leadT1ad

১৯৭২ থেকে ২০২৫: ঢাকায় ৬ বিমান দুর্ঘটনা

ছয়টি দুর্ঘটনার মধ্যে একবার ছাড়া প্রতিবারই পাইলট মারা গেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং খারাপ আবহাওয়ার কথা।

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ২১: ১৯
১৯৭২ থেকে ২০২৫: ঢাকায় ৬ বিমান দুর্ঘটনা। স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা শহরে এখন পর্যন্ত ছয়বার লোকালয়ে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এই ঘটনা বাদ দিলে আগের ৫টি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৮ জন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বিমান দুর্ঘটনাটিও ঘটেছিল ঢাকায়। ছয়টি দুর্ঘটনার মধ্যে চারটি ঘটেছে উত্তরা এলাকায়, একটি কাফরুলে এবং একটি পোস্তগোলায়। এর মধ্যে পাঁচটি প্রশিক্ষণের সময় বিধ্বস্ত হয়। কেবল একটি ছিল যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক ফ্লাইট। প্রশিক্ষণ বিমানের মধ্যে দুটি ছিল বেসামরিক পারাবত ফ্লাইং একাডেমির।

ছয়টি দুর্ঘটনার মধ্যে একবার ছাড়া প্রতিবারই পাইলট মারা গেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং খারাপ আবহাওয়ার কথা।

১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ — ৫ প্রাণহানি

১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। সেদিনই ঘটেছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বিমান দুর্ঘটনা। বিকেল ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিমানবন্দর (তেজগাঁও) থেকে উড্ডয়নের সময় বিধ্বস্ত হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ডগলাস ডিসি-৩ বিমান। মৃত্যু হয় বিমানের পাঁচ ক্রু সদস্যের। এই প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে ছিলেন ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন নাসির হায়দার, ক্যাডেট পাইলট শরফুদ্দিন, ক্যাডেট পাইলট মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ক্যাডেট পাইলট মোস্তফা।

সস্ত্রীক ক্যাপ্টেন নাসির হায়দার। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
সস্ত্রীক ক্যাপ্টেন নাসির হায়দার। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

দুর্ঘটনার মাত্র ৬ দিন আগে (৪ ফেব্রুয়ারি) এই বিমান দিয়েই বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছিল, বিমানটি রানওয়ে থেকে প্রায় ৩০০ ফুট উচ্চতায় ওঠার পরই কাফরুল এলাকায় আছড়ে পড়ে।

৫ আগস্ট ১৯৮৪ — ৪৯ প্রাণহানি

১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। টানা বৃষ্টি আর ঝোড়ো আবহাওয়ার মধ্যে ফকার এফ-২৭ মডেলের বিমানটি ঢাকায় নামার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ায় রানওয়ে দেখা যাচ্ছিল না। রানওয়েতে পৌঁছানোর আগেই এটি ঢাকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (বর্তমান হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) কাছে একটি জলাভূমিতে আছড়ে পড়ে।

বিমানে থাকা ৪৯ জনের সবাই মারা যান। তাঁদের মধ্যে ৪ জন ছিলেন বিমানের ক্রু সদস্য। যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সঙ্গে একজন ব্রিটিশ ও একজন জাপানি নাগরিকও ছিলেন। এই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট কানিজ ফাতেমা রোকসানা।

বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট কানিজ ফাতেমা রোকসানা। ফেসবুক থেকে নেওয়া
বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট কানিজ ফাতেমা রোকসানা। ফেসবুক থেকে নেওয়া

দুর্ঘটনার খবর তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রচার হয়। নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্সের সূত্রে এই ঘটনার খবর প্রকাশ করে।

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ — ২ প্রাণহানি

১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। ঢাকার পোস্তগোলার শ্মশানঘাটের কাছে বিধ্বস্ত হয় একটি প্রশিক্ষণ বিমান। মারা যান দুই তরুণ পাইলট—ফারিয়া লারা (২৬) ও সৈয়দ রফিকুল ইসলাম (২৪)। লারা ছিলেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের মেয়ে।

পাইলট ফারিহা লারা। ছবি: সংগৃহীত
পাইলট ফারিহা লারা। ছবি: সংগৃহীত

বিমানটি ছিল পারাবত ফ্লাইং একাডেমির ‘সেসনা-১৫০’ মডেলের একটি প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ। সেদিন তাঁরা নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ফ্লাইটে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ো বাতাস ও প্রবল বৃষ্টিতে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। শেষ পর্যন্ত বিমানটি একটি গুদামের ছাদে বিধ্বস্ত হয়।

৭ জুন ২০০২ — ১ প্রাণহানি

২০০২ সালের ৭ জুন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার উত্তরা মডেল টাউনের খেলার মাঠে বিধ্বস্ত হয় পারাবত ফ্লাইং একাডেমির একটি প্রশিক্ষণ বিমান। প্রশিক্ষণার্থী পাইলট মোকলেছুর রহমান সাকিব নিহত হন।

এটি ছিল সেসনা-১৫০ মডেলের এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট একটি প্রশিক্ষণ বিমান। সকাল ১১টা ২০ মিনিটে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেন সাকিব। উড্ডয়নের তিন মিনিট পরই নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণকক্ষ তখনই তাঁকে অবতরণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সাকিব জানান, তিনি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন না।

এরপর আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে বিমানটি খেলার মাঠে গিয়ে আছড়ে পড়ে।

৮ জুন ২০০৫ — ১ প্রাণহানি

২০০৫ সালের ৮ জুন। ঢাকার উত্তরা আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় একজন নিহত হন। আহত হন চারজন।

চীনে তৈরি এফ-৭ যুদ্ধবিমানটি সেদিন প্রশিক্ষণের কাজে আকাশে উড়েছিল। দুপুরে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাড়ির ওপর পড়ে। বাড়িটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। পাশের দুইটি বাড়িও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০০৫ সালের ৮ জুন ঢাকার উত্তরা আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত বিমান। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালের ৮ জুন ঢাকার উত্তরা আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত বিমান। ছবি: সংগৃহীত

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় পাইলট প্যারাসুট খুলে নিরাপদে নেমে আসেন। তিনি কিছুটা আহত হলেও প্রাণে রক্ষা পান।

উল্লেখ্য, ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে আইএসপিআর।

Ad 300x250

ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, সঙ্কটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে: তারেক রহমান

ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চার দলের বৈঠক শেষে আসিফ নজরুল

চার দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষ: সাম্প্রতিক বিষয় ও আগামীর পথচলা নিয়ে আলোচনা

চার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা

৯ ঘণ্টা পর মাইলস্টোন থেকে বের হতে পারলেন দুই উপদেষ্টা

সম্পর্কিত