সরকারের ভাষ্য, গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও বেতন কাঠামো অপরিবর্তিত থাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের প্রকৃত আয় কমেছে। ফলে এই পদক্ষেপ ‘সময়োপযোগী’। পে কমিশন গঠনের পর গত বৃহস্পতিবার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও আয়বৈষম্য স্পষ্টভাবে বেড়ে গেছে। সরকারি চাকরিজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রে সীমিত হয়ে পড়েছে।’
স্ট্রিম প্রতিবেদক
এক দশক পর চলতি বছরের ২৪ জুলাইয়ে নতুন সরকারি পে-কমিশন গঠন করল অন্তর্বর্তী সরকার। এর লক্ষ্য—সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করা। ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে এই কমিশনকে।
সরকারের ভাষ্য, গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও বেতন কাঠামো অপরিবর্তিত থাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের প্রকৃত আয় কমেছে। ফলে এই পদক্ষেপ ‘সময়োপযোগী’। পে কমিশন গঠনের পর গত বৃহস্পতিবার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও আয়বৈষম্য স্পষ্টভাবে বেড়ে গেছে। সরকারি চাকরিজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রে সীমিত হয়ে পড়েছে।’
নতুন পে কমিশন গঠনের খবর প্রকাশের পর আলোচনা শুরু হয়েছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে। দেশে ৩ কোটির বেশি বেসরকারি চাকরিজীবীর রয়েছেন। তাদের আয়-ব্যয়ের বৈষম্য দেখার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ আছে কি?
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর্মকর্তা পর্যায়ে ১৩ হাজার ৪৮৩ কোটি, কর্মচারী পর্যায়ে ৩০ হাজার ৪৮ কোটি এবং সামগ্রিকভাবে ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা আসে জাতীয় রাজস্ব থেকে। আর এই সময়েই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছে। এই রাজস্ব ঘাটতিকে বলা হচ্ছে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে এখন মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ (২০২৫ সালের মে মাস অনুযায়ী)। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, আর খোলাবাজারে চাল, ডাল, তেল, ডিম, মুরগি এমনকি সবজির দামও সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কোনো বেতন কাঠামোই নেই। প্রতিটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের সুবিধামতো কর্মীদের বেতন নির্ধারণ করে। এই বিপুল সংখ্যক বেসরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে সরকারের কি কোনো পরিকল্পনা আছে?
সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামোর প্রভাব সামগ্রিকভাবে দেশের বাজারের ওপরেই পড়বে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিক বলেন, ‘সরকারি বেতন বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় এখন বেসরকারি খাতেও মজুরি বাড়ানোর চাপ তৈরি হবে। সামগ্রিকভাবে মজুরি বাড়ার ফলে চাহিদা ও উৎপাদন খরচ–উভয় দিক থেকেই মূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে গেলে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সব ধরনের শিক্ষার্থী এখন বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষার্থীদের এই বিসিএসপ্রীতি নিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিক বলেন, এই শিক্ষার্থীরা জানে, বেসরকারি চাকরিতে নেই কোনো নিরাপত্তা, নেই স্থায়িত্ব, নেই ন্যূনতম মর্যাদা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই কর্মীদের এক মাসের বেসিক দিয়ে ছাঁটাই করে দেওয়ার নজির সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনি সুরক্ষাও সীমিত।
অধ্যাপক শাহাদাতের বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় বাংলাদেশ শ্রম আইনের সংজ্ঞাতেও। সেখানে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনামূলক কর্মকর্তা ‘শ্রমিক’ নন। ফলে তাঁদের জন্য প্রযোজ্য কেবল ১৮৭২ সালের ঔপনিবেশিক যুগের চুক্তি আইন। এতে তাঁদের কর্মক্ষেত্রে অধিকারের কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই।
শুধু তাই নয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড কিংবা গ্র্যাচুইটি—কোনো কিছুই বাধ্যতামূলক নয়। ফলে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান এগুলো সরাসরি নাকচ করে দেয়। স্বাস্থ্য বিমার অবস্থাও একই। স্বাস্থ্যবিমার পরিবর্তে বেতনের সঙ্গে সামান্য ভাতা ধরিয়ে দেওয়া হয়। বেতন কাঠামোও অদৃশ্য।
অধ্যাপক শাহাদাত জানান, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির স্থায়ীকরণ নেই, বেতন বৃদ্ধি নেই। উৎসব বোনাসও নিশ্চিত নয়। সরকারি চাকরিতে যেখানে তিনটি উৎসব বোনাস রয়েছে, সেখানে বেসরকারি খাতে দুই ঈদেও পূর্ণ বোনাস দেওয়ার রেওয়াজ এখন আর নেই। অনেক সময় অর্ধেক বোনাস দেওয়া হয়, সেটিও নির্ভর করে কর্মীর চুক্তিতে কী লেখা আছে, তার ওপর। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন বা কর্মী সংগঠন গঠনের অধিকার নেই। ফলে কর্মীদের নিজেদের কথা বলার কোনো জায়গা নেই।
বিবিএসের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৮৫ শতাংশই বেসরকারি খাতে। এই খাতের মধ্যে সেবা খাতের অবদান এখন জিডিপির ৫৩ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিল্প খাতের অবদান ৩৫ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং কৃষি খাত ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গার্মেন্টস, আইটি, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য, নির্মাণ, শিক্ষা, রিটেইল, লজিস্টিকসসহ প্রতিটি খাতে লাখ লাখ মানুষ কাজ করছেন—কিন্তু নেই শ্রমনীতি, নেই নিরাপত্তা।
প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান সাউথ টেকের প্রধান নির্বাহী সায়েদ মামুন কাদের বলেন, ‘আমরা দেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী খাতে কাজ করি। অথচ আমাদের জন্য নেই প্রভিডেন্ট ফান্ড, নেই স্বাস্থ্য বিমা। প্রতিষ্ঠানের খরচ কমাতে সব সুবিধা একে একে তুলে নেওয়া হচ্ছে।’
২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির পর দেশে হাজার হাজার বেসরকারি কর্মচারী ছাঁটাই হন। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতন ৩০-৪০ শতাংশ কমিয়ে নতুন চুক্তি করতে বাধ্য করে। অনেকে বাধ্য হয়ে পারিবারিক সঞ্চয় ভেঙে খরচ চালান।
সরকার করোনা-পরবর্তী সময়ে পোশাক খাতের ও ব্যাংক খাতের চাকরিজীবীদের জন্য বেতনবিষয়ক কিছু নীতিমালা তৈরি করে। কিন্তু বাকি খাতগুলো সম্পূর্ণ অবহেলিত থেকে যায়। অথচ কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ ওই খাতগুলোতেই নিয়োজিত।
বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীর অধিকার আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত আছে। ভারতে যেকোনো হোয়াইট-কলার (যেসব কর্মীরা মানসিক শ্রম ও যোগাযোগ দক্ষতা ব্যবহার করে কাজ করেন) চাকরিজীবীর জন্য ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), অবসরকালীন অনুদান (গ্র্যাচুইটি) ও স্বাস্থ্যবিমা বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রীয় সরকার এই সুবিধাগুলো তদারকি করে কর্মী ভবিষ্য তহবিল সংস্থা (ইপিএফও) এবং কর্মী রাষ্ট্রীয় বীমা করপোরেশন (ইএসআইসি)-এর মাধ্যমে। ২০২১ সালের মজুরি আইনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতেও ন্যূনতম বেতন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে ন্যাশনাল মিনিমাম ওয়েজ আইন, ১৯৯৮ অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মজীবীর জন্য ন্যূনতম মজুরি বাধ্যতামূলক এবং প্রতিবছর তা হালনাগাদ করা হয়। পাশাপাশি, ‘অটো-এনরোলমেন্ট’ পদ্ধতিতে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন সঞ্চয় বাধ্যতামূলক রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি স্বাস্থ্যসেবার (এনএইচএস) ক্ষেত্রেও অনেক প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ রাখে।
জার্মানিতে সামাজিক নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, সকল চাকরিজীবী বাধ্যতামূলকভাবে অবসরভাতা, স্বাস্থ্যবিমা, দুর্ঘটনা বিমা, বেকারত্ব বিমা ও পরিচর্যা বিমার আওতায় থাকেন। দেশটিতে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় ইউনিয়ন ও শ্রম আদালত রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়াতেও রয়েছে একই ধরনের বাধ্যতামূলক কাঠামো—জাতীয় পেনশন সেবা (এনপিএস) ও জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা সেবা (এনএইচআইএস)। এই দুটি সংস্থার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের কর্মীদের জন্য অবসর ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া ছাঁটাই, অতিরিক্ত কাজ ও ছুটির ক্ষেত্রে দেশটিতে শ্রম আইন কার্যকর রয়েছে।
সায়েদ মামুন কাদের বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নিয়মিত কমিশন গঠন হয়, তাদের কথা শোনা হয়, নীতিমালা করা হয়। অথচ দেশের ৩ কোটির বেশি বেসরকারি চাকরিজীবী যেন এক ‘অদৃশ্য শ্রেণি’, যাদের জীবনের নিরাপত্তা নির্ভর করে মালিকপক্ষের ইচ্ছেমতো চুক্তির ওপর।’
এই নতুন পে কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় সামগ্রিকভাবে তাদের জীবনমান নিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। লক্ষণীয়, এই প্রতিটি বিষয়ই বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু যারা সরকারি চাকরিজীবী নন, তাদেরকে নিয়ে সরকারের কি কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?
এক দশক পর চলতি বছরের ২৪ জুলাইয়ে নতুন সরকারি পে-কমিশন গঠন করল অন্তর্বর্তী সরকার। এর লক্ষ্য—সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করা। ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে এই কমিশনকে।
সরকারের ভাষ্য, গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও বেতন কাঠামো অপরিবর্তিত থাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের প্রকৃত আয় কমেছে। ফলে এই পদক্ষেপ ‘সময়োপযোগী’। পে কমিশন গঠনের পর গত বৃহস্পতিবার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও আয়বৈষম্য স্পষ্টভাবে বেড়ে গেছে। সরকারি চাকরিজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রে সীমিত হয়ে পড়েছে।’
নতুন পে কমিশন গঠনের খবর প্রকাশের পর আলোচনা শুরু হয়েছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে। দেশে ৩ কোটির বেশি বেসরকারি চাকরিজীবীর রয়েছেন। তাদের আয়-ব্যয়ের বৈষম্য দেখার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ আছে কি?
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর্মকর্তা পর্যায়ে ১৩ হাজার ৪৮৩ কোটি, কর্মচারী পর্যায়ে ৩০ হাজার ৪৮ কোটি এবং সামগ্রিকভাবে ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৪১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা আসে জাতীয় রাজস্ব থেকে। আর এই সময়েই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছে। এই রাজস্ব ঘাটতিকে বলা হচ্ছে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে এখন মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ (২০২৫ সালের মে মাস অনুযায়ী)। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, আর খোলাবাজারে চাল, ডাল, তেল, ডিম, মুরগি এমনকি সবজির দামও সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কোনো বেতন কাঠামোই নেই। প্রতিটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের সুবিধামতো কর্মীদের বেতন নির্ধারণ করে। এই বিপুল সংখ্যক বেসরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে সরকারের কি কোনো পরিকল্পনা আছে?
সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামোর প্রভাব সামগ্রিকভাবে দেশের বাজারের ওপরেই পড়বে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিক বলেন, ‘সরকারি বেতন বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় এখন বেসরকারি খাতেও মজুরি বাড়ানোর চাপ তৈরি হবে। সামগ্রিকভাবে মজুরি বাড়ার ফলে চাহিদা ও উৎপাদন খরচ–উভয় দিক থেকেই মূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে গেলে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সব ধরনের শিক্ষার্থী এখন বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষার্থীদের এই বিসিএসপ্রীতি নিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিক বলেন, এই শিক্ষার্থীরা জানে, বেসরকারি চাকরিতে নেই কোনো নিরাপত্তা, নেই স্থায়িত্ব, নেই ন্যূনতম মর্যাদা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই কর্মীদের এক মাসের বেসিক দিয়ে ছাঁটাই করে দেওয়ার নজির সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনি সুরক্ষাও সীমিত।
অধ্যাপক শাহাদাতের বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় বাংলাদেশ শ্রম আইনের সংজ্ঞাতেও। সেখানে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনামূলক কর্মকর্তা ‘শ্রমিক’ নন। ফলে তাঁদের জন্য প্রযোজ্য কেবল ১৮৭২ সালের ঔপনিবেশিক যুগের চুক্তি আইন। এতে তাঁদের কর্মক্ষেত্রে অধিকারের কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই।
শুধু তাই নয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড কিংবা গ্র্যাচুইটি—কোনো কিছুই বাধ্যতামূলক নয়। ফলে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান এগুলো সরাসরি নাকচ করে দেয়। স্বাস্থ্য বিমার অবস্থাও একই। স্বাস্থ্যবিমার পরিবর্তে বেতনের সঙ্গে সামান্য ভাতা ধরিয়ে দেওয়া হয়। বেতন কাঠামোও অদৃশ্য।
অধ্যাপক শাহাদাত জানান, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির স্থায়ীকরণ নেই, বেতন বৃদ্ধি নেই। উৎসব বোনাসও নিশ্চিত নয়। সরকারি চাকরিতে যেখানে তিনটি উৎসব বোনাস রয়েছে, সেখানে বেসরকারি খাতে দুই ঈদেও পূর্ণ বোনাস দেওয়ার রেওয়াজ এখন আর নেই। অনেক সময় অর্ধেক বোনাস দেওয়া হয়, সেটিও নির্ভর করে কর্মীর চুক্তিতে কী লেখা আছে, তার ওপর। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন বা কর্মী সংগঠন গঠনের অধিকার নেই। ফলে কর্মীদের নিজেদের কথা বলার কোনো জায়গা নেই।
বিবিএসের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৮৫ শতাংশই বেসরকারি খাতে। এই খাতের মধ্যে সেবা খাতের অবদান এখন জিডিপির ৫৩ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিল্প খাতের অবদান ৩৫ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং কৃষি খাত ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গার্মেন্টস, আইটি, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য, নির্মাণ, শিক্ষা, রিটেইল, লজিস্টিকসসহ প্রতিটি খাতে লাখ লাখ মানুষ কাজ করছেন—কিন্তু নেই শ্রমনীতি, নেই নিরাপত্তা।
প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান সাউথ টেকের প্রধান নির্বাহী সায়েদ মামুন কাদের বলেন, ‘আমরা দেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী খাতে কাজ করি। অথচ আমাদের জন্য নেই প্রভিডেন্ট ফান্ড, নেই স্বাস্থ্য বিমা। প্রতিষ্ঠানের খরচ কমাতে সব সুবিধা একে একে তুলে নেওয়া হচ্ছে।’
২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির পর দেশে হাজার হাজার বেসরকারি কর্মচারী ছাঁটাই হন। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতন ৩০-৪০ শতাংশ কমিয়ে নতুন চুক্তি করতে বাধ্য করে। অনেকে বাধ্য হয়ে পারিবারিক সঞ্চয় ভেঙে খরচ চালান।
সরকার করোনা-পরবর্তী সময়ে পোশাক খাতের ও ব্যাংক খাতের চাকরিজীবীদের জন্য বেতনবিষয়ক কিছু নীতিমালা তৈরি করে। কিন্তু বাকি খাতগুলো সম্পূর্ণ অবহেলিত থেকে যায়। অথচ কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ ওই খাতগুলোতেই নিয়োজিত।
বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীর অধিকার আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত আছে। ভারতে যেকোনো হোয়াইট-কলার (যেসব কর্মীরা মানসিক শ্রম ও যোগাযোগ দক্ষতা ব্যবহার করে কাজ করেন) চাকরিজীবীর জন্য ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), অবসরকালীন অনুদান (গ্র্যাচুইটি) ও স্বাস্থ্যবিমা বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রীয় সরকার এই সুবিধাগুলো তদারকি করে কর্মী ভবিষ্য তহবিল সংস্থা (ইপিএফও) এবং কর্মী রাষ্ট্রীয় বীমা করপোরেশন (ইএসআইসি)-এর মাধ্যমে। ২০২১ সালের মজুরি আইনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতেও ন্যূনতম বেতন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে ন্যাশনাল মিনিমাম ওয়েজ আইন, ১৯৯৮ অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মজীবীর জন্য ন্যূনতম মজুরি বাধ্যতামূলক এবং প্রতিবছর তা হালনাগাদ করা হয়। পাশাপাশি, ‘অটো-এনরোলমেন্ট’ পদ্ধতিতে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন সঞ্চয় বাধ্যতামূলক রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি স্বাস্থ্যসেবার (এনএইচএস) ক্ষেত্রেও অনেক প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ রাখে।
জার্মানিতে সামাজিক নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, সকল চাকরিজীবী বাধ্যতামূলকভাবে অবসরভাতা, স্বাস্থ্যবিমা, দুর্ঘটনা বিমা, বেকারত্ব বিমা ও পরিচর্যা বিমার আওতায় থাকেন। দেশটিতে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় ইউনিয়ন ও শ্রম আদালত রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়াতেও রয়েছে একই ধরনের বাধ্যতামূলক কাঠামো—জাতীয় পেনশন সেবা (এনপিএস) ও জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা সেবা (এনএইচআইএস)। এই দুটি সংস্থার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের কর্মীদের জন্য অবসর ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া ছাঁটাই, অতিরিক্ত কাজ ও ছুটির ক্ষেত্রে দেশটিতে শ্রম আইন কার্যকর রয়েছে।
সায়েদ মামুন কাদের বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নিয়মিত কমিশন গঠন হয়, তাদের কথা শোনা হয়, নীতিমালা করা হয়। অথচ দেশের ৩ কোটির বেশি বেসরকারি চাকরিজীবী যেন এক ‘অদৃশ্য শ্রেণি’, যাদের জীবনের নিরাপত্তা নির্ভর করে মালিকপক্ষের ইচ্ছেমতো চুক্তির ওপর।’
এই নতুন পে কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় সামগ্রিকভাবে তাদের জীবনমান নিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। লক্ষণীয়, এই প্রতিটি বিষয়ই বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু যারা সরকারি চাকরিজীবী নন, তাদেরকে নিয়ে সরকারের কি কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১৬ জুলাই স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত পাঁচ ব্যক্তির ওপর থেকে মানুষের মনোযোগ ধীরে ধীরে সরে গেছে।
১০ ঘণ্টা আগেআগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার (২৬ জুলাই) এমন তথ্যই জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার।
১১ ঘণ্টা আগেদেশ গড়ার লক্ষ্যে তৈরি হওয়া ইসলামি শক্তির ঐক্যের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
১১ ঘণ্টা আগেবৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলামের কিছু নেতার সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে বলে জানান সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
১২ ঘণ্টা আগে