leadT1ad

যমজ, নাকি দুই মাথাওয়ালা শিশু

রামেক হাসপাতালেও ভিড় করছে কৌতুহলী মানুষ। বাইরে ছড়িয়ে পড়া খবরে তারাও দেখতে এসেছে নবজাতককে। চিকিৎসকের কাছেও আসছে একটি প্রশ্ন—তাঁরা একে কী বলবেন, যমজ, না কি দুই মাথাওয়ালা শিশু?

স্ট্রিম সংবাদদাতারাজশাহী
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ৫৩
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ০৫
যমজ নবজাতককে দেখার জন্য রাজশাহী মেডিকলে কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে কৌতুহলী মানুষের। সংগৃহীত ছবি

নরম কাপড়, নতুন তোয়ালের মধ্যে ঘুমাচ্ছে শিশুরা। গলা অবধি ঢাকা। যেন জড়াজড়ি করে শুয়ে আছে নবজাতক দুই বোন। জন্মমাত্র কী ভালোবাসা তাঁদের মধ্যে! শুধু নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো। জন্মের সময় অনেক শিশুরই যেমন চিকিৎসা নিতে হয়। তার বাইরে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নবজাতকের বাবা-মার বিব্রত চিন্তাগ্রস্ত চেহারা বলে দিচ্ছে, কোথাও গণ্ডগোল আছে।

এদিকে রাজশাহী মেডিকলে কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে কৌতুহলী মানুষের। বাইরে ছড়িয়ে পড়া খবরে তারা দেখতে এসেছে নবজাতককে। চিকিৎসকের কাছেও আসছে একটি প্রশ্ন—তাঁরা একে কী বলবেন, যমজ, না কি দুই মাথাওয়ালা শিশু?

একবারের জন্য শিশুর শরীর থেকে কাপড়-তোলালে সরানো হয়। শিশুর কাঁধ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত আর দশজন শিশুর মতোই। দুটি হাত, দুটি পা ঠিক। বুক, পেটও স্বাভাবিক। কিন্তু গলা থেকে মুখমণ্ডল দুটি আলাদা। তাতে রয়েছে চারটি চোখ, চারটি কান, দুটি নাক এবং দুটি মুখ।

শনিবার (২ আগস্ট) রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজশাহীর খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালে আশ্চর্য শিশুটির জন্ম হয়। শিশুটিকে দেখার পর তাঁকে রামেক হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সেখানে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে শিশুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে। বর্তমানে শিশুটিকে রাখা হয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণে। তাই সবার সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই।

গোলাম আজম ও সুমাইয়া খাতুন দম্পতির সন্তান শিশুটি। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিল্লি বাজার এলাকায়। সেখানে একটি ছোট মুদি দোকান আছে আজমের। তা দিয়েই চলে সংসার।

নবজাতকের পরিবারের সদস্যেরা জানান, প্রসব ব্যাথা উঠলে সুমাইয়াকে রাজশাহীর খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন। শিশুটির দেহ একটি হলেও মাথা রয়েছে দুটি। এতে তারা আশ্চর্য হয়েছেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন শিশুটিকে দেখতে ভিড় করছে।

মেডিকেল সংশ্লিষ্টরা জানান, ধাত্রিবিদ্যা বা প্রসূতি চিকিৎসা এখন বেশ উন্নত। দেশের শহরাঞ্চলে তা পাওয়া কঠিনও নয়। একটা অ্যানোমারি স্ক্যান করা হলে এই নবজাতকের জন্ম নিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না।

গর্ভধারণের ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে অ্যানোমালি স্ক্যান করা হয়। এটি একটি আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা। গর্ভধারণ থেকে জন্মের মাঝামাঝি সময়ে করা হয় বলে এটি মিড-গ্যাপ স্ক্যান নামেও পরিচিত। গর্ভাবস্থার শিশুর গঠন ও বিকাশে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না, এই স্ক্যানের মাধ্যমে তা পরীক্ষা করা হয়। এটি গর্ভাবস্থার নিয়মিত পরিচর্যার একটি অংশ বলে জানান চিকিৎসকেরা।

কিন্তু আজম ও সুমাইয়া দম্পতির সেই সচেতনতা ছিল না। আর্থিকভাবেও তারা খুব সামর্থবান নন। গর্ভাবস্থায় শিশুটিকে নিয়ে কোনো জটিলতা হয়নি। তাই অ্যানোমালি স্ক্যানের প্রয়োজনও বোধ করেননি তারা। কেবল প্রবসের সময় তাকে হাসপালাতে নেওয়া হয়।

রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে রায় বলেন, ‘এটি যমজ শিশু নয়, এটি জন্মগত ত্রুটি। শিশুটির দেহ ও যৌনাঙ্গ একটি হলেও মাথা দুটি। দুই মুখমণ্ডলে চারটি চোখ, চারটি কান, দুটি নাক এবং দুটি মুখ রয়েছে।’

ডা. শংকর কে রায় বলেন, ‘এ ধরনের শিশুর জন্ম খুবই বিরল ঘটনা। এখন আমাদের প্রধান কাজ হলো তাঁর প্রাণ রক্ষা করা। সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। এজন্য শিশুটিকে বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত