ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা
মো. ইসতিয়াক
দেশের বেসরকারি ব্যাংকিং খাতে টানা পদত্যাগে অস্বাভাবিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাত্র ২২ দিনের ব্যবধানে চারটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
এই ঘটনায় ব্যাংক খাতের ভেতরে নেতৃত্বের স্থায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এটি শুধুই ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়, বরং রাজনৈতিক পরিবর্তন, পরিচালনা পর্ষদে হঠাৎ রদবদল, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং নির্দিষ্ট আর্থিক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তৈরি চাপের ফল।
মেঘনা ব্যাংকের এমডি কাজী আহ্সান খলিল গত বছরের (২০২৪) এপ্রিলে তিন বছরের জন্য দায়িত্ব নেন। ৩৫ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে তিনি প্রাইম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মেঘনা ব্যাংকে যোগদানের আগে তিনি এনআরবি ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৫ মাসের মাথায় ২৭ জুলাই কাজী আহ্সান খলিল পদত্যাগ করেন। কাজী আহ্সান খলিল স্ট্রিমকে বলেন, ‘নতুন পরিচালনা পর্ষদ হঠাৎ আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল। আমি এতে রাজি হইনি, তাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে, তদন্ত করলে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।’
চলতি বছরের মার্চে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর শেয়ারধারী ও স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নতুন সদস্য নিয়োগ করা হয়। শেয়ারধারীদের মধ্যে ছিলেন উজমা চৌধুরী ও তানভীর আহমেদ, এবং স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই নির্বাহী পরিচালক মামুনুল হক ও রজব আলী, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নজরুল ইসলাম, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত এমডি হাবিবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ আলি আকতার রিজভী।
৩১ জুলাই পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। জানা গেছে, ব্যাংকের ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিলসের নামে ৮৮ কোটি টাকার ঋণ ছিল, যার বিপরীতে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের অনুমোদন দেয় ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ।
মোশারফ হোসেন এই অনুমোদনে আপত্তি জানিয়েছিলেন। ব্যাংকটির একটি সূত্র জানায়, পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয় এবং দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। আপত্তিতে অটল থাকায় পদত্যাগের পথ বেছে নেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মোশারফ হোসেন চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিন বছরের জন্য যোগ দেন। এর আগে তিনি ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের এমডি ছিলেন। ব্যাংকিং পেশায় তিনি যুক্ত হন ১৯৮৭ সালে, উত্তরা ব্যাংকে অবেক্ষাধীন কর্মকর্তা হিসেবে।
১ আগস্ট পদত্যাগ করেন সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসেন। তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা অবস্থায় তিনি পদত্যাগ করেন। এই বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের রদবদল ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবিদুর রহমান চৌধুরী চলতি দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এম এ কাশেম বলেন, ‘তিনি (এমডি নুরুদ্দি) পদত্যাগ করেছেন। কী কারণে করেছেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসেন ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন।
চলতি মাসে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন পরিচালক আলমগীর কবির, যিনি ২০০৪ সাল থেকে এক সময় টানা ২০ বছর এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত এক দেড় বছরে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার নাম আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাউথইস্ট ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের’ অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদে রদবদল হয়। এর ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরে সাউথইস্টের চেয়ারম্যান পদে ফিরিয়ে আনা হয় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক এম এ কাশেমকে। চেয়ারম্যানের পদ হারালেও পরিচালক পদে থেকে যান আলমগীর কবির।
সবশেষ ১৭ আগস্ট পদত্যাগ করেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। গত বছরের অক্টোবর মাসে তিনি দায়িত্ব নেন। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান পরিচালক হঠাৎ সক্রিয় হয়ে অফিসে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ভেতরের চাপের কারণে এমডি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
তবে শেখ মোহাম্মদ মারুফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ কারণে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ঢাকা ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ। এর আগে তিনি সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি ছিলেন।
ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মকানুন মানতে ব্যর্থ হওয়ায় পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি। সোমবারের পর্ষদ সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজুলেশন ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর মোহাম্মদ জাহির হোসেন এই প্রসঙ্গে স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘চার ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি ব্যাংক খাতের গভীর সংকটের ইঙ্গিত। শীর্ষ নির্বাহীর পদে স্থায়িত্ব না থাকলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যাহত হয়। বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হয়। চারটি এমডির পদত্যাগই ব্যাংক খাতের স্থায়িত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এমডি পদত্যাগ করলে তার কারণ লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হয়। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পদত্যাগ কার্যকর হবে কি না। তবে সাম্প্রতিক টানা পদত্যাগ ব্যাংকিং খাতের জন্য নেতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি পদত্যাগের কারণ ও প্রেক্ষাপট যাচাই করে। তবে একযোগে চার ব্যাংকের এমডি পদত্যাগের ঘটনা বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা হ্রাস করতে পারে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা কাঠামোতে স্বচ্ছতা ও স্বায়ত্তশাসন ছাড়া শীর্ষ স্তরের অস্থিরতা চলতেই পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘আগামী মাসগুলোতে নতুন এমডি নিয়োগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি এবং পরিচালনা পর্ষদের স্থিতিশীলতা খাতের অস্থিরতা মোকাবেলায় মূল চাবিকাঠি হবে।
২২ দিনের ব্যবধানে মেঘনা, কমার্স, সাউথইস্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি পদত্যাগে এখন ব্যাংক খাতের মূল প্রশ্ন—এটি কি কেবল কাকতালীয়, নাকি আরও বড় সংকটের ইঙ্গিত?’
দেশের বেসরকারি ব্যাংকিং খাতে টানা পদত্যাগে অস্বাভাবিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাত্র ২২ দিনের ব্যবধানে চারটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
এই ঘটনায় ব্যাংক খাতের ভেতরে নেতৃত্বের স্থায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এটি শুধুই ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়, বরং রাজনৈতিক পরিবর্তন, পরিচালনা পর্ষদে হঠাৎ রদবদল, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং নির্দিষ্ট আর্থিক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তৈরি চাপের ফল।
মেঘনা ব্যাংকের এমডি কাজী আহ্সান খলিল গত বছরের (২০২৪) এপ্রিলে তিন বছরের জন্য দায়িত্ব নেন। ৩৫ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে তিনি প্রাইম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মেঘনা ব্যাংকে যোগদানের আগে তিনি এনআরবি ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৫ মাসের মাথায় ২৭ জুলাই কাজী আহ্সান খলিল পদত্যাগ করেন। কাজী আহ্সান খলিল স্ট্রিমকে বলেন, ‘নতুন পরিচালনা পর্ষদ হঠাৎ আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল। আমি এতে রাজি হইনি, তাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে, তদন্ত করলে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।’
চলতি বছরের মার্চে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর শেয়ারধারী ও স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নতুন সদস্য নিয়োগ করা হয়। শেয়ারধারীদের মধ্যে ছিলেন উজমা চৌধুরী ও তানভীর আহমেদ, এবং স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই নির্বাহী পরিচালক মামুনুল হক ও রজব আলী, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নজরুল ইসলাম, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত এমডি হাবিবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ আলি আকতার রিজভী।
৩১ জুলাই পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। জানা গেছে, ব্যাংকের ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিলসের নামে ৮৮ কোটি টাকার ঋণ ছিল, যার বিপরীতে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের অনুমোদন দেয় ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ।
মোশারফ হোসেন এই অনুমোদনে আপত্তি জানিয়েছিলেন। ব্যাংকটির একটি সূত্র জানায়, পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয় এবং দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। আপত্তিতে অটল থাকায় পদত্যাগের পথ বেছে নেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মোশারফ হোসেন চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিন বছরের জন্য যোগ দেন। এর আগে তিনি ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের এমডি ছিলেন। ব্যাংকিং পেশায় তিনি যুক্ত হন ১৯৮৭ সালে, উত্তরা ব্যাংকে অবেক্ষাধীন কর্মকর্তা হিসেবে।
১ আগস্ট পদত্যাগ করেন সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসেন। তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা অবস্থায় তিনি পদত্যাগ করেন। এই বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের রদবদল ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবিদুর রহমান চৌধুরী চলতি দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এম এ কাশেম বলেন, ‘তিনি (এমডি নুরুদ্দি) পদত্যাগ করেছেন। কী কারণে করেছেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসেন ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন।
চলতি মাসে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন পরিচালক আলমগীর কবির, যিনি ২০০৪ সাল থেকে এক সময় টানা ২০ বছর এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত এক দেড় বছরে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার নাম আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাউথইস্ট ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের’ অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদে রদবদল হয়। এর ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরে সাউথইস্টের চেয়ারম্যান পদে ফিরিয়ে আনা হয় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক এম এ কাশেমকে। চেয়ারম্যানের পদ হারালেও পরিচালক পদে থেকে যান আলমগীর কবির।
সবশেষ ১৭ আগস্ট পদত্যাগ করেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। গত বছরের অক্টোবর মাসে তিনি দায়িত্ব নেন। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান পরিচালক হঠাৎ সক্রিয় হয়ে অফিসে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ভেতরের চাপের কারণে এমডি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
তবে শেখ মোহাম্মদ মারুফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ কারণে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ঢাকা ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ। এর আগে তিনি সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি ছিলেন।
ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মকানুন মানতে ব্যর্থ হওয়ায় পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি। সোমবারের পর্ষদ সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজুলেশন ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর মোহাম্মদ জাহির হোসেন এই প্রসঙ্গে স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘চার ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি ব্যাংক খাতের গভীর সংকটের ইঙ্গিত। শীর্ষ নির্বাহীর পদে স্থায়িত্ব না থাকলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যাহত হয়। বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হয়। চারটি এমডির পদত্যাগই ব্যাংক খাতের স্থায়িত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এমডি পদত্যাগ করলে তার কারণ লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হয়। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পদত্যাগ কার্যকর হবে কি না। তবে সাম্প্রতিক টানা পদত্যাগ ব্যাংকিং খাতের জন্য নেতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি পদত্যাগের কারণ ও প্রেক্ষাপট যাচাই করে। তবে একযোগে চার ব্যাংকের এমডি পদত্যাগের ঘটনা বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা হ্রাস করতে পারে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা কাঠামোতে স্বচ্ছতা ও স্বায়ত্তশাসন ছাড়া শীর্ষ স্তরের অস্থিরতা চলতেই পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘আগামী মাসগুলোতে নতুন এমডি নিয়োগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি এবং পরিচালনা পর্ষদের স্থিতিশীলতা খাতের অস্থিরতা মোকাবেলায় মূল চাবিকাঠি হবে।
২২ দিনের ব্যবধানে মেঘনা, কমার্স, সাউথইস্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি পদত্যাগে এখন ব্যাংক খাতের মূল প্রশ্ন—এটি কি কেবল কাকতালীয়, নাকি আরও বড় সংকটের ইঙ্গিত?’
অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় প্রতিটি সমস্যার দায় গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পেতে চেয়েছে।
৩৭ মিনিট আগেআগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘গণহত্যাকারী’ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার নাম। আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়।
১ ঘণ্টা আগেজুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম তদারকির জন্য কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বা উপদেষ্টা। জেলা কমিটির সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা কমিটির সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্ম
২ ঘণ্টা আগেএক যুগ আগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন সুখরঞ্জন বালি। এবার সেই সুখরঞ্জন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন।
৩ ঘণ্টা আগে