গৌতম কে শুভ
ফুল, নদী আর হারানোর গল্প - বাংলা সাহিত্য বরাবরই এ তিনের টানে ভেসেছে। যেমন কবি জয় গোস্বামীর ‘হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে’ কবিতার অলকানন্দা নদী অনেকের হৃদয় ভাসিয়েছে। হঠাৎ দেখা গেল, বাংলাদেশের অন্যতম শ্রোতাপ্রিয় ব্যান্ড ‘মেঘদল’ তাদের নতুন গান ‘গোলাপের নাম’-এ গাইছে, ‘হৃদয় যাচ্ছে ভেসে অলকানন্দা জলে/ মেঘ-বাতাসের সঙ্গীত শোনা যায়’। কেমন হয়েছে মেঘদলের এই গান? জানাচ্ছেন গৌতম কে শুভ
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতে মেঘদলের অবস্থান একদম আলাদা। নান্দনিকতা, আবেগ আর মেটাফোরের মিশেলে তারা যে সংগীতভুবন গড়ে তুলেছে, সেখানে প্রতিটি গান যেন একেকটা অনুভূতির দরজা। সেই ধারাবাহিকতায় এসেছে ‘অ্যালুমিনিয়ামের ডানা’ অ্যালবামের ৭ম গান ‘গোলাপের নাম’।
কথা ও সুর শিবু কুমার শীলের। ভিডিওচিত্রের নির্দেশনা দিয়েছেন ব্যান্ডের সদস্য সৌরভ সরকার। গানের নাম নেওয়া হয়েছে উমবার্তো একোর উপন্যাস দ্য নেম অব দ্য রোজ এর বাংলা অনুবাদ থেকে। যদিও উপন্যাসের সঙ্গে এই গানের কোনো সম্পর্ক নেই। গান হিসেবে সেই অর্থে গোলাপের নাম নতুন নয়। এক যুগ আগে লেখা এই গান মেঘদলকে কয়েকবার লাইভ পারফর্ম করতে দেখা গেছে।
প্রেম, স্মৃতি ও বিষণ্ণতার নরম ক্যানভাস
মেঘলা বিকেলে ধীর পায়ে হাঁটার মতো শ্রোতার ব্যক্তিগত এক গভীর সফর থাকে মেঘদলের গানে। ‘গোলাপের নাম’ গানেও তাই। এই গানের কথায় তৈরি চিত্রকল্পে ছবি আঁকা যায়। যেটা অবশ্য মেঘের ছায়ার মতো, হাতে ধরতে গেলে আবার সরে যায়। কারণ গোলাপের নাম এখানে শুধু ফুলের ব্যাপার না - এটা হারানোর, ভুলে যাওয়ার, ফের খুঁজে পাওয়ার গল্প।
প্রেম, বিচ্ছেদ আর স্মৃতির মিশ্র অনুভূতি একসাথে মিলেমিশে ‘গোলাপের নাম’ গানটিকে গড়ে তুলেছে। এটা কিন্তু কোনো জোরালো প্রেমের ঘোষণা নয়। বরং সেই নীরব মুহূর্তের কথা, যখন আমাদের ‘হৃদয় যাচ্ছে ভেসে অপাপবিদ্ধ জলে’। এখানে গোলাপ তাই প্রেমের প্রতীক হিসেবে নয়, প্রেমের এক আশ্রয় হিসেবে এসেছে। অনেক দিনের পুরোনো প্রেমের মতই গানে গোলাপের নামও সময়ের সাথে ঝাপসা হয়ে আসে - গানের মূল আবেগ যেন এটাই।
এই গানের কথাগুলো ছায়ার মতো নরম, ধীরে ধীরে মনে গেঁথে যায়। এখানে অলকানন্দা শুধু একটা নদী নয়। এটা সময়ের ধুয়ে যাওয়া কোনো পাণ্ডুলিপি, হারিয়ে যাওয়া কোনো চুম্বনের স্মৃতি, অথবা পুরনো কোনো আলাপের অংশ। কিংবা কথা আর নীরবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা স্রোত। এই গান চিৎকার করে কষ্ট বা প্রেমের কথা বলে না - বরং মলিন আলোছায়ার মধ্যে ধীরে ধীরে হৃদয়কে টেনে নেয়।
জয় গোস্বামী কবিতায় লিখেছিলেন, লিপিখানি প’ড়েই থাকতো, আর মেঘদল পাওয়া-না পাওয়ার প্রশ্নে ইতি টেনেছে, চেনা হাহাকারে, ‘চুম্বনটুকু অধরাই থেকে যাক’।
গানের ভেতর দিয়ে
এই গানে গায়কী ও সুর বাংলার নিজস্ব মেলোডিতে এগিয়েছে। যা একদিকে মৃদু আর অন্যদিকে গভীর। জ্যাজ-সংগীতের ছোঁয়ায় গানে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। তবে জ্যাজের ব্যবহার কখনোই গানকে ভারি বা জটিল করেনি। বরং এই মিশ্রণ গানের সুরকে আরও সুন্দর এবং শ্রোতার হৃদয়ে সহজে ঢুকতে সাহায্য করেছে। সংগীতের বিশেষ কোনো জনরায় সীমাবদ্ধ না থেকে রক, ফোক, ব্যালাড, অল্টারনেটিভ জ্যাজের পরিমিত মিশ্রণে গানটির শ্রুতি আরো মধুর হয়েছে। তাই গানের শান্ত আবহ সহজেই মন ছুঁয়ে যায়।
এখানে গিটার শুধু কথার সঙ্গে বাজে নি, বরং নিজের মতো করে কথা বলে গেছে। গান চলতে চলতে যখন গিটার সলো আসে, তখন মনে হয় - কথার শেষ, এবং এখন নতুন সুরে নতুন একটা কথা বলার পালা। বেইজ এবং ড্রামস গানটির তাল (রিদম) ধরে রেখেছে, গানের কথার সাথে বাজনা একই পথে এগিয়েছে।
চোখে দেখা গান
মেঘদলের মিউজিক ভিডিওকে সহজেই আলাদা করা যায়। ‘গোলাপের নাম’ গানের মিউজিক ভিডিওতে ক্যামেরার কাজ, আলো, রঙ, গল্প - সব মিলিয়ে মনে হয়েছে, আমরা যেন কোনো ছোট্ট সিনেমা দেখছি। যেখানে গোলাপের নাম গানটা ব্যাকগ্রাউন্ডে নয়, গল্পের প্রাণ। যেখানে ভিডিওর ডার্ক আবহ আমাদের মনের যাবতীয় বিষণ্ণতাকে তুলে ধরেছে।
যদি উল্টোভাবে ভাবি, তাহলে এটাও বলতে পারি, ‘গোলাপের নাম’ সিনেমা আগে তৈরি হয়েছে, তারপর সেখানে প্রয়োজনে গান বসানো হয়েছে। কারণ মেঘদল শুধু গান গায় না, গানের ভেতর দিয়ে একটা ছবি আঁকে, একটা দৃশ্যের জগৎ তৈরি করে। তাদের গান যেমন ধীরে ধীরে মনের ভেতর ঢুকে যায়, তেমনি তাদের ভিডিওটাও ধীরে ধীরে চোখের পর্দা থেকে মন ছুঁয়ে যায়।
গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে
ফুল, নদী আর হারানোর গল্প - বাংলা সাহিত্য বরাবরই এ তিনের টানে ভেসেছে। যেমন কবি জয় গোস্বামীর ‘হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে’ কবিতার অলকানন্দা নদী অনেকের হৃদয় ভাসিয়েছে। হঠাৎ দেখা গেল, বাংলাদেশের অন্যতম শ্রোতাপ্রিয় ব্যান্ড ‘মেঘদল’ তাদের নতুন গান ‘গোলাপের নাম’-এ গাইছে, ‘হৃদয় যাচ্ছে ভেসে অলকানন্দা জলে/ মেঘ-বাতাসের সঙ্গীত শোনা যায়’। কেমন হয়েছে মেঘদলের এই গান? জানাচ্ছেন গৌতম কে শুভ
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতে মেঘদলের অবস্থান একদম আলাদা। নান্দনিকতা, আবেগ আর মেটাফোরের মিশেলে তারা যে সংগীতভুবন গড়ে তুলেছে, সেখানে প্রতিটি গান যেন একেকটা অনুভূতির দরজা। সেই ধারাবাহিকতায় এসেছে ‘অ্যালুমিনিয়ামের ডানা’ অ্যালবামের ৭ম গান ‘গোলাপের নাম’।
কথা ও সুর শিবু কুমার শীলের। ভিডিওচিত্রের নির্দেশনা দিয়েছেন ব্যান্ডের সদস্য সৌরভ সরকার। গানের নাম নেওয়া হয়েছে উমবার্তো একোর উপন্যাস দ্য নেম অব দ্য রোজ এর বাংলা অনুবাদ থেকে। যদিও উপন্যাসের সঙ্গে এই গানের কোনো সম্পর্ক নেই। গান হিসেবে সেই অর্থে গোলাপের নাম নতুন নয়। এক যুগ আগে লেখা এই গান মেঘদলকে কয়েকবার লাইভ পারফর্ম করতে দেখা গেছে।
প্রেম, স্মৃতি ও বিষণ্ণতার নরম ক্যানভাস
মেঘলা বিকেলে ধীর পায়ে হাঁটার মতো শ্রোতার ব্যক্তিগত এক গভীর সফর থাকে মেঘদলের গানে। ‘গোলাপের নাম’ গানেও তাই। এই গানের কথায় তৈরি চিত্রকল্পে ছবি আঁকা যায়। যেটা অবশ্য মেঘের ছায়ার মতো, হাতে ধরতে গেলে আবার সরে যায়। কারণ গোলাপের নাম এখানে শুধু ফুলের ব্যাপার না - এটা হারানোর, ভুলে যাওয়ার, ফের খুঁজে পাওয়ার গল্প।
প্রেম, বিচ্ছেদ আর স্মৃতির মিশ্র অনুভূতি একসাথে মিলেমিশে ‘গোলাপের নাম’ গানটিকে গড়ে তুলেছে। এটা কিন্তু কোনো জোরালো প্রেমের ঘোষণা নয়। বরং সেই নীরব মুহূর্তের কথা, যখন আমাদের ‘হৃদয় যাচ্ছে ভেসে অপাপবিদ্ধ জলে’। এখানে গোলাপ তাই প্রেমের প্রতীক হিসেবে নয়, প্রেমের এক আশ্রয় হিসেবে এসেছে। অনেক দিনের পুরোনো প্রেমের মতই গানে গোলাপের নামও সময়ের সাথে ঝাপসা হয়ে আসে - গানের মূল আবেগ যেন এটাই।
এই গানের কথাগুলো ছায়ার মতো নরম, ধীরে ধীরে মনে গেঁথে যায়। এখানে অলকানন্দা শুধু একটা নদী নয়। এটা সময়ের ধুয়ে যাওয়া কোনো পাণ্ডুলিপি, হারিয়ে যাওয়া কোনো চুম্বনের স্মৃতি, অথবা পুরনো কোনো আলাপের অংশ। কিংবা কথা আর নীরবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা স্রোত। এই গান চিৎকার করে কষ্ট বা প্রেমের কথা বলে না - বরং মলিন আলোছায়ার মধ্যে ধীরে ধীরে হৃদয়কে টেনে নেয়।
জয় গোস্বামী কবিতায় লিখেছিলেন, লিপিখানি প’ড়েই থাকতো, আর মেঘদল পাওয়া-না পাওয়ার প্রশ্নে ইতি টেনেছে, চেনা হাহাকারে, ‘চুম্বনটুকু অধরাই থেকে যাক’।
গানের ভেতর দিয়ে
এই গানে গায়কী ও সুর বাংলার নিজস্ব মেলোডিতে এগিয়েছে। যা একদিকে মৃদু আর অন্যদিকে গভীর। জ্যাজ-সংগীতের ছোঁয়ায় গানে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। তবে জ্যাজের ব্যবহার কখনোই গানকে ভারি বা জটিল করেনি। বরং এই মিশ্রণ গানের সুরকে আরও সুন্দর এবং শ্রোতার হৃদয়ে সহজে ঢুকতে সাহায্য করেছে। সংগীতের বিশেষ কোনো জনরায় সীমাবদ্ধ না থেকে রক, ফোক, ব্যালাড, অল্টারনেটিভ জ্যাজের পরিমিত মিশ্রণে গানটির শ্রুতি আরো মধুর হয়েছে। তাই গানের শান্ত আবহ সহজেই মন ছুঁয়ে যায়।
এখানে গিটার শুধু কথার সঙ্গে বাজে নি, বরং নিজের মতো করে কথা বলে গেছে। গান চলতে চলতে যখন গিটার সলো আসে, তখন মনে হয় - কথার শেষ, এবং এখন নতুন সুরে নতুন একটা কথা বলার পালা। বেইজ এবং ড্রামস গানটির তাল (রিদম) ধরে রেখেছে, গানের কথার সাথে বাজনা একই পথে এগিয়েছে।
চোখে দেখা গান
মেঘদলের মিউজিক ভিডিওকে সহজেই আলাদা করা যায়। ‘গোলাপের নাম’ গানের মিউজিক ভিডিওতে ক্যামেরার কাজ, আলো, রঙ, গল্প - সব মিলিয়ে মনে হয়েছে, আমরা যেন কোনো ছোট্ট সিনেমা দেখছি। যেখানে গোলাপের নাম গানটা ব্যাকগ্রাউন্ডে নয়, গল্পের প্রাণ। যেখানে ভিডিওর ডার্ক আবহ আমাদের মনের যাবতীয় বিষণ্ণতাকে তুলে ধরেছে।
যদি উল্টোভাবে ভাবি, তাহলে এটাও বলতে পারি, ‘গোলাপের নাম’ সিনেমা আগে তৈরি হয়েছে, তারপর সেখানে প্রয়োজনে গান বসানো হয়েছে। কারণ মেঘদল শুধু গান গায় না, গানের ভেতর দিয়ে একটা ছবি আঁকে, একটা দৃশ্যের জগৎ তৈরি করে। তাদের গান যেমন ধীরে ধীরে মনের ভেতর ঢুকে যায়, তেমনি তাদের ভিডিওটাও ধীরে ধীরে চোখের পর্দা থেকে মন ছুঁয়ে যায়।
গানটি শুনতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে
আজ ক্ষণজন্মা চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুদিন। বাংলা চলচ্চিত্রকে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। কেমন ছিল তাঁর সিনেমা-দর্শন। লিখেছেন গৌতম কে শুভ বাংলা সিনেমার ইতিহাস লিখতে বসলে যাঁর নাম না লিখে উপায় নেই, তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষ। তিনি এমন কিছু গল্প পর্দায় তুলে এনেছেন, যা মানুষকে ভাবতে
১৫ দিন আগেঢাকা শহরের যানজট, বৃষ্টি আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নগরবাসীর জন্য একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে মেট্রোরেল। যদিও এটি স্বস্তির একটি বিকল্প, তবু বাড়তি চাপ, সীমিত ফ্রিকোয়েন্সি আর যান্ত্রিক সমস্যার কারণে অনেক সময় সেই স্বস্তি রূপ নেয় নতুন দুর্ভোগে। এই নির্ভরতাই যেন কখনো কখনো পরিণত হয় একধরনের অসহায়ত্বে।
১৫ দিন আগেবৃষ্টি কি সত্যিই শুধু আবহাওয়া-বিষয়ক কিছু, নাকি আমাদের সেই সব অনুচ্চারিত অভিমান, যেগুলো বের হতে না পেরে জমে আছে মেঘ হয়ে? আজকের বৃষ্টির ঠিক পরপর লিখেছেন শতাব্দীকা ঊর্মি বৃষ্টি নামে। ধীরে ধীরে, কিংবা হঠাৎ। জানালার কাচ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে একেকটি ফোঁটা, যেন বিষণ্ন কোনো চিঠির অক্ষর। শহরের ব্যস্ত সড়কও
১৫ দিন আগেভাষার অধিকারের জন্য রক্ত দিতে হয়েছিল কেবল ঢাকায় নয়, শিলচরেও। ১৯৬১ সালের (১৯ মে) আজকের দিনে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালিরা অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে রেললাইন অবরোধ করলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১১ জন। এই আন্দোলন ছিল শুধু ভাষার জন্য নয়—ছিল জাতিগত বৈষম্য ও রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক
১৫ দিন আগে