leadT1ad

যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন শেষ হচ্ছে

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ০২
গত ৩০ সেপ্টম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারে অচলাবস্থা চলছে। ছবি: সংগৃহীত।

পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে সমঝোতার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম শাটডাউন বা সরকারের অচলবাস্থার অবসান হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আবার চালু করা নিয়ে সিনেটে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্রেটিক দলের সদস্যরা। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারে রেকর্ড ৪০ দিন ধরে চলা শাটডাউন বা অচলাবস্থার অবসান হবে।

৬০-৪০ ভোটে পাস হওয়া এ প্রস্তাবটি ডেমোক্র্যাটদের ফিলিবাস্টার ভেঙে দেয়। আটজন ডেমোক্র্যাট রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে এই দ্বিদলীয় অর্থায়ন বিলটি এগিয়ে নেন। প্রস্তাবটি সরকারকে ২০২৬ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থায়ন দেবে। এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ফেডারেল কর্মীদের সুরক্ষা বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের দাবি আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রায় ১৪ লাখ বেতনহীন সরকারি কর্মচারী এবং নানা স্থগিত সেবায় তাৎক্ষণিক স্বস্তি আসবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বাজেট ইস্যুতে দলগুলোর বিভাজন রয়ে গেছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এই শাটডাউন শুরু হয়। এটি হয় ২০২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে দলীয় দ্বন্দ্বের কারণে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সিনেটের রিপাবলিকান নেতা জন থুন সরকারকে অর্থায়নের সঙ্গে কিছু নীতিগত শর্ত যুক্ত করতে চেয়েছিলেন—যেমন, স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকিতে সীমাবদ্ধতা ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। ডেমোক্র্যাটরা তাদের নেতা চাক শুমারের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সমঝোতায় রাজি হননি। তারা মনে করেন, এই ইস্যুটি তাদের জন্য অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (এসিএ)-এর মেয়াদোত্তীর্ণ কর ছাড় পুনর্নবায়নের একটি চাপ তৈরির সুযোগ।

এই অচলাবস্থা ৪০ দিন পার করে ২০১৮–১৯ সালের ৩৫ দিনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এর ফলে—১৪ লাখ ফেডারেল কর্মচারী বেতন ছাড়াই ঘরে বসে থাকেন। ক্লান্ত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের কারণে হাজারো ফ্লাইট বাতিল হয়। নিম্নআয়ের কোটি মানুষ খাদ্য সহায়তা (এসএনএপি) বন্ধের মুখে পড়ে। নানা আইনি জটিলতা তৈরি হয় সরকারি সেবা ও সংস্থার কার্যক্রমে।

শেষ দিকে রিপাবলিকান সেনেটর সুসান কলিন্স এবং মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটরা—জিন শাহিন, ম্যাগি হাসান ও অ্যাঙ্গাস কিং—আলোচনায় সক্রিয় হন। হোয়াইট হাউসের সঙ্গে বন্ধ দরজার বৈঠকে ফেডারেল কর্মীদের পুনর্বহাল নিশ্চিত করে এক সমঝোতার পথ তৈরি হয়।

৯ নভেম্বর রাতে সিনেট ৬০-৪০ ভোটে বিতর্ক বন্ধের প্রস্তাব (ক্লোচার) পাস করে। এতে সাতজন ডেমোক্র্যাট ও একজন স্বতন্ত্র সদস্য দলীয় সীমা অতিক্রম করেন। যদিও প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটরা বিরোধিতা করেন। এখনো কয়েকটি আনুষ্ঠানিক ধাপ বাকি। যেমন, বিলের পূর্ণাঙ্গ সংযোজন ও চূড়ান্ত ভোট। তা ১০ নভেম্বরের মধ্যেই হতে পারে। রিপাবলিকান সেনেটর র‌্যান্ড পল হেম্প নীতি নিয়ে আপত্তি জানালেও নেতারা দ্রুত বিল পাসের লক্ষ্য নিয়েছেন।

পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসও সপ্তাহের শেষে বিলটি বিবেচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রিপাবলিকান ও কিছু মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটের সমর্থনে এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস সতর্ক করেছেন, এসিএ কর ছাড় পুনর্বহাল ছাড়া তারা সমর্থন দেবেন না।

চুক্তির মূল বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে—

পূর্ণাঙ্গ অর্থায়ন:

কৃষি, প্রবীণকল্যাণ, সামরিক নির্মাণ, খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এবং কংগ্রেসের কার্যক্রমের জন্য সম্পূর্ণ বাজেট বরাদ্দ।

স্বল্পমেয়াদি সম্প্রসারণ:

অন্যান্য সংস্থাকে ২০২৬ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থায়ন।

কর্মী সুরক্ষা:

বরখাস্ত রদ, সকল কর্মীর বকেয়া পরিশোধ এবং বিল কার্যকালের মধ্যে নতুন ছাঁটাই নিষিদ্ধ।

স্বাস্থ্যসেবা অঙ্গীকার:

ডিসেম্বরে এসিএ কর ছাড় পুনর্বহালের বিষয়ে সিনেটে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, যদিও এটি বিলের আনুষ্ঠানিক অংশ নয়।

এই চুক্তি বিতর্কিত ইস্যু—যেমন অভিবাসন বা করছাড়—এড়িয়ে সরকার চালু রাখায় গুরুত্ব দিয়েছে।

রিপাবলিকান নেতা জন থুন একে ‘৪০ দিনের অচলাবস্থার আশাব্যঞ্জক অবসান’ বলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এটিকে ‘খুব কাছাকাছি সমাধান’ হিসেবে অভিহিত করেন।

মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট নেতা টিম কেইন বলেন, কর্মী সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ভোটের প্রতিশ্রুতি ‘বাস্তবসম্মত সর্বোত্তম ফলাফল।’ শাহিন জোর দেন ‘নির্দিষ্ট তারিখে নিশ্চয় ভোটের’ওপর।

প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার, এলিজাবেথ ওয়ারেন ও বার্নি স্যান্ডার্স একে ‘বড় ভুল’ ও ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলেন। শুমার অভিযোগ করেন, ট্রাম্প জনগণকে জিম্মি করেছেন। ওয়ারেন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। স্যান্ডার্স বলেন, এই সমঝোতা লাখ লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসা ব্যয় বাড়াবে।

বিল পাস হলে এফএএ, টিএসএ ও ইউএসডিএ-র মতো সংস্থার কার্যক্রম দ্রুত স্বাভাবিক হবে। এতে ভ্রমণ ও খাদ্য সহায়তা খাতে স্থবিরতা দূর হবে। অর্থনীতিবিদরা অনুমান করছেন, এই শাটডাউনের কারণে ২০–৩০ বিলিয়ন ডলার উৎপাদনক্ষতি হয়েছে। ফেডারেল কর্মীদের জন্য বকেয়া বেতন সাময়িক স্বস্তি আনবে, যদিও অনেকেই ইতোমধ্যে ঋণ ও খাদ্য ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছেন।

দীর্ঘমেয়াদে এই চুক্তি ২০২৬ সালের বাজেট আলোচনার জন্য সময় দিচ্ছে, তবে রাজনৈতিক বিভাজন অটুট রয়ে গেছে। ডেমোক্র্যাটরা ভবিষ্যতে এসিএ ভোটকে নিজেদের সাফল্য মনে করছেন, আর রিপাবলিকানরা মনে করছেন এটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে একটি সংকট নিরসনের সুযোগ। এসিএ কর ছাড় না বাড়ালে ১.৩ কোটি মানুষের প্রিমিয়াম বাড়তে পারে।

এই সমঝোতার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বস্তি ও সন্দেহের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে একে ‘দ্বিদলীয় সাফল্য’ বলছেন। খবর প্রকাশের পর বিটকয়নের দাম ১ লাখ ৬ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো এ ঘটনাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হিসেবে দেখিয়েছে। অন্যদিকে, স্যান্ডার্সের সমালোচনায়ও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

১০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার এখনো বন্ধ থাকলেও, পুনরায় খোলার পথ এখন আগের চেয়ে অনেক স্পষ্ট। এই সংকট যুক্তরাষ্ট্রের বিভক্ত রাজনৈতিক বাস্তবতা ও বাজেট ব্যবস্থার দুর্বলতাকে আবারও উন্মোচন করেছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স

Ad 300x250

সম্পর্কিত