। উচ্চকণ্ঠের ঝগড়া বা নাটকীয় টুইস্ট নয়। যেমন, ‘উনিশে এপ্রিল’ সিনেমায় মা-মেয়ের দূরত্ব বা ‘উৎসব’-এ যৌথ পরিবারে জমে থাকা চাপা ক্লেশ।ঋতুপর্ণর আরেকটি পরিচয়, তিনি সাহিত্যনির্ভর সিনেমার নির্মাতা। তবে সেটা কখনোই ‘শরৎচন্দ্র’ বা ‘রবীন্দ্রনাথ’-এর লেখা হুবহু পর্দায় তোলা নয়। বরং তাঁদের গল্পকে তিনি নিজের মতো করে বলেছেন। ‘চোখের বালি’ তাঁর হাতে এক নারীর আত্মমুক্তির কাহিনি হয়ে ওঠে, ‘নৌকাডুবি’ পায় নতুন ব্যাখ্যা। ঋতুপর্ণ মনে করতেন, সাহিত্য আর সিনেমার সম্পর্কটা প্রেমের মতো। একজন আরেকজনকে বদলে দেয়। তাঁর সাহিত্যনির্ভর সিনেমাতেও আমরা সেই বদলে যাওয়াটাই দেখি।
ঋতুপর্ণর আরেক বড় অবদান, বাংলা সিনেমায় যৌন-পরিচয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা নিয়ে আসা। ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ ছবিগুলোতে তিনি তুলে ধরেন সমকামী পরিচয়ের মানুষের জীবনের জটিলতাকে। তবে সেটা দূর থেকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে নয়, বরং একেবারে মানবিক জায়গা থেকে।
চিত্রাঙ্গদাকে ঋতুর একপ্রকার আত্মজীবনী বলা চলে। তিনি পুরুষ হয়ে জন্মালেও নিজের ভেতরে নারীর সত্তাকে বেশি আপন মনে করতেন। নিজের এই দুই সত্তাকে তিনি আলাদা করে দেখেননি, বরং দুটিকেই একসঙ্গে নিয়ে চলেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। সমাজ আর পরিবারে এই অবস্থান কতটা কঠিন, সেটা ঋতুপর্ণর চেয়ে ভালো কেউ জানতেন না। তাই তিনি নিজেই অভিনয় করেন সেই চরিত্রে। আর এমনভাবে সেটা ফুটিয়ে তোলেন যে বাস্তব আর সিনেমার তফাতই মুছে যায়।
তাঁর সিনেমার অনেক চরিত্রের মতো ঋতুপর্ণও কখনো নিজেকে আড়াল করেননি। তিনি জানতেন, নিজের জীবনের যে সত্যগুলো অনেকেই বলতে ভয় পান, সেগুলোই সবচেয়ে বেশি সাহসী। আর এই ব্যক্তিগত সত্যই তাঁর সিনেমাকে দিয়েছে গভীরতা। যেখানে অন্যেরা গল্প বলেন, আর ঋতুপর্ণ বলে ফেলেন নিজেকে।
ঢাকা শহরের যানজট, বৃষ্টি আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নগরবাসীর জন্য একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে মেট্রোরেল। যদিও এটি স্বস্তির একটি বিকল্প, তবু বাড়তি চাপ, সীমিত ফ্রিকোয়েন্সি আর যান্ত্রিক সমস্যার কারণে অনেক সময় সেই স্বস্তি রূপ নেয় নতুন দুর্ভোগে। এই নির্ভরতাই যেন কখনো কখনো পরিণত হয় একধরনের অসহায়ত্বে।
১৫ দিন আগেবৃষ্টি কি সত্যিই শুধু আবহাওয়া-বিষয়ক কিছু, নাকি আমাদের সেই সব অনুচ্চারিত অভিমান, যেগুলো বের হতে না পেরে জমে আছে মেঘ হয়ে? আজকের বৃষ্টির ঠিক পরপর লিখেছেন শতাব্দীকা ঊর্মি বৃষ্টি নামে। ধীরে ধীরে, কিংবা হঠাৎ। জানালার কাচ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে একেকটি ফোঁটা, যেন বিষণ্ন কোনো চিঠির অক্ষর। শহরের ব্যস্ত সড়কও
১৫ দিন আগেভাষার অধিকারের জন্য রক্ত দিতে হয়েছিল কেবল ঢাকায় নয়, শিলচরেও। ১৯৬১ সালের (১৯ মে) আজকের দিনে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালিরা অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে রেললাইন অবরোধ করলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১১ জন। এই আন্দোলন ছিল শুধু ভাষার জন্য নয়—ছিল জাতিগত বৈষম্য ও রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক
১৫ দিন আগেওমর খৈয়ামের নাম শুনলেই যেন চোখে ভেসে ওঠে এক ঘোরের ছবি। হাতে সুরার পেয়ালা, চোখে তারার ঝিকিমিকি, আর ঠোঁটে দার্শনিক ছন্দ। ইংরেজ সাহিত্যিক এদওয়ার্ড ফিটজজেরাল্ডের উনিশ শতকের অনুবাদে রোমান্টিক, আনন্দবাদী এক কবির প্রতিমা গেঁথে গেছে পশ্চিমা কল্পনায়। যিনি জীবনের অনিত্যতা
১৫ দিন আগে