leadT1ad

তিব্বতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ করেছে চীন, উদ্বেগ ভারতের

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৬: ২৭
চীনের থ্রি গর্জেস ড্যাম দিয়ে পানি প্রবাহের একটি চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীর ওপর বৃহৎ একটি বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছে চীন। হিমালয়ের পাদদেশে এই মেগা-প্রকল্পে পাঁচটি জলবিদ্যুৎ-কেন্দ্র থাকবে। নদীটি ভারতে ব্রহ্মপুত্র এবং বাংলাদেশে যমুনা নামে পরিচিত।

চীনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাঁধটির কাজ সম্পন্ন হলে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুতের উৎস হয়ে উঠতে পারে এটি।

চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ১৯ জুলাই ওই বাঁধের নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বেইজিং কয়েক বছর ধরেই এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করছিল। অবশেষে গত বছরের ডিসেম্বরে বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। বাঁধটি তিব্বতের কার্বন নিরপেক্ষতা এবং অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত।

দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বতের নিংচি শহরে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পরে সিনহুয়া জানিয়েছে জানায়, উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য প্রধানত চীনের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠানো হবে, পাশাপাশি তিব্বতের স্থানীয় বিদ্যুতের চাহিদাও পূরণ করবে।

সিনহুয়ার তথ্যমতে, এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ প্রায় ১৬৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গত জানুয়ারিতে ভারত জানিয়েছে, প্রকল্পের বিষয়ে তারা চীনের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে। ভারত বলেছে, ‘আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নজরদারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন বলেছিল যে উজানে বাঁধ নির্মাণের ফলে ব্রহ্মপুত্রের ভাটিতে থাকা রাজ্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, চীনকে তা নিশ্চিত করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

ডিসেম্বরে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই প্রকল্পের ভাটিতে কোনো ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়বে না। চীন নদীর ভাটিতে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে।

চীন ১৯৫০ সালে তিব্বত দখল করে। এরপর তারা এই অঞ্চলের নদীগুলোতে কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করেছে। এতে তিব্বতীয় মালভূমির অনন্য বাস্তুতন্ত্রের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে তিব্বতিদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়।

তিব্বতের বিস্তীর্ণ হিমবাহ এবং প্রধান নদীগুলো ১০টি দেশে ১৩০ কোটি মানুষকে মিঠাপানি সরবরাহ করে বলে জানিয়েছে ইয়েলের ই৩৬০ পরিবেশ ম্যাগাজিন।

তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু নদী। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ হাজার মিটার (১৬,৪০৪ ফুট)। তিব্বতিরা নদীটিকে পবিত্র মনে করে।

নতুন বাঁধটি চীনের ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার (১৮ মাইল) দূরে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই বিশাল সীমান্তের বেশিরভাগই বিতর্কিত। ১০ হাজারেরও বেশি সৈন্য মোতায়েন রয়েছে সীমানার দুই পাশে।

বাঁধটি নির্মিত হলে মধ্য চীনের ইয়াংতসে নদীর থ্রি গর্জেস বাঁধের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি শক্তি উৎপাদন করতে পারবে। ২০০৩ সালে নির্মিত থ্রি গর্জেস বাঁধের কারণে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়।

তিব্বত অনেকটাই কম জনবহুল। সেখানে ২০১৫ সালে ইয়াগেন জলবিদ্যুৎ-কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রায় ২ হাজার মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছিল।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

বিবিসি বলছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তের কাছে নির্মিতব্য এই বাঁধ ভারতকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হওয়ার আগেই অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু এটিকে ‘বোমা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর মতে, এটি যেকোনো সময় ভারতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

এদিকে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এ-ও বলছেন, ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’বিষয়ে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলছে, চীনও কি সেই ভাষায় ভারতের সঙ্গে কথা বলছে?

অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘সমস্যা হলো, চীনকে বিশ্বাস করা যায় না। তারা কী করতে পারে, তা কেউ জানে না। চীনের সামরিক হুমকি যা-ই হোক না কেন, আমি মনে করি, এটি অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে অনেক বড় সমস্যা। এটি আমাদের আদিবাসী এবং আমাদের অর্থনীতির জন্য হুমকি তৈরি করবে। এটি বেশ গুরুতর। কারণ, চীন এটিকে “জলবোমা” হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে।’

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়নিজ স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক রাজীব রঞ্জন বিবিসি উর্দুকে বলেন, ‘পানি হলো জীবনদাতা। নদীকে সভ্যতার জননী বলা হয়। যদি নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে, তাহলে অনেক সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আর সেই কারণেই অনেক দেশ বছরের পর বছর বা শতাব্দী ধরে নদীর ওপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য লড়াই করে আসছে। অর্থাৎ, নদী প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।’

অধ্যাপক রাজীব রঞ্জন বলেন, এই বাঁধ নির্মাণের পেছনে চীনের একাধিক উদ্দেশ্য রয়েছে। পাকিস্তান-সিন্ধু নদীর পানি-বিরোধ এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের ওপর বাঁধ নির্মাণ নতুন সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

পেহেলগাম-কাণ্ডের পর পাকিস্তান সিন্ধু নদীর পানি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। চীন কি তাহলে এখন তার কৌশলগত মিত্র পাকিস্তানকে এই সমস্যা থেকে বাঁচাতে ব্রহ্মপুত্রের পানিকে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক রাজীব বলেন, ‘এর সম্ভাবনা কম। তবে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই।’

বিবিসি উর্দু ও আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিষয়:

ভারতচীন
Ad 300x250

সম্পর্কিত