leadT1ad

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ ঠেকাতে মিথ্যাচার করছে তামাক কোম্পানি: ওয়েবিনারে বক্তারা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ২১
সংগৃহীত ছবি

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে সরকারের চলমান সংশোধনী উদ্যোগ ঠেকাতে তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যাচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ ঠেকাতে কোম্পানির প্রোপাগান্ডা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে এ আয়োজন করে।

ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞ আলোচক ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিকসের ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান এবং একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও তামাক গবেষক সুশান্ত সিনহা। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপির প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল এবং সঞ্চালনা করেন সিনিয়র প্রজেক্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহীম খলিল।

মূল বক্তব্যে হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, আইন সংশোধনের মাধ্যমে সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রিতে ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-হাসপাতাল-খেলার মাঠ-শিশুপার্কের ১০০ মিটারের মধ্যে বিক্রি নিষিদ্ধ, ভ্রাম্যমাণ দোকানে তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ, ৯০ শতাংশ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা, শাস্তি বৃদ্ধি এবং পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত পরিবেশসহ নানা সময়োপযোগী বিধান সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু এসব উদ্যোগ ব্যাহত করতে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।

তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ২১ বছরে তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় প্রায় ১৬ গুণ বেড়েছে এবং কোনো বছরই রাজস্ব কমেনি ২০০৫ ও ২০১৩ সালের আইন সংশোধনের পরও বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল। এনবিআরের আটক করা শীর্ষ ১০ পণ্যের তালিকায় সিগারেট নেই এবং আর্ক ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে দেশে অবৈধ সিগারেটের বাজার মাত্র ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

কর্মসংস্থান হারানোর দাবিকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতাদের মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ শুধু তামাক বিক্রি করেন, যা সংখ্যায় প্রায় ৬৩ হাজার। দেশের মোট বিক্রয়কেন্দ্রের মাত্র ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে তামাক বিক্রি করে—যা ব্যবসার খুব ক্ষুদ্র অংশ। তাই ১৫ লাখ লোক কর্মহারা হবে—এমন দাবি ‘নির্ভেজাল মিথ্যাচার’ বলে মন্তব্য করেন হামিদুল ইসলাম হিল্লোল।

বিশেষজ্ঞ সুশান্ত সিনহা বলেন, বাজেটের আগে গণমাধ্যমে অবৈধ সিগারেট উদ্ধারের খবর বাড়লেও বাস্তবে বাংলাদেশ বিশ্বের কমদামি সিগারেট বাজারগুলোর একটি। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও দাম বেশি, তাই ‘বেশি দাম থেকে কম দামে চোরাচালান’ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। তামাক কোম্পানিগুলো বড় খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে, ফলে ‘নকল সিগারেট ছড়িয়ে পড়া’র প্রচার বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।

বজলুর রহমান বলেন, কোম্পানিগুলো শুধু সিগারেট নয়, জর্দা-গুল ও ই-সিগারেট নিয়েও মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে। নিকোটিন পাউচ বৈধতার ক্ষেত্রেও প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। তিনি দ্রুত নিকোটিন পাউচ উৎপাদন নিষিদ্ধ ও ই-সিগারেটবিরোধী অবস্থানকে জোরদার করার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সময়-সময় ভিন্ন ভিন্ন মিথ ছড়ায়। অবৈধ ব্যবসার বিষয়েও তারা এনবিআরসহ বিভিন্ন সংস্থাকে বিভ্রান্ত করছে। দেশে হওয়া কোনো গবেষণাই তাদের দাবি সমর্থন করেনি। তাই সরকারের উচিত কোম্পানির প্রোপাগান্ডায় কান না দিয়ে আইন দ্রুত সংশোধন ও শক্তিশালী করা।

ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আইন সংশোধনের উদ্যোগ চললেও তামাক কোম্পানির প্রভাব ও প্রোপাগান্ডার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে। তিনি দ্রুত সংশোধন করে আইনকে শক্তিশালী করা ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারে তামাক নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত